Narrow selection

​​​​​​​আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন ব্যাখ্যা- Allah is with us


16:04:50 12/10/2023

আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন ব্যখ্যা : গুহায় বসে সিদ্দীকে আকবর রা. যখন মুশরিকদের পদচিহ্ন দেখছিলেন তখন তিনি বলে উঠলেন- হে আল্লাহর রাসূল। যদি তাদের কেউ পা ওঠায়, তবে তো আমাদেরকে দেখে ফেলবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ দু জনের ব্যাপারে তোমার কী ধারণা- যাদের তৃতীয়জন হলেন স্বয়ং বিশ্ব জগতের পালনকর্তা আল্লাহ তাআলা। আর এই ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলার ইরশাদ:

ثانى اثنين إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لصاحبه لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنا

অর্থাৎ তিনি ছিলেন দু'জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। [সূরা তাওবা: ৪০]

সুরাকার ঘটনা

কুরাইশরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে না পেয়ে ঘোষণা দিলো- যদি কেউ তাকে ধরে এনে তাদের হাতে সোপর্দ করতে পারে তবে তাকে দেওয়া হবে এক শ' উট। এদিকে তারা দু'জন গুহায় তিন রাত অবস্থান করে পরের দিন চলতে শুরু করেছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আমের বিন ফুহাইরা ও একজন মুশরিক পথপ্রদর্শক। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে গ্রহণ করেছিলেন। সে তাদেরকে নিয়ে উপকূলবর্তী পথ ধরে মদীনার দিকে এগিয়ে চলল।

উটের প্রতি প্রচণ্ড লোভ সুরাকাকে নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশ্চাদ্ধাবনে ঠেলে দিলো। তাই সুরাকা নিজের তেজী ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছাকাছি চলে এলো। কিন্তু ঘোড়া তখন হোঁচট খেয়ে তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিলো। সুরাকা আবারও তাদের পেছনে ছুটতে লাগলেন। দ্বিতীয়বার আবার তার ঘোড়া হোঁচট খেলো। তিনি পড়ে গেলেন। কিন্তু আবারও তাদের পেছনে দৌড়াতে লাগলেন । যখন একেবারে কাছে পৌঁছে গেলেন তখন ঘোড়া তৃতীয় বার হোঁচট খেল এবং তার সামনের দুই পা মাটির ভেতরে দেবে গেল। এতে সুরাকা মাটিতে ছিটকে পড়লেন। ঘোড়ার পা যখন মাটি থেকে বের করলেন তখন ধূলিঝড়ের মতো সেই গর্ত থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উত্থিত হতে লাগল ।

তখন সুরাকা বুঝতে পারলেন- নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং আল্লাহ তাআলার যিম্মায় রয়েছেন। আর এটা একেবারেই সুস্পষ্ট। এটা এদিক সেদিক ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তখন তিনি তাদেরকে ডাক দিয়ে বললেন- আমি সুরাকা বিন জু'শুম। আপনাদের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। দয়া করে একটু দাঁড়ান। খোদার কসম! আমি আপনাদের খারাপ কিছুই করব না। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রা. কে বললেন- জিজ্ঞাসা করো সে আমাদের কাছে কী চায়? সুরাকা বললেন- আমাকে আপনি একটি নিরাপত্তার সনদ লিখে দিবেন- যা ভবিষ্যতে আমার ও আপনার মাঝে নিদর্শন হয়ে থাকবে। তখন আমের বিন ফুহাইরা তাকে একটি হাড় কিংবা চামড়ার টুকরায় লিখে দিলেন।

ভবিষ্যদ্বাণী: বস্তুবাদী দুনিয়া যার সামনে অসহায়

এটা ছিল নবী জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। তিনি তখন তাঁর জন্মভূমি ছেড়ে দূরদেশ মদীনার পথে হিজরত করে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর মাতৃভূমির মানুষ তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। পথে পথে তাকে অসংখ্য রক্তচক্ষু খুঁজে বেড়াচ্ছিল। অথচ এখানে বসেই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পাচ্ছিলেন- তাঁর উম্মতের সিপাহসালারগণ কিসরার মুকুট আর কায়সারের সিংহাসন পদানত করে নিচ্ছিল। গোটা পৃথিবীর বড় বড় ধনভাণ্ডারের চাবিকাঠি নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিচ্ছিল। আর তাই এই ঘনঘোর অন্ধকারে তিনি আলোর সংবাদ দিলেন। তিনি সুরাকাকে ডেকে বললেন- সুরাকা তোমার তখন কেমন লাগবে; যখন তোমাকে কিসরার বালা পরিয়ে দেওয়া হবে?

আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে সাহায্য ও প্রকাশ্য বিজয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর তাঁর দীনের জন্য প্রকাশ ও পূর্ণ বিজয়ের ওয়াদা করেছিলেন। ইরশাদ হচ্ছে:

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ

الْمُشْرِكُونَ

অর্থাৎ তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে, যেন এ দীনকে অপরাপর দীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। [সূরা: তাওবা: ৩৩]

কিন্তু সংকীর্ণ দৃষ্টি আর সীমাবদ্ধ জ্ঞানের ঐ বস্তুবাদী কুরাইশী মানুষগুলোর পক্ষে এগুলো বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। আর তাই তারা এগুলোকে সাফ অসম্ভব বলে জানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নবুওতের চোখ তো দূরকে অনেক কাছে থেকে দেখতে পায়: অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না। [সূরা আলে ইমরান: ৯]

পরবর্তী সময়ে তাই হয়েছিল। উমর রা. এর নিকট কিসরার বালা, গাউন আর মুকুট নিয়ে আসা হলো তখন তিনি সুরাকা বিন মালিককে ডেকে সেগুলো পরিয়ে দিয়েছিলেন। যাই হোক, সুরাকা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে অনেক কিছু পেশ করল। কিন্তু তিনি কিছুই গ্রহণ করলেন না। শুধু বললেন- আমাদের ব্যাপারটি গোপন রেখো : 

মুবারক মানুষ

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রা. পথিমধ্যে এক মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি ছিলেন উম্মে মা'বাদ খুযাইয়া। তার কাছে একটি বকরি ছিল। কিন্তু দুর্ভিক্ষের কারণে এর ওলান শুকিয়ে গিয়েছিল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুবারক হাত তাঁর ওলানে স্পর্শ করলেন। ফলে তাঁর ওলান দুধে ভরে গেল। অতঃপর তিনি দুধ দোহন করে উম্মে মা'বাদকে দিলেন। সঙ্গীদ্বয়কে পান করতে দিলেন। এক পর্যায়ে সবাই পরিতৃপ্ত হলেন।

সবশেষে তিনি নিজে পান করলেন। এরপর দ্বিতীয়বার দোহন করলেন। সেবারও পাত্র ভরে গেল। উম্মে মা'বাদের স্বামী আবু মা'বাদ এসে ঘটনা জানতে চাইলে উম্মে মা'বাদ বললেন- খোদার কসম! আমাদের কাছ দিয়ে একজন মুবারক মানুষ গেছেন তাঁর কথা-বার্তা ছিল এমন এমন। এরপর তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্দর বর্ণনা দিলেন। সবশুনে আবু মা'বাদ বলে উঠলেন, খোদার কসম! আমার তো মনে হয় তিনি সেই ব্যক্তি- কুরাইশরা যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

পথপ্রদর্শক তাদেরকে নিয়ে এগিয়ে চললেন। এক পর্যায়ে তারা মদীনার উপকণ্ঠে কুবায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। এটা ছিল রবীউল মাসের ১২ তারিখ সোমবার দিন। ২৯ এই তারিখ থেকেই পরবর্তী ইসলামী ইতিহাসের হিজরী তারিখ গণনা করা হয়েছিল। এভাবে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল একটি নতুন যুগ আর আর একটি নতুন ইতিহাসের পথচলা ।

 

● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color