Narrow selection

​​​​​​​সুঠাম শরীর গড়তে কী খাবেন - What to eat to build a healthy body


06:58:52 12/14/2023

সুঠাম শরীর গড়তে কী খাবেন : সুঠাম শরীর গড়ার এক নম্বর চাবিকাঠি কী? ব্যাপক প্রশিক্ষণ। অতিরিক্ত ওজন বাড়ানো? প্রচুর পরিশ্রম করা। সবই ভুল। কেবলমাত্র সাধারণ খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই আপনি সুঠাম দেহের অধিকারী হতে পারেন।

তবে খাবারটা হতে হবে সঠিক এবং সেটা গ্রহণ করতে হবে সঠিক উপায়ে। অনেকে মাংসপেশি দৃঢ় করতে প্রচুর মাংস খান। এভাবে উচ্চমাত্রার প্রোটিন গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে। সঠিক খাবারই পারে আপনার শক্তি বাড়াতে, আপনার ওজন কমাতে এবং আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে।

সহজ উপায়ে সঠিক খাদ্যগ্রহণ

সুঠাম শরীর গড়ার প্রথম শর্ত হলো শরীরটাকে সুস্থ রাখা। সঠিক খাদ্য আপনার যে উপকার করে তাহলো-

  • অসুস্থতা থেকে দ্রুত নিরাময় করতে সাহায্য করে।
  • ব্যায়ামের সময়ে অবসন্নতার কারণে ইনজুরি প্রতিহত করে।
  • শরীরে পানি ও শক্তির যোগান দেয়।
  • শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখে।

খাবার গ্রহণের সময় আপনাকে খাবারের বড় চারটে জিনিস গ্রহণ করতে হবে। এগুলো হলো-প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও পানি।

প্রোটিন

প্রোটিন হলো মাংসপেশি গঠনের পুষ্টি উপাদান। পরিপাক এবং শোষণের সময়ে প্রোটিন ভেঙে অ্যামাইনো এসিড তৈরি হয়। শরীর বিপাকের জন্য এই অ্যামাইনো এসিডগুলো গ্রহণ করে বিভিন্ন উপায়ে। প্রত্যেক মানুষেরই প্রোটিন প্রয়োজন। কিন্তু আপনার মাংসপেশির জন্য তা কতটুকু গ্রহণ করবেন।

সত্যিকার অর্থে আপনি যদি সুষম খাবার খান (প্রোটিন থেকে আপনি পাবেন দৈনিক ক্যালরির ১৫-২০ (শতাংশ), আপনি মাংসপেশি বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবেন। আপনার লক্ষ্য হবে প্রতি কিলোগ্রাম শারীরিক ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম। আপনি যদি প্রচুর ব্যায়াম করেন কিংবা অ্যাথলেট হন তাহলে প্রোটিন ২০ শতাংশ বেশি গ্রহণ করবেন। ৭० কিলোগ্রাম ওজনের একজন লোকের দৈনিক প্রায় ৫৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। অ্যাথলেট কিংবা প্রচুর ব্যায়ামকারীর জন্য দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হবে প্রায় ৬৮-৭০ গ্রাম। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনির সমস্যা ও বিপাকক্রিয়ার অসুবিধা হতে পারে। প্রোটিনের চমৎকার উৎস হলো- চামড়াবিহীন মুরগির সাদা মাংস, মাছ, চাক চাক করে কাটা গরুর মাংস, সয়াবিন, স্বল্প চর্বিযুক্ত দুধজাত পণ্য, ডাল, শিমের বিচি, বাদাম এবং ডিমের সাদা অংশ ।

কার্বোহাইড্রেট

যদি আপনি সক্রিয় জীবন যাপন করেন, আপনার শরীরের শক্তির জন্য কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। দৈনিক কতটুকু কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করবেন সেটা নির্ভর করে আপনার সম্পূর্ণ শক্তি, আকার ও স্বাস্থ্যের উপর। ব্যায়াম করলে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণও বেড়ে যাবে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে, শক্তির জন্য আপনি খাবারের অর্ধেকটাই নেবেন কার্বোহাইড্রেট থেকে। আপনার দৈনিক ক্যালরির ৫০-৬০ শতাংশ যদি আপনি কার্বোহাইড্রেট থেকে নিতে পারেন-সেটাই যথেষ্ট । নিয়মিত ব্যায়াম করলে পরিমাণটা বাড়াবেন। বিভিন্ন উপায়ে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে পারেন। কার্বোহাইড্রেট দু'ধরনের। একটি সরল, অন্যটি জটিল। সরল কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে রয়েছে ফলের রস, ক্যানডি ও চিনি। জটিল কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে রয়েছে যব, সমগ্র খাদ্যশস্য, শাকসবজি, শিম প্রভৃতি। জটিল কার্বোহাইড্রেট আপনার খাবারের পরিমাণটা বাড়াতে সাহায্য করে।

বিগত কয়েক বছর ধরে চিনির নির্দেশক মাত্রার উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণীবিন্যাস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উচ্চমাত্রার চিনি নির্দেশক' খাবারগুলো অনেকের কাছে কম আকাঙ্ক্ষিত, কারণ তত্ত্ব অনুযায়ী এসব খাবার দ্রুত ইনসুলিন ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা স্বাস্থ্য ও শারীরিক ওজনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, নিম্নমাত্রার চিনি নির্দেশক' খাবারগুলো তাদের কাছে বেশি কাম্য, কারণ সেগুলো রক্তের গ্লুকোজ ও ইনস্যুলিনের উপর ধীরে প্রভাব ফেলে।

যেহেতু তথাকথিত উচ্চমাত্রার চিনি নির্দেশক খাবার যেমন রুটি, ভাত, গাজর, আলু এবং কলা প্রভৃতিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিমান থাকে তাই সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো খাবারের বিতর্কিত শ্রেণী বিভাগে না গিয়ে পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ করা। শুধু মনে রাখতে হবে, উচ্চ মাত্রার চিনি নির্দেশক খাবারের সাথে প্রোটিন কিংবা ফ্যাট গ্রহণ করলে তখন ইনসুলিন বা গ্লুকাজের মোটামুটি প্রতিক্রিয়া ঘটে। তাই আপনি যখন একক কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করবেন তখন শুধুমাত্র চিনির নির্দেশক মাত্রার ব্যাপারটা চলে আসে।

কার্বোহাইড্রেট আপনার কর্মশক্তি। তাই আপনার জন্য তাদেরকে কাজে লাগাবেন। যখন সম্ভব হবে আপনি যবের গুঁড়া দিয়ে তৈরি পরিজ, গাছ আলু, আটার রুটি এবং যে কোনো ধরনের খাদ্যশস্য, প্যাসটা, আলু, ময়দার রুটি, প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন বিস্কুট এবং অন্যান্য স্ন্যাক খাবার খাবেন। ফলমূল এবং শাকসবজির পুষ্টি উপাদান আপনার সুস্বাস্থ্য গঠনে সাহায্য করবে।

চর্বি

বডিবিল্ডার এবং অ্যাথলেটরা সাধারণভাবে তাদের দৈনিক ক্যালরির প্রায় ২০ শতাংশ গ্রহণ করেন চর্বি থেকে। কখনো কখনো তারা চর্বি গ্রহণের পরিমাণ আরো কমিয়ে দেন। সাধারণভাবে ক্যালরির ৩০ শতাংশ গ্রহণ করা উচিত চর্বি থেকে। খেয়াল রাখতে হবে চর্বি গ্রহণের পরিমাণ যেন খুব বেশি কমে না যায়। আপনার শরীরের কোষগুলোকে উজ্জীবিত রাখতে চর্বি এক প্রয়োজনীয় উপাদান। ব্যায়ামের ক্রিয়ার সাথে চর্বির সম্পর্ক রয়েছে।

শক্তির জন্য তীব্র ব্যায়াম যেমন শরীর গঠন নির্ভর করে কার্বোহাইড্রেটের উপর। অল্প থেকে মাঝারি প্রকৃতির অ্যারোবিক ব্যায়াম নির্ভর করে চর্বির উপর। দীর্ঘমেয়াদি অ্যারোবিক ধরনের ব্যায়াম চালিয়ে গেলে আপনার চর্বি গ্রহণের প্রয়োজন হবে। চর্বি ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। চর্বিগ্রহণের ক্ষেত্রে যে কথা মনে রাখবেন তাহলো- প্রাণিজ খাদ্য থেকে সম্পৃক্ত চর্বিগ্রহণের মাত্রা কমাবেন। বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করবেন উদ্ভিজ্জ চর্বি যেমন বাদাম, শিম, সরিষা ও জলপাই তেল প্রভৃতি।

পানি

আপনার শরীর কতটুকু পানি দিয়ে তৈরি? সত্যিকার অর্থে শরীরের অর্ধেকের বেশিই পানি প্রায় ৬০ শতাংশ। পানি আপনার শরীরের কোষগুলোকে সচল রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রিত করে। পেশিবহুল লোকদের শরীরে বেশি পানি থাকে। যদি আপনি সক্রিয় হোন, আপনাকে দৈনিক অন্তত আট গ্লাস পানি খেতে হবে, বিশেষ করে ব্যায়ামের সময় ও ব্যায়ামের পরে।

আপনি পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য প্রস্রাবের দিকে খেয়াল রাখবেন। যদি আপনার প্রস্রাব স্বচ্ছ কিংবা ফ্যাকাশে হলুদ রঙের হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি তৃষ্ণা অনুভব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না, তার আগেই পানি খাবেন।

সাপ্লিমেন্ট আপনাকে সাহায্য করতে পারে

কিছু কিছু সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ আপনাকে দ্রুত আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে এ সব সাপ্লিমেন্ট চিকিৎসকের পরামর্শ মতো গ্রহণ করবেন।

১. প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট

সাধারণ কোনো ধরনের অসুবিধা ছাড়াই আপনি খাবার থেকে সমস্ত প্রোটিন পেতে পারেন। কিন্তু তারপরও যদি আপনার রান্না ঠিকমতো না হয়, সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে আপনি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন সাপ্লিমেন্ট যেন আপনার শরীরের জন্য সহনীয় হয়। সঠিক ক্যালরি পাবার জন্য কোনো পরিপূর্ণ খাবারের সাথে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন।

২. ভিটামিন এবং মিনারেল

যদি খাবার থেকে আপনি পর্যাপ্ত পুষ্টি না পান তাহলে আপনি মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যেমন ভিটামিন-সি এবং ই অবশ্যই উপকারী। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় তা গ্রহণ করবেন না। অতিরিক্ত ভিটামিন ও মিনারেল শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। যেসব নারী স্বল্প ক্যালরিযুক্ত খাবার খান তাদের ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।

৩. গ্লূটামিন এবং ক্রিয়েটিন

গ্লুটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ক্রিয়েটিন শক্তি বাড়ায়। তবে এসব সাপ্লিমেন্ট খুবই অল্প মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে।

৪. গ্লূকোসামিন

যদি আপনার অস্থিসন্ধিতে সমস্যা থাকে তাহলে এই সাপ্লিমেন্ট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং পরবর্তী অস্বাচ্ছন্দ্য প্রতিরোধ করে।

সবকিছুতেই সময়

যদি আপনি আপনার প্রশিক্ষণ থেকে ফল পাবার ব্যাপারে সচেতন হন তাহলে আপনি কী খাচ্ছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাবারটা আপনি কখন খাচ্ছেন। সবার প্রথমে প্রধান বিষয় হলো আপনি ঘনঘন খাবেন-দিনে ৫-৬ বার। এতে আপনার শরীর পর্যাপ্ত ক্যালরি পাবে। ওজন কমানোর জন্য আপনি অল্প পরিমাণে ঘন ঘন খাবেন। এতে শরীর থেকে চর্বি ক্ষয় হবে। দুই আহারের মধ্যবর্তী সময়ে ক্ষুধার্ত থাকবেন না, এতে আপনি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন। এর ফলে আপনার ওজন বেড়ে যাবে। তাই ওজন কমাতে চাইলে এবং শরীর সুঠাম ও কর্মঠ রাখতে চাইলে কম খাবেন এবং ঘন ঘন খাবেন।

খাবার গ্রহণের আদর্শ সময় হলো প্রশিক্ষণ পর্বের প্রায় ১১/২-২ ঘণ্টা আগে স্বল্প পরিমাণ খাবার গ্রহণ। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি মাঝারি পরিমাণে জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন আর স্বল্প পরিমাণ চর্বি গ্রহণ করেন। মাংসপেশি বৃদ্ধির জন্য এ সময়ে ডিমের সাদা অংশ এবং আলুর স্যান্ডউইচ খেতে পারেন। শরীরের চর্বি ক্ষয়ের জন্য হালকা স্ন্যাক যেমন এক ফালি ফল এবং স্বল্প চর্বিযুক্ত পনির খেতে পারেন। শক্তি বজায় রাখার জন্য মিষ্টি ফল যেমন কলা, আঙুর, কাসটার্ড আপেল, আনারস খুবই ভালো। ব্যায়াম করার পরেও আপনি খাবেন। খেয়াল রাখবেন কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের অনুপাত যেন ৬ ৫ ১ হয়। যদি আপনি পেশাদার ওয়েট ট্রেনিংয়ে ঢুকতে চান তাহলে আপনি ৩১ অনুপাতে গ্রহণ করবেন।

ক্যালরি পরিমাপ করুন

আপনার ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণটা নির্ভর করে আপনার শরীরের আকৃতির উপর। যদি আপনার ওজন ১৫০ পাউন্ড হয় তাহলে দৈনিক আপনার প্রয়োজন হবে ২,২৫০-২१00 ক্যালরি। ক্যালরির প্রয়োজন একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। সাধারণভাবে হিসাবটা এরকম-আপনার ওজন পাউন্ডে যত তার ১৫-১৮ গুণ ক্যালরি গ্রহণ করবেন।

স্বাস্থ্যই সম্পদ

অধিকাংশ লোক যে বড় ভুলটা করেন তাহলো শরীরের দিকে তাকিয়ে তারা দৈনন্দিন খাবার গ্রহণ করেন। কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন বাদ দিয়ে আপনি হয়তো ওজন কমাতে পারবেন কিন্তু তাতে আপনার স্বাস্থ্যের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে। সুস্বাস্থ্য হলো একটি সম্পদ। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণ আপনার শক্তি বাড়াবে, পুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ করবে, উজ্জ্বলতা বাড়াবে আপনার ত্বকের এবং আপনার শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখবে। শুধু খাবার গ্রহণ করলেই হবে না, শরীর যাতে সেই খাবারটাকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারে সেটাও প্রধান বিষয় ।

সম্পর্কিত পোস্ট :

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color