অতীত নিয়ে আক্ষেপ করবেন না - Don't regret the past
01:19:40 12/14/2023
অতীত নিয়ে আক্ষেপ করবেন না। আমাদের অনেকের মধ্যে এধারণা বিরাজমান, মানসিকতার পরিবর্তন তেমনই অসম্ভব যেমন অসম্ভব মানুষের বর্ণের পরিবর্তন। কিন্তু জ্ঞানীগণ বলেছেন, মানসিকতা পরিবর্তন করা কাপড় পরিবর্তনের চেয়েও সহজ। আমাদের মন মানসিকতা ও অভ্যাস পড়ে যাওয়া দুধের মত নয় যে, একে আর একত্রিত করা বা বোতলে করা যায় না। কিন্তু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করণেই আমরা নিজেদের অভ্যাস ও মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারি।
আর কখনো কখনো এসব পদ্ধতি অবলম্বন করে মানুষের চিন্তা-চেতনাও পরিবর্তন করা যায়। ইবনে হাযম রহ. 'তাওল হামামাহ' নামক গ্রন্থে স্পেনের ঘনাচা এক ব্যবসায়ীর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। একই শহরের আরো চারজন ব্যবসায়ীর সাথে তার প্রতিযোগিতা ছিলো। ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তারা তার প্রতি বিদ্বেষী হয়েওঠে এবং একপর্যায়ে তারা সকলে মিলে তাকে চরম শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সে ব্যবসায়ী একদিন সকালে তার দোকানে যাচ্ছিল। পরনে ছিলো गान। জুব্বা, মাথায় ছিল সাদা পাগড়ি। পথে সে চারজনের একজনের সাথে তার সাক্ষাৎ হলো। সে তার সাথে সালাম বিনিময় করে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হলুদ পাগড়িটা বেশ সুন্দর ও চমৎকার। ব্যবসায়ী বলল, আরে তুমি কি অন্ধ নাকি সাদা পাগড়িকে কেন হলুদ পাপড়ি বলছো।
লোকটি বলল, দেখুন আপনি সম্ভবত ভুল করছেন। পাগড়িটি হলুদ। কিন্তু হলুদ হলেও অত্যন্ত চমৎকার। তার সাথে কথা না বাড়িয়ে ব্যবসায়ী সামনে চলতে থাকে। কিছু দূর অগ্রসর হতেই চারজনের আরেকজন এসে সালাম নিয়ে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, 'বাহ! আপনি আজ চমৎকার পোশাক পরিধান করেছেন। বিশেষ করে এ সবুজ পাগড়িতে আপনাকে সুন্দর মানিয়েছে।"
ব্যবসায়ী তখন বলল, আপনি সম্ভবত ভুল দেখছেন। আমার পাগড়িটি সাদা রঙের। সে বলল, কি বলছেন আপনি? এটা দেখছি সবুজ রঙের "যা বেটা অন্ধ; সুস্পষ্ট রঙটাও দেখিস না।'
এরপর ব্যবসায়ী সামনের দিকে চলতে থাকে, আর কিছুক্ষণ পর পর পাগড়ির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে পাগড়ি তো সানাই দেখছি। কিন্তু ওরা এসব কি বলছে? অবশেষে সে গিয়ে দোকানে বসল। কিছুক্ষণ পর তাদের তৃতীয়জন এসে বলল আজকের পোশাকটা আপনাকে বেশ মানিয়েছে। বিশেষ করে নীল পাগড়িটা একেবারেই অতুলনীয়।
তখন ব্যবসায়ী নিজের পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল তাই। আমার পাগড়ির রঙ সাদা। লোকটি বলল, আপনি হয়তো ভুল করছেন। পাগড়ির রঙ নীল। কিন্তু এটা আপনাকে অত্যন্ত সুন্দর মানিয়েছে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। কিন্তু ব্যবসায়ী তাকে চিৎকার করে বলল, "ভাইজান। আমার পাগড়ির রঙ সাদা। সাথে সাথে সে লোক জোর গলায় বলল, না, বরং আপনার পাপড়ি নীল। কিন্তু এরপরও কোন চিন্তা করবেন না, তাতেই আপনাকে সুন্দর মানিয়েছে।
লোকটা এ কথা বলে চলে যায়। এদিকে সে একা একা বলতে ছিল। আমার পাগড়ি সাদা। আমার পাগড়ি সাদা।' বারবার সে পাগড়িটি নেড়ে চেড়ে দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ না যেতেই চতুর্থজন এসে বলল, মাশাআল্লাহ। এ লাল পাগড়িটি আপনি কোথা থেকে কিনেছেন? কি বলছেন? আমার পাগড়ি সাদা। আরে ভাই। না, এ তো দেখছি না।
তখন ব্যবসায়ী চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল বলতে থাকল, আমার পাগড়ি সাদা। না, আমার পাগড়ি বরং লাল।' একটু পরে সে আবার বলল, আমার পাগড়ি সবুজ। না, বরং এটা নীল। হ্যাঁ, এটা নীল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে হাসে আর বলতে থাকে, আমার পাগড়ি কালো। না, এটা তো হলুদ না, বরং এটা সাদা পাগড়ি। এটা সাদা পাগড়ি। এরপর সে হঠাৎ লাফালাফি দিতে শুরু করে আর পাগলের ন্যায় উচ্চস্বরে হাসতে থাকে।
লেখক ইবনে হাযম বলেছেন, আমি এ ব্যবসায়ীকে স্পেনের অলি-গলিতে পাগল হয়ে ঘুরতে দেখেছি। ছোট ছোট বাচ্চারা তার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছিলো।" পাঠক একবার চিন্তা করুন, এ চারজন যদি তাদের অসৎ দক্ষতা দিয়ে একজন মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তার বিবেক-বুদ্ধি বিকৃত করে দিতে পারে তাহলে আপনি কেন পারবেন না ওহীর শাশ্বত ও স্বীকৃত যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে? কেন পারবেন না? আচরণে উৎকর্ষ সাধন, সৃষ্টির মনোরঞ্জন- আপনার এ সবকিছুর উদ্দেশ্য তো একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন। তাই বলছি, জীবনে সুখী হতে হলে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহারে সচেষ্ট থাকুন। এতেই কল্যাণ নিহিত।
- যদি বলেন, 'না, আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।'
- আমি বলবো, "আন্তরিকভাবে চেষ্টা করুন আর দেখুন ।
- যদি বলেন, আমি তো জানি না কিভাবে চেষ্টা করবো?"
- আমি বলবা, "শিখতে শুরু করুন। পথে নামুন এবং চলমান জগতে তাকিয়ে দেখুন এর সীমান্ত।
- এ পথই আপনাকে সঠিক পথের সন্ধান দেবে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إنَّمَا الْعِلْمُ بالتَّعَلُمِ وَإِنَّمَا الْحِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ
জ্ঞান অর্জিত হয় শুধুমাত্র শেখার মাধ্যমে আর সহনশীলতা ও আত্মমর্যাদাবোধ অর্জিত হয় দীর্ঘ সাধনায়। (আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী। ১৬২৯৬, শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ১০৩৩৩)
হযরত আলী বলেছেন । মানুষের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে তুমি নিজকে মানদণ্ড হিসেবে পেশ করবে। তুমি নিজের জন্য যা কামনা কর অপরের জন্যও সেটাই পছন্দ করবে। এবং নিজের জন্য যা অপছন্দ কর অন্যের জন্যও তা অপছন্দ করো। যুলুম করবে না।
কেননা তুমি নিজেও অত্যাচারিত হতে চাও না। কেউ তোমার উপকার করুক, সেটা যেমন তুমি চাও, তেমনি তুমিও অন্যের উপকার কর সেটা অন্যে তোমার কাছে চায়। নিজের জন্য যা মন্দ মনে কর, আপরের জন্যও তা মন্দই জ্ঞান করবে। তুমি নিজেও অপরের কাছ থেকে যে ধরনের ব্যবহার প্রত্যাশা কর, তাদের সাথেও ঠিক তেমনি ব্যবহার করবে। তুমি কারো সাথে এমন কোন কথা বলবে না যা তুমি নিজের জন্য অপছন্দ করবে।
অতীত নিয়ে আক্ষেপ করবেন না। আমাদের অনেকের মধ্যে এধারণা বিরাজমান, মানসিকতার পরিবর্তন তেমনই অসম্ভব যেমন অসম্ভব মানুষের বর্ণের পরিবর্তন। কিন্তু জ্ঞানীগণ বলেছেন, মানসিকতা পরিবর্তন করা কাপড় পরিবর্তনের চেয়েও সহজ। আমাদের মন মানসিকতা ও অভ্যাস পড়ে যাওয়া দুধের মত নয় যে, একে আর একত্রিত করা বা বোতলে করা যায় না। কিন্তু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করণেই আমরা নিজেদের অভ্যাস ও মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারি।
আর কখনো কখনো এসব পদ্ধতি অবলম্বন করে মানুষের চিন্তা-চেতনাও পরিবর্তন করা যায়। ইবনে হাযম রহ. 'তাওল হামামাহ' নামক গ্রন্থে স্পেনের ঘনাচা এক ব্যবসায়ীর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। একই শহরের আরো চারজন ব্যবসায়ীর সাথে তার প্রতিযোগিতা ছিলো। ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তারা তার প্রতি বিদ্বেষী হয়েওঠে এবং একপর্যায়ে তারা সকলে মিলে তাকে চরম শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সে ব্যবসায়ী একদিন সকালে তার দোকানে যাচ্ছিল। পরনে ছিলো गान। জুব্বা, মাথায় ছিল সাদা পাগড়ি। পথে সে চারজনের একজনের সাথে তার সাক্ষাৎ হলো। সে তার সাথে সালাম বিনিময় করে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হলুদ পাগড়িটা বেশ সুন্দর ও চমৎকার। ব্যবসায়ী বলল, আরে তুমি কি অন্ধ নাকি সাদা পাগড়িকে কেন হলুদ পাপড়ি বলছো।
লোকটি বলল, দেখুন আপনি সম্ভবত ভুল করছেন। পাগড়িটি হলুদ। কিন্তু হলুদ হলেও অত্যন্ত চমৎকার। তার সাথে কথা না বাড়িয়ে ব্যবসায়ী সামনে চলতে থাকে। কিছু দূর অগ্রসর হতেই চারজনের আরেকজন এসে সালাম নিয়ে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, 'বাহ! আপনি আজ চমৎকার পোশাক পরিধান করেছেন। বিশেষ করে এ সবুজ পাগড়িতে আপনাকে সুন্দর মানিয়েছে।"
ব্যবসায়ী তখন বলল, আপনি সম্ভবত ভুল দেখছেন। আমার পাগড়িটি সাদা রঙের। সে বলল, কি বলছেন আপনি? এটা দেখছি সবুজ রঙের "যা বেটা অন্ধ; সুস্পষ্ট রঙটাও দেখিস না।'
এরপর ব্যবসায়ী সামনের দিকে চলতে থাকে, আর কিছুক্ষণ পর পর পাগড়ির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে পাগড়ি তো সানাই দেখছি। কিন্তু ওরা এসব কি বলছে? অবশেষে সে গিয়ে দোকানে বসল। কিছুক্ষণ পর তাদের তৃতীয়জন এসে বলল আজকের পোশাকটা আপনাকে বেশ মানিয়েছে। বিশেষ করে নীল পাগড়িটা একেবারেই অতুলনীয়।
তখন ব্যবসায়ী নিজের পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল তাই। আমার পাগড়ির রঙ সাদা। লোকটি বলল, আপনি হয়তো ভুল করছেন। পাগড়ির রঙ নীল। কিন্তু এটা আপনাকে অত্যন্ত সুন্দর মানিয়েছে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। কিন্তু ব্যবসায়ী তাকে চিৎকার করে বলল, "ভাইজান। আমার পাগড়ির রঙ সাদা। সাথে সাথে সে লোক জোর গলায় বলল, না, বরং আপনার পাপড়ি নীল। কিন্তু এরপরও কোন চিন্তা করবেন না, তাতেই আপনাকে সুন্দর মানিয়েছে।
লোকটা এ কথা বলে চলে যায়। এদিকে সে একা একা বলতে ছিল। আমার পাগড়ি সাদা। আমার পাগড়ি সাদা।' বারবার সে পাগড়িটি নেড়ে চেড়ে দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ না যেতেই চতুর্থজন এসে বলল, মাশাআল্লাহ। এ লাল পাগড়িটি আপনি কোথা থেকে কিনেছেন? কি বলছেন? আমার পাগড়ি সাদা। আরে ভাই। না, এ তো দেখছি না।
তখন ব্যবসায়ী চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল বলতে থাকল, আমার পাগড়ি সাদা। না, আমার পাগড়ি বরং লাল।' একটু পরে সে আবার বলল, আমার পাগড়ি সবুজ। না, বরং এটা নীল। হ্যাঁ, এটা নীল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে হাসে আর বলতে থাকে, আমার পাগড়ি কালো। না, এটা তো হলুদ না, বরং এটা সাদা পাগড়ি। এটা সাদা পাগড়ি। এরপর সে হঠাৎ লাফালাফি দিতে শুরু করে আর পাগলের ন্যায় উচ্চস্বরে হাসতে থাকে।
লেখক ইবনে হাযম বলেছেন, আমি এ ব্যবসায়ীকে স্পেনের অলি-গলিতে পাগল হয়ে ঘুরতে দেখেছি। ছোট ছোট বাচ্চারা তার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছিলো।" পাঠক একবার চিন্তা করুন, এ চারজন যদি তাদের অসৎ দক্ষতা দিয়ে একজন মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তার বিবেক-বুদ্ধি বিকৃত করে দিতে পারে তাহলে আপনি কেন পারবেন না ওহীর শাশ্বত ও স্বীকৃত যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে? কেন পারবেন না? আচরণে উৎকর্ষ সাধন, সৃষ্টির মনোরঞ্জন- আপনার এ সবকিছুর উদ্দেশ্য তো একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন। তাই বলছি, জীবনে সুখী হতে হলে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহারে সচেষ্ট থাকুন। এতেই কল্যাণ নিহিত।
- যদি বলেন, 'না, আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।'
- আমি বলবো, "আন্তরিকভাবে চেষ্টা করুন আর দেখুন ।
- যদি বলেন, আমি তো জানি না কিভাবে চেষ্টা করবো?"
- আমি বলবা, "শিখতে শুরু করুন। পথে নামুন এবং চলমান জগতে তাকিয়ে দেখুন এর সীমান্ত।
- এ পথই আপনাকে সঠিক পথের সন্ধান দেবে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إنَّمَا الْعِلْمُ بالتَّعَلُمِ وَإِنَّمَا الْحِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ
জ্ঞান অর্জিত হয় শুধুমাত্র শেখার মাধ্যমে আর সহনশীলতা ও আত্মমর্যাদাবোধ অর্জিত হয় দীর্ঘ সাধনায়। (আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী। ১৬২৯৬, শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ১০৩৩৩)
হযরত আলী বলেছেন । মানুষের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে তুমি নিজকে মানদণ্ড হিসেবে পেশ করবে। তুমি নিজের জন্য যা কামনা কর অপরের জন্যও সেটাই পছন্দ করবে। এবং নিজের জন্য যা অপছন্দ কর অন্যের জন্যও তা অপছন্দ করো। যুলুম করবে না।
কেননা তুমি নিজেও অত্যাচারিত হতে চাও না। কেউ তোমার উপকার করুক, সেটা যেমন তুমি চাও, তেমনি তুমিও অন্যের উপকার কর সেটা অন্যে তোমার কাছে চায়। নিজের জন্য যা মন্দ মনে কর, আপরের জন্যও তা মন্দই জ্ঞান করবে। তুমি নিজেও অপরের কাছ থেকে যে ধরনের ব্যবহার প্রত্যাশা কর, তাদের সাথেও ঠিক তেমনি ব্যবহার করবে। তুমি কারো সাথে এমন কোন কথা বলবে না যা তুমি নিজের জন্য অপছন্দ করবে।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন