উমর বিন খাত্তাবের ইসলাম - Umorer islam grohon
03:44:40 12/11/2023
উমর বিন খাত্তাবের ইসলাম : আল্লাহ তাআলা উমর বিন খাত্তাব রা. এর মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করেন। ওমর রা. ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ বীরপুরুষ। রাসূলে আকরাম (স.) এর মনের একান্ত তামান্না ছিল উমর যেন ইসলাম গ্রহণ করেন। তাই তিনি আল্লাহর কাছে এর জন্য দুআ করতেন।
তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ছিল এমন:
তাঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ও ফাতিমার স্বামী সাঈদ বিন যায়দ রা. আগ থেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তারা উমর রা. থেকে তাদের ইসলামকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কারণ ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে উমরের বিদ্বেষ খুব ভালো করেই জানা ছিল। আর খাব্বাব বিন আরত রা, ফাতিমাকে কুরআনে কারীম শিক্ষা দিতেন।
একদিন উমর নাঙ্গা তরবারি হাতে নিয়ে রাস্তায় বের হলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাসূলে আকরাম (স.) ও সাহাবায়ে কিরামের একটি দল। তার কাছে সংবাদ এসেছিল- তারা এখন সাফা পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছেন। পথিমধ্যে তার সাক্ষাৎ হলো বনু আদী গোত্রের জনৈক নুআইম বিন আব্দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি ইতোমধ্যেই মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- কোথায় যাচ্ছ উমর? উমর বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদ্দেশে যাচ্ছি। যে কুরাইশের জীবন ঝালাপালা করে দিয়েছে।
তাদের বিচক্ষণতাকে বোকামি আখ্যা দিয়েছে। তাদের ধর্মের নিন্দা করেছে আর তাদের ইলাহদেরকে গালি দিয়েছে। আজ তাকে আমি হত্যা করে ফেলব। নুআইম তাকে বললেন তুমি তো দেখা যায় খুব বেশি পারো। এত পারলে নিজের ঘরটাকে সামলাতে পারো না কেন? উমর পেরেশান হয়ে বললেন, কেন আমার ঘরের কী হয়েছে? নুআইম বললেন, তোমার বোনজামাই ও চাচাতো ভাই সাঈদ বিন যায়দ আর তোমার বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব মুসলমান হয়ে গেছে।
তারা আজ মুহাম্মাদ (স.) এর দীনের অনুসারী। পারলে তাদেরকে ঠেকাও। উমর তখন গতিপথ পাল্টে ঘরের দিকে ছুটলেন। বোন আর ভগ্নিপতির কাছে তখন ছিলেন খাব্বাব বিন আরত রা.। তাদের কাছে সূরা 'তুহা' লিখিত একটি ছোট চিরকুট ছিল। খাব্বাব রা. তাদেরকে সেটা পড়াতেন। উমরের আওয়ায় পাওয়া মাত্রই ভয়ে তারা পড়া বন্ধ করে দিলেন। খাব্বাব রা. ছোট একটি রুমে ঢুকে আত্মগোপন করবেন।
ফাতিমা রা. কুরআনে কারীমের চিরকুটটি উরুর নীচে লুকিয়ে ফেললেন। কিন্তু উমর রা. খাব্বাব রা. এর কণ্ঠস্বর শুনে ফেলেছিলেন। ঘরে ঢুকেই তিনি বললেন, আমি কীসের আওয়ায পেলান। তারা দু'জন বললেন, কই কিছুই তো না! তিনি বললেন, হাঁ। কিছু একটা তো অবশ্যই। আর আমি সংবাদ পেয়েছি তোমরা উভয়েই নাকি মুসলমান হয়ে গেছ?
উমর তখন ভগ্নিপতি সাঈদ বিন যায়দকে আঘাত করতে লাগলেন। তখন ফাতিমা ফিরাতে এলে উমর তাকেও আঘাত করে রক্তাক্ত করে ফেললেন। এই পর্যন্ত তারা উভয়ে উমরের আঘাত সহ্য করলেন। অতঃপর বললেন, । আমরা উভয়ে মুসলমান হয়ে গেছি। এবার তোমার যা মন চায় করতে পারো।
বোনের শরীরে রক্ত দেখে উমর স্বীয় কৃতকর্মের ওপর লজ্জিত হলেন। অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি বোনকে বললেন, তোমাদেরকে আনি যেটা পড়তে শুনেছি সেটা একটু নিয়ে এসো তো।
আমি দেখব- মুহাম্মাদ কী নিয়ে এসেছেন? উমর রা. পড়ালেখা জানতেন। তার কথা শুনে ফাতিমা বললেন, তোমার ওপর আমার ভয় হয়। উমর বললেন, ভয় পেয়ো না। অতঃপর তিনি তার প্রভুর নামে কসম খেলেন। উমরের কথা শুনে ফাতিমার মনে উমরের ইসলাম গ্রহণের তামান্না জেগে উঠল। তিনি তাকে বললেন, ভাইজান! আপনি শিরকের নাপাকের মধ্যে আছেন। অথচ এটা পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত ধরা যায় না।
উমর তখন উঠে গোসল করলেন। ফাতিমা তাকে চিরকুটটি দিলেন। তাতে সূরা ত্বহা লেখা ছিল। উমর যখন সূরা ত্বহার প্রাথমিক আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলেন তখন বলে উঠলেন- বাহ কি সুন্দর আর হৃদয়গ্রাহী বাণী! খাব্বাব রা. উমরের এই কথা শুনে বাইরে বেরিয়ে এলেন। অতঃপর বললেন, উমর! আল্লাহ তাআলা হয়তো আপনার ব্যাপারে রাসূলে আকরাম (স.) এর দুআ কবুল করেছেন। কারণ আমি গতকাল রাসূলে আকরাম (স.) কে দুআ করতে শুনেছি- হে আল্লাহ আপনি আবুল হাকাম ইবনে হিশাম (আবু জাহল) কিংবা উমর ইবনুল খাত্তাবের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করুন।
উমর; হয়তো আল্লাহ তাআলা 'আপনাকে কবুল করেছেন। উমর তখন বললেন, খাব্বাব ! আমাকে মুহাম্মাদ (স.) এর নিকট নিয়ে চলো। আমি ইসলাম গ্রহণ করব। খাব্বাব রা. বললেন, তিনি এখন সাফা পাহাড়ের পাদদেশে একটি ঘরে আছেন। তাঁর সঙ্গে এক তরবারি নিয়ে রাসূলে জামাআত সাহাবায়ে কিরাম আছেন। তখন উমর রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। দরজায় করাঘাত করলেন। সাহাবায়ে কিরাম আওয়ায শুনে শঙ্কিত হলেন।
কারণ তারা দরজার ছিদ্র দিয়ে দেখলেন- নাঙ্গা তরবারি হাতে উমর দাঁড়ানো। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! উমর ইবনুল খাত্তাব এসেছে। হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব রা. বললেন, তাকে আসতে দাও। যদি সে কোনো ভালো নিয়তে আসে তবে তো ভালো। আর যদি তার কোনো কুমতলব থাকে, তবে তার তরবারি দিয়েই তাকে হত্যা করা হবে। তখন তিনি উমরকে ভেতরে আসার অনুমতি দিলেন।
রাসূলে আকরাম (স.) উমরের জন্য উঠে দাড়ালেন। উমর ভেতরে ঢোকা মাত্রই তিনি কামরার অভ্যন্তরে উমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তার জামা ধরে একটু জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, খাত্তাবের বেটা! কেন এসেছ? আমার মনে হয়- আসমান থেকে কোনো কিছু নেমে আসার আগে তুমি শান্ত হবে না। উমর বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর যা কিছু তিনি আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন তার ওপর ঈমান আনার জন্য এসেছি।
রাসূলে আকরাম (স.) তখন তাকবীর দিলেন। তাঁর তাকবীর শুনে ঘরের সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম বুঝে ফেললেন- উমর ইসলাম গ্রহণ করেছেন। রাযিআল্লাহু আনহু।”
উমর রা. এর ইসলাম গ্রহণে মুসলমানগণ মনে মনে দারুণ শক্তি আর সাহস অর্জন করলেন । কারণ ইতঃপূর্বে হামযা রা. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আর এই দু'জনের ইসলাম গ্রহণ ছিল কাফেরদের ওপর দু'টি প্রচণ্ড আঘাত। কারণ উমরের ইসলাম কাফেরদের জন্য যত কঠিন আঘাত ছিল অন্য কারও ইসলাম এত কঠিন আঘাত ছিল না।
উমর রা. ইসলাম গ্রহণ করেই গোটা মক্কায় সবাইকে জানিয়ে দিলেন। কুরাইশদের মাঝে তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল। তারা তার সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হলো। তিনিও তাদের সঙ্গে সমান তালে মারামারি করলেন। এক পর্যায়ে কুরাইশ কাফেররা নিরাশ হয়ে ফিরে গেল।
●হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন