শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয় - How to take care of baby
05:56:19 12/10/2023
শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয়
চিকিৎসা ব্যবস্থায় অপ্রতুলতা, সামাজিক জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমাদের এই উপমহাদেশে প্রচুর শিশু এবং বাচ্চার সর্দি-কাশি নিউমোনিয়ায় রূপ নেয় এবং প্রতি বছরেই প্রায় ২০-২৫ লাখ শিশু এ রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে। নিম্নে শিশুদের জীবন রক্ষার্থে অনুসরণীয় কিছু পন্থার উল্লেখ করা হলো যার জন্য পিতামাতার খরচ হবে খুবই কম। প্রতিটা বাবা-মায়ের এই সর্দিকাশি সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকা উচিত এবং কোন অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তা জেনে রাখা উচিত। প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে রোগ সারানোর জন্য কম দামি ওষুধপত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা উচিত, কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশটি দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে।
সর্দি ও কাশির জন্য প্রাথমিকভাবে কী করবেন
- যে বাচ্চার কাশি আছে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার যদি খুব বেশি বেড়ে যায়, তাহলে সেই বাচ্চা বিপদে আছে বলে ধরে নেবেন। অতএব বাচ্চাটিকে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে আসবেন।
- বাচ্চাদের সময়মতো টিকা নিতে ভুলবেন না। উপরন্তু মনে রাখবেন শিশুদের অবশ্যই ছ'মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ, মায়ের বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে। বুকের দুধ যখন ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে থাকবেন তখনো মায়েদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশু স্বাস্থ্যকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে পায়।
- যে বাচ্চার সর্দি-কাশি আছে তাকে হালকা উষ্ণ রাখবেন, কখনোই একেবারে গরম লাগিয়ে ছাড়বেন না। বাচ্চার আশপাশে কেউ ঘুণাক্ষরেও ধূমপান করবেন না। বাচ্চার ঘরের বাতাস ধুলোবালিমুক্ত রাখবেন।
- বাচ্চাকে অবশ্যই বেশি করে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়াতে হবে এবং একই সাথে সে যেন প্রচুর পানি পায় তা দেখবেন।
প্রাথমিক ক্ষেত্রে করণীয়
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের মধ্যে যে সর্দি-কাশি দেখা যায় তা অল্প ক'দিনেই সেরে যেতে দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব অবস্থা থেকে কোনো কোনো শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ার উদ্ভব হতে দেখা গেছে এবং ফলত তা শিশুর জীবনের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে দেখা
- গেছে। লাখ লাখ শিশুদের এই নিউমোনিয়া হতে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ রোধ করা মোটেই কঠিন নয়। কেবল নিম্নোক্ত ব্যাপারগুলোর ওপরে একটু নজর রাখতে হবে :
- বাবা-মায়েদের সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে কখন অসুখের অবস্থা মারাত্মক হয়ে যায়। এবং কখন শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
- সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত কমদামি কিন্তু কার্যকরী ওষুধের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- - আপনার শিশুর কাশি থাকলে এবং এর সাথে নিম্নোক্ত উপসর্গ দেখা গেলে চটপট বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্তনদান
যদি বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার মিনিটে ৫০ বারের বেশি হয়। শ্বাস নেয়ার সময় যদি বাচ্চার বুকের খাঁচা ভেতরের দিকে ডেবে যায়। বাচ্চা যদি কোনো কিছু পান করতে না পারে। বাচ্চা যদি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে তবে সর্দি-কাশি সহজেই সেরে যাবে, এজন্য সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
মায়ের বুকের দুধ শিশুর শরীরের বিভিন্ন রোগ দমিয়ে রাখে। গড় হিসেবে দেখা গেছে, যারা মায়ের দুধ পান করে বোতলের দুধ খায় তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। একটা শিশুকে তার জীবনের প্রথম চার থেকে ছয় মাস অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে ।
বাচ্চার দৈনন্দিন খাদ্য
একটা শিশুর যত বয়সই হোক না কেন, সে যদি ঠিকমতো খাবার দাবার পায় তবে সে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে না বা নিউমোনিয়ার কারণে মৃত্যুবরণ করবে না।
ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ
আম, কাঁঠাল, গাজর, মাছের তেল ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন-এ আছে। ভিটামিন- এ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের আবরণী রক্ষার জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এবং এই উপাদান শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
টিকাদান কর্মসূচির নির্দেশানুযায়ী টিকা গ্রহণ
বাচ্চার বয়স ১ বছর আগেই তাকে প্রয়োজনীয় সব টিকা দিয়ে দিন, এতে সে শ্বাসতন্ত্রের বিবিধ মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাবে। টিকা নিয়ে শিশুরা যক্ষ্মা, হুপিং কাশি ও হাম থেকে মুক্ত থাকবে।
ঘনবসতি পরিহার করুন
ঘনবসতি এলাকাগুলোতে সর্দিকাশি বেশি ছড়ায়। রাতের বেলা কেবল যে শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে তারাই মায়ের সাথে শুতে পারে, অন্যরা অবশ্যই আলাদাভাবে থাকবে । এজন্য অপেক্ষাকৃত বেশি বয়স্ক সন্তানদের আলাদা শুতে অভ্যস্ত করে তুলুন ।
বাচ্চাকে যখন ঘরেই চিকিৎসা করবেন বলে মনে করছেন অথবা হাসপাতালে নেয়ার মতো জরুরি অবস্থা যখন বাচ্চার হয়নি, তখন আপনাকে নিম্নোক্ত ব্যাপারগুলো মেনে চলতে হবে। - নিউমনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের বুকের দুধ বা পানি পান করানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। খাদ্যবস্তু বাচ্চার ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য একান্ত প্রয়োজন যা একই সাথে তার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। অতএব বাচ্চাদের বারবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। বারবার বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য স্তনবৃত্ত শিশুর মুখের কাছে কাছে নিয়ে রাখুন। বাচ্চার নাক বন্ধ থাকলে পরিষ্কার করে দিন। কারণ, শ্বাস-কষ্ট অনুভব করলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাসই নিতে চাইবে, দুধ আর পান করবে না।
যদি একদমই বাচ্চা দুধ পান করতে না পারে, তবে স্তন থেকে দুধ চেপে বের করে কোনো পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে তারপর চামচ দিয়ে আস্তে আস্তে খাইয়ে দিন।
যেসব বাচ্চা আর বুকের দুধ পান করছে না তাদের অল্প অল্প করে হলে বেশিবার, প্রয়োজনে ৮/১০ বার খেতে উৎসাহিত করুন। অসুখের জন্য মাঝে মধ্যে শিশুরা খেতে চায় না। এবং এতে তাদের শরীর সুষ্ঠুভাবে গঠিত হয় না। একটা শিশু যখন খেতে চায় না, বা রুচি হারিয়ে ফেলে, তখন তাকে স্বাস্থ্যসম্মত রুচিকর খাবার খেতে দিন এবং এক সপ্তাহ ধরে তাকে প্রতিদিন একবার করে বেশি খেতে দিন। অর্থাৎ আপনার বাচ্চা অসুস্থতার আগে প্রতিদিন ৩ বার খেতে দেবেন। বাচ্চার ওজন যতদিন পর্যন্ত না পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তাকে সুস্থ বলে গণ্য করবেন না ।
বাচ্চাকে প্রচুর পানি পান করাবেন। প্রয়োজনে প্রতি ঘণ্টায় এক আধ গ্লাস পানি সে যেন অবশ্যই পান করে।
ধুলোবালি ও প্রচুর ধোঁয়া কী ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে তা আপনি অবশ্যই জানেন। রাস্তায় বেরোলেই গাড়ির কালো ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া আপনাকে বিরক্ত করে নয় কি? অতএব বুঝে দেখুন, এতে শিশুদের অসুবিধা তো আরো বেশিই হবে।
খুব বেশি গরম, গুমোট আবহাওয়া বাচ্চার চারপাশে তৈরি হলে সে আরামে বা স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে না। শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খাবার ছাড়াও তার প্রচুর ঘুম দরকার। অতএব জ্বর হলে তাকে উষ্ণ রাখবেন। এজন্য পাতলা চাদর বা পাতলা কম্বল ব্যবহার করুন।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন