তাওবা কি? তাওবা কাকে বলে?
10:58:59 12/03/2023
তাওবা কি? তাওবা কাকে বলে? কোরআনে কারীম যদি আপনি পড়ে দেখেন বারবার আপনি পাবেন তওবার কথা । এর মানে হচ্ছে যারা তাওবা করে, আল্লাহর দরবারে ফিরে আসে ।
توبوا إلى الله توبة نصوحا
হে আমার বান্দা আস ফিরে আস । অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি এই গোনাহ করেছি। আর করবোনা,
- (১) এই গোনাহের জন্য আমি অনুতপ্ত
- (২) আমি বর্তমানে এই গোনাহকে ছেড়ে দিয়েছি
- (৩) আমি ভবিষ্যতে আর এই গোনাহ করবো না।
ইহাকে বলা হয় তাওবা। এই তিন জিনিষ যদি হয় তাহলে এটাই হবে খাঁটি তওবা । আমি এই পাপ করেছি, আমি সুদ খেয়েছি, আমি ঘুষ খেয়েছি, আমি মিথ্যা বলেছি, আমি এই রূপ অন্যায় করেছি, হে আল্লাহ এই জন্য আমি অনুতপ্ত, আমি দুঃখিত, আমি লজ্জিত, আমি বর্তমানে আর এই গোনাহ করছিনা, হে আল্লাহ ভবিষ্যতে আর এই গোনাহ করবনা। এই তিন বস্তু যদি পাওয়া যায় তাহলে আমার 'তাওবা' হবে 'নাসুহা' পবিত্র, নির্ভেজাল ও খাঁটি ।
এমন যদি হয়, আমি বলছি, হে আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও কিন্তু যে গুনাহ করলাম সে গোনাহের জন্য কোন অনুতপ্ত হলাম না, সে গোনাহ এখনো আমি করছি, ভবিষ্যতে ছাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই । এভাবে মানুষ যখন তাওবা করে তখন আল্লাহ ক্ষুব্ধ হন । একজন কবি তার ফার্সি কবিতায় বলেছেন-
‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আল্লাহর দরবারে তওবার চিন্তা কর? যে গোনাহের জন্য তুমি তওবা করছো’ সে পাপে তুমি আপাদ মস্তক নিমজ্জিত (আবার তাওবা কর) আল্লাহকে তুমি অসন্তুষ্ট করছো আর পাপ তোমার ‘তাওবা' দেখে হাসে ।
খাঁটি তাওবাকে শয়তান ভয় পায়
বর্ণিত আছে এক বুজুর্গ স্বপ্নে শয়তানকে দেখলেন। শয়তান খুবই ব্যস্ত ও চিন্তিত । জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার তুমি এত চিন্তিত? সে বলল, আমি আল্লাহর একজন বান্দাকে অনেক কষ্টের মাধ্যমে একটি পাপ করাই, করার পর সে অনুতপ্ত হয়, সে আবার তওবা করে ফেলে। আমি এক সপ্তাহ চেষ্টা করে। তার মাধ্যমে একটি গোনাহ করালাম, তাওবা করার মাধ্যমে সে যেন আমার কোমরে একটি লাথি দেয়। কারণ, আমি তার মাধ্যমে যে গোনাহ করালাম তাওবার কারণে সে গোনাহ মাফ হয়ে গেল। এত কষ্ট নিমিষেই সে নষ্ট করে দিল । এজন্য আমি চাই যে লোকেরা তাওবা না করুক । আসুন, আমরা সবাই আজ মনকে খুলে কি কি গোনাহ করেছি আল্লাহর দরবারে পেশ করি । অনুতাপ পেশ করি, সিজদা পেশ করি এবং না করার জন্য শপথ গ্রহণ করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরায়ে দুখানে বলেন-
حم والكتاب المبين انا انزلناه في ليلة مباركة انا كنا منذرين فيها يفرق كل امر حكيم
পুরা বৎসরে একটি রাত আসে যে রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের জীবন-মৃত্যু, মানুষের রিজিক, মানুষের সম্মান, মানুষের ক্ষমতা, মানুষের সুখ ও দুঃখ, সুস্থতা-অসুস্থতা, সব কিছুর একটি তালিকা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রণয়ন করেন এবং ফেরেস্তাদেরকে তা জানিয়ে দেন। এই রাত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, বান্দার সব অবস্থা ফেরেস্তাদের কাছে পেশ করেন ।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহর রাসূল বলেছেন, তুমি আশ্চর্য হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডায়েরীতে যে নাম লেখা হয়েছে সে ব্যক্তি কিছুদিন পরে মারা যাবে অথচ সে দিব্যি বাজারে আড্ডা দিচ্ছে, হাসছে, বিয়ে করছে, বাচ্ছা হচ্ছে, সে জানে না যে, মাত্র কিছু দিন পরেই তার মৃত্যু আসবে । তাকে কবরে ঢুকতে হবে । সে জানেনা যে, মৃত্যু তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে । আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সবসময়ই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন