শিশুর বেড়ে ওঠায় সহায়তা - Helpful in child growth
05:58:15 12/10/2023
শিশুর বেড়ে ওঠায় সহায়ক : শিশুর দুরন্তপনা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো এই দুরন্তপনা স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে যায। বইপত্র, খেলনা, ঘরের জিনিস—সব কিছু ভেঙে ফেলে কেউ কেউ। আত্মীয়- স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বাড়িতে বেড়াতে এলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, আবার তাদের বাড়িতে গেলেও একই অবস্থা। শিশুমহলেও এই অতি দুরন্ত শিশুটি ত্রাসের সৃষ্টি করে। অনেক বাবা- মা এই অতি দুরন্তপনার ব্যাপারটি লক্ষ্য করতে চান না। তাদের কাছে এটা যেন শিশুর স্বাভাবিক ব্যবহারের অংশ।
কিন্তু আসলে তা নয়। অতি দুরন্ত বাচ্চা যখন স্কুলে যায় তখন স্কুল থেকেও চিঠি আসে অভিভাবকদের কাছে যে, তার বাচ্চা দুরন্ত, অমনোযোগী এবং অন্য বাচ্চাদের এতে সমস্যা হচ্ছে। এই দুরন্তপনা এক বিশেষ ধরনের মনোরোগ। আমরা যাকে বলি Attention Deficit Hyper Active Disorder বা সংক্ষেপে ADHD সাধারণত ৩ থেকে ৭ বছরের বাচ্চাদেরই ADHD-এর বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। ছেলে বাচ্চারা মেয়ে বাচ্চাদের তুলনায় সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে, চঞ্চলমনা, হঠাৎ সাতপাঁচ না ভেবে কোনো কাজ করা, ছটফট স্বভাব ও দুরন্তপনা।
এরা এত ছটফটে হয় যে, পড়া-লেখায় মনসংযোগ করতে পারে না। ক্লাসে এরা ভীষণ অমনযোগী হয়। বাসায়ও পড়ালেখা করে না। ধৈর্যের এত অভাব যে, ছবি আঁকা, টিভি দেখাও এদের দিয়ে হয় না। অনেক বাচ্চা আছে ঝগড়া বা মারামারি করলে তারা আপাতদৃষ্টিতে কেনো কারণ থাকে। কিন্তু এসব বাচ্চা কারণ ছাড়াই তা করে। যেমন কোনো কারণ ছাড়াই আপনার বাচ্চা বা ভাই-বোনকে চড় থাপ্পড় দেয়া। এরা নিজেদের জিনিসপত্র। সম্পর্কে উদাসীন ও সহজেই হারিয়ে ফেলে।
ADHD-এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। একে মনোরোগ বলেই চিহ্নিত করা হলেও বহুক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক পদার্থ বা Neuro Transmitter-এর কমবেশির জন্য ADHD হতে পারে। Position Emission Tomography (PET) -এর সাহায্যে জানা গেছে যে, রোগাগ্রস্ত শিশুদের ডানদিকের মস্তিষ্কে মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া কম হয়। বংশগত মানসিক ও মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট বৃদ্ধির নানা রকম অসুবিধাও অনেকাংশে এ রোগে জন্য দায়ী।
ADHD-এর চিকিৎসা পদ্ধতি প্রধানত দু'রকমের। ওষুধের দ্বারা এবং বিহেভিয়ার থেরাপি। বিহেভিয়ার থেরাপি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধীরস্থির হতে বাচ্চাটিকে সবার সাহায্য করতে হবে। এখানে বাবা-মা পরিবারের লোকজন ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার যথেষ্ট সহনশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে শিশুটির যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শিশুর আত্মমর্যাদা বাড়াতে সাহায্য করতে হবে। এরকম অতি দুরন্ত শিশুর জন্য তার বাবা-মায়ের সামাজিক জীবন বিপর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু তার জন্য তাকে মারধর বা রাগারাগি করা যাবে না। কারণ তাতে কোনোই লাভ হবে না। মনে করুন শিশুটি গ্লাস ভেঙে ফেলল, তখন তাকে বলতে হবে আমরা গ্লাসে পানি খাই, তুমি গ্লাস ভেঙে ফেললে আমরা কীভাবে পানি খাব?
ADHD তে মিথাইল ফেনিতেই ও ডেক্সট্রো অ্যাম্ফিটামিন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কোনো শিশুকে কোনোটা বা কতটা দেয়া হবে তা অবশ্যই নির্ধারণ করবেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অতি দুরন্ত শিশুর বাবা মায়েরা অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে তাদের শিশুটির ব্যাপারে যোগাযোগ করবেন।
সবশেষে একটি ব্যাপার লক্ষ্য করতে অনুরোধ করা হচ্ছে, তা হলো শিশুর অতি দুরন্তপনা হচ্ছে ADHD, যা সামাজিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। স্বাভাবিক দুরন্ত শিশু নিয়ে বাবা-মায়েরা ঘাবড়ে যাবেন না। আর অতি দুরন্ত শিশুর ব্যাপারে সতর্ক হোন ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তার যত্ন নিন।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন