আব্দুল্লাহ ও আমিনার পরিচয় - The identity of Abdullah and Amina
00:55:24 12/14/2023
আব্দুল্লাহ ও আমিনা পরিচয় : কুরাইশ সরদার আব্দুল মুত্তালিবের ছিল দশজন ছেলে। তারা অন্যান্য মানুষের মধ্যে ছিলেন বিশেষ মর্যাদা আর বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর আব্দুল্লাহ ছিলেন সবার ‘মধ্যমণি। আব্দুল মুত্তালিব আব্দুল্লাহকে বিবাহ করিয়েছিলেন। বনু যুহরার সরদার ওহাব তনয়া আমিনার সঙ্গে। আমিনা ছিলেন সেকালের কুরাইশদের মধ্যে বংশ আর মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারী।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতা আমিনার গর্ভে থাকাকালেই পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। আর সে সময় আমিনা এমনসব বিশেষ বিশেষ নিদর্শন দেখতে পান- যার দ্বারা তিনি স্পষ্টভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর ছেলে একদিন পৃথিবীতে বিশাল মর্যাদাময় মানুষে পরিণত হবেন।
শুভ জন্ম ও পবিত্র বংশধারা
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈসায়ী ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হস্তীবাহিনীর বছর রবীউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীতে যেদিন সর্বপ্রথম সূর্যোদয় হয়েছিল, ঠিক সেই দিন থেকে শুরু করে এটাই ছিল পৃথিবী আর ইনসানী দুনিয়ার ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা সাআদত আর সৌভাগ্যের দিন।
নবীজীর বংশধারা ছিল এমন: মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম বিন আবদে মানাফ বিন কুসাই ইবনে কিলাব বিন মুররাহ বিন কা'ব বিন লুয়াই বিন গালিব বিন ফিহির বিন মালিক বিন নযর ইবনে কেনানা বিন খুযাইমা বিন মুদরিকা বিন ইলয়াস বিন মুযর বিন নিযার বিন মা'দ বিন আদনান । আর আদনানের নসবনামা গিয়ে মিলেছিল সাইয়েদুনা ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ. পর্যন্ত
আমিনা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রসব করে দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে সংবাদ পাঠালেন- তাঁর একজন পৌত্র জন্মলাভ করেছেন। আব্দুল মুত্তালিব সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলেন। পৌত্রের দিকে মুহাব্বতের দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলেন। এরপর তাকে নিয়ে কাবার অভ্যন্ত রে দাখিল হলেন। সেখানে তিনি তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখলেন 'মুহাম্মাদ'। এটা ছিল গোটা আরব দুনিয়ায় একটি নতুন ও অপরিচিত নাম। তাই আরবরা এই নাম শুনে আশ্চর্য হয়েছিল।
দুগ্ধপান
মাতা আমিনার পরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আপন চাচা আবু লাহাবের বাঁদী সুওয়াইবিয়া কয়েকদিন স্তন্যদান করেন। অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব প্রাণপ্রিয় পৌত্রের জন্য আরবের অভ্যাস অনুযায়ী একজন ধাত্রী সন্ধান করতে লাগলেন। কারণ, তৎকালীন অভিজাত আরবরা সদ্যপ্রসূত সন্তানকে বেড়ে ওঠার জন্য গ্রামীণ পরিবেশে পাঠিয়ে দিত। কারণ গ্রামীণ পরিবেশের আবহাওয়া ছিল তুলনামূলক সুনির্মল। সেখানের আচার-ব্যবহার ছিল অনেকটা মার্জিত। নগরের ঝামেলা আর ঝঞ্ঝাট থেকে বিমুক্ত। পাশাপাশি গ্রামের আরবি ভাষা ছিল শহর নগরের খিচুরি আরবির চেয়ে অনেক সুন্দর।
অতঃপর বনু সা'দ থেকে মক্কায় একদিন বেশকিছু ধাত্রী এলেন। বাচ্চাদের প্রতিপালন আর ভাষার বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আরবে তাদের বেশ সুনাম ছিল। বনু সাদের হালীমা ‘সাদিয়া’ রা. এর কপালে লেখা ছিল এই সা'দাত। তিনিও তখন অন্যান্যদের সঙ্গে বাচ্চার খোঁজে বেরিয়ে ছিলেন।
সেটা ছিল চরম দুর্ভিক্ষের বছর। তারা ছিলেন চরম দারিদ্য আর অভাবে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যার কাছেই অর্পণ করা হলো সেই নিতে অনাগ্রহ ব্যক্ত করল। কেননা ধাত্রীরা সাধারণত বাচ্চার পিতার কাছ থেকে মোটা অংকের পারিতোষিক প্রত্যাশা করত। তারা বলল, এতো ইয়াতীম! তার মা আর দাদার কাছ থেকে কীসেরই বা আশা করা যায়?
হালীমাও রা. প্রথমবার এমন করলেন। তিনিও প্রথমবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না নিয়ে চলে এলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর প্রতি হালীমার হৃদয় গলে যায়। আল্লাহ তাআলা নবীজীর স্নেহ মমতা হালীমার অন্ত রে ঢেলে দেন। তিনি তাকে গ্রহণ করেন। অতঃপর তাকে নিয়ে সওয়ারীর কাছে চলে যান। প্রথম স্পর্শেই তিনি বরকতের পরশ অনুভব করেন।
কেননা তার সবকিছুর মধ্যে কী যেন একটা বিশাল পরিবর্তন চলে এসেছিল। বকরি-ভেড়া, গরু-ছাগল, দুধ-পানি সবকিছুর মধ্যে বরকত দেখতে পেলেন। সবাই তখন বলত, হালীমা! তুমি একটি মুবারক বাচ্চা নিয়ে এসেছ। এক পর্যায়ে হালীমার সঙ্গীরা তার সঙ্গে হিংসা শুরু করে দিয়েছিল।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এভাবে বরকত আর রহমতের ধারা অব্যাহত রইল। এভাবে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুবারক হায়াতের দু'টি বছর কেটে গেল বনু সাদে। তিনি সেখানে এভাবে বেড়ে উঠতে লাগলেন, যত দ্রুত আর যত ভালোভাবে সাধারণত আর দশটি বাচ্চা বেড়ে ওঠে না।
অতঃপর হালীমা রা. তাকে নিয়ে নবীজীর মায়ের কাছে চলে এলেন। কিন্তু তাকে আরও কিছুদিন হালীমা রা. নিজের কাছে রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। আমিনা রা. অনুমতি দিলে নবীজীকে আবারও নিয়ে আসা হলো বনু সাদে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু সাদে থাকাকালেই একদিন দু'জন ফিরিশতা এসে তাঁর বক্ষ বিদারণ করলেন। অতঃপর সেখান থেকে কলব বের করে সেটা পরিস্কার করলেন। অতঃপর সেটা তার জায়গা মতো রেখে বক্ষ জোড়া লাগিয়ে দিলেন ।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু সাদে তার দুধভাইদের সঙ্গে বকরি চরাতেন। এভাবে তিনি গ্রামীণ জীবনের সারল্য আর নির্মলতার ওপর বেড়ে ওঠেন। বিশুদ্ধ আরবি ভাষা স্বাভাবিকভাবেই তার আয়ত্বে এসে যায়। পরবর্তী সময়ে তিনি সাহাবায়ে কিরাম রা. কে বলতেন- আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আরব। কেননা আমি কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণ করেছি। আর দুধপান করেছি বনু সাদ বিন বকরে।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন