মুহাম্মাদ সা. এর শুভ জন্ম
12:45:16 01/01/2025
মুহাম্মাদ সা. এর শুভ জন্ম
এ কথার উপর সবাই একমত যে, মহানবী সা.এর শুভ জন্ম ঐ বৎসরের রবিউল আওয়াল মাসে হয়েছিল যে বৎসর আসহাবুল ফিল বায়তুল্লাহর উপর আক্রমণ করেছিল। বিশ্ব জগতের প্রভু তাদেরকে আবাবীল অর্থাৎ, কিছু ক্ষুদ্র প্রাণীর মাধ্যমে পরাজিত করলেন। যার সংক্ষিপ্ত ঘটনা পবিত্র কুরআনেও রয়েছে। মুলত: হস্তির ঘটনাও মহানবী সা. এর শুভ জন্মের বরকতসমূহের ভূমিকা ছিল।
নবীজীর জন্ম স্থান ঐ জায়গায় ছিল যা পরবর্তীতে হাজ্জাজের ভাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের করতলগত হয়েছিল। কতক ঐতিহাসিক লিখেন যে, হস্তির ঘটনা ২০ এপ্রিল ৫৭১ খৃষ্টাব্দে হয়েছিল। এর দ্বারা বোঝা গেল যে, মহানবী সা. এর জন্ম হযরত ঈসা আ. এর জন্মের ৫৭১ বছর পর হয়েছিল।
হাদীস শাস্ত্রের ইমাম ইবনে আসাকির পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, হযরত আদম আ. এবং হযরত নূহ আ. এর মাঝে এক হাজার দুই শত বছরের ব্যবধান ছিল এবং নূহ আ. থেকে হযরত ইব্রাহীম আ. পর্যন্ত এক হাজার এক শত বিয়াল্লিশ বছর এবং ইব্রাহীম আ. থেকে মূসা আ. পর্যন্ত পাঁচ শত পয়সট্টি বছর, এবং হযরত মূসা আ. থেকে হযরত দাউদ আ. পর্যন্ত পাঁচ শত ঊনসত্তর এবং হযরত দাউদ আ. থেকে হযরত ঈসা আ. পর্যন্ত এক হাজার তিন শত ছাপ্পান্ন। হযরত ঈসা আ. ও খাতামুল আম্বিয়া সা. এর মাঝে ছয় শত বছরের দূরত্ব অতিবাহিত হয়েছে।
এ হিসেবে হযরত আদম আ. থেকে আমাদের হযরত রাসূল সা. পর্যন্ত পাঁচ হাজার বত্রিশ বছর হয়। হযরত আদম আ. এর বয়স প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী চল্লিশ কম এক হাজার বছর হয়েছিল। এজন্য হযরত আদম আ. দুনিয়াতে আগমনের প্রায় ছয় হাজার বছর পর অর্থাৎ, সপ্তম হাজারে হযরত খাতামুল আম্বিয়া পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তারিখে ইবনে আসাকির, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বরাতে ১/১৯ও ২০খণ্ডে
মোটকথা, যে বৎসর হস্তিবাহিনীর আক্রমণ হয়েছিল,সে বৎসরের রবিউল আওয়াল মাসের বার তারিখে রোজ সোমবার পৃথিবীর জীবনে এক উজ্জ্বলময় দিবস যে, অদ্য পৃথিবীর সৃষ্টির উদ্দেশ্য দিবা-নিশির পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হযরত আদম আ. এবং আদম সন্তানদের গৌরব, নূহ আ. এর নৌকা হিফাযতের ভেদ, ইব্রাহীম আ. এর দুআ, হযরত মূসা ও হযরত ঈসা আ. এর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন অর্থাৎ, মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হন।
একদিকে পৃথিবীর দেবালয়ে নবুওয়াতের রবির আত্মপ্রকাশ ঘটল অপরদিকে পারস্য সম্রাজ্য কিসরার রাজপ্রাসাদে কম্পন সৃষ্টি হল। যার ফলে তার চৌদ্দটি গম্বুজ ভেঙ্গে পড়ে যায়। পারস্যের শ্বেত উপসাগর নিমিষে শুকিয়ে যায়। পারস্যের অগ্নি কুণ্ডলীর আগুন, যা এক হাজার বছর যাবত কখনও নির্বাপিত হয়নি নিজে নিজেই শীতল হয়ে যায়। সীরাতে মুগলতাঈ পৃষ্ঠা ৫
মূলত: এ সবই ছিল অগ্নিপূজা ও প্রত্যেক ভ্রষ্টতার নিঃশেষের ঘোষণা এবং রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতনের ইঙ্গিত। অসংখ্য সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে যে, (মহানবী সা.) এর জন্মের সময় তাঁর সম্মানিতা জননীর উদর থেকে এমন জ্যোতি বিকশিত হয় যে, তার দ্বারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আলোকিত হয়ে গিয়েছিল । কতক রেওয়ায়েতে রয়েছে, নবীজী সা. যখন পৃথিবীর বুকে ভূমিষ্ট হলেন, তখন উভয় হাতের উপর ভর করেছিলেন। অতঃপর তিনি হাতের মুষ্ঠিতে মাটি নিয়ে আকাশের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন।-মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া