কাবা নির্মাণ - Construction of the Kaaba
00:46:21 12/14/2023
কা'বা নির্মাণ ও ফিতনার আগুন নির্বাপন : রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর হলো, কুরাইশরা তখন কাবার পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। তারা মূলত কা'বা ঘরের ওপর ছাদ নির্মাণ করতে চেয়েছিল। কারণ কাবাঘর কেবল একটির ওপর একটি পাথর বসিয়ে পুরনো ধাঁচে মোটামুটিভাবে তৈরি করা হয়েছিল। তাছাড়া তার উচ্চতা ছিল মানুষের উচ্চতার চেয়ে সামান্য একটু বেশি। যার কারণে পুরনো অবকাঠামো ভেঙে নবনির্মাণ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিল না।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরনো অবকাঠামো ভেঙে আবার নতুন করে নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলল। নির্মাণ কাজ যখন হজরে আসওয়াদ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল তখন দেখা দিলো এক নতুন বিপদ। কে এই পবিত্র পাথরকে তার জায়গায় স্থাপন করবে? প্রত্যেক কবীলাই এই সম্মান তার বাগে নেওয়ার কোশেশ করছিল। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে রণেভেরী বেজে ওঠার উপক্রম হলো। আর এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না। কেননা, জাহেলিয়াতের যুগে এর চেয়েও একেবারে সাধারণ থেকে সাধারণ বিষয় নিয়ে তারা বছরের পর বছর যুদ্ধ করে মূল্যবান মানবীয় প্রাণের নিষ্ফল বলি দিত।
এক পর্যায়ে তারা যুদ্ধের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলল। বনু আব্দুদ্দার রক্তভর্তি একটি পাত্র নিয়ে এলো। এরপর তারা এবং বনু আদী সেই রক্তে হাত ঢুকিয়ে প্রতিজ্ঞা করল- মৃত্যু পর্যন্ত দুশমনের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে।
এটা ছিল বড় এক দুর্ভাগ্যের ঘনঘটা। এভাবেই কেটে গেল বেশকিছু দিন । মক্কা নগরীর আকাশ ঘিরে ছিল দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ। চতুর্দিক থেকে ভেসে আসছিল রণ-ঝনঝন আর লড়াইয়ের পূর্বাভাস। অতঃপর তাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলো- যে আগামীকাল মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে আগে প্রবেশ করবে, সে- ই এই ব্যাপারটি ফয়সালা করবে। কুদরতে বারী তাআলার ইশারায় সেই দরজা দিয়ে সর্বপ্রথম প্রবেশ করলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেই তারা বলে উঠল, ইনি বিশ্বস্ত । আমরা উনার ফয়সালায় সন্তুষ্ট। ইনি মুহাম্মাদ - সর্বাধিক প্রশংসিত।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম একটি চাদর আনালেন। অতঃপর তিনি নিজের হাত মুবারক দিয়ে হজরে আসওয়াদ চাদরের মাঝখানে রাখলেন। এরপর তিনি বললেন, প্রত্যেক কবীলার সরদার চাদরের এক এক প্রান্ত ধরবে এবং সবাই মিলে উঠাবে। তারা তাই করল। হজের আসওয়াদের নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে গেলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের হাতে সেটা স্থাপন করে দিলেন। এরপর আবার নির্মাণ কাজ নিজ গতিতে চলে সুসম্পন্ন হলো।
এভাবেই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভূতপূর্ব বিচক্ষণতা আর বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে কুরাইশদেরকে একটি অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করলেন। আর এটা তাঁর সেই মুবারক মিশনের শুভ উদ্বোধন- যার জন্য এই পৃথিবীকে তাকে প্রেরণ করা হয়েছিল। আর যেই মিশন শুরু হয়েছিল নবুওত প্রাপ্তির মাধ্যমে। বস্তুত আল্লাহ তাআলা তাকে মনোনীত করেছিলেন। গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। আর তাই শুরুতে তিনি বিবাদমান কওম আর জাতিগোষ্ঠীর জন্য রহমত হয়ে দেখা দিলেন।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন