শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন - Child mental health care
06:03:58 12/10/2023
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন : ছোট শিশু একটু একটু করে বড় হয়। ভাঙা ভাঙা কথা বলার চেষ্টা আর সেই সাথে শুরু হয় নানা রকম দুষ্টুমি। প্রথমে বাবা মা সবকিছু উপভোগ করে। তারপর শুরু হয় শাসন করা। শাসনের সাথে সাথে বকাবকি, মারধর শুরু হয়। এতে করে বাচ্চার উপর অনেক মানসিক চাপ তৈরি হয়।
বাচ্চা অবাধ্যতা করলে তাকে বোঝাতে হবে এমনভাবে যে, সে যা করছে তা ঠিক নয়। অন্য শিশুর সঙ্গে কখনো নিজের বাচ্চাকে তুলনা করবেন না। এতে করে শিশুর চিরস্থায়ী মানসিক ক্ষতি হয় ।
পাঁচ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের না বকে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। ধৈর্য ধরে বোঝালে বাচ্চারা কিন্তু বেশ বোঝে। মারধর করলে বাচ্চারা অনেক কিছু আপনার কাছ থেকে লুকাবে । আর এক পর্যায়ে বকাবকি গায়ে মাখবে না। তাই কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তা বাচ্চাকে বুঝাতে হবে ।
মারধর করা একেবারে অনুচিত। মানসিক ও শারীরিক দু রকম ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের নরম শরীর অনেক সংবেদনশীল। যে কোনো আঘাতে ক্ষতি হতে পারে। যেমন কানে, মাথায়, চোখে, বুকে, পেটে যে কোনো রকম ক্ষতি হতে পারে। তিন বছর পর্যন্ত শিশুকে কোনোভাবেই মারা ঠিক নয়। তিন বছরের পরে কোনো কারণে খুব প্রয়োজন মনে করলে পিঠে আস্তে করে মারতে পারেন। তবে মারধর করলে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে না। মার খেতে অভ্যস্ত হলে বাচ্চা আর শাসনে ভয় পায় না। অন্যায় করতেই থাকে।
দুরন্ত শিশুকে শান্ত করতে বা ঘুম পাড়াতে কোনোভাবেই ভূতের ভয় দেখাবেন না। এখনি ভূত আসবে' এগুলো বলে ভয় দেখানো ঠিক নয়। এতে করে শিশুর অবচেতন মনে এই ভয় থেকে যায়। রাতে এমনিতেও তখন ভয় পেতে পারে এবং একা থাকতে ভয় পায়। শিশু দুর্বল চিত্তের হয়ে ওঠে।
বাচ্চারা অনেক সময় জেদি হয়। তবে বাচ্চাদের জেদ বাবা মাকেই ভাঙাতে হবে। জেদ করার সাথে সাথে সেই জিনিস হাতে পেলে শিশুর অভ্যাস হয়ে যাবে। শিশু মনে করবে জেদ করলে যা চাই তা পাওয়া যাবে। এ ধরনের অভ্যাস বড় হলেও চরিত্রে প্রতিফলিত হয় । তবে জেদ ছাড়াতে বাবা মাকে অনেক ধৈর্য ধরতে হবে। অন্য কারো কাছে থেকে কিছু নেয়া বা কারো বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসা অথবা অন্যের খাওয়া খেয়ে ফেলা ইত্যাদির ব্যাপারে শিশুকে বিশেষ শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। খারাপ ভালোর তফাৎ শিশু কিন্তু বোঝে।
অন্যের জিনিস নেয়া ঠিক নয়, কেউ ভালো বলবে না এটা বোঝাতে হবে। আর অন্যের খাওয়া পছন্দ হলে বা খেতে ইচ্ছে হলে শিশুকে বলবেন আপনাকে অর্থাৎ মা বাবাকে জানাতে। আর এমনটা হলে অবশ্যই সাথে সাথে ঐ খাবার কিনে বা তৈরি করে তাকে খেতে দেবেন। তাহলে কোনোভাবেই বাচ্চা এরকম কিছু করবে না যাতে আপনার মাথা নত হয়। আর এসব নিয়ে বকাবকি বা মারধর করলে বাচ্চার মনে নীতিবোধ তৈরি হবে না । নীতিহীন হয়ে শিশু বড় হয়ে উঠবে।
খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের ব্যাপারেও কিছু নিয়ম মানতে হবে। জোরাজুরি করে কিছু করতে চাইবেন না। মনে করুন আপনার বাচ্চা দুটো পানি খাওয়ার গ্লাস ভেঙে ফেলল তখন আপনি তাকে বুঝিয়ে বলবেন গ্লাস ভাঙলে আপনারা পানি খাবেন কীভাবে।
বাচ্চাদের শাসন করতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। বাবা-মাকে বাচ্চাকে সময় দিতে হবে। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তার মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুর সমালোচনা শিশুর সামনে কখনো করবেন না। শিশুকে সঠিক নীতিবোধ দিতে হবে। ভালোমন্দ বোঝার শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে অত্যধিক বকাবকি ও মারধর করলে বড় হয়ে সে একগুঁয়ে হয় এবং পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে না। কেউ তাকে ভালোবাসে না বা সে কিছু করলেই দোষ এমন একটা মনোভাব তার মাঝে থেকে যায়। শিশুর সকল অভ্যাসকে সু-অভ্যাস করে গড়ে তুলতে যেয়ে আরো মানসিক ক্ষতি যাতে না হয় এ ব্যাপারে লক্ষ্য রেখে শিশুকে শাসন করুন।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন