Narrow selection

​​​​​​​হিজরতের ঘটনা - Hijroter GHotona


16:06:34 12/10/2023

হিজরতের ঘটনা : রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকরের কাছে এসে বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে বের হওয়ার ও হিজরতের অনুমতি দিয়েছেন । আবু বকর রা. বললেন- আমি কি আপনার সঙ্গী হবো হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন- হাঁ। খুশি আর আনন্দে আবু বকর রা. কেঁদে ফেললেন। দ্রুত তিনি দু'টি বাহন নিয়ে এলেন। যে দু'টিকে আগ থেকেই তিনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। মদীনায় পথ দেখিয়ে নেওয়ার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে উরাইকিতকে পারিশ্রমিক দিয়ে ভাড়া করা হলো।

অদ্ভূত বৈপরীত্ব

কুরাইশরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে দুশমনি, রেষারেষি আর বিদ্বেষ পোষণ করলেও এই ব্যাপারে তাদের কোনো সন্দেহ ছিল না যে- নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন গোটা মক্কার সবচেয়ে বড় সৎ, বিশ্বস্ত ও আমানতদার। তাই মক্কার কারও কোনো সময় কিছু আমানত রাখতে হলে সে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে রাখত। আর তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে হিজরতের সময়ও অনেক লোকের আমানত ছিল। সেকারণে তিনি আলী রা. কে সেগুলো আদায় করে দেওয়ার জন্য মক্কায় রেখে গিয়েছিলেন। ২২৮ আল্লাহ তাআলার ঘোষণা:

قَدْ تَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْرُكَ الذي يَقُولُونَ فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذَّبُونَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ الله

يَجْحَدُونَ

অর্থাৎ আমার জানা আছে যে, তাদের উক্তি আপনাকে দুঃখিত করে। অতএব, তারা আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে না; বরং যালিমরা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে। [সূরা আনআম: ৩৩]

হিজরতের নৈতিক শিক্ষা

নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত এই কথা প্রমাণ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল যে, দীনের দাওয়াত আর ঈমান এমন বস্তু যার জন্য পৃথিবীর সবধরনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ধন-মান সবকিছুই পরিত্যাগ করা যায়। কিন্তু অন্য কিছুর বিনিময়ে তাকে পরিত্যাগ করা যায় না।

একদিকে মক্কা ছিল রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মভূমি। এখানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং এই মাটিতেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। এগুলোর পাশাপাশি এটা ছিল গোটা পৃথিবীর সমস্ত মানবতার হৃদয়ের কেন্দ্রবিন্দু। এখানেই রয়েছে পবিত্র কাবা শরীফ। যেখান থেকে তাদের রূহ ও আত্মায় ইশক আর ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও এগুলো সাহাবায়ে কিরামকে তাদের জন্মভূমি ছাড়ার ক্ষেত্রে এতটুকু পরিমাণ বাধা দিতে পারেনি। কারণ তাদের চোখে ঈমান আর দাওয়াতই ছিল সবচেয়ে বড় বিষয়। আর সেই ঈমান ও দাওয়াতই এই ভূখণ্ডে সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

আর তাঁর হৃদয়ের এই স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতি- মক্কার প্রতি অভাবনীয় ভালোবাসা আর হৃদ্যিক টান- প্রকাশ পেয়েছিল মক্কাকে লক্ষ্য করে তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। তিনি বলেছিলেন- 'তুমি কতই না সুন্দর শহর। তুমি আমার নিকট কতই না প্রিয়। যদি আমার কওম তোমার থেকে আমাকে বের করে না দিত, তবে তুমি ছাড়া অন্য কোথাও আমি যেতাম না'। ২২৯ আর এটা ছিল আল্লাহ তাআলার বাণীর ওপর আমল:

يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ أَرْضِي وَاسِعَةً فَإِيَّايَ فَاعْبُدُونِ

অর্থাৎ হে আমার মুমিন বান্দারা! নিশ্চয়ই আমার যমীন প্রশস্ত; আর তাই তোমরা আমারই ইবাদত করো । [সূরা আনকাবৃত: ৫৬]

সাওর গুহায়

অতঃপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রা. চুপিসারে মক্কা থেকে বের হলেন। আবু বকর রা. ছেলে আব্দুল্লাহ বিন আবী বকরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি মক্কায় তাদের নিয়ে যে সকল কথাবার্তা হয় তা তাদের কাছে পৌঁছে দেন। আর তিনি গোলাম আমের বিন ফুহাইরাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- যেন তিনি রাতের বেলা বকরির পাল নিয়ে বাইরে যান এবং রাতের বেলা ফিরে আসেন। আর আসমা বিনতে আবী বকর রা. তাদের জন্য গুহায় খাবার নিয়ে যেতেন।

প্রেম ও ভালোবাসার অপূর্ব দাস্তান

বস্তুত পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির সূচনা হতেই প্রেম ও ভালোবাসা মানবীয় ইতিহাসের অপূর্ব দাস্তান আর বিশাল বিশাল উদাহরণ পেশ করেছে। যার সঙ্গে এই প্রেম ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তার প্রতি জন্ম দিয়েছে অপূর্ব স্নেহ, মায়া আর মমতার। আর এটাই তার সবগুলো দিক নিয়ে ফুটে উঠেছিল হিজরতের এই সফরে আবু বকর রা. এর তাঁর প্রাণপ্রিয় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আবু বকর রা. কে সঙ্গে নিয়ে গারে সাওরের পথে যাত্রা করেন, তখন আবু বকর রা. কিছুক্ষণ নবীশী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে চলতেন, আবার কিছুক্ষণ পেছনে চলতেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপারটি লক্ষ করে বললেন- কী ব্যাপার আবু বকর? কতক্ষণ সামনে চলছ আবার কতক্ষণ পেছনে চলছ! তিনি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন আমার মনে পড়ে যে, তারা আপনার খোঁজে মক্কা থেকে ছুটে আসবে তখন আমি পেছনে চলি। আর যখন আমার মনে পরে অতর্কিতে কেউ আপনার ওপর আক্রমণ করে বসতে পারে তখন আমি সামনে চলি । 

গুহার কাছে পৌঁছে আবু বকর রা. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন- আপনি এখানে দাঁড়ান হে আল্লাহর রাসূল। আমি আগে ঢুকে গুহাটি পরিষ্কার করে নিই। অতঃপর তিনি গুহায় ঢুকে গুহাটি পরিষ্কার করলেন। অতঃপর গুহা থেকে বের হয়ে তার মনে পড়ল যে, একটি গর্ত তিনি এখনো দেখে ঠিক করতে পারেননি। তাই তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আবারও কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলে গুহার ভেতরে গেলেন। সেটি পর্যবেক্ষণ ও পরিষ্কার করে বললেন- এবার আসুন হে আল্লাহর রাসূল! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন ভেতরে তাশরীফ নিলেন।

 

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color