News
ফারাক্কা বাঁধ কি ও কেন? - What is Farakka Dam and why?
ফারাক্কা বাঁধ কি ও কেন? : বিভ্রান্তি ও ষড়যন্ত্র
الْحَمْدُ لِلَّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى أَمَّا بَعْدُ! فَاعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ. بِسمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ لَتَحِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُمُ
مَوَدَّةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ قَالُوا إِنَّا نَصَارَى الحَ صَدَقَ اللَّهُ الْعَظِيمُ
অদ্যকার মনোজ্ঞ সম্মিলিত সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, সাহিত্যাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র শ্রদ্ধেয় পরিচালকবৃন্দ, জ্ঞানের ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর বিজ্ঞ বিচারক পরিষদ ও সুধী মণ্ডলী!
আমার বক্তৃতার নির্ধারিত বিষয়বস্তু 'মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ ঃ বিভ্রান্তি ও ষড়যন্ত্র।' এ সম্পর্কে ৬ টি পয়েন্টে আপনাদের সম্মুখে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করতে চাই।
প্রথমতঃ ফারাক্কা কী ও কেন?
দ্বিতীয়তঃ মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ সমস্যা ও ক্ষতি।
তৃতীয়তঃ বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ অপরিণামদর্শী শাসকগোষ্ঠী ।
চতুর্থতঃ এ বাঁধ নির্মাণের নেপথ্য ষড়যন্ত্র।
পঞ্চমতঃ আমাদের করণীয়।
ষষ্ঠতঃ দেশবাসীর প্রতি সংগ্রামী আহবান ।
সুধী মন্ডলী!
তাহলে আসুন ফারাক্কা কী ও কেন এ বিষয়ে আলোচনা করি।
সবুজ শ্যামল পত্র-পল্লবে ঢাকা, ছায়াঘেরা, পাখি ডাকা রূপসী বাংলাদেশের ঠিক উত্তর সীমান্তে ঐতিহাসিক ফারাক্কা নামক স্থানে সর্বনাশা গঙ্গা নদীর তীরে ১২৮ টি বাঁধ, ফিডার, ক্যানেল ও সুইজ গেট বিশিষ্ট যে বাঁধ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭০ সালের স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে বিশাল জলরাশির সুষ্ঠু বন্টন ও নিয়ন্ত্রণকল্পে তথা আশি শতাংশ পানির গ্যারান্টির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, সেটাই আজ মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ নামে পরিচিত। এবার আসুন মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ সমস্যা ও তার ক্ষতি সম্পর্কে আলোকপাত করি।
সচেতন বন্ধুগণ!
পানি মহান আল্লাহর অপার দান। যেখানে ইচ্ছা সে প্রবাহিত হতে পারে। এখানে কারো বাঁধ দেয়ার অধিকার নেই। অথচ সেখানে ছলচাতুরী করে ভারতের জালিম সরকার আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে শুকনো মৌসুমে ফারাক্কার সবক'টি গেট এক সাথে বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মরুভূমি বানিয়ে দিচ্ছে। আর বর্ষাকালে ফারাক্কার সবক'টি গেট একযোগে উন্মুক্ত করে দিয়ে সারা দেশকে দিচ্ছে ভাসিয়ে। যার কারণে উন্মত্ত পদ্মা শুষ্ক মৌসুমে হয় ধু ধু বালুর চর, ফসলের মাঠ হয় বিরান মরুভূমি।
শুকিয়ে যায় বনভূমির পাতা-পল্লব। সব মিলিয়ে বাংলদেশের ১২ কোটি তৌহিদী জনতার সামনে আজ জীবন মরণের প্রশ্ন। মারাত্মক ও ভয়াবহ এই জাতীয় সংকট সৃষ্টির অন্তরালে সর্বনাশা ফারাক্কার ভূমিকাই শতকরা একশ ভাগ, সে কথা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে পারেন। বর্ষা মৌসুমে ভারত যখন তার উদ্বৃত্ত পানি ছেড়ে দেয়, তখন বন্যাপ্লাবিত হয় সমগ্র বাংলাদেশ। বানের পানিতে ভেসে যায় অতি কষ্ট আর যত্নে গড়া আমার কৃষক ভায়ের ফসলি ক্ষেত, হালের বলদ, অনুন্নত ঘর-বাড়ী এবং কোটি কোটি মানুষের গ্রাস। পদ্মার পানি আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাবার ফলে গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের সেচ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সুন্দরবনের মহীরুহ আগামরা রোগে বিনষ্ট হয়। নল কুপে পানি উঠে না। পাকশীর অত্যাধুনিক নর্থবেঙ্গল পেপার মিল বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের পশ্চিমাংশের সমগ্র ইকো সিষ্টেম ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এক কথায় বলতে গেলে ভারতীয় পানি চক্রান্তের ফলে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দেশ এবং এর ক্ষতি আমাদের দেশকে আষ্টে পৃষ্ঠে ঘিরে রয়েছে।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ!
এবার বিভ্রান্তির বেড়াজালে শাসকগোষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে চতুর্দিক থেকে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করছিল । মিছিল, মিটিং, সেমিনার হচ্ছিল এমনকি মজলুম মানবতার আপোষহীন জননেতা শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন যে, পানি সংকট যারা সৃষ্টি করে তারা এজিদের দোসর। আর সেই ষড়যন্ত্র যারা রুখে তারা শহীদে কারবালা ইমাম হুসাইনের (রা.) উত্তরসূরী। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের জাতীয় প্রয়োজন ও ঈমানী দায়িত্ব।
বন্ধুগণ!
ঠিক তখনই বিভ্রান্তি ছড়াল কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তির দালাল আনাড়ী ও অযোগ্য প্রধানমন্ত্রী। প্রহসনমূলক ভাবে ৩০ বছরের পানি চুক্তির নামে গোলামী চুক্তি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করল। অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে তারা গলাবাজি করছে যে, প্রয়োজনমাফিক পানি দেয়া হবে ।
বন্ধুগণ!
টিভির পর্দাতে আর মিডিয়াতে পানি এলো। বাস্তবে পদ্মা নদীতে পানির ব্যবস্থা হলো না। গ্রীষ্মকালে পদ্মাতে ধুধু চর পড়ে যায়, পদ্মার মাটি ফেটে হয় চৌচির।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ!
বিভ্রান্তির এখানেই শেষ নয়। ঐ তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও কুটনীতিবিদেরা বলছে ফারাক্কা নজীরবিহীন বন্যার কারণ নয়; বরং এটা প্রকৃতির খেয়ালিপনা। অথচ অজ্ঞতাপূর্ণ উক্তিটি সরাসরি পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ। ঐ মানবতাবিরোধী, বুদ্ধিজীবীরা বলে, ফারাক্কার পানির জন্য আন্দোলন করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তারা তো কিছু পানি হলেও দিচ্ছে। এগুলো গোলামীমার্কা কথা। তাই এ নিয়ে সরকারী দল ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এবার এ বাঁধ নির্মাণের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করতে চাই। এই বাঁধের মাধ্যমে ঐ অপদার্থরা মূলতঃ ১২ কোটি তৌহিদী জনতার কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চায়। ওরা আমাদেরকে প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক এক কথায় সর্বদিক দিয়ে পঙ্গু করে আমাদেরকে তাদের গোলাম বানাতে চায়। প্রিয় দেশবাসী! আপনারা কি ভারতের গোলাম হতে চান? ভাইয়েরা আমার!
এবার আমি ১২ কোটি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের করণীয় সম্পর্কে ১০ দফা কর্মসূচী পেশ করতে চাই।
১. বাংলার ১২ কোটি মানুষের সামনে লেখনী, বক্তৃতা, আন্দোলনের মাধ্যমে ফারাক্কার ক্ষতিকে তুলে ধরে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
২. অযোগ্য, ব্যর্থ ও তাবেদার সরকারকে সর্বনাশা ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শ্বেত পত্র প্রকাশ করতে বাধ্য করতে হবে।
৩. গঙ্গাসহ ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ফোরামে আবেদন পেশ করতে হবে।
৪. ফারাক্কার মোকাবেলায় গঙ্গা বাঁধ ও গভীর জলাশয় নির্মাণ করতে হবে।
৫. পানির স্তর সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে জাতীয় পানি নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
৬. বাংলাদেশের পানি সমস্যা জাতিসংঘে উত্থাপন করতে হবে। ৭. অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে। ৮.নতজানু পররাষ্ট্র নীতি বাতিল করতে হবে।
৯. পানি আলোচনায় নেপাল ও চীনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।
১০. মাওলানা ভাসানী ও শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মত দল, মত, নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে লংমার্চ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলতে
হবে।
ফারাক্কা ভাঙ্গো, পানি আনো, পদ্মা বাঁধ নির্মাণ করো। দেশ বাঁচাও।
ভাইয়েরা আমার,
আমাদের আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না, আমাদেরকে আজ জাগতে হবে। আমাদের আজ বজ্র হুংকার ছাড়তে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে বিলুপ্তি ঘটাতে হবে জাতির এই জীবন মরণ সমস্যার। বন্ধুরা আমার!
অভিন্ন নদীর প্রবাহকে একতরফাভাবে আটকিয়ে ছেড়ে দিয়ে প্রতিবেশীকে কখনো শুকিয়ে মারা আবার কখনো বন্যার করাল ডুবিয়ে মারা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও গণ হত্যার শামিল। সুতরাং এখন আর বক্তৃতা নয়। সেমিনার সেম্পোজিয়াম নয়। অন্তঃসারশূন্য সংসদ অধিবেশন নয়। এখন আমাদের শ্লোগান হবে- ফারাক্কা বাঁধ ভাঙ্গতে হবে, নইলে গঙ্গা বাঁধ দিতে হবে। বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিতে হবে “এ বারের সংগ্রাম গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম তাবেদার শাসক গোষ্ঠীর কবর রচনা করার সংগ্রাম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ
আসুন আমরা সমস্ত মানব রচিত তন্ত্র মন্ত্র দু'পায়ে দলে মাথা তুলে দাঁড়াই। কোটি কণ্ঠে প্রতিবাদ করি। আসুন আমরা জাতির সংকট উত্তরণে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলি। দল, মত, নির্বিশেষে জাতির স্বার্থকে সমুন্নত করতে ঐক্যবদ্ধ হই। আসুন আমরা পানির জন্য লড়াই করি। পরিশেষে কবিতার মাধ্যমে আমার বক্তৃতার ইতি টানছি—
ফারাক্কার ঐ লৌহ কপাট,
ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট। রক্ত জমাট, শিকল পূজার পাষাণ বেদী।
উচ্চ কণ্ঠে বলো শ্লোগান তোল,
মরণ বাঁধ ফারাক্কা, ভেঁঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও।
نَصُرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ