সাহু সিজদা করার নিয়ম কি? সিজদায়ে সাহু করার বর্ণনা
05:15:44 12/03/2023
সাহু সিজদা করার নিয়ম কি? সিজদায়ে সাহু করার বর্ণনা
নাহযরত আবু হুরায়রা [রাঃ] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, “তোমাদের কেহ নামাযে দাঁড়ালে শয়তান এসে তাকে সন্দেহে ফেলে দেয়, ফলে সে কত রাকাত পড়েছে তা বলতে পারে না। এমতাবস্থায় বৈঠকে দু'টি সিজদা করে নিবে।” [বুখারী ও মুসলিম]
যেহেতু নামাযের মধ্যেই বান্দা মহান আল্লাহ পাকের সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে তাই তখন শয়তান উঠে পড়ে লেগে যায়, প্রথমতঃ সে চেষ্টা করে, নামায থেকে বিরত রাখতে। একান্তই তাতে ব্যর্থ হলে বিভিন্নভাবে নামাযীর মনে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। ফলে অনেক সময় নামাযে ভুল হয়ে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ রহমানুর রাহীম বান্দার এ ভুলের ক্ষতিপূরণের জন্য নামাযের শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর অতিরিক্ত দু' টি সিজদার হুকুম দিয়েছেন। এটাকে সিজদায়ে সাহু বলা হয়। 'সাহু' অর্থ ভুল । সিজদায়ে সাহুর কথাই উপরোক্ত হাদীসটিতে বলা হয়েছে ।
ভুলক্রমে নামাযের কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে অথবা কোন ওয়াজিব বা ফরয আদায়ে বিলম্ব হলে অথবা কোন ফরয অতিরিক্ত আদায় করলে [যেমন এক রাকাতে দুই রুকু অথবা তিন সিজদদা করে নিল] এসব ক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। পক্ষান্তরে এগুলো ইচ্ছাকৃত হলে সিজদায়ে সাহু যথেষ্ট নয় বরং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।
মাসআলা : নামাযের কোন ফরয ভুলক্রমে ছুটে গেলেও সিজদায়ে সাহু যথেষ্ট নয় রবং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।
মাসআলা : একই নামাযে একাধিক ভুল হলেও সিজদায়ে সাহু একবারই করতে হবে।
মাসআলা : যে সব কারণে ফরয নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় সেসব কারণে নফল, সুন্নত ও বিতিরেও সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। [অবশ্য নফল এবং সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদার কয়েকটি ক্ষেত্রে ভিন্ন হকুম । যার বিস্তারিত বিবরণ সামনে আলোচিত হবে। [ইনমামহান আল্লাহ |
মাসআলা : ভুলে সুরায়ে ফাতেহা বাদ দিয়ে শুধু অন্য সুরা পড়ে রুকুতে গেলে অথবা ফাতেহার আগে অন্য সুরা পড়তে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : ফরয নামাযের প্রথম দু' রাকাতে ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ভুলে গেলে শেষের দু' রাকাতে সূরা মিলাবে এবং সিজদায়ে সাহু আদায় করবে। পক্ষান্তরে শুধু এক রাকাতে সূরা মিলানো ভুলে গেলে শেষের দু' রাকাতের শুধু এক রাকাতে সূরা মিলাবে এবং সিজদায়ে সাহু আদায় করবে। আর যদি শেষের দু' রাকাতেও সূরা মিলানোর কথা স্মরণ না হয় বরং শেষ রাকাতের রুকু করার পর স্মরণ হয় তবুও সিজদায়ে সাহু করলে নামায হয়ে যাবে।
মাসআলা : সুন্নত ও নফল নামাযের সব রাকাতেই সুরা মিলানো ওয়াজিব। কাজেই সুন্নত, নফলের যে কোন রাকাতে সূরা মিলানো ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে।
মাসআলা : সূরায়ে ফাতেহা পড়ার পর কোন্ সূরা পড়বে, তা চিন্তা করতে গিয়ে যদি তিনবার 'সুবহানাল্লাহ' পড়া পরিমাণ বিলম্ব হয়ে যায় তবে সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু ও দরূদ শরীফ পড়ার পর চিন্তা হল যে, তিন রাকাত পড়েছে না চার রাকাত। পরে চার রাকাতের কথা স্মরণ হওয়ায় সালাম ফেরাল কিন্তু চিন্তা করতে গিয়ে তিনবার 'সুবহানাল্লাহ' পড়া পরিমাণ বিলম্ব হয়ে গেল, এ অবস্থায় সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : নামায পড়া থামিয়ে যদি কোন চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। অথবা বসার সাথে সাথে আত্তাহিয়্যাতু শুরু না করে কোন চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় অথবা রুকুতে যাওয়ার পূর্বে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। ফলে তিনবার 'সুবহানাল্লাহ' পড়া পরিমাণ বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। মোটকথা, ভুলবশতঃ কোন ফরয বা ওয়াজিব আদায় করতে তিনবার 'সুবহানাল্লাহ' পড়া পরিমাণ বিলম্ব হয়ে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : তিন বা চার রাকাতওয়ালা নামাযের প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু দু'বার পড়ে ফেললে তদ্রূপ আত্তাহিয়্যাতুর পর দরূদ শরীফ اللهم صلى على محمد পর্যন্ত বা আরো বেশি পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে এর কম পড়ে থাকলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না ।
জোহরের চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রেও একই হুকুম। তবে নফল নামায অথবা চার রাকাত সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদায় প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর দরূদ শরীফ পড়াও জায়েয আছে। সুতরাং সেখানে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না অবশ্য প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু দু বার পড়লে নফল ও সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদাতেও সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে
মাসআলা : নিয়ত বাঁধার পর سبحانك اللهم এর স্থলে দু'আয়ে কুনুত পড়া, ফরযের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার স্থলে আত্তাহিয়্যাতু [বা অন্য কিছু] পড়া, অথবা ফাতিহার পর অন্য সূরাও মিলানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিজাদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
মাসআলা : তিন বা চার রাকআতওয়ালা নামাযে প্রথম বৈঠক ভুলে তৃতীয় রাকাতের জন্য যদি এমনভাবে দাঁড়িয়ে যায় যে, শরীরের নীচের অর্ধেক অংশ সোজা হয়নি তবে বসে পড়বে এবং আত্তাহিয়্যাতু শেষ করে দাঁড়াবে এবং সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। আর যদি শরীরের নীচের অর্ধেক অংশ সোজা হয়ে গিয়ে থাকে তবে আর বসবে না বরং অবশিষ্ট রাকাত পূর্ণ করে শুধু শেষ বৈঠকে বসবে। অবশ্য সিজদায়ে সাহু ওয়াজির হবে। সোজা দাঁড়ানোর পর পুনরায়বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়লে গুনাহ হবে এবং সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : শেষ বৈঠক ভুলে যদি এই পরিমাণ দাঁড়িয়ে যায় যে, শরীরের নীচের অর্ধেক অংশ সোজা হয়নি তাহলে বসে আত্তাহিয়্যাতু ও দরূদ শরীফ পড়ে সিজদায়ে সাহু ছাড়াই সালাম ফিরবে। আর যদি সোজা দাঁড়িয়ে যায় এমনকি সূরা কেরাত পড়ে ফেলে তবু বসে যাবে এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সিজদায়ে সাহু করে নিবে। রুকু করার পরও যদি স্মরণ না হয় বরং সিজদায় চলে গিয়ে থাকে তাহলে সিজদায়ে সাহু ছাড়াই ছয় রাকাত পুরা করে নিবে। এই ছয় রাকাত নফল হয়ে যাবে। ফরয পুনরায় - আদায় করবে। যদি পাঁচ রাকাতেই সালাম ফিরিয়ে নেয় তাহলে চfর রাকাত নফল হবে এবং পঞ্চম রাকাত বাতিল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রেও ফরয পুনরায় আদায় করতে হবে।
মাসআলা : শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দাড়িয়ে গেলে পঞ্চম রাকাতের সিজদার পূর্বে যখনই স্মরণ হবে সাথে সাথে বসে পড়বে এবং আত্তাহিয়্যাতু না পড়েই সালাম ফিরিয়ে সিজদায়ে সাহু করবে। পক্ষান্তরে সিজদার পর স্মরণ হলে সিজদায়ে সাহু সহ ছয় রাকাত পুরা করে নিবে। এক্ষেত্রে চার রাকাত ফরয ও দুই রাকাত নফল রূপে গণ্য হবে।
মাসআলা : চার রাকাতওয়ালা নফলের প্রথম বৈঠক ভুলে তৃতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে গেলে সিজদার পূর্বে যখনই স্মরণ হবে বসে যাবে। পক্ষান্তরে সিজদার পর স্মরণ হলে এক্ষেত্রেও নামায হয়ে যাবে। আর উভয় অবস্থাতেই সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
মাসআলা : যদি নামাযের মাঝে সন্দেহ হয় যে, তিন রাকাত পড়েছে না চার রাকাত আর এরূপ সন্দেহ তার সচরাচর হয় না হঠাৎ হয়েছে তাহলে পুনরায় নামায আদায় করবে। আর যদি এরূপ সন্দেহের ব্যাক্তি থাকে তাহলে চিন্তা করে তিন বা চার যেদিকে মন বেশি সায় দেয় সে অনুযায়ী কাজ করবে। যদি মনের সায় দু' দিকেই সমান হয় তাহলে তিন রাকাতই ধরে আর এক রাকাত পড়ে নিবে। যে রাকাতটিতে তৃতীয় বা চতুর্থ হওয়ার সন্দেহ ছিল সে রাকাতের পরে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে নিবে আর শেষ রাকাতে (অর্থাৎ যে রাকাতটি চতুর্থ হওয়া নিশ্চিত) আত্তাহিয়্যাতুর সাথে দরূদ শরীফ ও দু'আও পড়বে এবং সিজাদায়ে সাহু করবে।
মাসআলা : "প্রথম রাকাত না দ্বিতীয় রাকাত এরূপ সন্দেহের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। অর্থাৎ এ সন্দেহ যদি হঠাৎ হয়ে থাকে তবে নতুনভাবে নামায শুরু করবে। পক্ষান্তরে সচরাচর এরূপ সন্দেহ হলে মনের সায় যেদিকে সেটাই গ্রহণ করবে। আর মনের সায় উভয় দিকে সমান হলে এক রাকাতই ধরে নিবে । তবে সন্দেহযুক্ত রাকাতটির পর বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে। কেননা হতে পারে এটা দ্বিতীয় রাকাত] পরবর্তী রাকাতও সূরা কেরাত সহ পড়ে আত্তাহিয়্যাতুর জন্য বসবে অতঃপর তার পরের রাকাআতেও বসবে । [কেননা হতে পারে এটা চতুর্থ রাকাত ।] তারপর শেষ রাকাতে বসে সিজদায়ে সাহু করে সালাম ফিরাবে।
মাসআলা : দ্বিতীয় রাকাত না তৃতীয় রাকাত এরূপ সন্দেহের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। তবে মনে রাখবে, আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর বা নামায শেষ হওয়ার পর এরূপ সন্দেহের কোন মূল্য নেই। বরং নামায হয়ে যাবে। অবশ্য যদি নিশ্চিতভাবে স্মরণ হয় যে, তিন রাকাতই পড়েছিল তবে দাঁড়িয়ে আর এক রাকাত পড়ে সিজদায়ে সাহু করে নিবে। তবে যদি সালাম ফিরানোর পর নামায ভংগকারী কোন কাজ করে থাকে তাহলে নতুনভাব নামায আদায় করা ছাড়া উপায় নেই। অবশ্য এ সকল ক্ষেত্রে সতর্কতার খাতিরে পুনরায় নামায পড়াই উত্তম।
মাসআলা : সিজদায়ে সাহু আদায় করার পর নতুন কোন ভুল হলে প্রথম সিজদায়ে সাহুই যথেষ্ট হবে।
মাসআলা : সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর তা আদায় না করে ভুলবশতঃ অথবা ইচ্ছাকৃত যদি উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলে কিন্তু নামায ভংগকারী কোন কাজ তখনও না করে থাকে তাহলে এখনও সিজদায়ে সাহু করে নিবে। এমনকি কিবলামুখী বসা অবস্থায় দু'আ অজীফা পড়া শুরু করলেও কোন ক্ষতি নেই ।
মাসআলা : ওয়াজিব সিজদায়ে সাহু ছেড়ে দিলে পুনরায় নামায আদায় করা ওয়াজিব।
মাসআলা : তিন বা চার রাকাতওয়ালা নামাযে ভুলক্রমে দু' রাকাতের পর সালাম ফেরালে সাহু সিজদাসহ নামায পুরা করে নিবে। অবশ্য সালামের পর নামায ভংগকারী কোন কাজ করলে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।
মাসআলা : ভুলবশতঃ বিতিরের প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতে দু'আয়ে কুনূত পড়লে তা গণ্য করা হবে না। তৃতীয় রাকাতে পুনরায় দু'আয়ে কুনূত পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু আলায় করবে ।
মাসআলা : এটা দ্বিতীয় রাকাত না তৃতীয় রাকাত এবং উভয় দিকেই মনের সায় সমান হয় তাহলে দু'আয়ে কুনুত পড়বে এবং বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দাঁড়িয়ে আর এক রাকাত পড়বে এবং পড়বে এবং সবশেষে সিজদায়ে সাহু আদায় করবে।
মাসআলা : বিতরের নামাযে দু'আয়ে কুনুতের স্থলে سبحانك اللهم পড়ে ফেলে তঃপর স্মরণ হওয়ার পর দু'আয়ে কুনুত পড়ে, তবে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
মাসআলা : বিতরের নামাযে দু'আয়ে কুনুত পড়া ভুলে গেলে, সিজদায়ে সাহু আদায় করলে নামায সহীহ হয়ে যাবে।
মাসআলা : সূরায়ে ফাতেহার সাথে একাধিক সূরা পড়লেও কোন ক্ষতি নেই এবং এতে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
মাসআলা : ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সুরা মিলালেও সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না ।
মাসআলা : ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতের পরবর্তী কোন রাকাতে
সূরায়ে ফাতেহা পড়তে ভুলে গেলে এবং তিনবার
سمع الله لمن حمده
পড়ার সমপরিমাণ সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে রুকুতে চলে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। কিন্তু উক্ত পরিমাণ সময় না দাঁড়িয়ে রুকুতে গেলে নামায হবে না।
মাসআলা : যে সকল ভুলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় সেগুলো ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে সিজদায়ে সাহু যথেষ্ট হবে না বরং নামায পুনরায় দোহরায়ে পড়তে হবে।
সিজদায়ে সাহু আদায়ের পদ্ধতি
শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যঅতু পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাবে। অতঃপর দুটি সিজদা করবে এবং সিজদার তাসবীহ পড়বে। অতঃপর পুনরায় আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দু'আ মাছুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরাবে।