Narrow selection

নির্যাতিত মুসলিম জাতি : বিশ্ব মুসলিমের করণীয়- World Muslims must do


06:01:50 12/04/2023

নির্যাতিত মুসলিম জাতি : বিশ্ব মুসলিমের করণীয়

نَحْمَدُهُ وَنُصَلِّي عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ اَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَلَتَحِدَّنَ أَشَدَّ النَّاسِ

عَدَاوَةَ لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا -

عَنِ النُّعْمَانِ بنِ بَشِيرٍ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُؤْمِنُونَ كَرَجُلٌ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى

كله - رواه مسلم

সম্মানিত সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, ও বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সচেতন সংগ্রামী বন্ধুরা আমার!

আজ মুসলামানের রক্ত ঝরছে কাশ্মীরে, রক্তের বন্যা বইছে গুজরাটে, রক্ত সাগরে ভাসছে ফিলিস্তিন, ট্যাংকের গোলার আঘাতে শহীদ হচ্ছে লেবাননের মুসলমানরা। পৃথিবীর মানচিত্র আজ মুসলিমের রক্তে রঞ্জিত, রক্তস্নাত মুসলিম জনপদগুলো থেকে ভেসে আসছে মজলুমের ফরিয়াদ, নির্যাতনের কান্না, আবাল বৃদ্ধ বনিতার আর্তচিৎকার-

رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا الخ

অর্থাৎ, হে আমাদের রব! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী।-সূরা নিসা : ৭৫

আমি মনে করি সে আহবানে সাড়া দেওয়ার মতো দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে আজকের আলোচ্য বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে- “নির্যাতিত মুসলিম জাতি; বিশ্ব মুসলিমের করণীয়।”

বিদগ্ধ সুধী!

পৃথিবীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে জুলুমের বহু ইতিহাস, নির্যাতনের বহু দাস্তান। এই আকাশ দেখেছে নমরুদের উন্মাদনা, প্রত্যক্ষ করেছে ফেরাউনের বর্বরতা। এ যমীন সাক্ষী চেঙ্গীস খান আর হালাকু খানের ধ্বংসযজ্ঞের। এমনিভাবে পৃথিবীর ইতিহাসকে কলংকিত করেছে অজস্র নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস। তবে মানব সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগেও বর্তমান সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মি. বুশের মুসলিম নিধনের যে প্লান-প্রোগ্রাম তার বাস্তবায়নে শুধু ফিলিস্তিনে মুসলমানদের যে রক্ত স্রোত প্রবাহিত করা হলো তাতে ভেসে গেছে অতীতের সকল জুলুমের ইতিহাস। যে আগুন জ্বালানো হলো গুজরাটে তাতে জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে গেছে নির্যাতনের সকল রেকর্ড। যে রকেট, বোমা ও বিমান হামলায় জর্জরিত হলো আফগান, লেবানন, তা মানবতার মাথাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।

জাগ্ৰত বন্ধুগণ!

যে জুলুমের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বাকশক্তি স্তব্ধ হয়ে যায়। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ শিউরে উঠে। বাকরুদ্ধ হয়ে আসে কণ্ঠ। কাক ডাকা ভোরে নিদ্রা শয্যা ত্যাগ করার পূর্বেই ইথারে ভেসে আসে মুসলিম মা বোনদের নির্যাতনের করুণ আর্তনাদ। ঘরে সদ্য ভূমিষ্ট শিশু থেকে অশিতিপর বৃদ্ধের বুক ফাটা আর্তচিৎকার। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে মানবতাকে দুমড়ে মুচড়ে রচনা করা হচ্ছে পৈশাচিকতার এক নারকীয় ইতিহাস। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী ইসরাইল বাহিনী বিগত ১৯ মাসে নৃশংস হামলা চালিয়ে অন্তত ১২০০ নিরস্ত্র মুসলমানকে শহীদ করেছে যার মধ্যে চারশতজন কেবল শিশু।

পঞ্চাশ বছর পূর্ব হতে শুরু হওয়া এই নির্যাতনে আজ পর্যন্ত ৮০ হাজার মুসলমানকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। গত মার্চের শেষ দিকে ১৩ দিনেই ইসরাইলী বর্বর বাহিনীর হাতে শুধু পশ্চিম তীরেই শহীদ হতে হয়েছে ৫ শতাধিক ফিলিস্তিনী মুসলমানকে। সে সময় জেনিন শহরে শত শত লাশ বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে- ইসরাইলিদের কামানের গোলায় ভেঙ্গে খান খান হয়েছে পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসা সহ অসংখ্য ধর্মীয় স্থাপনা। হাজার হাজার অবলা নারী শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অসংখ্য মুসলমান নারী পুরুষ আহতাবস্থায় হাসপাতালে আশ্রয় গ্রহণ করে চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

হে মরণজয়ী কাফেলার সংগ্রামী বন্ধুরা আমার!

এমনি ভাবে গুজরাটের মুসলিম নিধনের চিত্র তুলে ধরলে শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়ে যায়। হৃদয় তন্ত্রীতে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে আগুনের লেলিহান শিখা, যা শুনলে সর্বনিম্ন মানের মুমিনের ধমনীতেও বিদ্যুৎগতিতে সঞ্চারিত হবে শাহাদাত আর জিহাদের অদম্য স্পৃহা। সেখানে মুসলমানদের উপর চলছে হত্যা-জুলুম, নির্যাতনের স্টীম রোলার। মুসলিম তরুণীদের ইজ্জত হরণ করা হচ্ছে। আবু উসমানের বর্ণনাতেই শোন- ২৮মে ২০০৩ একদল উগ্র-উন্মাদ হিন্দু দুর্বৃত্তরা আমার ২১ বছরের বোনকে গণধর্ষণ করেছে। আমার পরিবারের ৭ জন সদস্যকে পুড়ে মেরেছে।

ঐ শোন সুলতানী নামক এক নারীর আর্তচিৎকার, যার বুক থেকে টেনে হিচড়ে ছিনিয়ে নিয়ে অবুঝ শিশুকে নিক্ষেপ করে তার ইজ্জতকে হরণ করা হয়েছে। আর শিশুটির মার গগন বিদারী আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারীই হয়েছে। ঐ শোন ২৮মে পত্রিকার রিপোর্টে আরেক লোমহর্ষক ঘটনা- ৩০ বছরের নাসিরুদ্দীনের স্ত্রী তারিনা বাঁচার তাগিতে দেওয়াল টপকাতে গিয়ে আটকা পড়ে গণ ধর্ষনের শিকার হয়েছে। তোমাদের কর্ণকুহরে কি এখানে প্রবেশ করেনি তোমাদেরই মা কাউসার বানুর করুণ কাহিনী- সেই মায়ের গর্ভের ৯ মাসের নিষ্পাপ শিশুকে উগ্র হিন্দুরা তার পেট কেটে বের করে আগুনে নিক্ষেপ করে তার মাকেও জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে।

আহ! কি করুণ দৃশ্য! কি হৃদয় বিদারক কাহিনী! কি লোমহর্ষক চিত্র যা জাহিলিয়াতের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ঐ তো ইথারে ভেসে আসছে অশ্রুসিক্ত কুলসুমের করুণ স্বর। আমি স্বচক্ষে দেখলাম ঐ হিন্দু হায়েনারা ৮-১০ টি নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করছে। নিষ্পাপ ষোড়শী মেহেরুন্নেছাকে আমার সামনেই প্রকাশ্য রাস্তায় ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণ শেষে ঐ নির্দোষ মেয়েটির যৌনাঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করে তার সারা শরীরে আগুন ধরিয়ে দিলো। এও কি কোন মানুষের কাণ্ড হতে পারে!

হে আযাদী কাফেলার সংগ্রামী বন্ধুরা!

সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার। জালিম কাফেরদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার। মুসলিম উম্মাহকে ঐ দুর্দশা থেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে ডা; এর বলিষ্ঠ আহবানকে গ্রহণ করে সকল বিভক্তি ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে হবে। মুসলিম নিপীড়নের এহেন মুহূর্তে আমাদেরকে ও.আই.সি. আরব লীগের ন্যায় পুতুল সংগঠন নয় বরং ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত মজবুত বাহিনী গঠন করতে হবে। এর মুকাবেলায় একটি শক্তিশালী মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আল জাজিরার মত সত্য প্রকাশে নির্ভীক ইসলামপন্থী প্রচার মিডিয়া গড়ে তুলতে হবে।

মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের দোসর আমেরিকার পা চাটা সেবাদাস পুতুল সরকারগুলোকে উৎখাত করে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় সদা তৎপর নির্ভীক সাহসী সরকার গঠন করতে হবে। এ জন্য দেশে দেশে গড়ে উঠা মুসলিম গণআন্দোলন গুলোকে গণ বিপ্লবে পরিণত করতে হবে। ভেবে দেখুন, আজ মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মাদের ন্যায় বিশ্বের মুসলিম শাসকগণ যদি অন্ততঃ যথার্থ প্রতিবাদীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারতো তবে হয়তো এই করুন ট্রাজেডী রচনার পথে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হত।

হে খুনরাঙ্গা পিচ্ছিল পথের সহযাত্রী বন্ধুরা আমার!

আজকে দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন হবে আর তোমরা চুপটি মেরে বসে থাকবে? তোমাদের ধমনীতে খুন থাকবে আর মুসলিম মা-বোনদের আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠবে? তা কখনো হতে পারে না। তাই শেরে খোদা হযরত আলী (রা.)-এর বলে বলীয়ান হয়ে হামজার স্পিরিট বুকে ধারণ করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জেগে উঠ সালাউদ্দীন আইয়ুবীর উত্তরসূরীরা, জেগে উঠ তারেক বিন জিয়াদের নির্ভীক সন্তানেরা। আবর্তিত হও মুহাম্মদ বিন কাসিমের দুরন্ত ভূমিকায়। আঘাত হানো জালিমের সকল জিন্দানখানায়। আঘাত হানো চূড়ান্ত আঘাত ।

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color