মদিনার পরিবেশ ও বৈশিষ্ট্য - Medina environment
03:34:13 12/11/2023
মদিনার পরিবেশ ও বৈশিষ্ট্য : মদীনাকে আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বশেষ নবীর হিজরতের পুণ্যভূমি এবং তাঁর দাওয়াতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কেন মনোনীত করেছিলেন? এই প্রশ্নের সর্বপ্রধান এবং সর্বোত্তম উত্তর তো এটাই যে, আল্লাহ তাআলাই এই ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন। বাদবাকি বাহ্যত আমরা আরও অনেক কারণ খুঁজে বের করতে পারি। মদীনা ছিল তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম সুরক্ষিত শহর। কেননা প্রাকৃতিকভাবেই সে ছিল ভারি সুরক্ষিত। জাযীরার আর কোনো শহরের এই দিক থেকে মদীনার সঙ্গে তুলনা ছিল না। মদীনা ছিল লাভাভূমির মাঝে বিস্তৃত একটি মাহফুয নগরী।
এর পশ্চিম প্রান্তে বিস্তৃত ছিল পাষাণসংকুল পাহাড়ী লাভাভূমি- যাকে বলা হতো 'হাররাতুল ওবরা আর তার পূর্ব প্রান্তেও বিস্তৃত ছিল লাভাভূমি- যার নাম ছিল 'হাররাতু ওয়াকিম'। আর মদীনার উত্তর দিকটিই ছিল একমাত্র উন্মুক্ত দিক। এই দিকেই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পঞ্চম বর্ষে গাযওয়ায়ে আহযাবের প্রাক্কালে পরিখা খনন করেছিলেন। আর মদীনার অন্যান্য দিক ঘন খেজুরের বাগান ও অন্যান্য ক্ষেত- খামারে পূর্ণ ছিল। সেই সকল দিক থেকে মদীনার ওপর বড় কোনো ফৌজি আক্রমণের আশঙ্কা ছিল না। কারণ সেই ঘন-সংকীর্ণ পথে ফৌজের বিন্যাস ভেঙে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া ছাড়া একত্রে সামনে বাড়া সম্ভব ছিল না।
অপরদিকে তাকে বলা যেত সুরক্ষিত এক সামরিক দুর্গ। কেননা এই পথে কোনো সামরিক বাহিনী প্রবেশ করতে না পারলেও মদীনার ভেতরে থেকে তাদেরকে প্রতিহত করা ছিল সহজ ব্যাপার। ইবনে ইসহাক বলেন, মদীনার একটি দিক ছিল উন্মুক্ত। আর অন্যান্য দিক ছিল ঘর-বাড়ি ও খেজুর বাগানে পূরিপূর্ণ। কোনো দুশমনের পক্ষে সেগুলো অতিক্রম করা সহজ কাজ ছিল না।
আর এই কারণেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের আগে যখন সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে কথা বলছিলেন- তখন হিজরতের জন্য মদীনা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার এই হিকমতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন। এভাবে: আমি তোমাদের হিজরতের ভূখণ্ড দেখেছি; সেটা দুই পাষাণসংকুল লাভাভূমির মাঝখানে খর্জুর বৃক্ষে ভরা একটি জনপদ। অতঃপর সাহাবায়ে • কিরাম মদীনার দিকে হিজরত করতে শুরু করেন।
মদীনার আউস ও খাযরাজ কবীলার লোকেরা ছিলেন প্রচণ্ড আত্মগরিমা, বীরত্ব, শক্তি আর সামর্থ্যের অধিকারী মানুষ। তারা স্বাধীনতাকে ভালোবাসতেন। তাদের ইতিহাসে কোনো দিন তারা অন্য কারও কাছে নতি স্বীকার করেননি। কোনো কবীলা কিংবা রাজ্যকে তারা কোনোদিন কর প্রদান করেননি। আর এটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল আউস কবীলার সরদার সা'দ বিন মুআয রা.এর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে উদ্দেশ করে প্রদত্ত বক্তৃতায়: আমরা এবং ঐ সকল কওম আল্লাহর সঙ্গে শরীক করতাম। মূর্তি- পূজায় লিপ্ত ছিলাম। আমরা আল্লাহর ইবাদত করতাম না। তাকে আমরা চিনতাম না। আর তারা কোনোদিনও আমাদের কাছ থেকে মেহমান না হয়ে কিংবা ক্রয় না করে একটি খেজুর খাওয়ারও আশা করত না।
ইবনে খালদূন র. বলেন, আউস ও খাযরাজ মদীনার ইহুদিদের ওপর সর্বদা গালিব ছিল। আর এই ক্ষেত্রে মূল কার্যকারণ ছিল তাদের ইয্যত ও শ্রেষ্ঠত্ব। আর তাদের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রতিবেশী কবীলায়ে মুযার।
অপর এক আরব ঐতিহাসিক ইবনে আবদে রাব্বিহী 'আল ইকদুল ফরীদ' গ্রন্থে বলেন, আনসাররা এসেছে কবীলায়ে আযদ থেকে। আর আউস ও খাযরাজ দু'টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত আনসাররা মূলত হারিসা ইবনে আমর ইবনে আমের এর সন্তান। ব্যক্তিসত্তার দিক দিয়ে তারা সবচেয়ে সম্মানিত। হিম্মতের দিক থেকে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তারা কখনো কোনো রাজাকে কর প্রদান করেননি ।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন