ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ.) এর ঘটনা نَحْمَدُهُ وَنُصَلَّى عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ أَمَّا بَعْدُ : فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاتُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْ
15:03:13 12/09/2023
ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ.) এর ঘটনা
نَحْمَدُهُ وَنُصَلَّى عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ أَمَّا بَعْدُ : فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاتُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمُ الخِ
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولُ اللَّهِ مَا هَذَا الْأَضَاحِي يَا
رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ الصَّلوةُ وَالسَّلَام -
উপস্থিত এই মহতী অনুষ্ঠানের মহামান্য সভাপতি। ন্যায়-নিষ্ঠার পরাকাষ্ঠায় উদ্ভাসিত বিচারকমণ্ডলী ও উপস্থিত ইবরাহীমী ত্যাগ ও ধৈর্যে উজ্জিবিত ভাইয়েরা আমার!
ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণী জবাই করাকে কুরবানী বলে। কুরবানী একটি আনন্দের বিষয়। কুরবানী একটি আত্মতৃপ্তির বিষয়। যার মনে প্রেম আছে, আবেগ আছে, দরদ আছে তাকে কুরবানীর বাস্তবতা বলে বুঝাতে হয় না। একজন মানুষের মনে যখন কারও প্রতি ভালবাসার উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, সে কারও প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, প্রেমাস্পদকে ছাড়া নিজের ভিন্ন অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারে না, এমতাবস্থায় প্রেমাস্পদের পদতলে নিজের জান-প্রাণ, মান-সম্মান, অর্থ-সম্পদ সবকিছু নিবেদিত ও বিলীন করার মাঝেই প্রেমিক আত্মতৃপ্তি খুঁজে পায় ।
প্রিয় বন্ধুরা আমার!
মনের এই অবস্থাসমূহের নামই কুরবানী। তাইতো ইরশাদ হচ্ছে-
لَن يَنَالَ اللَّهُ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاتُهَا وَ لَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ
অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে তোমাদের কুরবানীর পশুর রক্ত, গোশত কিছুই পৌঁছে না বরং পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। -সূরা হজ্জ :৩৭
সাইয়্যেদুনা ইবরাহীম (আ.) দীর্ঘ ৮০ বছর পর অনেক দু'আয় একটি সন্তান লাভ করেন। স্বভাবজাতঃ কারণেই হৃদয়ের সকল মায়া, ভালবাসা আর স্নেহে ছেলেকে লালন পালন করে বড় করলেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعي قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ -
অর্থাৎ, ছেলে যখন পিতার সাথে চলাফেরার বয়সে উপনিত হল। পিতার কাজ-কর্মে সহযোগিতা করার মত যোগ্য হল তখন আল্লাহ তা'আলা চাইলেন তার খলীলের মনের অবস্থা পরীক্ষা করতে। সাইয়্যেদুনা ইবরাহীম (আ.) পর পর তিন রাত্র স্বপ্ন দেখলেন, তিনি তাঁর ছেলেকে জবেহ করছেন। নবীদের স্বপ্ন ওহী হয়ে থাকে। তাই তিনি কোন দ্বিধা দ্বন্দ্বে না ভুগে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা প্রদর্শনের সুকঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন । সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেকে জবেহ করার। ছেলেকে পরীক্ষা করার জন্য, সহজে কাজ সমাধা করার জন্য পরামর্শের সূরতে সুকৌশলে তিনি ছেলেকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন-
قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّى أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرُ مَاذَا تَرَى -
অর্থাৎ, হযরত ইবরাহীম (আ.) বললেন, হে প্রিয় বৎস! নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি। সুতরাং তুমি তোমার অভিমত বল। -সূরা সাফফাত : ১০২
যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হযরত ইসমাঈল (আ.)ও পিছিয়ে নেই। যে তরুণ অনন্ত সুখ, আনন্দ, স্বাদ এখনও অনুভব করেননি, যে বয়সে বুকে থাকে হাজারো রঙ্গিন স্বপ্ন, থাকে সফল ভবিষৎ গড়ার বাসনা, সেসব কিছুকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহ পাকের আদেশ পালনে উজ্জীবিত হয়ে ইসমাইল (আ.) পিতাকে জানিয়ে দিলেন-
يَا أَبَتِ افْعَلُ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْشَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينِ
আপনাকে যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে আপনি তা কার্যকর করুন, ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভূক্ত পাবেন। -সূরা সাফফাত : ১০২
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْحَبِينِ -
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং হযরত ইবরাহীম (আ.) তাকে জবেহ করার জন্য শায়িত করলেন।
-সূরা সাফফাত : ১০৩
পিতা-পুত্র একমত হয়ে মহান আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নের জন্য চলে যান জবেহের ময়দানে। ছেলেকে শুইয়ে দিয়ে পিতা ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু বুঝে শুনে গলায় ছুরি চালানো শুরু করলেন। মহান প্রভু দেখে নিলেন তাঁর খলীল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং পৃথিবীর ইতিহাসে ত্যাগের এক মর্মস্পর্শী ইতিহাস রচনা করেছেন, যা ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাসকে চির উন্নত করেছে, করেছে মহীয়ান।
প্রিয় সাথী ও বন্ধুগণ!
আজ শুধুমাত্র কুরবানীর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলে চলবে না। এর বাস্তব শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিশেষভাবে রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমতঃ আমাদের আত্নকেন্দ্রিক সমস্ত সিদ্ধান্তহীনতা, কাপুরুষতা, জালিম শাহীর গোলামী পরিহার করতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, স্বার্থপরতা ইত্যাদি রিপু পরিত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সন্তানের গোলামী, গুনাহের প্রতি সন্তুষ্টি এবং তাদের অন্যায় কাজের প্রতি সমর্থন বর্জন করতে হবে এবং বাল্যকাল থেকেই তাদের সংগ্রামী জিন্দেগী তৈরী করার মন মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে ।
সাহসী ও আদর্শবাদী বন্ধুগণ!
কুরবানীর ইতিহাস অনুধাবন করতে হবে এবং সেই মুতাবিক জীবন যাপন করতে হবে। কেননা আজ সারাবিশ্বে মুসলমানদের কুরবানী দেওয়া হচ্ছে। শত শত শিশুকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। মুসলমানদের রক্তে সারা বিশ্বের মাটি রঞ্জিত হচ্ছে। কিন্তু আজ আমরা ইবরাহীম (আ.) এর ত্যাগের ইতিহাস ভুলে গেছি। ইসমাঈল (আ.) এর মুজাহাদা ও খোদার প্রতি আনুগত্য আমরা ভুলে গেছি। তাই প্রত্যেকের জীবনে নবীগণের (আ.) ইতিহাস ও ইসমাঈল (আ.) এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ঘোষণা করতে হবে-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ
অর্থাৎ, আপনি বলে দিন, নিঃসন্দেহে আমার নামায ও আমার কুরবানী, আমার জীবন-মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। -সূরা আনআম : ১৬২
মুহতারাম হাযিরীন!
তাই আজ আর শুধু সেমিনার সিম্পাজিয়াম নয়; বরং ইবরাহীম (আ.) এর মত সমাজ গড়ার জন্য জীবনপণ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। অন্যায় ও জাহিলিয়্যাতের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পরিশেষে কবিতার মাধ্যমে আমার বক্তৃতার ইতি টানছি ।
آج بھی ہو جو ابراہیم کا ایمان پیدا ۔ آگ کر سکتی ہے انداز گلستاں پیدا
ইবরাহীমী ঈমান যদি হয় কোথাও বিদ্যমান,
অগ্নিকুণ্ডও হতে পারে খুবসুরত এক পুষ্পদ্যান।
نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ
وَاخِرُ دَعْوَانَا أن الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ