গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান - Gorome sustho thakar upay
05:36:43 12/10/2023
গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান
গরমে প্রকৃতির তাপমাত্রা বেড়ে যাবার ফলে স্বাস্থ্যের ওপর তা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ছোট থেকে শুরু করে বড় মানুষ সবার ঘটতে পারে স্বাস্থ্য বিপর্যয়। গরমে সাধারণত যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা ঘটে থাকে তার মধ্যে রয়েছে- পরিশ্রান্তি বা অবসাদ, হিটস্ট্রোক, অস্বাভাবিক ঘাম, ত্বক পুড়ে যাওয়া, ঘামাচি, অজ্ঞান হওয়া বা মূর্ছা যাওয়া ইত্যাদি। তাই গরমে সর্বদা সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হবে। জানতে হবে গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে কিংবা স্বাস্থ্য থেকে রেহাই পেতে সঠিক পন্থা।
অবসাদগ্রস্ততা
গরমে শারীরিক পরিশ্রমের ফলে বিশেষ করে ছোটাছুটি করলে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। এই ঘাম বেরিয়ে যাবার ফলে শরীরে দেখা দেয় লবণের ব্যাপক ঘাটতি। ফলে, এক ধরনের অবসাদ গ্রস্ততায় আক্রান্ত হয় শরীর। পা ও শরীরের মাংসপেশিতে খিচুনি দেখা দেয়। শরীর দুর্বল লাগে। এ সময়ে যদি পর্যাপ্ত তরল ও লবণ গ্রহণ করা হয় তাহলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যায় । এমনকি রোগীর মৃত্যু হতে পারে। অবসাদগ্রস্ততার সময় রোগীর মাথা ঝিমঝিম করে মাথাব্যথা করে এবং বমিবমি ভাব হয়। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে তবে ত্বক ঠাণ্ডা ও ভেজা হয়। মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে দেখায়। শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়।
হৃৎস্পন্দন দ্রুত ও দুর্বল হয়। রোগীর ডায়রিয়া ও বমি হলে অবস্থার অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে। তার তাপমাত্রা ও নাড়ির গতি পরীক্ষা করতে হবে। রোগীকে ঠাণ্ডা লবণ পানির শরবত খাওয়াতে হবে। খাবার স্যালাইন দিলে আরো ভালো। ফলের রসও খাওয়ানো যেতে পারে। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসক ডাকতে হবে। তখন শিরাপথে স্যালাইনের প্রয়োজন হতে পারে। দুঃসহ গরমে এ ধরনের অবসাদগ্রস্ত অবস্থা কিংবা অসহ্যতা এড়াতে হলে কিছু সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন।
রোদে মাথায় ক্যাপ কিংবা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। ঢিলা ও হালকা রঙের সৃতির পোশাক পরতে হবে। সাদা পোশাক হলে উত্তম। সিনথেটিক পোশাক পরা যাবে না কিছুতেই। চোখে সান গ্লাস পরতে হবে। ঘাম মোছার জন্য ঠাণ্ডা, ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। সাথে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে এ পানি পান করতে হবে ও মাঝে মাঝে চোখে মুখে, গলায় ঝাপটা দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।
হিটস্ট্রোক
অতিরিক্ত গরম এবং তাপ অসহ্যতার কারণে হিটস্ট্রোক হয়। এ সময়ে রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিলে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এ সময়ে আবহাওয়ার ও শরীরের তামপাত্রা বেশি থাকে। ঘাম এতটা কম হয় যে, শরীর ঠাণ্ডা হতে পারে না। ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়। মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব ও মাথা ঝিমঝিম করে, প্রচণ্ড তৃষ্ণা পায়, শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়। শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কিংবা তার বেশি হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা না নিলে রোগী মারা যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ঠাণ্ডা স্থনে নিতে হবে। রোগীর কাপড়-চোপড় খুলে ফেলতে হবে। রোগীর সমস্ত শরীরে ঠাণ্ডা পানি ছিটাতে হবে। ঠাণ্ডা ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসক ডাকতে হবে।
ঘাম
গরমে সবচেয়ে বিশ্রী অবস্থা হলো ঘাম। হাতের ও পায়ের তালু, বোগল, কুঁচকিতে প্রচুর ঘাম জমে। এই ঘামের কারণে শরীরে দুর্গন্ধ দেখা দেয়। ঘামের ফলে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় পানি ও লবণ। তাই এ বিশ্রী অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে সর্বদা সৃতির ঢিলা পোশাক পরতে হবে। সিনথেটিক পোশাক পরা যাবে না। প্রতিদিন পোশাক বদলাতে হবে। যদি ঘাম অতিরিক্ত হতে থাকে তাহলে একজন চর্ম বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।
ত্বক পুড়ে যাওয়া
গরমে রোদে ঘোরাঘুরির জন্য সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকে প্রদাহ ঘটায়। ত্বক পুড়ে যায়, ফোস্কা ওঠে। যাদরে ত্বক ফর্সা, এ সমস্যাটা তাদের বেশি হয়। কারো কারো ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকায়, ব্যথা করে। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে চাকাচাকা ওঠে। ত্বকের এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে বাইরে বের হবার আগে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন মেখে বের হতে হবে। সৃতির সাদা পোশাক পরতে হবে। ত্বকে চুলকানি হলে সেখানে ক্যালামিন লোশন লাগাতে হবে।
ত্বককে ঠাণ্ডা রাখতে হবে। আক্রান্ত স্থান বাতাসের সংস্পর্শে রাখতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে যেন ওখানে পোশাকের ম্যা না লাগে। ফোস্কা পড়লে তা ফাটানো চলবে না। কিছুদিন পরে ফোস্কা মিলিয়ে যাবে। ত্বক পুড়ে গেলে তা সেরে না ওঠা পর্যন্ত রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। যদি ত্বকে খুব যন্ত্রণা হয়, সেই সাথে জ্বর ও মাথাব্যথা হয় তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অজ্ঞান হওয়া বা মূর্ছা যাওয়া
মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে বা মূর্ছা যায়। প্রচণ্ড গরমে সাধারণত এ অবস্থা ঘটে থাকে। এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলেও এমনটি হয়। রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার ত্বক ঠাণ্ডা ও স্যাত স্যাতে হয়ে আসে। মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে কিংবা নীলাভ হয়। মুখে, ঘাড়ে ও হাতে ঘাম দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে যাতে মাথাটা শরীরের তুলনায় নিচে থাকে। শরীরের পোশাক ঢিলা করে দিতে হবে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার ফলে শরীরের কোথাও আঘাত লেগেছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। রোগীর জ্ঞান ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে মুখে কিছু খাওয়ানো যাবে না। জ্ঞান ফিরলে তাকে অল্প পানি পান করানো যেতে পারে।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন