শিশুর ওজন বাড়াতে যেসব খাবার খাওয়াবেন - To increase the baby's weight
06:07:08 12/10/2023
শিশুর ওজন বাড়াতে যেসব খাবার খাওয়াবেন : শিশুর ওজন ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বাবা মায়েরা খুবই শংকিত থাকেন। শিশুর জন্মের সময় ওজন অন্তত আড়াই কেজি হতে হবে। আড়াই কেজির কম ওজন হলে লো বার্থ ওয়েট শিশু বলা হয়ে থাকে। সাধারণত শিশুর ওজন তিন কেজির মত হলেই ভালো। জন্মের পর থেকে এক বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের বৃদ্ধির হার খুব বেশি থাকে। তবে প্রথম তিন মাস ওজন অত্যন্ত দ্রুত হারে বাড়ে। গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ওজন বাড়ে। বাচ্চার পাঁচ মাস বয়সে ওজন হবে জন্মের ওজনের দ্বিগুণ এভাবে এক বছরে তিনগুণ, দু বছরে চারগুণ ও তিন বছরে পাঁচগুণ হবে।
জন্মের প্রথম এক বছর বাচ্চা যে রকম দ্রুত বাড়ে তার পর তুলনামূলকভাবে কম বাড়ে। এই ব্যাপারটা নিয়ে মায়েরা খুবই দুশ্চিন্তা করেন। তারা মনে করেন বাচ্চা কেন আগের মতো বাড়ছে না।
এক বছরের বাচ্চার ওজন ১০ কেজির মত হয়ে থাকে। আর তিন বছরে বাচ্চার ওজন প্রায় ১৫ কেজির মত হবে অন্তত।
বাচ্চার ওজন আগের মত বাড়ছে না। এ কথা ভেবে হতাশ হবেন না। প্রতিমাসে একবার বাচ্চার ওজন নিন এবং সেই ওজন ঠিক আছে কিনা সে ব্যাপারে চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করুন।
বাচ্চার বেশি ওজন বা ওভারওয়েটও কিন্তু ভালো নয়। ওভারওয়েটের প্রধান কারণ ওভার ফিডিং বা প্রয়োজনের তুলনায় জোর করে খাওয়ানো। বেশি ওজন ভবিষ্যতে নানারকম সমস্যা করতে পারে। হৃৎপিণ্ড কিংবা ফুসফুসের অসুখ হতে পারে। আবার থাইরয়েড হরমোন কম হলে শিশুর ওজন বেশি হয়। কিডনির সমস্যায় মুখ, হাত, পা ফুলে গেলেও ওজন বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি হলে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।
ওজন কম বা আন্ডার ওয়েট বাচ্চাদের নিয়েও অনেক সমস্যা। তবে এক্ষেত্রে অন্য কেউ বলল আপনার বাচ্চার ওজন কম কিংবা অন্যের বাচ্চার তুলনায় আপনার বাচ্চাকে রোগা মনে হলেই বিচলিত হবেন না। সঠিকভাবে ওজন নেবার কথা আগেই বলা হয়েছে। আর বাচ্চা আভার ওয়েট কিনা তা নির্ধারণ করবেন অবশ্যই একজন চিকিৎসক।
অপুষ্টি, পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাবারের অভাব, খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা ইত্যাদির কারণে বাচ্চার ওজন ঠিকমত নাও বাড়তে পারে। আবার কয়েকটি অসুখের জন্যও এমন হতে পারে। যেমন- পেটের অসুখ, ক্রনিক ডায়রিয়া, অ্যামবিয়াসিস, জিয়ারডিয়াসিস, কৃমি ইত্যাদি। এছাড়া হার্টের জন্মগত ত্রুটি থাকলেও বাচ্চাদের ওজন বাড়ে না। যক্ষ্মা কিংবা অ্যাজমা হলেও ওজন কম হতে পারে। তবে বাবা মায়েরা ঘাবড়ে যাবার কোনো কারণ নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম খাওয়া ও পেটের গোলমালের জন্য ওজন কম হয়ে থাকে।
এবার আসা যাক শিশুর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে। জন্মের পর থেকে পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শিশু শুধু মায়ের বুকের দুধ খাবে। এমনকি পানি খাবারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু কর্মজীবী মায়েদের বুকের দুধের পাশাপাশি ফরমুলা দুধও দিতে হবে। চার মাসের পর থেকে শিশুকে অন্যান্য খাবারে অভ্যাস করাতে হবে। শিশুরা তরল খাবার খেতে অভ্যস্ত। তাদের ধীরে ধীরে অর্ধ তরল খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। চাল, ডাল ও সবজি সিদ্ধ করে তারপর অর্ধতরলে পরিণত করে শিশুকে চামচে করে খাওয়াতে পারেন। প্রথমেই শিশু খেতে চাইবে না, এমনকি বমি করতে চাইবে। খুব অল্প অল্প করে খাওয়াতে চেষ্টা করতে হবে। এক মাসের মাথায় শিশু এ ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হবে। অনেক শিশু লবণাক্ত খাবার খেতে চায় না। চাল গুড়া করে দুধের সাথে সিদ্ধ করে চিনি মিশিয়েও খাওয়ানো যেতে পারে। নানারকম ফলের রস দেবার অভ্যাসও করতে হবে। এসব কিছুর সাথে কিন্তু শিশু মায়ের দুধও খাবে ।
এক বছর বয়স থেকে দেড় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর এক হাজার ক্যালরি শক্তি প্রয়োজন। প্রতিদিন এমন খাবার দিতে হবে যাতে এক হাজার ক্যালরি শক্তি পেতে পারে। নানারকম শাক সবজি, মাছ, মাংস সব ধরনের খাবার বাচ্চাকে দেবেন। কিন্তু একটা ব্যাপার, বাচ্চারও কিন্তু খাবারের ব্যাপারে পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। বাচ্চা যে খাবার খেতে চায় না তাকে জোর জবরদস্তি করে সেটাই খাওয়াতে হবে এমন কোনো কথা নেই। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বাচ্চাদের বিতৃষ্ণা জন্মালে খুবই সমস্যা হয়।
মনে করুন, সন্ধ্যার সময় আপনার বাচ্চা নিজে থেকেই একটি কলা খেল, তার আধ ঘণ্টা পরে আপনার রুটিন অনুযায়ী তাকে খিচুরি খাওয়াবার কথা। কিন্তু সে না খেতে চাইলে জোর করার কারণ নেই। কেননা কিছুক্ষণ আগেই কলা খাওয়ার কারণে তার খিদে নেই। আবার বাচ্চারা স্বাদ, গন্ধ, বর্ণহীন খাদ্য অনেক সময় খেতে চায় না। বাচ্চাদের রোজকার খাবারেও তাই প্রয়োজন বৈচিত্র্য চেষ্টা করবেন বাচ্চার খাবার সুস্বাদু করে তৈরি করতে।
সবসময় পিছনে পিছনে খাবার নিয়ে ঘুরাঘুরি না করে শিশুর খিদে পেতে দিন। খাওয়া নিয়ে বকাবকি কিংবা মারধর করবেন না। বাচ্চাকে কিছুটা স্বনির্ভর করতে এক বছর বয়সের পর থেকে নিজের হাতে খেতে শিখতে দেবেন। বাচ্চা হয়তো প্রথম দিকে খাবে না বা খাবার নষ্ট করবে। কিন্তু ধৈর্য ধরে বাচ্চাকে খেতে শেখান। প্রথম প্রথম ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললেও তারপর একসময় বাচ্চা ঠিকই খাবে।
বাচ্চার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে খাবার নির্বাচন করুন। দেখবেন বাচ্চা ঠিকই খাচ্ছে। আর বাচ্চার খাবারে নতুনত্ব বা বৈচিত্র্যের কথাটা সবসময় মনে রাখবেন। কেনা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে বাচ্চাকে ঘরে তৈরি খাবার দেবার চেষ্টা করবেন। আশা করি, বাবা মায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় সব শিশু ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবে এবং তাদের ওজনও সঠিক থাকবে।
●হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন