Narrow selection

​​​​​​​কুরবানী সম্পর্কে জুমার বয়ান


10:31:27 12/03/2023

কুরবানী সম্পর্কে জুমার বয়ান: জিলহজ্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস । এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের একটি কারণ হলো, এইদিনগুলোতে আল্লাহ হজ্ব ফরজ করেছেন। ৮ই জিলহজ্ব থেকে হজ্বের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে, মানুষ ৮ তারিখ মিনাতে অবস্থান গ্রহণ করবে। মিনা থেকে ৯ তারিখ তারা আরাফার প্রান্তরে চলে যাবে। সারা দিন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে রওয়ানা হয়ে যাবে মুখদালাফার দিকে। মুযদালাফাতে মাগরিব এবং এশা একসাথে আদায় করবে এবং সেখানে অবস্থান গ্রহণ করবে। সকাল হওয়ার পর তারা আবার রওয়ানা হয়ে যাবে মিনাতে। মিনাতে গিয়ে তারা 'জমরাতুল উকবা' এর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করবে সাতটি। তাহলে হজ্বের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ৮ তারিখ থেকে । 

প্রশ্ন জাগে, এই দিনগুলোতে হজ্ব ও কোরবানী বা আল্লাহর রাস্তায় গরু, ছাগল, উট জবাই করার যে নির্দেশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের দিয়েছেন তার কারণ কি? এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করেছেন সূরা সাফ্ফাতে যা সূরা ইয়াসীনের পরের সূরা । আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, কেন আমি এই দিনগুলোতে তোমাদের জন্য হজ্ব এবং কোরবানী সাব্যস্ত করেছি, তার কারণ কি? হজ্ব এবং কোরবানির পিছনে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে, আল্লাহর একজন বান্দাকে আল্লাহ এই দিনগুলোতে পরীক্ষা করেছেন। কঠিন ধরনের পরীক্ষা। আল্লাহ নিজেই বলেন, আমি আমার প্রিয় বান্দা, আমার খলীলকে পরীক্ষা করেছি । (খলীল' শব্দের অর্থ হচ্ছে অন্তরঙ্গ বন্ধু) আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরীক্ষা করেছেন। 

পৃথিবীর বুকে এত কঠিন পরীক্ষা কেউ দেয়নি এবং কারো থেকে নেয়াও হয়নি। এ ধরণের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশাল সফলতা তার ভাগ্যে জুটেছে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আমি যে পরীক্ষা ইব্রাহিম থেকে নিয়েছি, সে পরীক্ষা অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা।

هذا لهو البلاء المبين

আল্লাহ নিজেই পরীক্ষক নিজেই বলে দিচ্ছে, যিনি Question Paper সেট করেছেন, তিনিই বলে দিচ্ছেন আমার এই পেপারে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ইব্রাহিম হতে যিলহাজ্জের ৮ তারিখ আমি যে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা, স্পষ্ট পরীক্ষা । আমি তাঁকে বিরাট ধরনের বিপদে নিক্ষেপ করেছি। (বালা) শব্দের অর্থ হচ্ছে বিপদ, পরীক্ষা, 'মুবীন' মানে সুষ্পষ্ট বিপদ, সুষ্পষ্ট পরীক্ষা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অন্য আয়াতে বলেন যে, ইব্রাহীম থেকে আমি দশটি কঠিন পরীক্ষা নিয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা যা নিম্নে বর্ণিত হল, আল্লাহ বলেন,

قال رب هب لي من الصالحين

৯০-১০০ বছরের বার্ধক্যে তিনি উপনীত হয়েছেন, কিন্তু কোন সন্তান নেই । আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন “হে আল্লাহ আমাকে একজন সুসন্তান দান করো।” তাহলে আল্লাহর দরবারে কারো যদি সন্তান চাইতে হয়, তাহলে এভাবেই চাইতে হবে, যে ভাবে নবীরা চেয়েছেন এবং সন্তান চাইতে হবে আল্লাহরই কাছে। নবীদের মাধ্যমে আমাদেরকে আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বার্ধকে সন্তান চেয়েছেন। কার কাছে চেয়েছেন? আল্লাহর দরবারে চেয়েছেন । কাজেই সন্তানের প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহরই কাছে করতে হবে। কোন মানুষের কাছে, কোন তাবিজ ব্যবসায়ির কাছে, কোন বদতদ্‌বীর বাজের কাছে সন্তান চাওয়া যাবেনা। কারণ, নবীরা তা করেননি।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বলেন, হে আমার রব, হে আমার পরওয়ারদিগার, হে আমার প্রতিপালক, আপনার কাছেই ফরিয়াদ Jallall da আমাকে সুসন্তান দান করুন। একমাত্র আল্লাহরই কাছেই চাইতে হবে। চাওয়ার ভাষা হবে- হে আল্লাহ, আমাকে সুসন্তান দাও। নবীরা কখনো বলেননি, আমাকে সন্তান দাও। কোন আয়াতে এমন নেই । হযরত জাকারিয়া (আঃ) বার্ধক্য অবস্থায় আল্লাহর দরবারে সৎ সন্তান চেয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে পুত্র হিসেবে হযরত ইয়াহয়া (আঃ) কে দান করেছেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বার্ধক্যে আল্লাহর দরবারে সন্তান চেয়েছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে সন্তান দান করেছেন । কেউ এই কথা আল্লাহর দরবারে বলেননি, হে আল্লাহ আমাকে সন্তান দাও। 

হযরত যাকারিয়া (আঃ) মরয়ম (আঃ) কে (বাবা নেই, এতিম মেয়ে) যখন বায়তুল মোক্কাদ্দাসের বিশেষ একটি কক্ষের মধ্যে লালন-পালন করার জন্য রেখে আসতেন, খাবার দিয়ে আসতেন এবং মাঝে মাঝে তিনি যখন মরয়ম (আঃ) কে দেখতে যেতেন সেখানে তিনি অমৌসুমী ফল দেখতে পেতেন । তিনি অবাক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতেন, 1 is Jail হে মরয়াম! বে মৌসুমী এই ফল তুমি কোথায় পেলে? albic in এ ও এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহই পাঠিয়েছেন । তখন যাকারিয়া (আঃ) এর মনে এই ভাবনা উদ্রেক হলো যে, আল্লাহ মৌসুম ছাড়া ফল দিতে পারেন। আমের মৌসুম নয় আম দিতে পারেন, কাঁঠালের মৌসুম নয় কাঁঠাল দিতে পারেন। সে আল্লাহ বে মৌসুমে সন্তানও দিতে পারেন। আমি যাকারিয়া বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখন মৌসুম নেই বাচ্চার, বাচ্চা পাওয়ার মতো উপযুক্ততা নেই, তারপরও আল্লাহ যদি চান তাহলে তিনি বাচ্চা দিতে পারেন। তখন তিনি মরিয়মের কক্ষে এই ঘটনা দেখে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে বসেন,

رب هب لى ذرية طيبة

“হে আমার প্রভু, আমাকে সু-সন্তান দান কর।" কোরআনে কারীমের মধ্যে আছে " হযরত যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, আমাকে পবিত্র সন্তান দান কর। (শুধু সন্তান নয়) নবীরা আল্লাহর দরবারে সুসন্তান কামনা করেছেন। ভাল সন্তান কামনা করেছেন। কাজেই সন্তান চাওয়া এটা নবীদের সুন্নাত, সন্তানের প্রতি আগ্রহী হওয়া নবীদের আদর্শ । যার চেলে-মেয়ে নেই তার অন্তরে যদি আগ্রহ জাগে আমার যদি একটি সন্তান হতো, এই আগ্রহ মন্দ কিছু নয়, বরং ভাল। নবীদের মধ্যেও তা ছিল। তবে এই আগ্রহের কথা শুধুমাত্র আল্লাহরই কাছে বলতে হবে। আল্লাহর কাছে বলতে হবে, হে আল্লাহ আমাকে সুসন্তান দাও। নেক্কার সন্তান দাও। শুধু সন্তান চাইলেই চলবেনা। 

সে সন্তান দিয়ে আপনি কি করবেন যে সন্তান আপনার কপালে কালিমা লেপন করবে? যে সন্তানকে কষ্ট করে লালন-পালন করার পর সেই সন্তান আপনাকে জাহান্নামে দেয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে আপিল করবে। এ জন্যে নবীরা শুধু সন্তান চাননি । নবীরা চেয়েছেন সুসন্তান । এই দোয়ার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানিয়ে দিচ্ছেন যে, হ্যাঁ, আমি ইব্রাহিমকে সুসংবাদ দিলাম । অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল ভদ্র, গম্ভীর, মর্যাদাবান সন্তান থেকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন। সন্তানও সাথে সাথে বলল,

قال يابت افعل ما تؤمر

হে বাবা, এটাও বাবাকে খুব আদর করে ডাকার শব্দ Jajilo Jail Cul 4 যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেটাই আপনি করুন। কোন রকম সন্দেহ বা দ্বিধা প্রকাশ করেনি। আমাকে আপনি জবাই করবেন? আমার পক্ষ থেকে আপনাকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে ।

ستجدني انشاء الله من الصبرين

আপনি যখন আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে যাবেন, আমার পক্ষ থেকে আপনি কোন বাধা পাবেন না ।

তাফসীর গ্রন্থে আছে, যখন মাকে বলে সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছে মা বিষয়টি জানেনা। তখন শয়তানের মাথা খারাপ হয়ে গেল। সে বলল: ইব্রাহিমের পরিবারকে যদি এই মুহুর্তে আমি বিভ্রান্ত করতে না পারি তাহলে এই পরিবারকে আমি আর কখনো প্ররোচিত করতে পারবোনা । ধোঁকা দিতে পারবোনা । এটাই হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন জিলহজ্বের ৮, ৯ এবং ১০ তারিখ রাতে। তারপরে ১০ তারিখ দিনের বেলায় তিনি তাঁকে জবাই করতে নিলেন ।

يوم التروية

হজ্ব শুরু হয় ৮ তারিখ থেকে। স্বপ্নও শুরু হয়েছে ৮ তারিখ। আট তারিখকে তারবিয়া দিবস বলা হয় । ২য় বার ৯ তারিখ রাতে ও ৩য় বার ১০ তারিখ রাতে । তিনরাতে তিনি স্বপ্নটি দেখলেন। শয়তান ইব্রাহিমের স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল: তুমি কি জান তোমার সন্তানকে সন্তানের বাবা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মহিলা বলল: কোন প্রয়োজনে হয়তো বাপ-পুত্র বের হয়েছে। শয়তান বলল: না, তাকে জবাই করার জন্য নেয়া হচ্ছে। তোমাকে জানানো হয়নি । হযরত ইব্রাহিমের স্ত্রী বললেন: তিনি একজন দয়াবান পিতা। আল্লাহর কাছে চেয়ে সন্তান নিয়েছেন । তিনিই তাঁকে জবাই করবেন এটাতো কল্পনাও করা যায়না। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রীর সুন্দর উত্তর । তুমি বলছ যে, সন্তানকে জবাই করার জন্য বাবা নিয়ে যাচ্ছে । 

অথচ এই বাবা আল্লাহর কাছে কত ফরিয়াদ করে সন্তানটি চেয়ে নিয়েছেন। আবার তিনিই জবাই করে দিবেন এটাতো অসম্ভব ব্যাপার । শয়তান বলল: হ্যাঁ এটা কল্পনা করা যায়না। কিন্তু ইব্রাহিম (আঃ) ধারণা করছে যে আল্লাহই নাকি তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন জবাই করার জন্য । এরপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী বললেন- যদি আল্লাহই নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাহলে তো তাঁকে জবাই করতেই হবে। যে আল্লাহ সন্তান দিয়েছেন তিনি যদি জবাই করতে বলেন, তাহলেতো অবশ্যই জবাই করতে হবে। এতে আমার কোন আপত্তি নেই। আর না বললে ইব্রাহিম (আঃ) শুধু শুধু জবাই কেন করবে।

শয়তান ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রীর কাছে সুযোগ না পেয়ে সন্তানের কাছে আসল, সন্তানের কাছে আসার পর বলল : তুমি কি জান? তোমার বাবা তোমাকে কোথায় নিয়ে যায়? সন্তান বলল যে, আমার বাবার সাথে কাজে যাচ্ছি । তুমি যেয়োনা তোমাকে জবাই করে ফেলবে। সন্তান বলল- আমার বাবা কেন আমাকে জবাই করবে? শয়তান উত্তরে বলল যে, তোমার বাবার মাথায় ঢুকছে যে, আল্লাহ নাকি তাঁকে স্বপ্নে দেখিয়েছে, তোমাকে জবাই করতে হবে, এজন্যেই তোমাকে জবাই করবে। ঈমানী পরিবেশে গড়ে উঠা পরিবার ছিল ইব্রাহিমের পরিবার । ঈমানের ভিত্তিতে যে সংসার বিকশিত হয়েছে তার সদস্যের আস্থা ছিল সুদৃঢ়, মজবুত । স্ত্রীর কাছে শয়তান সুযোগ পায়নি।

সন্তানকে যখন এটা বলল, সন্তান কি বলল? আল্লাহ যদি নির্দেশ দিয়ে থাকেন অবশ্যইতো তিনি জবাই করবেন । তাতে মাথা দেওয়ার আমার কি অধিকার আছে, আমাকে জবাই করুক । এবার বাবার কাছে এসে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে শয়তান। সে হতাশ। সর্বশেষ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে বলল যে, আসলে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছ এটা শয়তান তোমাকে দেখিয়েছে । আল্লাহর পক্ষ থেকে এই স্বপ্ন ছিলনা। এটা শয়তান তোমাকে দেখিয়েছে। ইব্রাহিম (আঃ) বুঝে গেছেন যে, শয়তান আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে। প্রথম বার তাঁকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য যে জায়গায় আসে, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পার্শে এক মুঠো পাথর পেলেন, ছোট ছোট কংকর । একমুঠো সাতটি পাথর ছিল । কসম করে মারতে লাগল । 

যাও, তুমি শয়তান । আমাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্যে, আল্লাহর নির্দেশ পালনে বাধা সৃষ্টি করার জন্যে তুমি এসেছ। সাতটি পাথর তাকে মারল । এটাকে বলা হয় 'জুমরাতুল উকবা । এখানে হাজী সাহেবরা ৭টি পাথর নিক্ষেপ সন্তানটি চেয়ে নিয়েছেন। আবার তিনিই জবাই করে দিবেন এটাতো অসম্ভব ব্যাপার । শয়তান বলল: হ্যাঁ এটা কল্পনা করা যায়না। কিন্তু ইব্রাহিম (আঃ) ধারণা করছে যে আল্লাহই নাকি তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন জবাই করার জন্য । এরপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী বললেন- যদি আল্লাহই নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাহলে তো তাঁকে জবাই করতেই হবে। যে আল্লাহ সন্তান দিয়েছেন তিনি যদি জবাই করতে বলেন, তাহলেতো অবশ্যই জবাই করতে হবে। এতে আমার কোন আপত্তি নেই। আর না বললে ইব্রাহিম (আঃ) শুধু শুধু জবাই কেন করবে।

শয়তান ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রীর কাছে সুযোগ না পেয়ে সন্তানের কাছে আসল, সন্তানের কাছে আসার পর বলল : তুমি কি জান? তোমার বাবা তোমাকে কোথায় নিয়ে যায়? সন্তান বলল যে, আমার বাবার সাথে কাজে যাচ্ছি । তুমি যেয়োনা তোমাকে জবাই করে ফেলবে। সন্তান বলল- আমার বাবা কেন আমাকে জবাই করবে? শয়তান উত্তরে বলল যে, তোমার বাবার মাথায় ঢুকছে যে, আল্লাহ নাকি তাঁকে স্বপ্নে দেখিয়েছে, তোমাকে জবাই করতে হবে, এজন্যেই তোমাকে জবাই করবে। ঈমানী পরিবেশে গড়ে উঠা পরিবার ছিল ইব্রাহিমের পরিবার । ঈমানের ভিত্তিতে যে সংসার বিকশিত হয়েছে তার সদস্যের আস্থা ছিল সুদৃঢ়, মজবুত । স্ত্রীর কাছে শয়তান সুযোগ পায়নি। 

সন্তানকে যখন এটা বলল, সন্তান কি বলল? আল্লাহ যদি নির্দেশ দিয়ে থাকেন অবশ্যইতো তিনি জবাই করবেন । তাতে মাথা দেওয়ার আমার কি অধিকার আছে, আমাকে জবাই করুক । এবার বাবার কাছে এসে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে শয়তান। সে হতাশ। সর্বশেষ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে বলল যে, আসলে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছ এটা শয়তান তোমাকে দেখিয়েছে । আল্লাহর পক্ষ থেকে এই স্বপ্ন ছিলনা। এটা শয়তান তোমাকে দেখিয়েছে। ইব্রাহিম (আঃ) বুঝে গেছেন যে, শয়তান আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে। প্রথম বার তাঁকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য যে জায়গায় আসে, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পার্শে এক মুঠো পাথর পেলেন, ছোট ছোট কংকর । একমুঠো সাতটি পাথর ছিল । কসম করে মারতে লাগল । যাও, তুমি শয়তান । আমাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্যে, আল্লাহর নির্দেশ পালনে বাধা সৃষ্টি করার জন্যে তুমি এসেছ। সাতটি পাথর তাকে মারল । এটাকে বলা হয় 'জুমরাতুল উকবা । 

এখানে হাজী সাহেবরা ৭টি পাথর নিক্ষেপ করেন হজ্বের সময়। আসলে এখানে শয়তান দাঁড়িয়ে আছে তা নয়। বরং এটা হচ্ছে একটি সিম্বল, নিদর্শন। স্মরণ করতে হবে যে, এই জায়গায় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার সাধ্যে পাথর ছিল বলে পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানের 'ওয়াসওয়াসা' দূর করতে চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর দরবারে এই কাজ এতই পছন্দ হয়েছে যে, কেয়ামত পর্যন্ত প্রতিবছর এই দিনে এই জায়গায় লক্ষ লক্ষ হাজী সাহেবকে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, আমার খলিল যে কাজ করেছে আমার কাছে বড়ই ভাল লেগেছে। তোমরাও পাথর মারো। এজন্যে প্রতিটি হাজী সাহেবকে পাথর মারতেই হয় । যদি কেউ ইচ্ছাকৃত পাথর না মারে তাহলে তার হজ্বই আদায় হবেনা । এটা আল্লাহর নিকট প্রিয় কাজ। মিনায় একটি স্তম্ভ আছে। যার চতুর্দিকে ঘেরাও করা। সেখানে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। 

এখানেই শয়তান দাঁড়ানো আছে একথা বুঝার ভুল এবং এই পিলারকে শয়তান মনে করে পাথর মারাও ঠিক নয়। এটি একটি চিহ্ন মাত্র। একটি প্রতীক । অনেককে দেখা যায় সেখানে গেলে জজবা এসে যায়, পায়ের জুতা খুলে মেরে দেয়। সে জায়গায় অনেক জুতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এগুলো ইসলাম সমর্থন করেনা। সেখানে জুতা মারতে বলা হয়নি। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) জুতা মরেননি । হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মেরেছেন পাথরের কংকর। কাজেই সেখানে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে । অন্যকিছু নিক্ষেপ করলে হজ্ব আদায় হবেনা । কংকর না ছুঁড়ে কেউ যদি সাতটি জুতা ছুঁড়ে তার হজ্জও আদায় হবেনা । অনেক ধরনের ময়লা জিনিষ সেখানে দেখা যায় এগুলো হচ্ছে অজ্ঞতা প্রসুত কাজ ।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সন্তানকে নিয়ে একটু অগ্রসর হওয়ার পর শয়তান আবার আসল মিনাতে । হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সেখানেও পাথর ছুঁড়ে মারলেন সাতটি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে জায়গাতেও পাথর মারার জন্য হাজীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন । একটু পরে তৃতীয় বার শয়তান আবার যখন আসল, সেখানেও তিনি সাতটি পাথর মেরেছেন। সেখানেও পাথর মারতে হয়। তিনবার কোন চান্স না পেয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার সন্তানকে কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী মীনাতে কোরবান করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color