তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি ও তায়াম্মুমের নিয়ম
07:00:28 12/03/2023
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি ও তায়াম্মুমের নিয়ম : হযরত হুযাইফা [রাঃ] হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন : “তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে অন্যান্য উম্মতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে ঃ আমাদের [নামাযের] কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মত করা হয়েছে। আর সমস্ত ভূপৃষ্ঠ আমাদের জন্য নামাযের স্থান করা হয়েছে এবং পানি না থাকা অবস্তায় মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতার উপকরণ করা হয়েছে।" [মুসলিমি শরীফ]
এ হাদীস দ্বারা পানি না পাওয়া অবস্থায় ওযু গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুমের আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়। পবিত্র কুরআনে ওযু গোসল সংক্রান্ত আলোচনার পর ইরশাদ করা হয়েছে :
অর্থাৎ: যদি তোমরা অসুস্থ হও [ এবং পানি ব্যবহার করা ক্ষতিকর হয়] অথবা সফরে থাক [ এবং পানি না পাও] অথবা তোমাদের কেহ পায়খানা হতে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পাক মাটি দ্বারা (তায়াম্মুম কর। অর্থাৎ) তোমাদের চেহারা ও [কনুই পর্যন্ত] উভয় হাত এ মাটি দ্বারা [অর্থাৎ মাটিতে হাত মেরে তারপর হাত দ্বারা মাসেহ কর। [সূরা মায়েদাহ)
মিশকাত শরীফে হযরত আবু যর [রাঃ] থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন পবিত্র মাটি [ভূমি) মুসলমানদের জন্য ওযু স্বরূপ। অর্থাৎ পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করা পানি দ্বারা ওযু করার স্থলাভিষিক্ত। যদিও দশ বছর পর্যন্ত পানি না পাওয়া যায়। তবে পানি পাওয়া গেলে পানিই ব্যবহার করতে হবে।
ওযু ভেঙ্গে গেলে বা গোসল ফরয হলে শরীর পরিচ্ছন্ন থাকা সত্ত্বেও শরীয়তের দৃষ্টিতে নাপাকের হুকুমে ধরে নেয়া হয়, যা স্থল যুক্তিতে বোধগম্য নয়। তদ্রূপ ওযু গোসল দ্বারা পাক হওয়ার শরীয়তি হুকুম ও আমাদের বুদ্ধিতে ধরে না। তদ্রূপ পানির পরিবর্তে মাটির দ্বারা তায়াম্মুম তথা পবিত্রতা হাছিল করার বিষয়টিও সাধারণ বুদ্ধিতে আসে না। আসা জরুরীও নয়। বরং যুক্তিতে ধরুক বা না ধরুক সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মেনে নেয়াই হল শরীয়ত এবং এখানেই প্রমাণিত হবে যে, কে যুক্তি ও বুদ্ধির অনুগত আর কে মহান আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের অনুগত ।
তায়াম্মুমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, ওযু বা গোসলের প্রয়োজন কালে পানি না পাওয়া গেলে কিংবা অসুস্থতা, রোগ বৃদ্ধির আশংকা, শত্রুর ভয় ইত্যাদি কোন কারণে পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হলে তদ্রূপ সফর অবস্থায় পানি এক মাইলের ভিতরে না তাকলে ওযু গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে।
তায়াম্মুম করার পদ্দতি
প্রথমতঃ তায়াম্মুম নিয়ত করা ফরয। অর্থাৎ এ নিয়ত করবে যে, আমি অপবিত্রতা দূর করার জন্য অথবা নামায পড়ার জন্য তায়াম্মুম করছি। এ নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট মুখে বলা আবশ্যক নয়] অতঃপর উভয় হাত পাক মাটির উপর রাখবে। তারপর হাত ঝেড়ে মুখের যতটুকু অংশ ওযুতে ধোয়া ফরয ততটুকু অংশ পূর্ণভাবে উভয় হাতে মাসেহ করবে। অতঃপর পুনরায় মাটিতে হাত রেখে ডান হাতকে বাম হাত দ্বারা এবং বাম হাতকে ডান হাত দ্বারা ওযুর সীমা পর্যন্ত অর্থাৎ কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। আঙ্গুলগুলোকে খিলাল করবে এবং আংটি নাক ফুল ইত্যাদি খুলে বা নেড়ে সব জায়গায় হাত পৌঁছাবে। তায়াম্মুমে মাথা বা পা মাসেহ করার হুকুম নেই। তদ্রূপ কুলি বা নাকে পানি দেয়ার পরিবর্তেও কিছু করার হুকুম নেই । ওযু গোসল উভয় তায়াম্মুমেরই নিয়ম অভিন্ন এবং ওযু গোসল দ্বারা যতটুকু পবিত্রতা অর্জন হয় তায়াম্মুম দ্বারাও ততটুকুই অর্জন হয়
তায়াম্মুম ভঙ্গ হওয়ার কারণ সমূহ
ওযু ভঙ্গের কারণগুলোই হচ্ছে তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ। পানি পাওয়া গেলে এবং পানি ব্যবহারে সক্ষম হলেও তায়াম্মুম ভেঙ্গে যায়।
মাসআলা :- গোসল ফরয হলে ওযু গোসলের জন্য এক তায়াম্মুমই যথেষ্ট হবে। তারপর যদি ওযু ভেঙ্গে তবে ওযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিবে। অতঃপর যদি গোসল করার মত পানি পেয়ে যায় তবে গোসল করে নিবে। কেননা গোসল করার মত পানি পেয়ে গেলে গোসল ফরয হয়ে যায়।
ওযু গোসলের বিস্তারিত বিবরণ এ কিতাবের শেষ দিকে 'তাহারাত অংশে পেশ করা হবে।