Narrow selection

ইমামদের প্রতি শিয়াদের আকিদা কি? - Imamder proti siader akida ki


12:17:15 06/16/2024

ইমামদের প্রতি শিয়াদের আকিদা কি? বার ইমামপন্থী শীআদের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসঃ

ইছনা আশারিয়া বা বারা ইমামপন্থী শীআদের সাথে আহলূস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বহু বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তন্মধ্যে প্রধান হল তিনটি হল ইমামত সংক্রান্ত আকীদা, সাহাবা বিদ্বেষ সংক্রান্ত আকীদা ও কুরআন বিকৃতি বিষয়ক আকীদা। নিম্নে এ ৩টি আকীদা বিষয়ে বিশদ বিবরন পেশ করা হল।

 

শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে পার্থক্য কি? শিয়ারা কি কাফের?

 

ইমামত সংক্রান্ত আকীদাঃ 

ইমামত সংক্রান্ত আকীদা এর অর্থ হল আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের হেদায়েত ও পথ প্রদর্শন ও নেতৃত্বের জন্যে ইমাম মনোনীত করা শুরু করেন। কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্যে তিনি এরূপ বারজন ইমাম মনোনীত করেছেন। দ্বাদশতম ইমামের উপর পৃথিবীর লয় ও কিয়ামত হবে। এই বারজন ইমাম হলেনঃ

 

১.ইমাম হযরত আলী কুর্তযা (রাঃ) । এরপর হযরত আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র 

২. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) । তাঁরপর তাঁর ছোটভাই 

৩.হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) । এরপর তার পুত্র 

৪.আলী ইবনে হুসাইন ওরফে জয়নুল আবেদীন। এরপর তার পুত্র 

৫.মোহাম্মাদ ইবনে আলী ওরফে ইমাম বাকের । এরপর তার পুত্র 

৬.জাফর ছাদেক ইবনে বাকের। এরপর তার পুত্র 

৭.মূসা কাযেম ইবনে জাফর ছাদেক। এরপর তার পুত্র 

৮.আলী রেযা ইবনে মূসা কাযেম। এরপর তার পুত্র 

৯.মোহাম্মাদ তাকী ইবনে আলী রেযা ওরফে জাওয়াদ। এরপর তার পুত্র 

১০.আলী নাকী আবনে মুহাম্মাদ তাকী ওরফে হাদী। এরপর তার পুত্র 

১১.হাসান আসকারী ইবনে আলী নাকী ওরফে যাকী। এরপর তার পুত্র দ্বাদশতম ও সর্বশেষ ইমাম। 

১২.মোহাম্মদ আল-মাহদী আল মুনতাজার ইবনে হাসান আসকারী । (অন্তর্হিত ইমাম মেহদী), যিনি শীআ আকীদা অনুযায়ী এখন থেকে প্রায় সাড়ে এগার শত বছর পূর্বে ২৫৫ অথবা ২৫৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করে চার অথবা পাঁচ বছর বয়সে অলৌকিকভাবে লোকচক্ষুর অন্তরাল চলে যান এবং এখন পর্যন্ত একটি গুহায় আত্মগোপন করে আছেন।তাঁর উপর ইমামত শেষ হয়ে গেছে। শেষ যমানায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

 

শিয়ারা কত দলে বিভক্ত? - Sia Koy dole Bivokto

 

ইমামদের সম্বন্ধে শীআদের আকীদা-বিশ্বাসঃ

(এক) ইমামগণের গর্ভ ও জন্ম হয় অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় ।

শীআগণ ইমামগণের গর্ভ ও জন্ম সম্পর্কে অদ্ভুত বিশ্বাস রাখেন। এ ব্যাপারে উছূলে কাফীতে উল্লেখিত একটি সুদীর্ঘ রেওয়ায়েতের সারমর্ম নিম্নরূপঃ

 

ইমাম জাফর ছাদেকের বিশেষ মুরীদ আবূ বছীর বর্ণনা করেনঃযে দিন ইমাম সাহেবের পুত্র ইমাম মূসা কাযেম জন্মগ্রহণ করেন(যিনি সপ্তম ইমাম,) সেদিন তিনি বর্ণনা করলেন ওয, প্রত্যেক ইমামের জন্ম এমনিভাবে হয়-যে রাত্রিতে মায়ের  গর্ভে তার গর্ভসন্চার আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত থাকে ,সে রাত্রিতে আল্লাহ তা আলার পক্ষ থেকে এক আগন্তুক (ফেরেশতা) অত্যন্ত সুস্বাদু শরবতের একটি গ্লাস নিয়ে তাঁর পিতার কাছে আসেন এবং তা তাকে পান করিয়ে দেন।

 

এরপর আগন্তুক বলেন, এখন আপনি স্ত্রীর সাথে সহবাস করুন। সহবাসের পর ভবিষ্যতে জন্মগ্রহনকারী ইমামের গর্ভ মায়ের জরায়ূতে স্থির হয়ে যায়। এ স্থলে ইমাম জাফর ছাদেক সবিস্তারে বর্ণনা করলেনঃআমার প্রপিতামহ(ইমামত হুসাইন)-এর সাথে তাই হয়েছে এবং এর ফলশ্রুতিতে আমার পিতামহ ইমাম জয়নুল আবেদীন জন্মগ্রহণ করেন।

 

এরপর তার সাথেও তাই হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে আমার পিতা ইমাম বাকের জন্মগ্রহণ করেন। এরপর তার সাথেও সম্পূর্ন এমনি ধরণের ঘটনা ঘটে এবং আমার জন্ম হয়। তারপর আমার সাথেও এরূপ ঘটে, অর্থাৎ,আল্লার পক্ষ থেকে এক আগন্তুক (ফেরেশতা) অত্যন্ত সুস্বাদু ও উৎকৃষ্ট  শরবতের গ্লাস নিয়ে আমার কাছে আসে এবং আমাকে স্ত্রীর সাথ করতে বলে।

 

আমি সহবাস করলে এ পুত্রের গর্ভ স্থিতি লাভ করে। এ রেওয়ায়েতে আরও আছে যে, ইমাম যখন মায়ের গর্ভ থেকে বাইরে আসে, তখন তার হাত মাটিতে এবং মস্তক আকাশের দিকে উঠানো থাকে। ইমামগণের গর্ভ মায়ের জরায়ূতে নয়- পার্শ্বে কায়েম হয় এবং তারা মায়ের উরু দিয়ে ভূমিষ্ট হন।

 

(দুই) ইমামগণ নবীর ন্যায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হন।

শীআদের বিশ্বাস হল নবী যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হন, তেমনি আমিরুল মুমিনীন (আলী) থেকে নিয়ে বার জন ইমাম কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন।তাদের মনোনয়ন ও নিযুক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে,যেমন তিনি নবী ও রসূলগণকে নিযুক্ত করেছেন। এতে কোন মানুষের মতামত ও ক্ষমতার দখল থাকে না।স্বয়ং ইমামেরও ক্ষমতা নেই যে, তিনি পরবর্তী ইমাম ও স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করবেন।

 

উছূলে কাফীতে আছে, ইমাম জাফর ছাদেক বলেন,

অর্থাৎ, ইমামত আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট লোকদের জন্যে একটি অঙ্গীকার ইমামেরও অধিকার নেই যে, সে তার পরবর্তী সময়ের জন্যে মনোনীত ইমাম ছাড়া অন্যের কাছে ইমামত হস্তান্তর করবে।

উক্ত গ্রন্থে আরও আছে- ইমাম জাফর ছাদেক তার বিশেষ সহচরদেরকে এ মর্মে অনুরূপই বলেন,

আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমাম মনোনয় সম্পর্কিত বিষয় কিভাবে নবীকে জানানো হয় তার বর্ণনায় উছূলে কাফীতে প্রায় দুই পৃষ্ঠাব্যাপী একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। তার সারমর্ম নিম্নরূপ-

ইমাম জাফর ছাদেক বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পূর্বে তাঁর প্রতি জিবরাঈলের মাধ্যমে আকাশ থেকে ইমামত ও ইমামগণ সম্পর্কে নির্দেশনামা স্বর্ণের মোহ আঁটা কিতাবের আকারে নাযিল হয়েছিল। এতে প্রত্যেক ইমামের জন্যে আলাদা আলাদা মোহর আঁটা খাম ছিল।

 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো হযরত আলীর হাতে সমর্পন করেন। হযরত আলী কেবল নিজের নামের খামটির মোহর ভেঙ্গে তাঁর সম্পর্কিত নির্দেশনামা পাঠ করেন। এরপর প্রত্যেক ইমাম এমনিভাবে তার নামের মোহর আঁটা খাম পেয়েছেন এবং তিনিই নিজের খঅমের মোহর ভেঙ্গে তা পাঠ করতেন।এমনিভাবে সর্বশেষ খাম দ্বাদশ ইমাম মেহদী (অন্তর্হিত ইমাম) পাবেন।

 

আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বার ইমামের মনোনয়ন প্রসঙ্গে উছূলে কাফীতে আকাশ থেকে একটি আশ্চর্যজনক ফলক অবতীর্ণ হওয়ার কিসসাও বর্ণিত হয়েছে, যাতে আকাশ থেকে অবতীর্ণ সবুজ রঙ্গের একটি ফলকের অদ্ভুত কিসসাও বর্ণিত হয়েছে,যাতে আকাশ থেকে অবতীর্ণ সবুজ রঙ্গের একটি ফলকের অদ্ভূত কিসসা বর্ণনা করা হয়েছে ,যার উপর নূরানী অক্ষরে ক্রমিক অনুসারে বার ইমামের নাম, তাদের বিস্তারিত পরিচিতিসহ লিপিবদ্ধ ছিল।

 

বর্ণনায় আছেঃ ইমাম বাকের জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনছারী (সাহাবী) কে বললেন, আপনার সাথে আমার একটি বিশেষ কাজ আছে। তাই একান্তে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই এবং একটি ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই । জাবের বললেন, আপনি যখন ইচ্ছা করেন,আসতে পারেন।সেমতে একদিন তিনি তার কাছে গেলেন এবং বললেন, আমাকে সেই ফলক সম্পর্কে বলুন ,যা আপনি আমাদের (পরদাদী) আম্মা হযরত ফাতেমা বিনতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে দেখেছিলেন। এ ফলক সম্পর্কে তিনি আপাকে যা বলেছিলেন এবং তাতে যা লেখা ছিল, তাও বলুন।

 

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বললেন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী করে এ ঘটনা বর্ণনা করছি যে, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আপনার (পরদাদী) আম্মা হযরত ফাতেমার কাছে তার পুত্র হুসাইনের জন্ম উপলক্ষে মোবারকবাদ দিতে গিয়েছিলাম। আমি তার হাতে একটি সবুজ রঙ্গের ফলক দেখলাম। আমি ধানণা করলাম যে, সেটি পান্নার এবং তাতে সূর্যের ন্যায় চকচকে সাদা রঙ্গে কিছু লিখা রয়েছে।

 

আমি তাকে বললাম,হে রসূল তনয়া,আমার পিতামাতা আপনার জন্যে উৎসর্গ হোক আমাকে বলুন এ ফলকটি কি এবং কেমন? তিনি বললেন,এ ফলক আল্লাহ তাআলা তাঁর রসূলের কাছে প্রেরণ করেছেন। এতে আমার আব্বাজান রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম),আমার স্বামী (আলী),আমার উভয় পুত্র (হাসান-হুসাইন) এবং আমার আওলাদের মধ্যে আরও যারা ইমাম হবে, তাদের সকলের নাম রয়েছে। আব্বাজান আমাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্যে এই ফলক আমাকে দান করেছেন।

 

(তিন) শীইমামত ও ইমামগণের বর্ণনা ছিল। আদের বক্তব্য হল কুরআন মজীদে

উছূলে কাফীতে আছেঃ আল্লাহ তাআলা আকাশ,পৃথিবী ও পর্বতমালার কাছে যে আমানত পেশ করেছিলেনি এবং যা বহন করতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছিল,সেটা ছিল ইমামত। সূরা আহযাবের ৭২নং আয়াত-

(অর্থাৎ, আমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও পর্বতসমূহের কাছে এই আমানত পেশ করেছিলাম,তারা তা বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করল এবং তাতে শংকিত হল, কিন্তু মানুষ তা বহন করল। সেতো অতিশয় জালিম ,অতিশয় অজ্ঞ।)

এ আয়াতে তাফসীর প্রসঙ্গে ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে যে, বলেন,

অর্থাৎ, আয়াতে আমানত বলে হযরত আলী মুর্তযার ইমামত বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তাআলা হযরত আলীর ইমামতের বিষয়টি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে পেশ করেছিলেন এবং তাদেরকে তা কবূল করতে বলেছিলেন। কিন্তু আকাশ,পৃথিবী ও পর্বতমালা আমিরুল মুমিনীনের ইমামতের বিষয়টি কবূল করার মহাদায়িত্ব বহন করার সাহস করতে পারল না এবং তারা ভীত হয়ে অস্বীকার করল। এসব রেওয়ায়েতের উপরই শীআদের মৌলিক বিষয় ইমামতের ভিত্তি স্থাপিত।

সূরা গু আবার শেষ রুকূর ১৯৩-১৯৪ নং আয়াত-

 

(অর্থাৎ,রুহুল আমীন অর্থাৎ,বিবরাঈল এ কুরআন নিয়ে যা সুস্পষ্ট ও প্রান্জল আরবী ভাষায় রয়েছে-(হে রসূল) আপনার অন্তরে অবতীর্ণ হয়েছে (অর্থাৎ,আপনার অন্তর পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে,) যাতে আপনি (কুপরিণাম সম্পর্কে) সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।)

কিন্তু উছূলে কাফীতে ইমাম বাকের থেকে রেওয়ায়েত আছে যে, তিনি এ আয়াতের উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, জিবরাঈল যে বিষয় নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তরে নাযিল হয়েছিল তা ছিল আমিরুল মুমিনীন হযরত আলীর ইমামত । এর অর্থ হল- এ আয়াতটি কুরআন মাজীদের সাথে নয়, বরং ইমামতের সাথে সমাপৃক্ত।  

সূরা মায়েদার নবম রুকূর ৬৬ আয়াত-

 

এ আয়াতে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যদি তারা তাওরাত ইন্জিল এবং সেই সর্বশেষ ওহী কুরআন মাজীদের উপর-যা তাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নাযিল করা হয়েছে- ঠিকঠিক আমল করত, তবে তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত ওবরকত নাযিল হত। কিন্তু উছূলে কাফীতে ইমাম বাকের থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি এ আয়াতের তাফসীরেও বলেছেন। উদ্দেশ্য এই যে এর অর্থ কোরআন মাজীদ নয়, বরং ইমামত।

 

(চার) ইমামগণ প্রমাণ নিষ্পাপ ও আনুগত্যশীল আল্লাহর মতই । পয়গম্বরগণের 

উছূলে কাফীতে সনদ সহকারে ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে-তিনি বলেন, 

অর্থাৎ, সৃষ্টিজীবের উপর আল্লাহ তাআলার প্রমাণ ইমাম ব্যতীত প্রতিষ্ঠিত হয় না, যাতে তার মাধ্যমে (আল্লাহর এবং তাঁর ধর্মে)মারেফত অর্জিত হয়।

 

(পাঁচ) ইমামগণ পয়গম্বরগণের মত নিষ্পাপঃ

উছূলে কাফীতে এক শিরোনাম আছে-এতে অষ্টম ইমাম ইবনে মূসা রেযার একটি দীর্ঘ খুতবা রয়েছে, যাতে ইমামগণের শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বারবার তাদের নিষ্পাপতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, 

এরপর এ খুতবায় ইমাম সম্পর্কে আরও বলা হয়েছেঃ

অর্থাৎ, তিনি নিষ্পাপ । আল্লাহ তাআলার বিষেশ সমর্থন ও তাওফীক তাঁর সাথে থাকে। আল্লাহ তাঁকে সোজা রাখেন। তিনি ভুলত্রুটি ও পদস্থলন থেকে হেফাযত থাকেন। আল্লাহে এসব নেয়ামত দ্বারা তাঁকে খাছ করেন, যাতে তিনি তাঁর বান্দাদের উপর তাঁর প্রমাণ হন এবং তাঁর সৃষ্টির উপর সাক্ষী হন।

 

(ছয়) ইমামগণের মর্তবা রসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সমান এবং অন্য সকল পয়গম্বরের উর্ধ্বেঃ

উছূলে কাফীতে আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী মুর্তযা ও তাঁর পরবর্তী ইমামগণের ফযীলত ও মর্তবার বর্ণনায় ইমাম জাফর ছাদেকের একটি দীর্ঘ বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। তার প্রাথমিক অংশ নিম্নরূপ-

অর্থাৎ, আলী যে সকল বিধান এনেছেন, আমি তা মেনে চলি। আর যে কাজ তিনি নিষেধ করেছেন, আমি তা করি না। তার ফযীলত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ। আর মুহাম্মাদ সকল মাখলূকের উপর ফযীলত রাখেন। আলীর কোন আদেশে আপত্তিকারী রসূলের আদেশে আপত্তিকারীর মত। কোন ছোট অথবা বড় বিষয়ে তার গন্ডকারী আল্লাহর সাথে শিরক কার পর্যায়ে থাকে।

 

আমিরুল মুমিনীন আল্লাহর এমন দরজা ছিলেন যে, এ দরজা ছাড়া অন্য কোন দরজা দিয়ে আল্লাহর কাছে যাওয়া যায় না এবং তিনি আল্লাহর এমন পথ ছিলেন, যে কেউ অন্য পথে চললে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনি ভাবে ইমামগণের একের পর একের জন্য ফযীলত অব্যাহত রয়েছে। অর্থাৎ, সকলে এই মর্তবা।আল্লামা বাকের মজলিসী তার হায়াতুল কুলূব গ্রন্থে লিখেন-ইমামতের মর্তবা নবুওয়াত ও পয়গম্বরীর উর্ধ্বে।

 

(সাত) ইমামগণ যা ইচ্ছা হালাল অথবা হারাম করার ক্ষমতা রাখেনঃ

উছূলে কাফীতে মুহাম্মাদ ইবনে সিনান থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে তিনি বলেন, আমি আবূ জাফর ছানী (মুহাম্মাদ ইবনে আলী তাকী) কে হালাল ও হারাম সম্পর্কে শীআদের পারস্পরিক মতভেদের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,

অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ আল্লাহ তাআলা অনাদিকাল থেকে আপন একক সত্তায় ভূষিত ছিলেন।অতঃপর তিনি মুহাম্মাদ, আলী ও ফাতেমাকে সৃষ্টি করেছেন।এর পর তাঁরা হাজারো শতাব্দী অবস্থান করলেন।এরপর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সকল বস্তু সৃষ্টি করেন এবং তাদের সৃষ্টির উপর তাঁদেরকে সাক্ষী করলেন।তাঁদের আনুগত্য সকল সৃষ্টির উপর ফরয করলেন এবং সৃষ্টির সকল ব্যাপারাদি তাদের হাতে সোপর্দ করলেন। কাজেই তাঁরা যা ইচ্ছা হালাল করেন এবং যা ইচ্ছা তা হারাম করেন।তবে তাঁরা তা-ই করেন, যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন।

 

এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, আল্লামা কাযভীনী এ রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে মুহাম্মাদ, আলী ও ফাতেমা বলে তাঁদের তিন জন এবং তাঁদের বংশের সকল ইমামকে বুঝানো হয়েছে।মোট কথা, ইমাম আবূ জাফর ছানী (যিনি নবম ইমাম) জওয়াবের সারকথা হল ইমামগণকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা যে কোন বস্তুকে হালাল অথবা হারাম করতে পারবেন। তাই এ ক্ষমতা অধীনে কোন বস্তুকে অথবা কোন কাজকে এক ইমাম হালাল করেছেন এবং অন্য ইমাম হারাম করেছেন। ফলে আমাদের শীআদের মধ্যে হালাল-হারামের মতভেদ সৃষ্টি হয়ে গেছে।

 

(আট) ইমাম ব্যতীত দুনিয়া কায়েম থাকতে পারে নাঃ

উছূলে কাফীতে সনদ সহকারে বর্ণিত আছে-

অর্থাৎ, আবূ হামযা থেকে বর্ণিত আছে-আমি ইমাম জাফর ছাদেককে জিজ্ঞেস করলাম, এ পৃথিবী ইমাম ব্যতীত কায়েম থাকতে পারে কি?তিনি বললেনঃ যদি পৃথিবী ইমাম ব্যতীত কায়েম (বাকী) থাকে, তবে ধ্বসে যাবে (কায়েম করতে পারবে না)।

 

আরও বর্ণিত আছে-জাফর ছাদেক বলেনঃ

অর্থাৎ, যদি ইমামকে এক মুহূর্তের জন্যেও পৃথিবী থেকে তুলে নেয়া হয়, তাহলে পৃথিবী তার অধিবাসীদের নিয়ে এমন উদ্বেলিত হবে, যেমন সমুদ্রের তরঙ্গ তার অধিবাসীদের নিয়ে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।

 

(নয়) ইমামগণের অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান অর্জিত ছিলঃ

শীআদের মতে তাদের ইমামগণ হযরত মূসা (আঃ)-এর ন্যায় উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বরেরও উর্ধ্বে ছিলেন। উছূলে কাফীর এক অধ্যায়ের শিরোনাম হচ্ছে-

এ অধ্যায়ের প্রথম রেওয়ায়েত হল, ইমাম জাফর ছাদেক তার বিশেষ অন্তরঙ্গ সহচরদের এক মজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে হযরত মূসা ও খিযিরের চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখার কথা ব্যক্ত করেন এবং বলেন, মূসা ও খিযিরের অতীতের জ্ঞান ছিল কিন্তু আমাদের ইমামগণের কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যতের জ্ঞানও ছিল।  

 

(দশ) ইমামগণের জন্যে কুরআন-হাদীছ ছাড়াও জ্ঞানের অন্যান্য অত্যাশ্চর্য সূত্র রয়েছেঃ

উছূলে কাফীর নামক অধ্যায়ে বর্ণিত সুদীর্ঘ প্রথম রেওয়ায়েতটির সার সরসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ

আবূ বছীর বর্ণনা করেন-আমি একদিন ইমাম জাফর ছঅদেকের খেদমতে হাজির হয়ে আরয করলামঃ আমি একটি বিশেষ কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। এখানে ভিন্ন মতাবলম্বী কেউ নেই তো?ইমাম সাহেব এ গৃহ ও অন্য গৃহের মাঝখানে ঝুলানো একটি পর্দা তুলে ভিতরে দেধে বললেন, এখন এখানে কেউ নেই। যা মনে চায় জিজ্ঞেস করতে পার। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম (প্রশ্নটি হযরত আলী মুর্তযা ও ইমামগণের ইলম সম্পর্কে ছিল।)ইমাম জাফর ছাদেক এ প্রশ্নের বিস্তারিত জওয়াব দিলেন। তার শেষাংশ এইঃ

 

অর্থাৎ, আমাদের কাছে আল-জাফর রয়েছে। মানুষ জানে না আল-জাফর কি?আমি আরয করলামঃ আমাকে বলুন আল-জাফর কি? ইমাম বললেন, এটা চামড়ার একটা থলে। এতে সকল নবী ও ওছীর ইলম রয়েছে। বনী ইসরাঈলের মধ্যে যত আলেম পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ইলমও এতে রয়েছে।(ফলে এটা সকল অতীত নবী, ওছী ও ইসরাঈলী আলেমগণের ইলমের ভান্ডার । তারপর বললেন,

অর্থাৎ, আমাদের কাছে মাসহাফে ফাতেমা রয়েছে। মানুষ জানে না মাসহাফে ফাতেমা কি?ইমাম বললেনঃ এটা তোমাদের এই কুরআনের চেয়ে তিনগুন বড়। আল্লাহর কসম, এতে তোমাদের কুরআনের একটি অক্ষরও নেই।

কুরআন ও হাদীছ ছাড়াও ইমামগণের নিকট জ্ঞানের অন্যান্য অত্যাশ্চর্য সূত্র রয়েছে বলে শীআদের যে, দাবী এ পর্যায়ে তারা এও বলেন যে, পরবর্তী পয়গম্বরগণের প্রতি অবতীর্ণ সকল গ্রন্থ-তাওরাত, ইন্জিল,যবূর, ইত্যাদি ইমামগণের কাছে থাকে এবং তারা এগুলো মূল ভাষায় পাঠ করেন।

 

উছূলে কাফীর একটি শিরোনাম হচ্ছে-

এ অধ্যায়ে এ বিষয়বস্তুর রেওয়ায়েত এবং ইমাম জাফর ছাদেক ও তার পুত্র মূসা কাযেমের এ সম্পর্কিত ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। এর পূর্ববর্তী অধ্যায়েও এ বিষয়বস্তুর রেওয়ায়েত রয়েছে। উদাহরণত স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, এক রেওয়ায়েতে আছে-ইমাম জাফর ছাদেক বলেন,

অর্থাৎ, আমাদের কাছে তাওরাত, ইন্জীল ও যবূরের ইলম আছে এবং আলওয়াহে যা ছিল, তার সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে। অন্য এক অধ্যায়ে জাফর জাদেকেরই এই উক্তি বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমাদের কাছে আল-জাফরুল আবইয়াম আছে। এটা কি, প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন,

অর্থাৎ,মূসার আলওয়াহ বা ফলকগুলো আমাদের নিকট রয়েছে।

 

(এগার) ইমামগণের এমন জ্ঞান আছে, যা ফেরেশতা ও নবীগণেরও নেইঃ

উছূলে কাফীতে আছে-

অর্থাৎ, ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলার দু প্রকার ইলম আছে। এক প্রকার এলম সম্পর্কে তিনি ফেরেশতা, নবী ও রসূলগণকে অবহিত করেছেন।অতএব এ সম্পর্কে আমরাও অবহিত হয়েছি। দ্বিতীয় প্রকার এলম তিনি নিজের জন্য নির্দিষ্ট রেখেছেন। (অর্থাৎ, নবী, রসূল ও ফেরেশতাগণকেও এ সম্পর্কে অবহিত করেননি।) আল্লাহ যখন এই বিশেষ ইলমের কোন কিছু শুরু করেন, তখন আমাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং আমাদের পূর্ববতী ইমামগণের সামনেও পেশ করেন। 

 

(বার) প্রত্যেক জুমুআর রাত্রিতে ইমামগণের মেরাজ হয়, তারা আরশ পর্যন্ত পৌঁছেনঃ

প্রত্যেক জুমুআর রাত্রিতে ইমামগণের মেরাজ হয়, তারা আরশ পর্যন্ত পৌছেন এবং সেখানে তারা অসংখ্য নতুন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা প্রাপ্ত হন। উছূলে কাফীতে ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,

অর্থাৎ, আমাদের জন্যে জুমুআর রাত্রিগুলোতে এক মহান শান হয়ে থাকে। ওফাতপ্রাপ্ত পয়গম্বরগণের রূহ, ওফাতপ্রাপ্ত ওছীগণের রূহ এবং তোমাদের সামনে বিদ্যমান জীবিত ওছীর রূহকে অনুমতি দেয়া হয়। তাদেরকে আকাশে তুলে নেয়া হয়। এমনকি, তারা সকলেই খোদার আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যান। সেখানে পৌঁছে তাঁরা আরশকে সাতবার তাওয়াফ করেন। অতঃপর আরশের প্রত্যেক পায়ার কাছে দুরাকআত নামায পড়েন। এরপর তাদের প্রত্যেক রূহকে সেই দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়, যেখানে পূর্বে ছিল। তাঁরা আনন্দে ভরপুর অবস্থায় সকাল করেন এবং তোমাদের মধ্যকার ওছীর এমন অবস্থা হয় যে, তার ইলম বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

 

(তের) ইমামগণের প্রতি প্রতিবছরের শবে কদরে আল্লাহর পক্ষ থেকে 

এক কিতাব নাযিল হয়, যা ফেরেশতা ও রূহ নিয়ে আসেনঃ

উছূলে কাফীতে ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত-

অর্থাৎ, আল্লাহ যা ইচ্ছা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তারই নিকট আছে কিতাবের মূল। (সূরাঃ ১৩-রাদঃ৩৯) 

এর তাফসীর ও ব্যাখ্যা প্রসঙ্গ বলেন যে,

অর্থাৎ, কিতাবের সেই বিষয় মিটানো হয়, যা পূর্বে বিদ্যমান ছিল এবং সেই বস্তুই প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যা পূর্বে ছিল না।

এ কথার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা কাযভীনী লিখেনঃ

 

অর্থাৎ, প্রতি বছরের জন্যে একটি আলাদা কিতাব থাকে। এর অর্থ সেই কিতাব যাতে পরবর্তী বছর পর্যন্ত সমসাময়িক ইমামের প্রয়োজনীয় বিধানাবলীর তাফসীর থাকে। এ কিতাব নিয়ে ফেরেশতারা এবং আররূহ শবে কদরে সমসাময়িক ইমামের প্রতি অবতীর্ণ হয়। (২২৯ পৃঃ) প্রকাশ থাকে যে, শীআদের মতে, আররূহ অর্থ জিবরাঈল নন, বরং এটি এমন একটি মাখলূক যে জিবরাঈল ও সকল ফেরেশতা অপেক্ষা মহান। (ব্যাখ্যাগ্রন্থ আছ-ছাফীতে একথা পরিষ্কার লিখা আছে।)

উছূলে কাফীতেই ইমাম বাকের থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে আছে তিনি বলেনঃ

অর্থাৎ, আল্লাহর পক্ষ থেকে একথা স্থিরিকৃত যে, প্রতি বছর এক রাত্রে পরবর্তী বছরের এ রাত্রি পর্যন্ত সময়ের সকল ব্যাপারে ব্যাখ্যা ও তাফসীর নাযিল করা হবে।

 

(চৌদ্দ) ইমামগণ তাদের মৃত্যুর সময়ও জানেন এবং তাদের মুত্যু তাদের ইচ্ছাধীন থাকে ঃ

উছূলে কাফীতে আছে-

অর্থাৎ, ইমাম বাকের থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা (কারবলায়) হুসাইন (আঃ)- এর জন্য আকাশ থেকে সাহায্য (ফেরেশতাদের সৈন্যবাহিনী) প্রেরণ করেছিলেন, যা আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে এসে পড়েছিল। এরপর আল্লাহ তাআলা হুসাইন (আঃ) কে ক্ষমতা দিলেন যে, তিনি খোদার সাহায্য (আসমানী ফওজ) কবূল করবেন এবং একে কাজে লাগাবেন, অথবা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত (অর্থাৎ,শাহাদাত) কে পছন্দ করলেন।

 

(পনের) ইমামগণের সামনেও মানুষের দিবারাত্রির আমল পেশ হয়ঃ

উছূলে কাফীতে আছে-

ইমাম রেযা (আঃ)-এর কাছে তার এক বিশেষ লোক আব্দুল্লাহ ইবনে আবান যাইয়াত আবেদন করলেন,

অর্থাৎ, আমার জন্য এবং আমার পরিবার-পরিজনের জন্য দুআ করুন। তিনি বললেন, আমি দুআ করি না। আল্লাহর কসম প্রত্যেক দিনে ও রাত্রে তোমাদের আমলসমূহ আমার সামনে পেশ করা হয় (অর্থাৎ, প্রত্যেক দিন যখন আমার সামনে তোমাদের আমল পেশ হয়, তখন আমি দুআ করি)।

 

এরপর রেওয়ায়েতে আছে যে, আবেদনকারী আব্দুল্লাহ ইবনে আবান একে অসাধারণ ব্যাপার মনে করলে ইমাম রেযা বললেন, তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পাঠ কর না?

অর্থাৎ, তোমাদের আমল আল্লাহ দেখবেন এবং তাঁর রাসূল মুমিনগণ দেখবেন। (সূরাঃ৯-তাওবাঃ১৫)

এ আয়াতে মুমিন বলে খোদার কসম আলী ইবনে আবী তালেবকে বোঝানো হয়েছে।

 

(ষোল) ইমামগণ কিয়ামতের দিন সমসাময়িক লোকদের জন্য সাক্ষ্য দিবেনঃ

উছূলে কাফীতে আছে- ইমাম জাফর ছাদেককে নিম্নোক্ত আয়াত সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়-

অর্থাৎ, তখন কি অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষ্যদাতা উপস্থিত করব এবং হে পয়গম্বর, তোমাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষ্যদাতা রূপে উপস্থিত করব ? (সূরাঃ৪- নিসাঃ৪১) জওয়াবে ইমাম জাফর ছাদেক বললেন,

অর্থাৎ, এ আয়াতটি (অন্যান্য উম্মত সম্পর্কে নয়) বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মাদিয়া সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। প্রতি যুগে তাদের মধ্যে আমাদের মধ্য থেকে একজন ইমাম হবেন। তিনি সমসাময়িক লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবেন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবেন।

এ অধ্যায়ের শেষ রেওয়াতের আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) থেকেও উপরোক্ত বিষয়ে বর্ণনা এসেছে।

 

(সতের) ইমামগণের আনুগত্য করা ফরযঃ

উছূলে কাফী গ্রন্থের এক বর্ণনায় আলী, হাসা, হুসাইন, জয়নুল আবেদীন ও ইমাম বাকের প্রমুখ সকল ইমাম এবং সকলে আনুগত্য আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন-এ মর্মে রেওয়ায়েত পেশ করা হয়েছে। তার ইবাদত নিম্নরূপঃ

ইমাম জাফর ছাদেকের পিতা ইমাম বাকের থেকেও বর্ণিত আছে যে, তিনি (ইমাম বাকের) ইমামগণের আনুগত্য ফরয হওয়ার কথা বর্ণনা করার পর বলেন,

অর্থাৎ, এটাই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণের ধর্ম। 

ইমামগণের আনুগত্য রসূলগণের আনুগত্যের মতই ফরয- এ মর্মে উছূলে কাফীতে বলা হয়েছে,

অর্থাৎ, রসূল ও ওসীগনের আনুগত্যকে সমপর্যায়ের করে নাও। 

ইমামের আনুগত্য করা সকলের উপর ফরয- এ ধারনায় শীআগণ এতখানি বাড়াবাড়ি করেছেন যে, তারা বলেছেন স্বয়ং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম মেহদীর (অন্তর্হিত ইেমামের) বাইআত করবেন। 

আল্লামা বাকের মজলিসী তার গ্রন্থে ইমাম বাকের থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, তিনি (ইমাম বাকের) বলেন,

অর্থাৎ, যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর পরিবারের কায়েম (অর্থাৎ, মেহদী) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন খোদা ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করবেন।সর্বপ্রথম তার হাতে বাইআতকারী হবেন মুহাম্মাদ এবং তার পরে দ্বিতীয় নম্বরে আলী তার হাতে বাইআত করবেন।

 

(আঠার) ইমামগণের ইমামত, নবুওয়াত ও রেসালত স্বীকার করা এবং তাঁদের প্রতি ঈমান-বিশ্বাস স্থাপন করা নাজাতের জন্য শর্তঃ

উছূলে কাফীতে বর্ণিত আছে-

অর্থাৎ, ইমাম বাকের অথবা ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কোন বান্দা মুমিন হতে পারে না যে পর্যন্ত সে আল্লাহ তাঁর রসূল এবং সকল ইমাম বিশেষতঃ সমসাময়িক ইমামের মারেফত অর্জন না করে।

উক্ত গ্রন্থে সনদ সহকারে আরও বর্ণিত আছে, যার সারকথা হল আলী, হাসান, হুসাইন, বাকের প্রমুখ উমামকে না জানা আল্লাহ ও রসূলকে না জানার মত এবং তাদেরকে না মানা আল্লাহ ও রসূলকে না মানার মত। বর্ণনাটি নিম্নরূপঃ

 

(উনিশ) ইমামত, ইমামগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তা প্রচারের আদেশ সকল পয়গম্বর ও সকলৈ ঐশী গ্রন্থের মাধ্যমে এসেছেঃ

উছূলে কাফী গ্রন্থে ইমাম জাফর ছাদেক থেকে বর্ণিত আছে-

অর্থাৎ, তিনি বলেন, আমাদের বেলায়াত (অর্থাৎ,মানুষের উপর আমাদের শাসন কর্তৃত্ব)

হুবহু আল্লাহ তাআলার বেলায়াত ও শাসন কর্তৃত্ব । আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নবীই প্রেরিত হয়েছেন, তিনি এ আদেশ নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন। 

ইমাম জাফল ছাদেকের পুত্র ইমাম আবুল হাসান মূসা কাযেম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

 

অর্থাৎ, আলী (আঃ)- এর বেলায়াত (অর্থাৎ, ইমামত ও শাসন কর্তৃত্ব) পয়গম্বরগণের সকল সহীফায় লিখিত আছে। আল্লাহ তাআলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবী হওয়া এবং আলী (রাঃ)- এর ভারপ্রাপ্ত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আদেশ আনেননি এবং তা প্রচার করেননি।

উছূলে কাফীতে আবূ খালেদ কাবূলী থেকে বর্ণিত আছে-

অর্থাৎ, আমি ইমাম বাকেরকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম- তোমরা বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলগণের প্রতি এবং আমার অবতীর্ণ নূরের প্রতি। ইমাম বাকের বললেন, হে আবূ খালেদ আল্লাহর কছম, এখানে নূর অর্থ ইমামগণ।

 

তাদের বক্তব্য হল- এখানে বোঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ ও রসূলগণের সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ যে নূরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আদেশ কুরআনে দেয়া হয়েছে, তার অর্থ ইমামগণ। এটা সমগ্র উম্মতের সর্বসম্মত মতের বিরোধীই নয় বরং আরবী ভাষায় সামান্যও ব্যুৎত্তি রাখে-এমন প্রত্যেক ব্যক্তির মতেও নূর অর্থ কুরআন পাক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হেদায়েতের নূর।

 

(বিশ) ইমামগণ দুনিয়া ও আখেরাতের মালিক এবং তাঁরা যাকে ইচ্ছা দেন ও ক্ষমা করেনঃ

উছূলে কাফীতে আছে- আবূ বছীর বলেন, আমার এক প্রশ্নের জওয়াবে ইমাম জাফর ছাদেক বললেন,

অর্থাৎ, তুমি কি জান না যে, দুনিয়া ও আখেরাত সকলই ইমামের মালিকানাধীন?তিনি যাকে ইচ্ছা দেন এবং দান করেন।

শীআ মতশীআ মতবাদ সৃষ্টির সূচনা

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color