আউস ও খাযরাজের পরিচয় - Identity of Aus and Khazraj
16:03:20 12/10/2023
আউস ও খাযরাজের পরিচয় : মদীনার আরব অধিবাসী আউস আর খাযরাজ এসেছে মূলত ইয়েমেনের আযদ কবীলা থেকে। তবে ইয়েমেন থেকে ইয়াসরিবে তাদের দেশান্তরের এই ঢল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে আরবের ওপর আছড়ে পড়েছিল। তবে এর পেছনে বেশ কিছু কার্যকারণ আমরা চিহ্নিত করতে পারি- ইয়েমেনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অচলাবস্থা, আবিসিনিয়ানদের ধারাবাহিক হামলা, মারিব বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরে কৃষিকাজে পানিসিঞ্চন সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যু তাদেরকে ইয়াসরিবে নিয়ে এসেছিল। আর এই কারণেই আউস ও খাযরাজ ছিল ইহুদিদের তুলনায় মদীনার নতুন ও পরবর্তী অধিবাসী।
কবীলায়ে আউসের শাখাগোত্রগুলো বসবাস করত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। আর এটা ছিল ইয়াসরিবের উঁচু অঞ্চল। আর খাযরাজের লোকেরা বসবাস করত মদীনার মধ্যভাগ ও উত্তর প্রান্তে। আর এটা ছিল ইয়াসরিবের নিম্ন অঞ্চল। তাদের মাঝে আর হাররায়ে ওবরার উন্মুক্ত প্রান্তরের মাঝে কোনো আবরণ ছিল। না।
খাযরাজের শাখাগোত্র ছিল চারটি: মালেক, আদী, মাযেন ও দীনার। তাদেরকে নিয়েই গঠিত ছিল বনু নাজ্জার। আর তারা প্রসিদ্ধ ছিল 'তাইমুল লাভ' নামে। আর বনু নাজ্জারের লোকেরা বসবাস করত মদীনার মধ্যভাগে- বর্তমানে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদে নববী।
আউসের লোকেরা বসবাস করত যেই অঞ্চলে সেটা ছিল কৃষি ও চাষাবাদের উপযুক্ত উর্বর ভূমি। আর তাদের প্রতিবেশী ছিল মদীনার ইহুদিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কবীলা। অপরদিকে খাযরাজের লোকেরা যেই অঞ্চলে বসবাস করত, তা খুব একট উর্বর ছিল না। পাশাপাশি তাদের প্রতিবেশী হিসেবে ছিল ইহুদিদের কেবল একটি গোষ্ঠী- বনু কাইনুকা'।
সেই সময় আউস ও খাযরাজের সর্বমোট জনসংখ্যা কত ছিল বর্তমানে তার সূক্ষ্ম ও কাঁটায় কাঁটায় হিসাব মিলানো সম্ভব নয়। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গবেষণাকারী সচেতন ঐতিহাসিক ও বিদগ্ধজন সহজেই হিজরতের পরে বিভিন্ন যুদ্ধে তাদের শক্তির অনুমান করতে পারবেন। মক্কা বিজয়ের সময় তাদের সংখ্যা পৌঁছেছিল ৪ হাজার যুদ্ধোপযুক্ত পুরুষে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের সময়টিতে আরবরাই ছিল ইয়াসরিবের শক্তিশালী আর ক্ষমতাসীন জাতিগোষ্ঠী। তাদের হাতেই ছিল ইয়াসরিব পরিচালনার চাবিকাঠি। এর বিপরীতে ইহুদিদের ইয়াসরিবে কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। তারা তাদের বিরোধী আরব শক্তির সামনে এক পতাকাতলে কখনোই দাঁড়াতে পারেনি। নিজেদের দোষে নিজেরাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল। তাদের একেক কবীলা একেক আরব গোষ্ঠীর সঙ্গে মিত্রতা গড়েছিল। কেউ কেউ আউসের সঙ্গে মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল। আবার কেউ কেউ এই ক্ষেত্রে খাযরাজের সঙ্গে ছিল।
যুদ্ধ বিগ্রহে তাদের চরিত্র হতো আরও খারাপ। যখন তারা স্বীয় মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে নামত, তখন তারা বাকি শত্রুদেরকে বাদ দিয়ে নিজেদের ইহুদিদেরকে বেছে বেছে হত্যা করত। স্বগোত্রীয় ভাইদেরকেই আগে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়ার কোশেশ করত। বনু কাইনুকা, বনু নযীর আর বনু কুরাইযার মাঝে এই শত্রুতার কারণেই বনু নযীর আর বনু কুরাইযা দু'জনে মিলে বনু কাইনুকাকে তাদের ক্ষেত-খামার আর ফসলী জমিজমা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। আর এই কারণে কারিগরী শিল্পই ছিল বনু কাইনুকার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ।
একইভাবে আউস আর খাযরাজের মধ্যেও চলে আসছিল অসংখ্য যুদ্ধ- বিগ্রহ। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম যুদ্ধ ছিল 'সামীর' আর সর্বশেষ ছিল 'বুআস'। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের মাত্র বছর পাঁচেক আগে শেষ হয়েছিল এই যুদ্ধ। এই সকল যুদ্ধে ইহুদিদের ভূমিকাও সামান্য ছিল না। তাদের নিজেদের পাশাপাশি ইহুদিরা আউস ও খাযরাজকে দিন-রাত যুদ্ধ লাগানোর জন্য কাতুকুতু দিতো। সময়ে পেলেই ফাঁপর নিয়ে তাদেরকে ঠেলে দিতে লড়াইয়ের দিকে। শত তোষামোদি আর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রাখি করানোর চেষ্টা করত আরেকটি সংঘাতের জন্য। কুমতলব আর চালবাজি। আর তাই তারা ইহুদিদের নাম দিয়েছিল ধূর্ত শেয়াল আরবরাও বুঝত ইহুদিদের এইসব বলে।