Narrow selection

​​​​​​​মুসলিমরা আজ নির্যাতিত কেন? - Why are Muslims persecuted today?


15:34:35 12/04/2023

মুসলিমরা আজ নির্যাতিত কেন? - মুসলিম নির্যাতনের কারণ কি?

نَحْمَدُهُ وَنُصَلَّى عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ ـ بِسمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الحَ وَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلوةُ وَالسَّلَامُ إِذَا تَرَكْتُمُ الْجِهَادَ فَسَلَّطَ

اللهُ عَلَيْكُمُ الذِّلَّةَ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ أَى إِلَى جِهَادِكُمُ الخِ

আজকের সেমিনারের স্বনামধন্য সভাপতি, জ্ঞান বিজ্ঞানের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী! সুদক্ষ পরিচালক ও রক্তঝরা মুসলিম বিশ্বের পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সচেতন সংগ্রামী বন্ধুগণ!

পৃথিবীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে জুলুমের বহু ইতিহাস, নির্যাতনের বহু দাস্তান। এই আকাশ প্রত্যক্ষ করেছে নমরুদের উন্মত্ততা, দেখেছে ফেরাউনের বর্বরতা। এ যমিন সাক্ষী চেঙ্গিস খান আর হালাকু খানের ধ্বংস যজ্ঞের। এমনিভাবে পৃথিবীর ইতিহাসকে কলংকিত করেছে অজস্র নির্মম নির্যাতনের কাহিনী। তবে মানব সভ্যতা চরম উৎকর্ষের বর্তমান সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মি. বুশ ইসরাঈলকে সহযোগিতার নামে মুসলিম নিধনের যে ঘোষণা দিয়েছে তার বাস্তবায়নে ফিলিস্তিনে মুসলমানদের যে রক্তস্রোত প্রবাহিত হলো তাতে ভেঙ্গে গেছে অতীতের সকল রেকর্ড। যে আগুন জ্বালানো হলো তাতে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়াছে নির্যাতনের সকল রেকর্ড। যে টর্নেডো বয়ে গেছে ইরাক ও আফগানের উপর তাতে হতবাক আজ সারা বিশ্ব।

সংগ্রামী সাথীরা আমার!

আপনারা লক্ষ্য করুন, ইরাক, আফগান, আরাকান, বসনিয়া, চেচনিয়া, গুজরাট, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, লেবাননসহ বিশ্বের যে কোন প্রান্তরে মুসলমান সেখানে কেবলই নির্যাতিত। বর্বর ইসরাঈলের তাণ্ডবে আজ রক্তে রঞ্জিত ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি। আরাকানের যমিন মুসলমানের রক্ত শুষে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। আরাকানের কান্না আজ গুমড়ে ফিরছে পাহাড় থেকে পাহাড়ে, কন্দর থেকে কন্দরে, রক্ত সাগরে ভাসছে আজ গুজরাট, সেখানকার মুসলমানদের আর্তনাদে আজ আকাশ প্রকম্পিত।

রক্তের স্রোত বইছে কাশ্মীরের ঝিলাম নদীতে। ইরাক ও আফগান আজ বিধ্বস্ত মৃত্যুপুরী। রক্তস্নাত মুসলিম জনপদ থেকে ভেসে আসছে মজলুমের ফরিয়াদ, আর আর্তচিৎকার। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে রচনা করা হচ্ছে পৈশাচিকতার এক নারকীয় তাণ্ডবলীলা।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ!

ইসরাঈল বাহিনী বিগত উনিশ মাসে নৃশংস হামলা চালিয়ে অন্তত ১২০০ নিরস্ত্র মুসলমানকে শহীদ করেছে। ৫০ বছর পূর্ব হতে শুরু হওয়া এই নির্যাতনে আজ পর্যন্ত ৮০ হাজার মুসলমানকে শাহাদাৎ বরণ করতে হয়েছে। লাশগুলোকে পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইসরাঈলী কামানের গোলায় আজ ভেঙ্গে খান খান হচ্ছে লেবাননের জনপদ। পবিত্র মসজিদ মাদ্রাসাসহ অসংখ্য ধর্মীয় স্থাপনাসমূহ। আজ গুজরাটের মুসলিম নিধনের চিত্র তুলে ধরলে শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়ে যায়। সেখানে মুসলমানদের ওপর চলছে হত্যা-জুলুম-নির্যাতনের স্টীম রোলার।

আমার ছোট ছোট বোন, নাবালিকা কিশোরীদের রাস্তায় এনে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করছে। নারীদের সতীত্ব হরণ করে শরীরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। বুকের সন্তানকে মায়ের সামনে মেরে ফেলছে। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মুসলমানের রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় মেতে উঠছে। খুন, জখম, লুটপাটের মহড়া প্রদর্শন করছে।

আফগানের মাটি আজ গলিত তামায় পরিণত হয়েছে। সেখানকার অসহায় জনগণ ছিন্নবস্ত্র গায়ে জড়িয়ে শীতের প্রকোপে ঠকঠক করে কাঁপছে। অনাকাংখিত যেন এদের অস্তিত্ব, এরা আজ অনুকম্পা প্রাপ্তির অনুপযুক্ত। এই হৃদয়গুলো আল্লাহ সমর্পিত, এটাই তাদের অপরাধ। কিউবার গোয়ানতানামো বে-দ্বীপে আমেরিকার কাঁটাতার ঘেরা খাঁচাবন্দী তালেবান মুজাহিদরা আজ নির্মম পাশবিকতার শিকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাদের চোখ-কান-মুখ। অত্যাচারে অত্যাচারে তারা আজ এক একটি জীবন্ত লাশ। একটি তুচ্ছ পশুর অধিকার থেকেও এরা আজ বঞ্চিত।

চেচনিয়ার মা-বোনেরা আজ চিৎকার করে বলছে, ওহে ভীরু মুসলিম যুবকেরা! তোমাদের বোনের ইজ্জত তো তোমরা রক্ষা করতে পারবে না, তার চেয়ে আমাদের জন্য সম্মানজনক মৃত্যুর কোন সন্ধান বলে দাও যাতে কোন মার্কিনীর বাচ্চার জন্ম দিতে না হয়। বসনিয়ায় ধর্ষণের শিকার হয়ে কুমারী মুসলিম মাতারা এ বিশ্বের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে মুক্তির স্বাদ পেতে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার মত নির্মম পথকে। মেসেডোনিয়া, আলজেরিয়া, তুরস্ক আর নাইজেরিয়ার আত্মসচেতন মা-বোনদের ওপর চলছে অকথ্য নির্যাতন। আরাকানের মুসলমানরা আজ নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গা তরুণীদের নিয়ে নাসাকা বাহিনী পৈচাশিক উল্লাসে মত্ত। ঐ তরুণীরা চিৎকার করে বলছে-

رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا الخ

হে আল্লাহ! এই জালেম আর পিশাচদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা কর এবং এই জালিম জনপদ থেকে আমাদেরকে বের করে দাও ।

-সূরা নিসা : ৭৫

وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَلُ لَنَا مِنْ لَّدُنكَ نَصِيرًا -

অর্থাৎ, আমাদের জন্য একজন রক্ষক পাঠিয়ে দিন। -সূরা নিসা : ৭৫ কোথায় আজকে মানবতার ধ্বজাধারীরা? একটি কাক নিহত হলে সারা বিশ্বে তোলাপাড় সৃষ্টি করা হয় অথচ লাখ লাখ মুসলমানকে শহীদ করা হচ্ছে, হাজার হাজার মুসলমানকে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করা হচ্ছে, অসহায় তরুণীদের ইজ্জত লুন্ঠন করা হচ্ছে, তাদের চিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে; কিন্তু এই সব মানবতাবাদের ধ্বজাধারীদের কর্ণকুহরে তাদের আর্তচিৎকার প্রবেশ করে না, তাদের বিবেকের দুয়ারে আঘাত হানতে পারে না।

দ্বীনী ভাইয়েরা আমার!

কানাডিয়ান ইসলামিক প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত গত ৯০০ বছরে ৫৫ লাখ মুসলমানকে শহীদ করা হয়েছে আর ৪০ লাখ মুসলমানকে বাস্তুহারা করা হয়েছে। মুসলমানদের এ দুর্দশার কারণ সম্পর্কে স্বয়ং কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-

وَدَّالَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ

عَلَيْكُمْ مَيْلَةً وَاحِدَةً الخ

অর্থাৎ, কাফের বে-ঈমানেরা আশা করে যাতে তোমরা কোনরূপে অসতর্ক থাক, আর সে সুযোগে একযোগে তারা তোমাদের উপর আক্রমণ করে বসে। -সূরা নিসা : ১০২

হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে- إِذَا تَرَكْتُمُ الْجِهَادَ فَسَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الذِّلَّةَ الخ

তোমরা জিহাদ ছেড়ে দিবে, JL

ছেড়ে দিবে, তো জিল্লতির শেষ

সীমায় পৌঁছে দেয়া হবে। হাঁ, যদি আবার জিহাদের পথে ফিরে আসো তবে বিজয় তোমাদের পদচুম্বন করবে। মুসলমানদের দুর্দশার কারণ সম্পর্কে স্বয়ং পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে-

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلا تَفَرّقُوا -

তোমরা ঐক্যবদ্ধ থেকো, কখনো বিভক্ত হয়ো না।

-সূরা আলে ইমরান : ১০২ ইতিহাস সাক্ষী যখনই মুসলিম শক্তি শতধা বিভক্ত হয়েছে, তখনই কুফরী শক্তি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ !

মুসলমানদের এই দুর্দশা মোচন করতে হলে শুধু লম্বা লম্বা বুলি আউড়িয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখলে হবে না। এর জন্য চাই কার্যকারী পদক্ষেপ। তাই মুসলমাদের এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে উত্তরনের উপায় হচ্ছে, সর্বপ্রথম আমাদেরকে জনগণের মধ্যে আত্মচেতনা সৃষ্টি করতে হবে এবং কুফুরী শক্তির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যেতে হবে। মুসলিম জাতিসংঘ গড়ে তুলতে হবে। সামরিক শক্তি অর্জন করতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। সেই সাথে নিজেকে একজন কলম সৈনিক, বাগ্মী ও সমর সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অভ্যন্তরীন কলহ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কুফরী শক্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে। তাহলেই হবে আজকের আলোচনা স্বার্থক।

পরিশেষে বলতে চাই-

এখনও কেন, বুদ হয়ে আছিস নিদ্রাদেবীর কোলে,

জেগে ওঠ, তুইরে মুসলমান

জিহাদের নিশান তুলে।

نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color