মক্কা বিজয়ের ইতিহাস
মক্কা বিজয়ের ইতিহাস
মৃতা সিরিয়া রাজ্যের বলকা উপকণ্ঠে বায়তুল মাকদিসের প্রায় দুই মনজিল দূরত্বে একটি স্থানের নাম। এখানে মুসলমান ও রূমীদের মাঝে প্রথম যুদ্ধ হয়েছে। যার কারণ ছিল এই যে, রূমের বাদশাহর পক্ষ থেকে আমর বিন শুরাহবিল বসরার গভর্নর ছিল। সে মহানবী সা. এর দূত হারেস ইবনে উমাইর রা. কে হত্যা করে। নবী কারীম সা. ৮ম হিজরীর মাঝামাঝি সময় তিন হাজার সাহাবীদের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। যখন সৈন্য মৃতার নিকটবর্তী পৌঁছল তখন রূমীরা (মুসলমানদের আগনের কথা) অবগত হল। তারা দেড় লাখ সৈন্য নিয়ে মুসলমানদের মুকাবেলায় আসল। কয়েক দিন যুদ্ধ চলার পর আল্লাহ তায়ালা দেড় লাখ কাফেরের মধ্যে তিন হাজার মুসলমানের ভীতি এমনভাবে ঢেলে দিলেন যে, পিছপা হওয়া ছাড়া তাদের মুক্তির কোন পথ ছিল না।
সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি
মক্কা বিজয়
হুদায়বিয়ায় যে সন্ধিনামা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, মুসলমানগণ তাদের অভ্যাস মুতাবেক পূর্ণ পাবন্দির সাথে তা মানতেছিলেন। ইতিমধ্যে ৮ম হিজরীতে কুরাইশরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করল। মহানবী সা. একজন দূত প্রেরণ করে সন্ধি নবায়ন করার জন্য কুরাইশদের সামনে কিছু শর্ত উপস্থাপন করেন এবং শেষে লিখে দিলেন, যদি এ সব শর্ত মঞ্জুর না করা হয় তাহলে হুদায়বিয়ার সন্ধি ভেঙ্গে গেছে। কুরাইশরা চুক্তি ভঙ্গকেই পছন্দ করল।
অবশেষে মহানবী সা. জিহাদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি শুরু করলেন এবং ৮ম হিজরীর ১০ই রমযানুল মুবারক রোজ বুধবার আছরের পর দশ হাজার সাহাবীদের বাহিনী নিয়ে মহানবী সা. মদীনা থেকে বের হলেন। কুদাইদিয়া নামক স্থানে মাগরিবের সময় হল। তখন রোজার ইফতার করলেন। মক্কা মুয্যামায় পৌঁছে হযরত খালিদ বিন ওলীদ রা. কে এক বাহিনীর সাথে এই মর্মে রওয়ানা করে দিলেন যে, যেন তারা উপরের দিক থেকে প্রবেশ করে।
তিনি তাদেরকে বললেন, যে ব্যক্তি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে না তোমরাও তার সাথে যুদ্ধ করবে না। এদিকে অন্য দিক থেকে মহানবী সা. স্বয়ং প্রবেশ করলেন এবং সাধারণ ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। যে ব্যক্তি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করবে সে নিরাপদ। তবে এগার জন পুরুষ আর চার জন নারীর রক্ত ক্ষমা করলেন না। যারা সব রকমের ফিতনার গুরু ছিল।
কিন্তু তারা সবাই বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। অতঃপর তাদের বেশীরভাগ মক্কা বিজয় হওয়ার পর মদীনাতে পৌঁছে মুসলমান হয়ে যায়।
২০ রমযান শুক্রবার দিন নবী কারীম সা. তাওয়াফ করলেন। সে সময় কা'বার চতুর্পাশে তিন শত ষাটটি মূর্তি স্থাপিত ছিল। মহানবী সা. এর পবিত্র হাতে একটি কাষ্ট খণ্ড ছিল। যখন তিনি কোন মূর্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করতেন তখন তা দ্বারা ইশারা করতেন অমনি সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে যেত। মহানবী সা. এর মুখে এ আয়াতে কারীমা পঠিত হচ্ছিল-
جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا -
মক্কা বিজয়ের পর কুরাইশদের সাথে মুসলমানদের আচরন
নবীজী সা. তাওয়াফ থেকে অবসর হয়ে কা'বার চাবি কাবার দারোয়ান উসমান ইবনে তালহা শায়বী থেকে গ্রহণ করলেন। ভিতরে তাশরীফ আনলেন। সেখান থেকে বের হয়ে মাকামে ইব্রাহীমে নামায আদায় করলেন। নামায থেকে অবসর হয়ে তিনি মসজিদে হারামে অবস্থান করতেছিলেন। মানুষ ইহার প্রতীক্ষায় ছিল যে, আজ মহানবী সা. কুরাইশদের ব্যাপারে কি নির্দেশ দেন। কিন্তু রহমতে আলম কুরাইশদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা সব দিক দিয়ে মুক্ত ও নিরাপদ । অতঃপর কা'বার চাবি তাদেরকেই ফেরত দিলেন। -তালখীসুস সিয়ার