google adsense accoun - এডসেন্স বিজ্ঞাপনের টাকা হালাল নাকি হারাম?
12:51:03 12/03/2023
এডসেন্স বিজ্ঞাপনের টাকা হালাল নাকি হারাম? এ বিষয়ে অনেক মুফতি ও স্কলাররা সমাধান দিয়েছেন। তবে আমি ব্যতিক্রম কিছু তথ্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হলাম। আশা করি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে ভিডিওটি দেখলে সকল বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ
https://youtu.be/eqORgqKjBWc
অ্যাডসেন্স কি?
অ্যাডসেন্স হলো গুগলের বিজ্ঞাপন প্রচার প্রোগ্রাম। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে গুগল তৃতীয় পক্ষের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ওয়েবমাস্টার এবং ব্লগের মালিকদের নিকট বণ্টন করে। ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা অর্থ উপার্জন করতে পারে। বিজ্ঞাপণদাতাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৬৮ শতাংশ কনটেন্ট এর ক্ষেত্রে এবং ৫১ শতাংশ সার্চ এর ক্ষেত্রে, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের মাধ্যমে বিতরণ করে গুগল।
যেমন মনে করুন আপনার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। আপনার ব্যবসার পণ্য প্রচার করার জন্য গুগলের নিকট আবেদন করলেন। পরবর্তীতে গুগলের মালিক আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবে প্রচার করবে। তখন আপনার থেকে প্রাপ্ত টাকা google রাখবে বর্তমান ৩২%, কনটেন্ট ক্রিয়েটর দেবে ৬৮%।
এবার প্রশ্ন হল এডসেন্স এর টাকা হালাল নাকি হারাম? এ বিষয়টি বুঝতে আপনাকে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত জানতে হবে। কারণ বিষয়টি বেশ জটিল।
ইসলামী শরীয়তের আইনে যদি এডগুলোকে ভাগ করা হয় তাহলে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন হালাল বিজ্ঞাপন, মাকরূহ বিজ্ঞাপন, হারাম বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইটে অসংখ্য বিজ্ঞাপন দেখা যায় যেগুলো সম্পূর্ণ হালাল। যেমন এখানে দেখুন কয়েকটি বিজ্ঞাপন ইসলামী মিডিয়া ওয়েবসাইট থেকে স্ক্রিনশর্ট নেওয়া হয়েছে, যেগুলো কোনক্রমে হারাম বলা যায় না। সুতরাং এই বিজ্ঞাপন গুলোতে ক্লিক পরে উপার্জন হয়, তাহলে এ টাকাগুলোকে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই বরং এটার ইনকাম সম্পূর্ণ হালাল।
মাকরুম বিজ্ঞাপন যেমন এখানে দেখুন একটি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট দেওয়া হল এখানে একটি মেয়ের ফেস দেখা যাচ্ছে কিন্তু তার দেহের আকর্ষণীয় অঙ্গ গুলো ঢাকা সুতরাং এ বিজ্ঞাপন টা হারাম পর্যায়ের না, তবে মাকরুহ পর্যায়ের হতে পারে।
একটি বিষয় খুব মনোযোগ দিয়ে বুঝতে হবে। সেটা হল ভিজিটররা যেই ধরনের ওয়েবসাইট ভিজিট করে, গুগল তাদের সামনে সেই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। মনে করুন আপনি ইসলামিক কনটেন্ট পড়াশোনা করছেন আর আপনার ব্রাউজারে কোন গান বাজনা বা অশ্লীল সাইটের কুকিজ জমা নেই।
তাহলে অবশ্যই আপনার সামনে হালাল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হবে।
আর যদি ব্রাউজারে অশ্লীল সাইটের কুকিজ বা লিংক জমা থাকে তাহলে হারাম বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হতে পারে। সুতরাং এই বিজ্ঞাপন গুলো প্রদর্শিত হয় ভিজিটরের ভিজিট এর উপর ভিত্তি করে। দেখুন আপনার কম্পিউটারে যদি বার বার হারাম বিজ্ঞাপন আসে! তাহলে আপনার কম্পিউটারে ব্রাউজারের কুকিজ গুলো ক্লিয়ার করতে হবে। আশা করি হারাম বিজ্ঞাপন আপনার সামনে প্রদর্শন হবে না।
হারাম বিজ্ঞাপন: হারাম বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন হয় তাও হারাম।
এবার প্রশ্ন হল হারাম এড কি ব্লক করা যায়?
হ্যাঁ, প্রায় ৩০০ এড ক্যাটাগরি ব্লক করে রাখা যায়, যেমন মদ, জুয়া, সেনসেটিভ কন্টেন্ট, এমনকি যেই পোশাকগুলো বিজ্ঞাপন দিতে গেলে অবশ্যই মেয়েদের সতর (গুপ্তাঙ্গ) দেখা যায়। যেমন ব্রা প্যান্টি ইত্যাদি এ জাতীয় এড ক্যাটাগরি ব্লক করতে হবে। তাছাড়া আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেমন সুদী ব্যাংকিং এর বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। এগুলো বেছে বেছে ব্লক করতে হবে যেমন এখানে স্ক্রিন দেখে একটা আইডিয়া নিতে পারেন।
এছাড়াও যদি আপনার মনে সন্দেহ থাকে যে আমার উপার্জনের মধ্যে কিছু পারসেন্ট হলেও হারাম যুক্ত আছে,তাহলে সওয়াবের আশা ছাড়া আপনার অর্জিত টাকা থেকে দান করে দিন। অবশিষ্ট টাকাগুলো হালাল বলে আশা করা যায়।
আরো একটি বিষয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইউটিউবের বর্তমান অ্যালগরিদম রুলস হল। আপনি এডসেন্সে এপ্লাই করলেও বিজ্ঞাপন দেবে, এপ্লাই না করলেও বিজ্ঞাপন দেবে। এখানে এসে বেশ জটিলতার মধ্যে পড়েছে অনেক পরহেজগার ব্যক্তিরা। কারণ অনেকেই এডসেন্সের অর্থ উপার্জন করতে চান না। কিন্তু ইউটিউব বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাবেই। আর ইউটিউবার যদি এডসেন্স এপ্লাই না করে তাহলে গুগল কোম্পানি ১০০% টাকা হাতিয়ে নিবে। এখানে ক্রিয়েটরদের কোন অধিকার থাকবে না। এমনকি বিজ্ঞাপন কন্ট্রোল করার সুযোগও থাকবে না।
আর এভাবে বিধর্মীদের কাছে একতরফা টাকা পাঠানোর থেকে মুসলমানদের হাতে টাকা থাকারও দরকার আছে। অন্তত মুসলিম সমাজের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা উত্তম বলে মনে করি।
তাছাড়া এডসেন্স একাউন্ট আপনার হাতে থাকলে, আপনি অনেক এড কন্ট্রোল করতে পারবেন এবং হারাম এডগুলো ক্যাটাগরি ধরে ব্লক করতে পারবেন।
সুতরাং আশা করি উক্ত বিষয় থেকে বুঝতে পারছেন, ইউটিউবে এডসেন্স এপ্লাই করে এপ্রুভ হলে সামর্থ্য অনুযায়ী, যত হারাম এড ক্যাটাগরি আছে সব ব্লক করুন এবং এডগুলো কন্ট্রোল করুন। তারপর যে উপার্জন হবে তার মধ্য থেকে কিছু টাকা হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করুন। আর বাদবাকি টাকা আপনার জন্য হালাল।
কারণ সকল টাকা বিধর্মীদের কাছে যাওয়ার থেকে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মুসলমানের হাতে অর্থকড়ি থাকা গুরুত্বপূর্ণ । (আল্লাহ সর্বজ্ঞ)
তারপরেও যারা আরও পরহেজগারিতা অবলম্বন করতে চান তারা ইউটিউব ফেসবুকের জগত থেকে বের হয়ে যান, তাদের জন্য এখানে থাকার দরকার নেই। ভিডিও তৈরি করারও দরকার নেই ভিডিও দেখার ও দরকার নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৎ পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং সঠিকভাবে বোঝার তৌফিক দান করুন মুসলমানদের অবস্থান মজবুত করে দিন।