ত্বকের যত্ন সম্পর্কে ১০ টি ভুল ধারণা - 10 misconceptions about skin care
15:54:00 12/10/2023
ত্বকের যত্ন সম্পর্কে ১০ টি ভুল ধারণা : যৌবনে পদার্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েরা ত্বকের ব্যাপারে বিশেষ যত্নশীল হয়ে ওঠেন। ত্বককে কোমল, মোহনীয় ও লাবণ্যময় করে তোলার জন্য শুরু হয় কত প্রচেষ্টা। সৌন্দর্য চর্চায় যে যা বলেন সেটাকেই গ্রহণ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে বান্ধবী বা অন্য কারো কাছ থেকে ত্বকের পরিচর্যায় তারা যে পরামর্শ গ্রহণ করেন সেসব ভুল। এসব প্রচলিত ভুল ধারণা প্রয়োগ করার ফলে ত্বকের ক্ষতি হয় বেশি। বর্তমান লেখাটিতে এরকম দশটি প্রচলিত ভুল ধারণার কথা উল্লেখ করে পাশাপাশি প্রকৃত পরামর্শ দেয়া হলো :
প্রচলিত ধারণা - ০১
এন্টিরিংকেল বা বলিরেখা প্রতিরোধকারী ক্রিমসমূহ ত্বককে নাজুক করে তোলে:
কিছু কিছু বিউটি থেরাপিস্ট এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে, অতিরিক্ত আলফা হাইড্রোক্সি এসিড বা ট্রেটিনয়েন ব্যবহারে ত্বক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। কিন্তু ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তাদের মতে, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড বা ট্রেটিনয়েনের ব্যাপক ব্যবহার ত্বককে সুডৌল ও মজবুত করে। এই রাসায়নিক উপাদান ত্বকের ওপরের মৃত কোষগুলোকে তুলে ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে ট্রেটিনয়েন ত্বকে কোলাজেন নামক এক ধরনের স্পঞ্জ সদৃশ প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা ত্বকে পরিপূর্ণতা আনে এবং ত্বকের কোষসমূহের মধ্যকার বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। অন্যকথায় বলা যায়, এটা সত্যিকার অর্থে ত্বককে পুরু করে তোলে। আলফা হাইড্রোক্সি এসিডের ঘনত্ব যত বেশি হয়, কোলাজেন উৎপাদনও তত বেড়ে যায়। তা সত্ত্বেও বেশিমাত্রায় এসব পদার্থ বা আরো বেশি শক্তিশালী পদার্থ ব্যবহার করলে ত্বক নাজুক অনুভূত হতে পারে বা নাজুক দেখাতে পারে।
তাই একক এন্টিরিংকেল ক্রিম ব্যবহার করবেন। এবং শুরুতে ব্যবহার করবেন কম— সপ্তাহে তিনবার। তাহলে ত্বক ক্রমে এর উপযুক্ত হয়ে ওঠবে। তারপর ক্রিমটি স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবেন। আলফা হাইড্রোক্সি এসিড যদি খুব অস্বস্তিকর হয় তাহলে বিটাহাইড্রোক্সি (স্যালিসাইলিক এসিড ব্যবহার করুন। এটাতে এন্টি ইনফ্লামেটরি বা প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে।
প্রচলিত ধারণা - ০২
দিনে দুবার মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা প্রয়োজন
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক প্রকৃতির হয় তাহলে দিনে দুবার পরিষ্কার করার ফলে ত্বকে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে শীতকালে সমস্যা আরো বেড়ে যায়। ডিটারজেন্ট ও গরম পানি ত্বক সুরক্ষাকারী প্রাকৃতিক তেলকে সরিয়ে দেয়, যার ফলে ঠাণ্ডা এবং বাতাসে ত্বক প্রচণ্ড সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাই সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাতে হালকা ক্লিনজার দিয়ে মেকআপ তুলে ফেলা, তাহলে সকাল পর্যন্ত মুখ পরিষ্কার থাকবে। সকালে যদি আরো সতেজ অনুভূতি অনুভব করতে চান তাহলে ক্লিনজার দিয়ে হালকা মুছে নিন এবং মুখে ঠাণ্ডা পানি ছিটান ।
প্রচলিত ধারণা - ০৩
ঠোঁটে বাম ব্যবহার করলে বার বার তা ব্যবহার করতে হয় :
এ ধারণার অর্থ হলো বাম অথবা লিপজেল আপনার জন্য ক্ষতিকর এবং এটা ব্যবহার করার পর ছেড়ে দিলে আপনার ঠোঁট ফেটে যাবে ও খসখসে হয়ে উঠবে। দুটি ধারণার কোনোটিই সত্য নয় ।
তাহলে শীত এলে আপনি কেন ঠোঁটে বাম বা লিপজেল ব্যবহারে বাধ্য হন? ঠোঁটের ত্বক বিশেষভাবে পাতলা হয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠোঁটের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ওঠে। একবার ঠোঁটে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ঠোঁট পিচ্ছিল ও মসৃণ হয়। কিন্তু তৈলাক্ত পদার্থটুকু মুছে ফেললে ঠোঁট দুটো আরো বেশি শুষ্ক বলে মনে হয়। ফলে আপনি আরো বেশি বাম ব্যবহার করে ফেলেন। এর অর্থ এই নয় যে, আপনি বাম বা লিপজেলে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ঠোঁটের শুষ্কতা প্রতিরোধে বাম বা লিপজেল ব্যবহারে ক্ষতি নেই।
প্রচলিত ধারণা - 08
ধোঁয়া চেহারাকে নষ্ট করে দেয় :
এ ধারণাটি সত্য নয়। বিভিন্ন শহরে যে পরিমাণে ধোঁয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ধারণাটি সত্য হলে সবার চেহারাই খারাপ হয়ে যেত। দূষিত বাতাস সরাসরি ত্বকের ক্ষতি করে বা ত্বক বিনষ্টকারী ফ্রি র্যাডিক্যালসমূহকে কার্যকর করে তোলে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ব্যতিক্রম হলো সিগারেটের ধোঁয়া— এটি ত্বকে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয়, ক্ষত উপসমে বিলম্ব ঘটায় এবং ত্বকে দ্রুত বলিরেখা বা ভাঁজ সৃষ্টি করে।
প্রচলিত ধারণা - ০৫
মুখে সাদা দাগ হওয়া মানে ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
সাদা দাগ, চুলকানি ও আঁশ ওঠার ঘটনা যদি ব্যাপক এলাকা যেমন, থুতনি, নাক অথবা গালে হয় তাহলে এটাকে ত্বকের শুষ্কতা বলা যেতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু স্থান যেমন, নাসারন্ধের চারপাশে, কপালের ওপরে যেখান থেকে চুল শুরু হয়েছে, অথবা ভ্রুতে সাদা দাগ হওয়া সম্ভবত প্রসাধন সামগ্রীর প্রতি এলার্জি অথবা সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (ত্বকের প্রদাহ যা ত্বকের তেল নির্গমনকারী এলাকাসমূহে দুশ্চিন্তা বা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে)-এর লক্ষণ । প্রচুর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে এর কোনো সমাধা হয় না এবং আরো খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয় । লোশন এলার্জি থাকলে এর প্রাদুর্ভাব আরো বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে। তিনি হালকা হাইড্রোকরটিসন ক্রিম ব্যবহারের জন্য দিতে পারেন অথবা ত্বক পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।প্রচলিত ধারণা -
০৬ ফুসকুড়ি ফাটানো উচিত নয় :
এটি একটি ভুল ধারণা। আসল সত্য হলো এ ধরনের ছোটখাঠো চিকিৎসা কাজে অত্যাধুনিক সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। মাঝে মাঝে অনেকের মুখের ত্বকে গোলাপি ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এর জন্য যা করতে হবে তা হলো প্রথমে আপনার হাত ও মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি সরু সুই জীবাণুমুক্ত করে সুইয়ের ডগা দিয়ে হালকাভাবে ফুসকুড়ির ওপর বিদ্ধ করুন। একটি পরিষ্কার টিস্যু দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে ভেতরের পদার্থগুলো বের করে আনুন। বারবার ছিদ্র করলে কিংবা জোরে চাপলে ফুসকুড়ির মুখ বড় হয়ে যাবে এবং রক্তের শ্বেতকণিকা বের হয়ে আসবে। এর ফলে ইনফেকশন ও স্থায়ী দাগ সৃষ্টি হবে। ফুসকুড়ি ফাটানোর পর ক্ষত আপনাআপনি সেরে যায়। তবে আপনি ইচ্ছে করলে এন্টিসেপ্টিক মাখতে পারেন।
প্রচলিত ধারণা - ০৭
বাষ্প ত্বককে বিষমুক্ত করে :
হ্যাঁ, বাষ্পস্নান এবং বাষ্পঘর ত্বককে উজ্জ্বল করে। কিন্তু এর দীর্ঘস্থায়ী কোনো সুফল নেই। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে বাষ্পস্নানের সময় শুধু ঘাম দূর হয়। ময়লা ও জীবাণু দূর হয় সাবান পানির মাধ্যমে। এজন্য বাষ্পস্নান কিংবা ব্যায়ামের পরপরই গোসল করতে হবে। কারণ ঘাম ফুসকুড়ি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্মক্ষেত্র।
প্রচলিত ধারণা-০৮
এলার্জি পরীক্ষিত প্রসাধনী ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না :
এটা সত্যি যে, হাইপোএলার্জেনিক লোশন ও প্রসাধন সামগ্রীর সংবেদনশীল ত্বকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার সম্ভাবনা খুব কম। তবুও এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রসাধন দ্রব্য পরীক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। আপনার ত্বক যদি খুব সুন্দর ও শুষ্ক হয় তাহলে যে কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষা করে নিন। যদি আপনার ত্বক চুলকায়, টনটন করে, খসখসে হয় কিংবা লাল হয় তাহলে প্রসাধনীটি ব্যবহার করবেন না।
প্রচলিত ধারণা - ০৯
অতিরিক্তি পানি পান করলে ত্বক আর্দ্র হয় :
ত্বক কোমল করাসহ সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসকরা দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন। এর চেয়ে বেশি পান করলে ত্বক আর্দ্র হয় না। এটা কেবল পায়খানা-প্রস্রাবকে বাড়িয়ে দেয়। ত্বকের তেলগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তেল ত্বককে আর্দ্র রাখে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রন্থিসমূহ থেকে তেল উৎপন্নের পরিমাণ কমে যায়, ফলে ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। ত্বক সুরক্ষাকারী এই পদার্থ সংরক্ষণের জন্য তাই গোসলের পর শরীর ভেজা থাকা অবস্থায় ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
প্রচলিত ধারণা- ১০
সূর্যালোকে ত্বকে যে ক্ষতি হয় তা পূর্বাবস্থায় ফেরানো সম্ভব নয় :
সমীক্ষায় দেখে গেছে ত্বকের ৯০ ভাগ বলিরেখা বা ভাঁজ সৃষ্টি হয় সূর্যালোকের কারণে। কিন্তু আপনি যদি সূর্যের আলোতে ত্বক ঢেকে রাখেন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন তাহলে ত্বকের নিচে কিছু কোষ পুনর্গঠিত হয় এবং নতুন কোষ সৃষ্টি করে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন সানস্ক্রিন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন যাতে কমপক্ষে ১০-১৫ এসপিএফ বা সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর রয়েছে। নিয়মিত এই সানস্ক্রিন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ১-২ বছরে আপনার ত্বক পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে।
গ্রীষ্মকালে ত্বকের যত্নে কিছু টিপস
- গ্রীষ্মকালে আমাদের প্রখর রোদে বাইরে বের হতে হয়, বাইরে বের হবার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, কারণ আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে ও ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে দেয়, সানস্ক্রিন ব্যবহার করার সাথে সাথে ছাতাও ব্যবহার করবেন।
- ধূলা বালিতে চুল ও ত্বক দ্রুত ময়লা হয় এ সময়, তাই ত্বক ও চুল পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। দিনে দুবার গোসল করবেন ও প্রয়োজনে প্রতিদিন কিংবা একদিন অন্তর শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
- যাদের ত্বক শুষ্ক তারা অবশ্যই ক্রিম ব্যবহার করবেন। আর তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা তেলবিহীন ক্রিম ব্যবহার করবেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিবেন এবং তারপর ক্রিম লাগাবেন।
- সপ্তাহে একদিন মুখে স্ক্যাবার ক্রিম লাগিয়ে ম্যাসেজ করবেন। আর যারা ফেশিয়াল করান তারা মাসে একবার ফেশিয়াল করাবেন।
- গ্রীষ্মকালে ট্যালকম পাউডার, ডিওডেরান্ট কিংবা এন্টি পারসিপিরেন্ট প্রয়োজনমত
- ব্যবহার করবেন।
- হালকা সুতির পোশাক ও হালকা সাজ গ্রীষ্মকালের জন্য মানানসই।
- মুখের ত্বকে ব্রণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি ও প্রচুর শাক-সবজি, ফল খাবেন। এতে ত্বক ও চুল স্বাস্থ্যোজ্বল হবে।
●হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন