হার্ট অ্যাটাক কেন হয়? সমাধান - Why do heart attacks occur? solution
06:20:01 12/11/2023
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়? সমাধান
নিয়মিত আপনি ব্যায়াম করুন বা না করুন, খাবারের ব্যাপারে যতই সতর্ক হোন, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০-এর নিচে নামিয়ে আনুন না কেন-আপনার হার্ট অ্যাটাক ঘটতে পারে যে কোনো সময়। পুরুষদের মতো নারীদের ক্ষেত্রেও একথা সমান প্রযোজ্য । হার্ট অ্যাটাক হলে সময় মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারলে মৃত্যু অবধারিত। হার্ট অ্যাটাকে খুব অল্প সময়েই রোগীর মৃত্যু হতে পারে—এমনকি সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
কেন এই হার্ট অ্যাটাক
আমাদের হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের সমস্ত কোষে পুষ্টি, অক্সিজেন এবং অন্যান্য উপাদান পৌঁছে দেয়। তবে তার নিজের সুস্থতার জন্যও প্রয়োজন হয় এসব উপাদানের, যা সে সংগ্রহ করে ধমনীর মাধ্যমে। যে ধমনীর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড পুষ্টি, অক্সিজেন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে তার নাম করোনারি ধমনী। এই ধমনী দু'ভাগে বিভক্ত। কোনো কারণে এই ধমনীতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে হৃৎপিণ্ড প্রয়োজনীয় রক্ত পায় না এবং হৃৎপিণ্ডের সংশ্লিষ্ট অংশটুকু মরে যায়। এটাই হার্ট অ্যাটাক। এ সময়ে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
রোগী তীব্র ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে যেতে পারেন। রোগী বাঁচবেন কিনা তা নির্ভর করে রোগীর হৃৎপিণ্ডের কত অংশ আক্রান্ত হয়েছে এবং কত দ্রুত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার উপর। অবশ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নেবার আগেই অধিকাংশক্ষেত্রে রোগী মারা যায়। রোগীর হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাবার একটি প্রধান কারণ হলো এথেরোসক্লেরোসিস। যার অর্থ করোনারি ধমনীর ভেতরের গায়ে কোলেস্টেরলসহ বিভিন্ন চর্বি জাতীয় উপাদান জমা হওয়া।
এতে ধমনীর মধ্যকার ব্যাস কমে যায় অর্থাৎ রক্তনালির ভেতরের দিকটা সরু হয়ে যায়। এর ফলে হৃৎপিণ্ডে প্রয়োজনের তুলনায় কম রক্ত সরবরাহ হয়। রক্তনালি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলেই তবে হার্ট অ্যাটাক হয়। যে কারো যে কোনো সময়ে হার্ট অ্যাটাক হলেও কিছু ঝুঁকি পূর্ণ বিষয়কে হার্ট অ্যাটাকের জন্যে দায়ী বলে বিবেচনা করা হয়। যেমন-
উচ্চরক্ত চাপ : রক্তচাপের দীর্ঘস্থায়ী উত্তোলন, রক্ত কর্তৃক ধমনীর দেয়ালের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয়গুলো ধমনীর গায়ে চর্বির জমাট বৃদ্ধি করে।
ধূমপান : যেসব ব্যক্তি দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খান যারা খান না তাদের চেয়ে হার্ট অ্যাটাকের দ্বিগুণ ঝুঁকি থাকে। সিগারেটের নিকোটিন ধমনীসমূহের দেয়ালে ক্ষতিসাধন করে।
সম্পৃক্ত চর্বি : সম্পৃক্ত চর্বি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং এটা হার্ট অ্যাটাকের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত প্রাণীর চর্বিতে অধিক পরিমাণ সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে। যেসব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, দুগ্ধজাত পণ্যাদি; যেমন- মাখন, পনির প্রভৃতি।
ডায়াবেটিস : যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে রোগীর করোনারি হৃদরাগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কর্মবিমুখতা : যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন না সাধারণত দেখা যায় তাদের করোনারি হৃদরোগের প্রবণতা খুব বেশি। কারণ কাজ না করে বসে থাকলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক দুশ্চিন্তা এবং অত্যধিক মানসিক চাপের রোগীদের হার্ট অ্যাটাকে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যারা নিজেদের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে করেন এবং অত্যধিক উচ্চাভিলাসী হন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি : যেসব মহিলা দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করছেন তাদের মধ্যে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস : রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের রোগীর কী কী উপসর্গ প্রকাশ পায়
- দীর্ঘ সময় ধরে বুকে ব্যথা।
- এ ব্যথা গলায়, বাহুতে, পেটের উপরিভাগে কিংবা পিঠে হতে পারে।
- সীমাহীন উদ্বেগ, মৃত্যুভয় ।
- বমি বমি ভাব, বমি ।
- শ্বাসকষ্ট। ছোট ছোট শ্বাস ফেলা।
- ত্বক ফ্যাকাশে ও ঘামে স্যাতস্যাতে হওয়া।
- হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া।
- অনেক ক্ষেত্রে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা।
প্রাথমিক কী চিকিৎসা করতে হবে
- রোগীকে আরামদায়ক স্থানে শুইয়ে দিয়ে তাকে সাহস জোগাতে হবে। রোগীর পাশে
- ভিড় করা যাবে না ।
- ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে।
- শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে মুখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস এবং বুকে, হৃৎপিণ্ডের ওপর ম্যাসাজ করতে হবে। পরনের পোশাক ঢিলা করে দিতে হবে।
- রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে।