মক্কা বিজয়ের ইতিহাস - History of the conquest of Mecca
03:32:49 12/10/2023
মক্কা বিজয়ের ইতিহাস : রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করছিলেন তখন স্বীয় পালনকর্তার শুকরিয়া আর কৃতজ্ঞতায় তিনি ছিলেন বিনম্র ও আনত। বিনম্রতা ও কৃতজ্ঞতার ভারে তার মাথা মুবারক এতটাই নুয়ে পড়েছিল যে, শুরু মুবারক সওয়ারীর পিঠে লেগে যাচ্ছিল। আর তার ঠোঁটে ছিল। কুরআনে কারীমের সূরা ফাত্হর আয়াত। যাতে বহু আগেই একদিন এই বিজয়ের সুসংবাদ তাকে দেওয়া হয়েছিল।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন তাঁর দাওয়াতের কেন্দ্রবিন্দু, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রধান মারকায; বরং গোটা জাযীরাতুল আরবের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করলেন সেদিন তিনি ন্যায়-ইনসাফ, ক্ষমা আর উদারতার এমন অনন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেছিলেন দুনিয়ার আগের ও পরের ইতিহাস যার আর কোনো নমুনা দেখাতে অক্ষম হয়ে গিয়েছে। তিনি সেদিন ইসলামের দৃষ্টিতে অনুমোদিত ও বৈধ কোনো সাধারণ সম্মান নিতেও রাজি হননি। তিনি সেদিন তাঁর উটের ওপর আযাদকৃত গোলাম যায়দ বিন হারেসা রা. এর ছেলে উসামা বিন যায়দ রা. কে তাঁর সঙ্গে আরোহণ করিয়েছিলেন; অথচ সেদিন গোটা মক্কায় বড় বড় ব্যক্তিবর্গের সন্তান এমনকি তাঁর নিজ গোত্র বনু হাশিমে ছোট ছোট ভালো ঘরের সন্তানদের কোনো অভাব ছিল না।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কায় প্রবেশের সেই দিনটি ছিল অষ্টম হিজরীর ২১ শে রমযান শুক্রবার। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন। সে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভয়ে কাঁপছিল। দয়ার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ভয়ের কিছু নেই; স্বাভাবিক হয়ে কথা বলো! আমি কোনো রাজা- বাদশাহ নই; বরং আমি একজন কুরাইশী মহিলার সন্তান- যিনি শুকনো গোশত খেতেন ।
দয়া ও অনুগ্রহের দিন
সা'দ বিন উবাদা রা. যখন আনসার বাহিনীর মধ্যে আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বলছিলেন- আজ সংঘাতের দিন। আজ হারামকে হালাল করার দিন। আজ আল্লাহ তাআলা কুরাইশকে লাঞ্ছিত করেছেন। অতঃপর যখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন আবু সুফিয়ান সাদের নামে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নালিশ করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাদের কথা কি আপনি শুনেছেন? নবীজী বললেন, কেন সে কী বলেছে? আবু সুফিয়ান বললেন, সে এমন এমন কথা বলেছে।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সাদের কথা অপছন্দ করলেন। তিনি বললেন, বরং আজ দয়া ও অনুগ্রহের দিন। আজ আল্লাহ তাআলা কুরাইশকে সম্মানিত করবেন। কা'বাকে ইযযত দান করবেন। অতঃপর তিনি সাদের কাছ থেকে পতাকা নিয়ে নিলেন। বাদবাকি তিনি সেটা তার ছেলে কায়সের হাতে তুলে দিলেন। অবস্থা এমন হলো- তার কাছ থেকে পতাকা নিয়েও যেন নেওয়া হলো না।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূলত পরিচালিত হচ্ছিলেন সাত আসমানের ওপরের মহামহীম সত্তার নিয়ন্ত্রণে। আর তাই এই পতাকা পরিবর্তন করলেন মূলত এক অক্ষরের জায়গায় অন্য অক্ষর রেখে। পিতার কাছ থেকে সন্তানের কাছে। একদিকে আবু সুফিয়ানের মনে খানিকটা সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার ছিল। কারণ তিনি ছিলেন নবদীক্ষিত মুসলমান। অপরদিকে সা'দ বিন উবাদা রা. একটি কথা বলে ফেললেও তার মনে কষ্ট দেওয়া যথোচিত ছিল না। কেননা তিনি ছিলেন প্রথম সারির সেই কষ্টের দিনগুলোর একজন মুসলমান। আর এভাবেই আসমানী দিকনির্দেশনায় বিষয়টির কী সুন্দর সমাধান হলো!!!
সামান্য ঠেলাঠেলি
ওদিকে মক্কায় প্রবেশ করতে গিয়ে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর বাহিনীর সঙ্গে কুরাইশদের সফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা, ইকরিমা ইবনে আবী জাহল আর সুহাইল ইবনে আমরের বাহিনীর কিছুটা দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর ঠেলাঠেলি হয়। কুরাইশদের পক্ষে মোটামুটি বারোজন মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অতঃপর দুশমনরা পরাজিত হয়। কারণ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতঃপূর্বে মুসলিম বাহিনীর আমীরদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- তাদের সঙ্গে কেউ যুদ্ধ করার আগে যেন তারা নিজেদের ইচ্ছায় কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত না হয়।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন