কওমী মাদ্রাসায় কেন এলাম - Why did I come to Qaumi Madrasa?
15:41:05 12/04/2023
কওমী মাদ্রাসায় কেন এলাম
الحَمْدُ لِاهْلِهِ وَالصَّلوةُ لِاهْلِهَا أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ بِسمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُم طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ
يَحْذَرُونَ - صَدَقَ اللَّهُ الْعَظِيمُ -
আজকের এই বর্ণাঢ্য সেমিনারের স্বনামধন্য সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, নববী চেতনায় উজ্জীবিত কওমী বন্ধুরা আমার!
কালের আবর্তে ঘুরপাক খেয়ে আমরা উপনীত হয়েছি নতুন শিক্ষাবর্ষে। সেই সাথে দাঁড়িয়েছি জাতির এ কঠিন ক্রান্তিলগ্নে, বিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে । যে শতাব্দীর ঊষালগ্নে জাতি একদিকে যেমন পেয়েছে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের ছোঁয়া। ঠিক তেমনি পেয়েছে মানুষকে অবলীলাক্রমে হত্যা করার পারমানবিক নামের অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার। কিন্তু পায়নি মানব সভ্যতার কোন আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা ও মানবতার ছিটাফোটাও। তাই তো জাতি আজকে গগনবিদারী আওয়াজ তুলে চিৎকার করে বলছে আমাদেরকে একজন রাহবার দাও। আমরা মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই। আমাদেরকে তাদের আহ্বানে সাড়া দিতে হবে এবং আমাদেরকে হতে হবে জাতির কাণ্ডারী। এই লক্ষ্য অর্জনের যোগ্য কর্মী হিসাবে গড়ে উঠার নিমিত্তেই কওমী মাদ্রাসাতে আমরা এসেছি।
সম্মানিত উপস্থিতি!
মূলতঃ শিক্ষাই হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষাই একটি জাতির প্রকৃত সফলতা ও ব্যর্থতার মানদণ্ড। কিন্তু যখন শিক্ষাই হয় সকল অনিষ্টের মূল এবং শিক্ষা অর্জন করেও যখন সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা সম্ভব না হয়; তখন সে শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে অজ্ঞ মূর্খ থাকাই শ্রেয় ।
প্রিয় বন্ধুগণ!
এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ে যায় ভারত স্বাধীনতার অগ্রনায়ক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ (র.) এর একটি কথা। তিনি অত্যন্ত চমৎকার বলেছেন ঐ আন্দোলন থেকে বসে থাকাই উত্তম, যে আন্দোলন তোমাকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবে।' আমি তাঁরই সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই- ঐ শিক্ষা থেকে নিরক্ষর ও অজ্ঞ থাকাই উত্তম, যে শিক্ষা মানুষকে অন্ধকারের চোরাবালিতে বিলীন করে দেয়।
সুপ্রিয় নবীন ও প্রবীণ বন্ধুরা!
আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এ গন্তব্যহীন চোরাবালিতে নিজেদেরকে বিলীন না করে খোদায়ী রাস্তায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করার জন্যই কওমী মাদ্রাসায় এসেছি। আমরা কওমী মাদ্রাসায় এসেছি আকাবির আসলাফদের পূর্বসূরী মহামনীষীদের পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য। ইসলামী আন্দোলনের শিখাকে দেশ হতে দেশান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ।
সুধীমণ্ডলী !
আমরা কওমী মাদ্রাসায় এ জন্য এসেছি যেন পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াত এর উপর আমল করতে পারি । সর্বোপরি দাওয়াত, তা'লীম, তারবিয়াত, তাজকিয়া, সিয়াসাত, তাসনীফ, তালীফ ও সর্বাত্মক জিহাদের প্রস্তুতি নেয়ার মত জ্ঞান অর্জন করার জন্য কওমী মাদরাসায় এসেছি। নিজেদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কওমী মাদরাসায় এসেছি আর এর জন্য সর্বাগ্রে আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। ইলম অর্জন তথা আমাদের উদ্দেশ্য সফলের জন্য দিবা-রাত্র ২৪ ঘন্টা সময়কে কাজে লাগাতে হবে। পূর্বসূরী উলামায়ে কিরামদের নীতি-আদর্শ মুতাবেক ইলমের জন্য সর্বোচ্চ কুরবানী স্বীকার করতে হবে। আমি পরিশেষে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই- শুধু বক্তৃতা নয়, সেমিনার নয়, দারুল উলূম দেওবন্দের যে নীতি ও আদর্শ রয়েছে সেগুলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে স্বোচ্চার হতে হবে। তাহলেই আজকের আলোচনা সাৰ্থক হবে। কবির কণ্ঠে বলছি-
দিকে দিকে পুনঃ জ্বলিয়া উঠেছে দ্বীন-ইসলামের লাল মশাল! ওরে বে-খবর তুইও ওঠ জেগে
তুইও তোর প্রাণ প্রদীপ জ্বাল ।
نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ