Narrow selection

নারী শিক্ষানীতি ও অধিকার - Women's education policy


02:59:19 12/04/2023

নারী শিক্ষানীতি ও অধিকার

পবিত্র আল-কোরআন এবং সুন্নাহ যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই, আল্লাহ পাক নারী জাতিকে শিক্ষার অধিকার দান করেছেন। 

আল্লাহ বলেন- اقرا باسم ربک الذی خلق

“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।” অর্থাৎ হে পুরুষ তুমিও পড় হে নারী তুমিও পড়। আমি একথা চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলতে চাই, একটি আয়াত কিংবা একটি হাদীস এমন পেশ করুন যেখানে নারীকে শিক্ষা দেয়া যাবেনা বলে ঘোষণা করা হয়েছে । অথবা এমন কোন আয়াত বা হাদীস পেশ করুন যদ্দারা আপনি প্রমাণ করবেন যে, নারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা পুরুষের তুলনায় কম। আপনার ছেলে-মেয়ে দু'জন আছে, ছেলেকে পড়ানোর জন্য আল্লাহর নবী বেশী তাকিদ দিয়েছেন এবং নারীকে শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে কম তাকিদ দিয়েছেন মর্মে একটি হাদীস আপনি পেশ করুন। 

 

 

আমাদের মুসলিম সমাজে নারীকে জ্ঞান বর্জিত করার যে একটা চর্চা প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে এটা ইসলাম নয়, এটা ইসলামের নামে একটি অপ-সংস্কার। আমরা যদি আল্লাহর নবীর যুগে, সাহাবায়ে কেরামের যুগে বা তাবেঈনদের যুগে ফিরে যাই, তাহলে আমরা দেখতে পাব, আল্লাহর নবীর যুগ থেকে আরম্ভ করে ইমামদের যুগ পর্যন্ত নারীকে কোন রকমের অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়নি। সে সোনালী যুগের বাবারা কন্যাদের শিক্ষা দান করেছে। ভাইয়েরা তাদেরকে শিখিয়েছে । যথাযথ ইসলামী জ্ঞান তাদেরকে দান করা হয়েছে ।

ইসলামের বিভিন্ন যুগে আমরা দেখতে পাই, পুরুষের তুলনায় নারীরা ইসলামী জ্ঞানের দিক থেকে অনেক অগ্রসর ছিলেন। আমি একটি আর্টিক্যাল রচনা করেছিলাম । শিরোনাম হল “ইসলামী যুগে নারী শিক্ষা।”” ইসলামী যুগ বলতে বুঝায় আল্লাহর নবীর যুগ, সাহাবীদের যুগ, তাবেঈনদের যুগ এবং তাবে- তাবেঈনদের যুগ। অনেক তথ্য আমি সংগ্রহ করেছি, ইনসাইক্রোপিডিয়া ও হাদীস শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থ হতে। আমি অবাক হয়ে দেখতে পেলাম যে, পুরুষদের চেয়ে নরীরা ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক খানি অগ্রসর ছিল। আমার কথাগুলো হতে পারে আমাদের প্রচলিত ধ্যান ধারণার বিরুদ্ধে। তবে এটাই সত্য, প্রমাণ হিসেবে আমরা বুখারী শরীফ পড়ি, বুখারী শরীফের দ্বিতীয় অধ্যায় all pls 'জ্ঞানের অংশ । এই অংশ যখন আপনি পড়তে থাকবেন, তখন আপনার সামনে হাদীসের একটি অধ্যায় আসবে, 

ইমাম বোখারী শিরোনাম রেখেছেন-

باب هل يجعل النساء يوم على حدة لتعليمهن

“মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য পৃথক একটি দিন নির্ধারণ করা হবে কি-না?” সেই অধ্যায়ের মধ্যে হযরত আবু সাঈদ আল খুদরীর (রাজিঃ) বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে । তিনি বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্র নবীর দরবারে কয়েকজন মহিলা এসে বলল হে আল্লাহর রাসূল! মসজিদে আলোচনা করেন, আমরা পিছনের কাতারে থাকি, আমরা ভালভাবে আয়ত্ব করতে পারিনা, আমাদের জন্য আপনি পৃথক একটি দিন নির্ধারণ করেন যে দিন শুধু আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন ।* এটা হচ্ছে মেয়েদের আবেদন, আল্লাহর নবী উত্তরে বলেননি যে, না, মেয়েদেরতো অত শিক্ষার দরকার নেই। অথবা তিনি বলেননি যে, না, মেয়েদেরকে আলাদা দিনে আমি পড়াতে পারব না। 

আল্লাহর নবী বলেছেন যে, ঠিক আছে তোমাদের জন্য পৃথক একটা দিন নির্ধারণ করা হল। সেই দিন মহিলারা আল্লাহর নবীর দরবারে আসল এবং আল্লাহর নবী তাদেরকে অধিকার দিলেন যে, তোমরা প্রশ্ন কর এবং যা যা জানার তা আমার কাছ থেকে জেনে নাও । নানা বিষয়ে তারা জিজ্ঞেস করল এবং আল্লাহর নবী তাদেরকে উত্তর দিলেন। বোখারী শরীফের এ অংশে আরেকটি অধ্যায় আপনি পাবেন, নিজের মেয়েকে যদি কেউ শিক্ষা দিয়ে বড় করে, ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানী করে, যে ইলম অর্জন করা ফরজ তা যদি কোন কন্যা সন্তানকে শিক্ষা দেয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে পিতাকে জান্নাত দান করবেন। * এটা আল্লাহর নবীর ঘোষণা ।

আমার একজন ছেলে আছে, একজন মেয়ে আছে, ছেলেকে হাফেজ বানালাম, মেয়েকে কুরআনটাও পড়তে শিখালামনা, আমি মনে করি কেয়ামতের ময়দানে এই মেয়ে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। যখন দেখবে তার ভাই যাকে একই পরিবারে লালন-পালন করা হয়েছে সে ভাই এক আয়াত পড়ছে এক তলা উপরে উঠছে, এভাবে ছয় হাজার তলার উপরে যখন ভাই উঠবে তখন মেয়ে দুঃখে, ক্ষোভে ফেটে পড়বে। আল্লাহর দরবারে বাবার বিরুদ্ধে বলবে হে আল্লাহ! তুমিতো আমার বাবাকে দু'জন সন্তান দিয়েছিলে। একজন ছেলে, অপরজন মেয়ে । 

আমার বাবা আমার ভাইকে এত মর্যাদার আসনে আসীন করল, আজ ছয় হাজার তলার উপরে সে স্থান পেল, আমার ভাইয়ের কারণে আমার বাবাকে তুমি মুকুট পরালে, সূর্যের আলোর চেয়েও যেটা বেশী আলোক উজ্জল এবং তাকে দশজন মানুষ সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার অধিকার দিলে। হে আল্লাহ! আমি কি কুরআন শিখতে পারতামনা, কোরআন হেফজ করতে পারতামনা । আমারও কি এতটুকু মেধা ছিলনা যে আমি কুরআন শিখব? কিন্তু আমাকে তো সে পরিবেশে দেয়া হয়নি, আমাকে তো সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে । 

আমিও যদি সে সুযোগ পেতাম আজকে আমিও ছয় হাজার তলায় উঠতে পারতাম। কেন আমার বাবা আমার বিরুদ্ধে বৈষম্য করলেন, এই বৈষম্যের জবাব চাই। বাবারা তখন আটকে যাবে। দ্বীনদার বাবা যিনি প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করেন, হজ্ব আদায় করেন, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন ছেলেকে আলেম করলেন, অথচ মেয়েকেও যে দ্বীনি শিক্ষা দিতে হয় এ ব্যাপারে তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি। ছেলেকে বড় আলেম করলেন আর মেয়েকে স্কুল কলেজে দিলেন, আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। ইসলাম নারীকে জ্ঞানার্জনের সুযোগ দান করেছে। হযরত আয়েশা (রাজিঃ) এর জীবনী যদি আমরা চর্চা করে দেখি, তাহলে দেখতে পাই হযরত উরওয়া (রাজিঃ) বলেন- Jolill ple! dils মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন হযরত আয়েশা । এখানে মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানের অধিকারী বলা হয়নি, বলা হয়েছে “সকল মানুষের মধ্যে তিনি ছিলেন বড় জ্ঞানী।” নর-নারী উভয়ের মধ্যে হযরত আয়েশা ছিলেন জ্ঞানী ফেকহার জ্ঞান ছিল, । 

সাহিত্য-কবিতার জ্ঞান তার ছিল libs এবং চিকিৎসার জ্ঞান তার কাছে সবার চেয়ে বেশী ছিল।" হযরত আবু বকরের মত বড় সাহাবী যিনি তাঁর পিতা কোন ব্যাপারে সমস্যায় পড়লে হযরত আয়েশার কাছে আসতেন। বড় বড় সাহাবাগণ তার কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসতেন। আর হযরত আয়েশা তার সমাধান পেশ করতেন । রিজাল শাস্ত্রের (জীবনী কোষ) কিতাবগুলো যথা : all jeal এই বিখ্যাত কিতাবে সাহাবাদের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, এই কিতাবগুলো পর্যালোচনা করলে আপনি দেখবেন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মহিলা সাহাবীর নাম আমরা খুঁজে পাই, যারা বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং হাদীস বর্ণনা করেছেন । আল্লাহর নবীর যুগে এতগুলো মহিলা জ্ঞানী তিনি তৈরী করেছিলেন। তাহলে বুঝা যায়, ইসলাম নারীকে অন্ধকারে রাখেনি । 

তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগকে বন্ধ করে দেয়নি। পর্দা ও শালীনতার সীমারেখায় থেকে মা-বাবা এবং প্রাপ্য । এই অধিকার থেকে যদি আমরা তাদেরকে বঞ্চিত করি, তাহলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রশ্ন জাগে, শিক্ষার অধিকার মানে এই নয় যে, নর এবং নারীকে বেপর্দা করে একই সাথে একই টেবিলে বসিয়ে শিক্ষা দিতে হবে । ইসলাম এটাকে সমর্থন (Support) করে না । এটাকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । নারীকে পৃথক জায়গায় শালীনতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষা দেয়া অভিভাবকদের জন্য দায়িত্ব এবং ফরজ । খোলাখুলি সহ শিক্ষা ইসলাম সমর্থন করেনা।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা এবং যৌনতা, শিক্ষা এবং তথাকথিত প্রেম ভালবাসা একাকার হয়ে গেছে । যার কারণে শিক্ষা আলোর পরিবর্তে অন্ধকার ছড়াচ্ছে। অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর জীবন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। যেখানে আলোকিত হওয়ার কথা, সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার দূর্বলতার কারণে তার জীবন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, হতে হবে সোচ্চার।

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color