Narrow selection

মিরাজের ঘটনা - The Mirage incident


03:39:09 12/11/2023

মিরাজের ঘটনা : আল্লাহ তাআলা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রাতের বেলা মক্কার মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। অতঃপর সেখান থেকে নিজের একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে গেলেন। পথিমধ্যে তিনি সপ্ত নভোমণ্ডল, পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কিরাম ও মুরসালীন এবং কুদরতে বারী তাআলার মোহ জাগানিয়া অপার্থিব যাবতীয় নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করলেন।

مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى (۱۷) لَقَدْ رَأى من آيات ربه الْكُبْرَى (۱۸)

অর্থাৎ তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি। নিশ্চয় সে তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে। [সূরা নাজম: ১৭-১৮]

বস্তুত এটা ছিল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বিশাল আতিথেয়তা। তার মনের প্রতি সান্ত্বনা আর তায়েফে মুখামুখি হওয়া লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমান আর নিন্দার যথোচিত পুরস্কার।

ভোরবেলা যখন তিনি কুরাইশের কাছে এই ঘটনা খুলে বললেন, তখন তারা এটা অস্বীকার করল। তারা এটাকে অনেক বড় করল এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিথ্যা প্রতিপ্পন করল। এক পর্যায়ে তারা উপহাস করতে লাগল। অপরদিকে আবু বকর রা. বললেন, খোদার কসম! যদি তিনি এমনটি বলে থাকেন তবে তিনি সত্য বলেছেন। এত আশ্চর্যের কী আছে? খোদার কসম! আমি তো বিশ্বাস করি দিন ও রাতের যে কোনো মুহূর্তে তাঁর কাছে সেই সাত আকাশের ওপর থেকে ওহী চলে আসে। আর সেটাই আমি সত্য মনে করি। তবে এতে তো আশ্চর্যের কিছুই নেই। 

ইসরা ও মিরাজের নিগূঢ় অর্থ ও রহস্য

ইসরা ও মিরাজ কিন্তু প্রকৃত অর্থে কেবলমাত্র একটি আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর আসমানী সফর ছিল না- যাতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বড় বড় নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাঁর কাছে নভোমণ্ডল আর ভূমণ্ডলের যাবতীয় ভেদ ও রহস্যের দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ইসরা ও মিরাজ কেবল এর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং এগুলোর থেকে আরও আগে বেড়ে- গায়েবী আসমানী রাজ্যের এই নবুওতী সফরের মাঝে আরও অনেক নিগূঢ় অর্থ ও রহস্যময় ব্যঞ্জনা লুক্কায়িত ছিল। অনেক সূক্ষ্ম বিষয়াদি সেখানে কাজ করছিল।

এমন অনেকগুলো ইঙ্গিত ও ইশারা সেখানে ছিল বিচক্ষণ মানুষের মানবীয় খেয়াল ও ধারণা যার সামনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। কুরআনে কারীমের দু'টি সূরা তথা 'ইসরা' ও 'নজম' এ এই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই সূরা দু'টি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- তিনি দুই কিবলার নবী। তিনি দুই উদয়াচল আর দুই অস্তাচলের ইমাম। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কিরামের উত্তরসূরী এবং পরবর্তী উম্মতের নেতা। তাঁর ব্যক্তিত্ব আর ইসরার মাধ্যমে মক্কা কুদসের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। মসজিদে হারাম মিলিত হয়েছিল মসজিদে আকসার সঙ্গে।

দুনিয়ার সমস্ত আম্বিয়ায়ে কিরাম তাঁর পেছনে নামায আদায় করেছিলেন। বস্তুত এসব কিছুর মধ্যদিয়ে তাঁর নবুওত ও রিসালতের ব্যাপকতা, তাঁর ইমামতির বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি, এবং তার শিক্ষার অমরত্ব ও বিশ্বজনীনতা প্রকাশ পেয়েছিল। যে কোনো যুগে যে কোনো ভূখণ্ডে তার দাওয়াতের সামঞ্জস্যের যোগ্যতা ফুটে উঠেছিল। পাশাপাশি এই সূরা দু'টি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ, তাঁর ইমামত ও নেতৃত্বের বর্ণনা, যেই উম্মতের মাঝে তিনি প্রেরিত হয়েছেন এবং যারা তার ওপর ঈমান এনেছে তাদের বর্ণনা দিয়েছে। পাশাপাশি এই সূরা দু'টিতে সেই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে- ভবিষ্যতে এই উম্মত পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে জগতের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মাঝে কী ভূমিকা পালন করবে।

এভাবে এই ইসরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কার সীমাবদ্ধ ও সংকীর্ণ পরিবেশে তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রম আর তাঁর বিশাল ব্যক্তিত্ব ও চিরস্থায়ী নবুওতের মাঝে বিশাল এক পার্থক্যের সীমারেখা টেনে দিয়েছিল। কারণ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কোনো নির্ধারিত একটি জাতির নেতা হতেন, কোনো একটি অঞ্চল বিশেষের নায়ক হতেন, কোনো একটি সম্প্রদায়ের মুক্তিদাতা হতেন কিংবা কোনো একটি জাতিসত্তার স্বাধীনতার রূপকার হতেন তবে এই ইসরা আর মিরাজের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তবে নভোমণ্ডলের বিশাল রাজ্যে তাকে নিয়ে সফর করার কোনো জরুরত ছিল না।

প্রয়োজন ছিল না তাঁর মাধ্যমে পৃথিবী রাজ্যের সঙ্গে আসমানী রাজ্যের একটি নতুন সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তোলার। কারণ তিনি যেই ভূখণ্ডে বাস করতেন, যেই পরিবেশে তিনি সংগ্রাম ও সাধনা করে যাচ্ছিলেন। আর যেই সমাজে তিনি তাঁর আন্দোলন ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন- তা-ই এর জন্য যথেষ্ট ছিল। অন্য কিছু নিয়ে তাঁর চিন্তারও দরকার ছিল না। সাত আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা, আর মসজিদে আকসা তো অনেক দূরের কথা- যমীনের অন্য কোনো ভূখণ্ডেও তাঁর যাওয়ার দরকার ছিল না। অথচ তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই সমস্ত জায়গায়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিশাল ঈসায়ী সাম্রাজ্য আর রোমান জাতির কেন্দ্রবিন্দুতে।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইসরা সংঘটিত হলো। এভাবে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হলো- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো সাধারণ জাতিসত্তা কিংবা সম্প্রদায়ের নেতা নন। তাঁর সংগ্রামের সীমারেখা কেবল একটি নির্ধারিত শহর কিংবা গোষ্ঠীর সংকীর্ণ সীমারেখার মধ্যে শেষ নয়। কারণ যদি এমন হয়- তবে তো তাঁর দ্বারা কেবল সে সমস্ত লোকই সা'আদাত আর সৌভাগ্য হাসিল করবে যারা এই ভূখণ্ডে জন্ম গ্রহণ করবে। এই পরিবেশেই যারা বেড়ে উঠবে।

বরং তিনি সেই সমস্ত নবী ও রাসূলের একজন যারা পৃথিবীর মানুষকে আসমানের রবের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে তাশরীফ নিয়ে এসেছেন। যারা সৃষ্টিকর্তার পয়গাম তাঁর সমগ্র সৃষ্টির প্রতি বয়ে এনেছেন। যার মাধ্যমে গোটা বিশ্বমানবতা সাআদাত আর সৌভাগ্যের চাবিকাঠির মালিক হবে। সেখানে কোনো জাত-পাত, দেশ কিংবা ভূখণ্ড, সাদা- কালো আর ধনী-গরীবের ব্যবধান থাকবে না।

নামায ফরয হলো

মিরাজের রাতে আল্লাহ তাআলা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর উম্মতের ওপর প্রতিদিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করলেন। কিন্তু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বারবার কমানোর অনুরোধ করতে থাকলে এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসেন। তবে যে ঈমান ও সওয়াবের আশা নিয়ে সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, তাকে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব দেওয়া হবে।

● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color