Narrow selection

মুয়াত্তা মালেক-এর সংকলক ইমাম মালেক ইবনে আনাস রহ. - Imam Malek Ibn Anas


15:18:48 12/09/2023

মুয়াত্তা মালেক-এর সংকলক ইমাম মালেক ইবনে আনাস রহ.

জন্ম ও বংশ : নাম মালেক। কুনিয়ত আৰু আব্দুল্লাহ। লকব ইমামু দারুল হিজরত। পিতার নাম আনাস রহ.। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ইয়ামানের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ৯০/৯৩/৯৪/৯৫ হিজরীতে নবীর শহর মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন : তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন, মদীনা তখন ছিল জ্ঞান চর্চার প্রধান কেন্দ্র। তার পারিবারিক পরিবেশও ছিল জ্ঞান-গবেষণার উপযুক্ত। তিনি কারীদের মধ্যে ইমাম নাফে ইবনে আব্দুর রহমান থেকে ইলমে কিরাত অধ্যয়ণ ও সনদ গ্রহণ করেন। তাঁর কিরাতের উপরই মুসলিম বিশ্বের (কিরাতের) ভিত্তি। তার অন্যান্য জ্ঞান-গবেষণায়ও যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। ছাত্র জীবনে তাঁর নিকট বাহ্যিক কোন সম্বল ছিল না। তাই ঘরের ছাদ ভেঙে ছাদের লোহা বিক্রি করে কিতাবপত্র ইত্যাদি বাবদ খরচ করতেন। এর পরে ধন-দৌলতের রাস্তা খুলে যায়। তার মেধা ছিল খুবই প্রখর। তিনি বলতেন, একবার আমি যা মুখস্থ করে নিয়েছি, তা কখনও ভুলিনি । শিক্ষকবৃন্দ ঃ

তিনি সত্যাবাদী, পরহেযগার, মুত্তাকী, ফিকাহবিদ আলিমদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করেছেন। মদীনার বিভিন্ন মনীষীর সীনায় যে ইলম ছিল, তিনি তা সঞ্চয় করে নিজের সীনায় জমা করেন। এজন্য তাকে ইমামু দারিল হিজরত বলা হত। তাঁর উস্তাদের সংখ্যা ছিল নয় শতাধিক। তন্মধ্যে বিশিষ্ট ক'জন ছিলেন যায়েদ ইবনে আসলাম, ইমাম যুহরী, আব্দুর রহমান ইবনে কাসেম, আইয়ূব সাখতিয়ানী, সাওর ইবনে যায়েদ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

হায়াতুল মুহারিফীন চারিত্রিক গুণাবলী :

হাফিয যাহাবী বলেন, আমি ইমাম মালেক রহ. এর মধ্যে পাঁচটি গুণের সমাবেশ দেখেছি, যা আর কারও মধ্যে দেখিনি। ১. দীর্ঘ বয়স ও উচ্চতার সনদ। ২. সুন্দর বোধশক্তি ও ইলমের গভীরতা। ৩. তার হুজ্জত ও বিশুদ্ধ বর্ণনার প্রতি ইমামদের ঐক্যমত। ৪. তাঁর আদালত, সুন্নতের অনুসরণ ও দ্বীনদারীর উপর হাদীসবিদগণের ঐকমত্য। ৫. ফিকহ্ ও ফায়া প্রদানের মধ্যে তার সূক্ষ্মচিন্তা ও দূরদর্শিতা।

হাদীসের অধ্যাপনা :

তৎকালীন মদীনা শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. এর ইন্তেকালের পর তাঁর ইলমী নিকেতনের স্থলাভিষিক্ত হন ইমাম মালেক রহ.। মাত্র ১৭ বছর বয়সে শিক্ষকতা শুরু করেন। আনুমানিক ৬২ বছর যাবৎ বিরতিহীনভাবে ফিক্হ, ফাল্গুয়া এবং অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত থাকেন। হাদীসের দারস দেওয়ার পূর্বে অযু-গোসল করে পবিত্র হয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করতেন এবং সুগন্ধি লাগাতেন। এরপর দরসে বসতেন। আর যতক্ষণ হাদীসের আলোচনা চলত, ততক্ষণ পর্যন্ত সুঘ্রাণযুক্ত আগর জালাতে থাকতেন।

ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারী :

তিনি যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীরা গভীর আগ্রহ নিয়ে তার কাছে আসত। তারা ফিক্হ হাদীস ও মাসায়েল শিখত। হাফিয দারাকুত্‌নী ইমাম মালেক রহ. ব্যাপারে লিখেছেন, এক হাজারের মত বর্ণনাকারী তাঁর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর কোন কোন উস্তাদও তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন, যুহরী, আবুল আসওয়াদ, আইয়ূব সাখতিয়ানী । ইয়াইয়া ইবনে সাঈদ আনসারী প্রমূখ। অন্যান্য শাগরেদদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ, শাফিঈ, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক, শো'বা প্রমুখ ছিলেন অন্যতম । হাদীসের প্রতি অসাধারণ শ্রদ্ধা :

তার খাস শাগরিদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক বলেন, একদিন হযরত ইমাম মালেক রহ. হাদীসের দরস দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁকে একটি বিচ্ছু দশবার দংশন করছিল। যার বিষে তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এত কষ্ট সত্ত্বেও তিনি দরস বন্ধ করলেন না। নিয়ম তান্ত্রিকভাবে দরস শেষ করার পর তাঁর চেহারা বিবর্ণ হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- হাদীসে রাসূলের প্রতি অতিশয় শ্রদ্ধার করণেই আমি এত কষ্ট পাওয়া সত্ত্বেও দরস বন্ধ করি নি অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ এর দেহ মুবারক মদীনায় আছে বলে তিনি কোন দিন মদীনাতে ঘোড়া চড়েন নি।

ইন্তেকাল :

১৭৯ হিজরী ১১ বা ১৪ ই রবিউল আউয়াল ৮৪/৮৬/৮৭/নব্বই বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন । তাকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।

রচনাবলী :

ইমাম মালেক রহ. এর শ্রেষ্ঠতম রচনা হল, মুয়াত্তা মালেক । এটা পৃথিবীতে প্রথম পর্যায়ের হাদীস গ্রন্থ। সংকলনের পর থেকে এ পর্যন্ত এ গ্রন্থটির দরস চলে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও তিনি অনেক কিতাবাদি লিখেছেন। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ আওজাযুল মাসালেক গ্রন্থের ভূমিকায় লিপিবদ্ধ আছে।

মুয়াত্তা ইমাম মালেক :

ইসলামী কিতাবপত্রের মধ্যে কুরআনের পরেই এর স্থান। এটি রীতিমত ফিহের তরতীবে অধ্যায়ে অধ্যায়ে বিভক্ত করে সুন্দরভাবে বিন্যাস করা হয়েছে। অল্লামা আবু বকর বলেন, এটি হাদীস গ্রন্থ হিসেবে সর্বপ্রথম বুনিয়াদী গ্রন্থ। এ হিসেবে বুখারীর স্থান দ্বিতীয় পর্যায়।

সংকলন ও সম্পাদনা :

মুয়াত্তায়ে মালেক সংকলনের স্থান হল, মদীনা শরীফ। তবে সংকলনের সময় ও কালের সঠিক তথ্য পাওয়া দুষ্কর। যতদূর জানা যায়, খলীফা আবু মানসুর আব্বাসীর পরামর্শে তারই শাসনামলে এ গ্রন্থ সংকলনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পূর্ণতায় পৌঁছায় তার ইন্তেকালের পরে। খলীফা মনসুর ১৫৮ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন এবং তার পুত্র মাহদী খলীফা হন। তারই শাসন আমলের শুরুতে সংকলনের কাজ সমাপ্ত হয়।

নামকরন :

“মুয়াত্তা" শব্দটি আরবী “তাওতিয়াতুন" শব্দ থেকে নির্গত। শাব্দিক অর্থ- পেষা, তৈরি করা, সহজ-সরল বানানো ইত্যাদি।

পারিভাষিকভাবে বলা হয়, ইমাম মালেক রহ. যেহেতু কিতাবটি সুন্দর ও সহজ করে মানুষের নিকট পেশ করেছেন, তাই একে “মুয়াত্তা” বলা হয়। মুয়াত্তার অবস্থানঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ ও শাহ আব্দুল আযীয রহ. হাদীসের কিতাবগুলো ৫টি স্তরে বিন্যাস করেছেন। তন্মধ্যে প্রথম স্তরে আছে মুয়াত্তা ইমাম শাফেঈ রহ. এর মতে এটি জমিনের উপর (কুরআন ব্যতিত) বিশুদ্ধতম গ্রন্থ। অবশ্য কোন কোন মুহাদ্দিসের মতে এটি তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরের বলে উল্লেখ রয়েছে।

জনপ্রিয়তা :

এটি মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যভুক্ত কিতাব। হাদীসগ্রন্থ হিসেবে অন্যান্য কিতাবের সাথে এটি খুব কদরের সাথে পড়া ও পড়ানো হয়। এটিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে অনেক মুয়াত্তা সংকলিত হয়েছে। তাই মুয়াত্তার জনপ্রিয়তা গ্রহণযোগ্যতা ভূয়সী প্রশংসার দাবীদার।

হাদীসের সংখ্যা :

তিনি এক লাখ হাদীস থেকে বাছাই করে মুয়াত্তাতে দশ হাজার হাদীস সংকলন করেছিলেন। তারপর আবারও যাচাই-বাচাই করার পর মাত্র ৫০০ হাদীস অবশিষ্ট রাখলেন। কিন্তু আবু বকর আবহারীর মতে এতে ১৭২০টি হাদীস আছে। মারুফ ৬০০, মুরসাল ২২২, মাওকুফ ৬১৩ এবং ২৮৫টি ভাবেঈদের মতাদর্শ।

মুয়াত্তার বর্ণনাকারী :

এক হাজার বর্ণনাকারী ইমাম মালেক রহ. হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে উচ্চ স্তরের ফকীহ, সূফী, আমির ও খলীফা সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ ছিলেন।

মুয়াত্তার শরাহ ও হাশিয়া :

এ পর্যন্ত ২৩টির অধিক শরাহ ও হাশিয়া লেখা হয়েছে। প্রধান প্রধান কয়েকটি হল আল মুস্তাকা আবুল ওওয়ালীদ কার্যী।

-শায়খ যাকারিয়া রহ

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color