শিশুর কৃমি হলে করনীয় - Can be done if the child has worms
05:42:37 12/10/2023
শিশুর কৃমি হলে করনীয় : বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে সম্ভবত পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শিশুদের চেয়ে কৃমির প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এর কারণ হলো শিশুর স্বাস্থ্যগত পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বাবা-মায়ের উদসীনতা এবং অজ্ঞতা। কৃমি একটি শিশুকে মৃত্যুর দ্বারাপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। সাধারণত গোল কৃমি বা কেঁচোকৃমি, বক্রকৃমি, সুতাকৃমি এবং ফিতাকৃমির সংক্রমণ আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।
যত্রতত্র পায়খানা করলে কৃমির ডিম সেখানে ছড়িয়ে থাকে। শিশুরা খালিপায়ে চলাচল করলে সেখান থেকে তারা আক্রান্ত হতে পারে। অপরিষ্কার খাবারের সাথে কিংবা নখ পরিষ্কার না রাখলে কৃমির ডিম শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ঘটায়। বক্রকৃমি শিশুর পায়ের তালুর ত্বক ভেদ করে শরীরে ঢুকে পড়ে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে রক্ত চুষে খায়। শিশুকে রক্তশূন্য করে তোলে। সুতাকৃমি পায়ুপথে এসে সেখানে ডিম পাড়ে। শিশু যখন তার পায়ুপথ চুলকায় তখন তার হাতের আঙুলে ও নখে ডিম লেগে থাকে এবং খাবারের সাথে তার পেটে ঢুকে যায়।
ফিতাকৃমি মানুষের পায়খানার সাথে বেরিয়ে মাটিতে ও ঘাসে লেগে থাকে। গরু, মহিষ এসব ডিম খেয়ে আক্রান্ত হয়। এসব গরু মহিষের মাংস কেউ অর্ধসিদ্ধ করে খেলে কৃমিতে আক্রান্ত হয় । কিছু কিছু কৃমি শ্বাসনালিতে ঢুকে পড়ে, কখনো কখনো ফুসফুসে গিয়ে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায় ।
শিশুর পেটে কৃমি থাকলে কী উপসর্গ প্রকাশ পায়
সাধারণত পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। শিশু চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। অনেক সময় বমির সাথে অথবা পায়খানার সাথে কৃমি বেরিয়ে আসে । পায়ুপথে চুলকায়। শরীরেও চুলকানি হতে পারে। শিশুর প্রায়ই পেট খারাপ হয়, অনেক সময় পেট ফেঁপে থাকে। শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কৃমিগুলো অনেক সময় অস্ত্রের নালিতে আটকে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে-এ অবস্থাটি শিশুর জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনে। কখনো কখনো কৃমি পিত্তনালিতে প্রবেশ করে পিত্ত চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয় ফলে জন্ডিস দেখা দেয়। এই জন্ডিস শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন করে তোলে। কিছু কিছু কৃমি মস্তিষ্কে সিস্ট তৈরি করে-তখন মাথা ঘোরা, খিঁচুনি এমনকি শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে।
কী চিকিৎসা দিতে হবে
কৃমির চিকিৎসা দেবার শিশুর পায়খানা পরীক্ষা করাই শ্রেয়। তবে অনেক সময় পায়খানা পরীক্ষায় কৃমি নাও পাওয়া যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক কৃমি সন্দেহ করে থাকলে কৃমির ওষুধ প্রদান করতে পারেন। অনেক সময় উপসর্গ দেখেও কৃমির ওষুধ দেয়া যেতে পারে এবং যে কোনো কৃমির ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শমতো খাওয়াতে হবে কেননা কোনো কোনো ওষুধ শিশুর বয়স দু'বছরের কম হলে ব্যবহার করা সমীচীন নয়। কৃমির ওষুধ শুধু শিশুকেই খাওয়ালে হবে না একই সময়ে পরিবারের সব সদস্যকেও তা খেতে হবে। একজন সুস্থ মানুষ ৬ মাস অন্তর কৃমির ওষুধ খেতে পারেন।
কৃমির সংক্রমণ রোধে কী করণীয়
শিশুর জন্মের পর থেকে পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত তাকে বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে গোসল কিংবা ধোয়ামোছার জন্য পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে তারপর ব্যবহার করতে হবে।
- শিশুর বয়স পাঁচ মাস হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি যখন অন্য খাবার সরবরাহ করা হবে তা যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
- খাবার তৈরির আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- শিশুর হাত এবং নখ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশু যাতে আঙুল না চোষে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশুকে কখনোই খালিপায়ে মাটি বা ঘাসের ওপর চলতে দেয়া যাবে না। সে যাতে ময়লাযুক্ত কোনো দ্রব্য না ধরে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
- শিশু যেন খালি পায়ে বাথরুমে না ঢোকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
- শিশু যেন পায়ুপথ না চুলকায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাটিতে পড়ে থাকা কোনো ফল শিশুর হাতে দেয়া যাবে না।
- স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে।
- মলত্যাগের পর পরিবারের সব সদস্যকে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। প্রতি ৬ মাস অন্তর শিশুসহ পরিবারের সব সদস্যকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কৃমির পরীক্ষা করতে হবে ও পরামর্শ নিতে হবে।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন