বর্ষায় স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান - Helth Solution in spirint
05:33:39 12/10/2023
বর্ষায় স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান
বর্ষাকালে বৃষ্টিভেজা আর্দ্র পরিবেশ আর পানিদূষণের কারণে আমরা আক্রান্ত হই নানারকম রোগে। প্রথমেই বলা যেতে পারে সর্দি জ্বরের কথা। বৃষ্টিতে ভিজে কোথাও গেলাম, আর তার পরেই শুরু হলো হাঁচি। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল মাথা টিপটিপ করে ব্যথা করছে। সেই সাথে গা গরম । খুবই অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার। সারাক্ষণ রুমাল, টিস্যুপেপার দিয়ে নাক মোছা আর হাঁচিতো আছেই। সর্দিজ্বরকে আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিতে চাই না ।
কিন্তু এরকম হলে আমাদের অবশ্যই বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে মাথাব্যথা ও জ্বরের জন্য প্যারসিটামল খাওয়া যেতে পারে। নাক বন্ধ হয়ে যাবার জন্য ন্যাসাল ডিকনজেস্ট্যান্ট ড্রপ দেয়া হয়। গরম পানির ভাপ নাক দিয়ে শুয়ে নিলে মানে যাকে বলে স্কিম ইনহেলেশন-সেটা নিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত বর্তমান ব্যস্ত জীবনে আমরা এমন এন্টিহিস্টামিন খাই যেগুলো খেলে ঘুম আসবে না, অর্থাৎ ননসিডেটিভ। পুষ্টিকর ভিটামিনযুক্ত খাবার, বিশ্রাম আর কিছু ওষুধ গ্রহণ করলেই সর্দিজ্বর থেকে ভালো হয়ে ওঠা যায়।
কিন্তু সর্দিজ্বর যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাই ভালো। বর্ষায় বাড়ি থেকে বের হবার আগে অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হতে হবে। আর ভিজে গেলে সম্ভব হলে সাথে সাথেই কাপড় বদলে ফেলতে হবে। ভেজা কাপড় কোনো অবস্থাতেই গায়ে শুকানো ভালো নয় ।
বর্ষাকালে পানি দূষণের কারণে পেটের পীড়া বা ডায়রিয়া দেখা দেয়। ছোট বড় সবাই এসময় ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়। অথচ এ ব্যাপারে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে আমরা এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। প্রথমত আমাদের অবশ্যই পানি ফুটিয়ে বা পরিশোধন করে পান করতে হবে। আজকাল বাজারে মিনারেল ওয়াটার বোতলে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ওইসব অনেক বোতলের পানি সঠিকভাবে পরিশোধিত নয়।
বাড়ির বাইরে খাবার গ্রহণের ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় পানি বা খাবার জীবাণুমুক্ত হলেও যে পাত্রে খাওয়া হচ্ছে তাতে জীবাণু থাকার কারণে আমরা রোগাক্রান্ত হই। এই ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা প্রয়োজন। বৃষ্টির দিনে খুব ভালো লাগে চানাচুর বা ঝালমুড়ি কিনে খেতে, কিংবা ফুচকা, চটপটি। অথচ রাস্তায় খোলা খাবার থেকেই আমরা সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হই। একটু নিজেকে সামলে বাড়ি এসে আমরা ওইসব খাবার তৈরি করে খেতে পারি। সর্বোপরি নিজের সাবধানতার দ্বারাই আমরা ডায়রিয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে পারি।
আর তারপরেও যদি দুর্ভাগ্যবশত কেউ ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েই যান তবে কী করতে হবে সেটা আজ মোটামুটি সবার জানা। পানিশূন্যতা রোধে ওরস্যালাইন এবং প্রচুর পরিমাণ তরল খেতে হবে। কিন্তু যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রোগ ভালো না হয় রোগী খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া হলে এন্টিবায়োটিক নেয়া প্রয়োজন। আর তার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শ।
বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়াতে অনেক ছত্রাক দ্রুত বেড়ে ওঠে। আর তাতে নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাবে আমরা ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হই। শুধু ত্বক নয়, নখেও ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত রোগ হতে পারে। শরীরের যেসব স্থান সাধারণত ভেজা থাকে, সেসব জায়গাতে ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয়। যেমন আঙুলের ফাঁকে, কুঁচকিতে। এইসব জায়গাতে চুলকানির উদ্রেক হয় এবং লাল হয়ে ছড়াতে থাকে। পারে তালু আক্রান্ত হলে তালুর চামড়া ধূসর হয়ে যেতে থাকে এবং একসময় তা মরা চামড়ায় পরিণত হয়। নখে সংক্রমণের ক্ষেত্রে নখের গোড়া মোটা হয়ে ফুলে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুব বেশি ছত্রাক সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, কেননা রক্তে বাড়তি চিনি ছত্রাকের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
ছত্রাকের বেড়ে ওঠা প্রতিরোধ বা এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে ত্বক শুকনো রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসলের পরে শুষ্ক তোয়ালে দিয়ে ভেজা স্থান মুছে ফেলতে হবে। আর বৃষ্টির দিনে কাপড় সহজে শুকায় না তাই অনেক সময় আমরা একটু ভেজা বা স্যাতস্যাতে কাপড় পরে নেই। কিন্তু এটা করা যাবে না। প্রয়োজনে কাপড় ইস্ত্রি করে নেয়া যেতে পারে। আর বৃষ্টিতে ভিজে গেলে ভেজা কাপড় বদলে নিতে হবে দ্রুত। পায়ে ছত্রাক সংক্রমণ এড়াতে বর্ষায় খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তাছাড়া জুতা এবং মোজা পরিষ্কার রাখতে হবে।
কোনো জায়গাতে চুলকানি বা ছত্রাক সংক্রমণ হলে এন্টিফাংগাল মলম বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এইসব ওষুধ খুবই কার্যকর। সঠিক চিকিৎসা এবং ছত্রাক বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ থেকে মুক্ত হতে পারলে ছত্রাকের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে। এন্টি- ফাংগাল ওষুধ নেয়ার আগে লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা জেনে নিতে হবে। অনেক সময় ছত্রাক সংক্রামিত ত্বক চুলকানোর ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। সেক্ষেত্রে এন্টিব্যাকরেটিয়াল ওষুধ দিতে হবে। সাধারণত চুলকানি মনে করে চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারো পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। ছত্রাক অনেক ধরনের আছে। ওষুধ দেবার আগে এর ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। আর তাই চিকিৎসক, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন