নবীজী আবু আইউব আনসারীর ঘরে - In the house of Nabiji Abu Ayub Ansari
06:23:59 12/10/2023
নবীজী আবু আইউব আনসারীর ঘরে : রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতঃপর মদীনার পথে যাত্রা করলেন। মানুষ দলে দলে পথে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে লাগল। নবীজীর সমীপে তাদের ঘরে অবস্থানের আবেদন জানাতে লাগল। তারা বলতে লাগল, আমাদের কাছে লোক-লশকর, আসবাব আর হিফাযতের মধ্যে অবস্থান করুন। কেউ কেউ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উষ্ট্রীর লাগাম ধরছিল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলছিলেন, তোমরা তার পথ ছেড়ে দাও। কারণ সে নির্দেশিত। পথে পথে এমন অনেকবারই হয়েছিল ।
অতঃপর যখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু নাজ্জারের মহল্লা অতিক্রম করছিলেন তখন বনু নাজ্জারের কতিপয় বালিকা দফ বাজিয়ে বাজিয়ে গাইছিল:
نحن جوار من بني النجار يا حبذا محمد من جار
অর্থাৎ আমরা বনু নাজ্জারের মেয়ে! আমরা কতটা সৌভাগ্যবান- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতিবেশী
অতঃপর যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও সামনে এগিয়ে বনু মালিক বিন নাজ্জারের ঘরের কাছে এসে পৌঁছলেন, তখন তাঁর উষ্ট্রী সেই জায়গায় বসে গেল, যেই জায়গায় আজ মসজিদে নববীর দরজা অবস্থিত। এই জায়গাটি তখন বনু নাজ্জারের দুইজন ইয়াতীম বালকের ছিল। তারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মায়ের দিক দিয়ে তাঁর আত্মীয় ছিলেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্ভী থেকে অবতরণ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে খাযরাজের শাখা বনু নাজ্জারের আবু আইউব খালিদ ইবনে যায়দ রা. দৌড়ে এসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আসবাবপত্র হাতে নিয়ে নিজের ঘরে রেখে এলেন।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু আইউবের ঘরের মেহমান হলেন। তিনি খুব ভালো করে ও উত্তমভাবে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মেহমানদারী করলেন। আবু আইউবের ঘরটি ছিল দ্বিতল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবস্থানের জন্য নীচতলা বেছে নিলেন। কিন্তু আবু আইউব রা. এর পক্ষে প্রিয় নবীজীকে নীচে রেখে দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করা কঠিন ছিল। তাই তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আবেদন করলেন- যেন তিনি ওপরের তলায় থাকেন, আর আবু আইউব এবং তার স্ত্রী নীচের তলায় থাকবেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আবু আইউব! আমার কাছে সবসময় লোক আসা যাওয়া করবে । আর তাই নীচ তলায় থাকাই আমার জন্য ভালো ও সুন্দর হবে।
সাহাবী আবু আইউব রা. দুনিয়ার ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ ছিলেন না। কিন্তু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেয়ে তার মনে হচ্ছিল- তিনিই বুঝি গোটা জগতের সবচেয়ে বড় ধনী। সত্যিই তো- এই ধন পৃথিবীর সবার ঘরে কি শোভা পায়? জগতে তো কত বড় বড় ধনী তখনো বিদ্যমান ছিল। আয়েশী যিন্দিগির কত বিলাসী মানুষ তখনো পৃথিবীর বুকে অসংখ্য ছিল। কিন্তু কারও ঘরেই তো সেই দূর আসমানের চাঁদটি নেমে আসেনি। অথচ তাঁর দারিদ্য-সংকুল গরিবানা যিন্দিগির সেই কুড়েঘরেই বুঝি আজ আকাশের চাঁদখানি নেমে এলো। আৰু আইউব আনসারী রা. এর গোটা দুনিয়া জয় করে ফেলতে মন চাচ্ছিল। আর সে কারণে তিনি নিজেকে প্রিয় নবীজীর খিমদতে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। নিজে যাই খান, নিজে যাই পরেন, নিজে যেভাবেই থাকেন; কিন্তু সর্বদা লক্ষ রাখতেন প্রিয় নবীজীর কোনো কষ্ট হয় কি না।
কোথাও থেকে তিনি আবার না জানি কোনো আঘাত পান কি না। আবু আইউব আনসারী রা. এর নিজের মুখে শুনুন- আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য খাবার তৈরি করে পাঠিয়ে দিতাম। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খেয়ে আমাদের কাছে সেগুলো ফেরত পাঠাতেন, তখন আমরা তাঁর রেখে দেওয়া খাবার খেয়ে বরকত নিতাম। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থাকতেন আমাদের ঘরের নীচতলায় আর আমরা থাকতাম ওপরের তলায়। একদিন হঠাৎ আমাদের একটি পানির পাত্র ভেঙে গেল । তখন আমরা একটি মোটা কাপড়ের টুকরা দিয়ে পানিটুকু মুছে ফেলি যাতে করে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর এক ফোঁটা পানিও পড়তে না পারে। সে সময় সেই মোটা কাপড়টি ব্যতীত কনকনে শীতের রাতে আমাদের গায়ে জড়ানোর মতো আর কিছু ছিল না।
মসজিদে কুবা ও মদীনার সর্বপ্রথম জুমআ
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবায় চারদিন অবস্থান করলেন। সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। অতঃপর জুমআর দিন তিনি কুবা থেকে বের হন। পথিমধ্যেই বনু সালিম বিন আউফের মহল্লায় জুমআর নামাযের সময় হয়ে যায়। তিনি তখন সেই মহল্লার মসজিদে জুমআর নামায আদায় করেন । এটাই ছিল মদীনাতে তাঁর সর্বপ্রথম জুমআ ।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন