ক্যান্সার প্রতিরোধে ১০টি খাদ্য -10 foods to prevent cancer
01:33:38 12/14/2023
ক্যান্সার প্রতিরোধে ১০টি খাদ্য : কিছু কিছু খাবারের রয়েছে প্রচণ্ড ক্যান্সার বিরোধী ক্ষমতা। দৈনিক এসব খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি। সামুদ্রিক খাবারও আমাদেরকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু সব জায়গায় সামুদ্রিক খাবার সহজলভ্য নয়। এখানে ক্যান্সার, বিরোধী দশটি খাবারের উল্লেখ করা হলো, যা প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। নিয়মিত এসব খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি সহজেই ক্যান্সার ঠেকাতে পারেন।
টমেটো
টমেটোতে ভিটামিন-সি প্রচুর পরিমাণ থাকলেও টমেটো ফ্লাডেনয়েড লাইকোপেন-এর একটি প্রধান উৎস। এই ফ্লাভোনয়েড লাইকোপেন এর জন্য টমেটো লাল রঙের হয়। অনেক ধরনের গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোর এই উপাদান ফুসফুস, জরায়ুমুখ, প্রোস্টেট এবং মুখের ক্যান্সারকে প্রতিহত করে।
তবে টমেটো কাঁচা না খেয়ে রেঁধে খেলে শরীর সঠিকভাবে লাইকোপেনকে কাজে লাগাতে পারে। যারা নিরামিষ ভোজী, টমেটো তাদের একটা প্রধান খাবার। তাই দেখা গেছে, নিরামিষ ভোজীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম। টমেটো শুধু যে ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই নয়, টমেটো খেলে আরো অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়।
নীলজাম
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে একটা উৎকৃষ্ট খাবার হলো নীলজাম । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফ্লাভোনয়েড। নীলজামকে আরো বলা হয় 'যৌবনের গোপন রহস্য।' বলা হয়ে থাকে যে, নিয়মিত নীলজাম খেলে যৌবন অটুট তাকে গবেষণায় দেখা গেছে, নীলজাম খেলে স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে।
তাই গবেষকদের পরামর্শ হলো দৈনিক এক কাপ নীলজাম খাওয়া। অন্যান্য রঙিন ফলমূল ও শাকসবজির মতো নীলগ্রামের রাসায়নিক উপাদানগুলো এন্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, অক্সিডেশনের কারণে শরীরের কোষসমূহে যে ক্ষতি হয় তা প্রতিহত করতে এন্টি অক্সিড্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীর বুড়িয়ে যাবার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জৈব প্রক্রিয়ার একটি হলো অক্সিডেশন জনিত চাপ। নীলজাম এটা থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
লাল বাঁধাকপি
সব ধরনের বাঁধাকপি-এমনকি ফুলকপি, ব্রকলি, ব্রাসলেস প্রভৃতি কপি গোত্রীয় সবজিতে কেবলমাত্র উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়ামই থাকে না, এগুলোতে আরো থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান ফ্লাভেনয়েড। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ক্যান্সার বিরোধী কপি জাতীয় সবজির মধ্যে সবচেয়ে উপরের তালিকায় রয়েছে লাল বাঁধাকপি । লালবিটকে বাদ দিলে এটাই ফ্লাভেনয়েড-এর সবচেয়ে চমৎকার উৎস।
লালবিট
লালবিটে এত বেশি পরিমাণ ফ্ল্যাভেনয়েড রয়েছে যে যারা এ সবজি খান না তাদের জন্য দুর্ভাগ্যই বটে। অনেকে অবশ্য প্রস্রাব লাল হয়ে যেতে পারে সে ভয়ে লালবিট খান না। লালবিট খেলে প্রস্রাবের রঙ লাল হয় এটা সত্য। কিন্তু আরো সত্য হলো এতে ভয় পাবার কিছু নেই। এটা হলো লালবিটের প্রয়োজনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ফ্লাভোনয়েড যা প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। শরীরের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, শরীর কেবল সেটুকুই গ্রহণ করে।
স্পিনিজ
স্পিনিজ একটি গাঢ় রঙের সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি ও বিটা ক্যারোটিন। দুটোই শক্তিমান এন্টি অক্সিড্যান্ট। এতে আরো রয়েছে ফলিক এসিড, যা আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যদি কেউ সপ্তাহে দু'বার বা তার বেশি বার স্পিনিজ খান, তার ফুসফুস এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
রসুন
রসুন নিয়ে এ যাবত বহু গবেষণা হয়েছে। রসুনে তীব্র গন্ধ এনে দেয় যে উপাদানটি, তার নাম সালফার। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সালফার উপাদান ক্যান্সারের সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ক্যান্সারকে প্রতিহত করে এবং টিউমারের বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়। লোয়া উইমেন'স হেলথ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা সপ্তাহে অন্তত একবার রসুন খেয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ শতকরা ৩২ ভাগ কমে গেছে।
সম্পূর্ণ গম
ইউনিভার্সিটি অভ লোয়া-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, মহিলাদের খাবারে বেশি পরিমাণ সম্পূর্ণ গমশস্য থাকলে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। সম্পূর্ণ গম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কম থাকে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সম্পূর্ণ গমজাত খাবার যেমন রুটি, পিঠা, সিরিয়াল প্রভৃতি খেলে মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে যায়, কিন্তু যারা এ খাবার খান না তাদের এ রোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
কমলা
আমরা সবাই জানি যে কমলাতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি রয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, কমলাতে আরো রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী অন্যান্য কার্যকর উপাদান। গবেষকরা দেখেছেন, কমলাতে ১৭০ টিরও বেশি ফটো কেমিক্যাল থাকে। আরো রয়েছে লিমোনয়েড নামক উপাদান যা কমলাতে কিছুটা তিক্ত স্বাদ এনে দেয়। এই লিমোনয়েড ক্যান্সারের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়। নিয়মিত কমলা খেলে ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
স্ট্রবেরি
হার্ভার্ড স্কুল অব হেলরথ-এর গবেষকরা ১,২৭১ জন লোকের খাবার ও স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন যে, যেসব লোক স্ট্রাবেরি খেতে ভালোবাসেন তাদের ক্যান্সারের প্রকোপ ৭০ শতাংশ কম। এ গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে স্ট্রবেরি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তবে অন্যান্য আরো গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, অন্যান্য রঙিন এবং গাঢ় রঙিন জামসমূহ যেমন ক্যানবেরি, রাজবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি, লাল ও বেগুনি রঙের আঙ্গুর এবং এরকম আরো অনেক ফল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
বরবটি
সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, সবধরনের শিম বরবটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিজ ইনহিবিটর উপাদান থাকে। এই উপাদান নিকটবর্তী টিস্যুতে ক্যান্সার কোষ প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফাড়া বিন নামক এক ধরনের বরবটিতে প্রচুর পরিমাণে হেরিন থাকে যা অন্ত্রে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে বাঁধা প্রদান করে। সয়াবিনে উচ্চমাত্রার আইসোফ্লাভন রয়েছে। এটা ইন্ট্রোজেন হরমোনের টিউমার বৃদ্ধিকারী উদ্দীপনাকে বাঁধা দিয়ে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।