রাসূলের বক্তৃতা কেমন ছিল? - Lecture of Prophet Muhammad
15:15:15 12/09/2023
রাসূলের বক্তৃতা কেমন ছিল?
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বক্তা জনাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বক্তৃতা সর্ব দিক দিয়ে অনন্য। বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠ বক্তা হলেন নবী (আ.) গণ । মানবতাকে সত্যের দিকে আহবান, সঠিক পথ প্রদর্শন ও মহান আল্লাহর হিদায়াত মোতাবিক আদর্শ সমাজ কায়েমের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন তাঁরা। আর একাজটি আঞ্জাম দিয়েছিলেন বুঝানোর মাধ্যমে। কারণ, বক্তৃতার মাধ্যমেই অতি অল্প সময়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়া এবং তাদেরকে সহজে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়। তাই তাদেরকে সারা জীবন বক্তৃতা করতে হয়েছে। তাদের বক্তৃতা ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাশীল ও প্রভাবশালী।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর বক্তৃতা ছিল সকল দিক থেকেই হৃদয়গ্রাহী, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাঁর বক্তৃতা ও ভাষা ছিল সহজ ও সাবলীল। বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য সুস্পষ্ট হতো। একটি শব্দ যথার্থভাবে উচ্চারণ করার পর আরেকটি শব্দ বলতেন। যেন শীতের ভোরে গাছের পাতা থেকে একটির পর একটি স্বচ্ছ শিশির ফোটা ঝরে পড়ছে। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বক্তব্য এতই স্পষ্ট হতো যে, কেউ ইচ্ছা করলে তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ গুণে রাখতে পারতো। প্রিয়নবী (সা.) তাঁর কথা সবচেয়ে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে উচ্চারণ করতেন। তিনি ইরশাদ
করেছেন-
أَنَا أَفْصَحُ الْعَرَبِ بَيْدَا أَنِّي مِنْ قُرَيْشٍ
"আমি আরবের সর্বপেক্ষা স্পষ্টভাষী। আরবী ভাষায় সকল মাধুর্য দান করে আমাকে পাঠানো হয়েছে।'
নবী কারীম (সা.) এর বক্তব্যের শব্দ ও বাক্যগুলো হতো ব্যাপক অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর বক্তৃতা শুনে জ্ঞানের দরজা খুলে যেত। রাসূল (সা.) বলতেন, pi 1 আমাকে ব্যাপক অর্থবহ কথা বলার যোগ্যতা
দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বক্তৃতা ছিল খুবই আকর্ষণীয়, মর্মস্পর্শী ও প্রভাব বিস্তারকারী। এরই কারণে বিশ্বের সবচেয়ে অধঃপতিত জাতি হয়েছিল শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত, ভদ্র ও সভ্য। রাসূলে আরাবী (সা.) -এর বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দ্বিতীয়বার আবার কোনটা তৃতীয়বারও উচ্চারণ করতেন। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে-
إِذَا تَكَرَّرَ الْكَلَامُ فِي السَّمْعِ تَقَرَّرَ فِي الْقَلْبِ .
যখন কথা বারবার বলা হয়, তখন তা হৃদয়ে গেঁথে যায়। যে কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি কখনও দু'বার কিংবা তিনবার উচ্চারণ করতেন। রাসূল (সা.) এর বক্তৃতার মাঝে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন এবং তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় দূর করার জন্য পরিষ্কার ভাষায় জবাব দিতেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কখনও শ্রোতাদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টির জন্য কোন জরুরী কথা তিনবার বলতেন। ঐ ব্যক্তির মুখমণ্ডল ধূলি মলিন হোক ঐ ব্যক্তির মুখে ছাই পড়ুক।
এতে শ্রোতারা দারুন কৌতূহল বোধ করলো এবং বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল তখন জবাবে তিনি বললেন! 'যে ব্যক্তি নিজের পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে যেতে পারল না।' অনেক সময় সতর্ক ভঙ্গিতে বক্তব্য রাখতেন, যেন শত্রু বাহিনী এগিয়ে আসছে তখন বিষয়গুলো সাহাবায়ে কিরামের (রা.) সামনে পেশ করতেন। তিনি ঐকান্তিকতা ও কল্যাণকামিতার সাথে কথা বলতেন। দু'তিনটি দীর্ঘ বক্তৃতা ছাড়া রাসূল (সা.) এর জীবনের সবগুলো বক্তৃতা ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও স্বল্প সময়ের।
তিনি মসজিদে ভাষণ দেওয়ার সময় তাঁর হাতে একটি ছড়ি রাখতেন, তাঁর সমস্ত বক্তৃতাই ছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যানুসারী। তাঁর প্রতিটি কথায় থাকত হৃদয় নিংড়ানো মহব্বত। তিনি বক্তৃতায় কখনোও কাউকে গালি দিতেন না, কাউকে উপহাস করতেন না। হৃদয়গ্রাহী শালীন সুভাষণই ছিল তার বৈশিষ্ট্য । যুগ যুগ ধরে তাঁর বক্তৃতা আমাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করবে এমন অনন্য ছিল তাঁর ভাষণ ।