বমির কারণ ও প্রতিকার - Vomiting causes and remedies
00:40:52 12/14/2023
বমির কারণ ও প্রতিকার : বমি শব্দটির সাথে মোটামুটি সবাই পরিচিত। পাকস্থলির বস্তুসমূহ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসাকেই বমি বলে। সাধারণত পেটের মাংশপেশি এবং ডায়াফ্রামের সংকোচনের ফলে এটা ঘটে।
বমির কারণ
১. পরিপাকতন্ত্রের অস্বাভাবিকতা পরিপাকতন্ত্রের যে কোনো স্থানে অস্বাচ্ছন্দ্যতা, প্রদাহ কিংবা গণ্ডগোল দেখা দিলে বমি হয়।
২. লিভার, পিত্তব্যবস্থা এবং অগ্নাশয়ে অস্বাভাবিকতা।
৩. কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থায় অস্বাভাবিকতা যেমন-মস্তিষ্কের চাপ বেড়ে যাওয়া, স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ইনফেকশন বা সংক্রমণ বিষক্রিয়া প্রভৃতি।
৪. কানের অসুবিধা, যেমন-সংক্রমণ।
৫. দৃষ্টিশক্তির অস্বাভাবিকতা।
৬. গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত ক্ষুধা প্রভৃতি।
৭. কিডনির কার্যকারিতা লোপ পাওয়া এবং মূত্র পথে ইনফেকশন হওয়া ।
৮. হৃদরোগ যেমন মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন।
৯. কিছু কিছু ওষুধ যেমন মরফিন, কোডিন, ডিগোক্সিন, বিভিন্ন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ প্রভৃতি।
১০. এলকোহলে।
১১. মানসিক অস্বাভাবিকতা যেমন ভয়, ক্রোধ, দুঃচিন্তা, ক্ষুধাহীনতা প্রভৃতি ।
রোগ নির্ণয়
বমির প্রকৃতি, রং প্রভৃতি দেখে অনেক সময় রোগ নির্ণয় সম্ভব। অর্থাৎ কী কারণে বমি হচ্ছে। তা বমি দেখেই বোঝা যায় ।
১. পাইলোরিক স্টেনোসিস অর্থাৎ পাকস্থলি থেকে অস্ত্রে প্রবেশের দ্বার চিকন হয়ে যাওয়া : এক্ষেত্রে অনায়াসে তীব্র বমি হতে থাকে, বমির সাথে কয়েকদিন আগের খাবার পড়ে, পচা অম্লগন্ধ বের হয়। বমিতে কোনো পিত্তরস থাকে না।
২. পেরিটোনাইটিস অর্থাৎ উদরের আবরক ঝিল্লীর প্রদাহ : বমি পরিমাণে কম হয় কিন্তু অবিরাম হয়। ৩. গ্যাস্ট্রো এনটারাইটিস অর্থাৎ পাকস্থলি অস্ত্রের প্রদাহ : এক্ষেত্রে অবিরাম বমি হয় এবং সেই সাথে ডায়রিয়া হয়।
৪. পেপটিক আলসার অর্থাৎ পাকস্থলি কিংবা অস্ত্রের ক্ষত বা ঘা এক্ষেত্রে কফি বর্ণের
বমি হয়। খাবার খেলে ব্যথা চলে যায়।
৫. ঈসোফেজিয়াল ভ্যারিসেজ : এক্ষেত্রে প্রচুর তাজা রক্ত বের হয়।
৬. ইনটেসটিনাল অবস্ট্রাকশন বা আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা : এক্ষেত্রে মলের গন্ধযুক্ত বমি হয় । ৭. মানসিকজনিত : এক্ষেত্রে বমি হয় কিন্তু শরীরের ওজন হ্রাস হয় না।
৮. এপেনডিক্স-এর তীব্র প্রদাহ (একিউট এপেনডিসাইটিস), পিত্তথলির তীব্র প্রদাহ (একিউট কলিসিস্টাইটিস), একিউট ইনটেসটিনাল অবস্ট্রাকশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে হঠাৎ করে বমি শুরু হয়। পিত্তরস থাকতে পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
১. বমি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মুখে কিছু খেতে দেয়া যাবে না।
২. বমি বন্ধ হলে শুকনো খাবার অল্প পরিমাণে বার বার খেতে দেয়া যেতে পারে। ঠাণ্ডা খাবার দিলে ভালো হয়।
৩. মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক স্তরে প্রভাতকালীন বমি বমি ভাব, এলকোহল ইত্যাদি ক্ষেত্রে হঠাৎ বমি হলে তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কোনো খাদ্য কিংবা এলকোহলের কারণে বমি হলে সেসব পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।
৪. বমি যদি দীর্ঘস্থায়ী এবং মারাত্মক হয় তাহলে তার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে। চিকিৎসা দিতে হবে।
৫. মানসিক কারণে বমি হলে রোগীকে সাইকো থেরাপি দিতে হবে।
৬. বমির কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিলে কিংবা শরীরে লবণের ঘাটতি হলে মুখে খাবার স্যালাইন কিংবা শিরাপথে ডেক্সট্রোজ স্যালাইন (৫%-১০%) দিতে হবে।
ওষুধপত্র
কানের অসুবিধার কারণে বমি হলে রোগীকে এন্টিহিস্টাসিন ওষুধ যেমন ডায়মন হাইড্রিনেট ৫০ মি.গ্রা. মুখে কিংবা ইনজেকশন আকারে মাংসপেশি পথে প্রতি ৪ ঘন্টা অন্তর দেয়া যেতে পারে। ড্রাগের কারণে কিংবা অস্ত্রোপচারের পরে বমি হলে রোগীকে প্রোক্লোরপেরাজিন ৫-১০ মি.গ্রা. মুখে কিংবা পেশিতে দেয়া যেতে পারে।
পেটের পীড়ায় কিংবা ক্যান্সারের ওষুধের কারণে বমি বমি ভাব অথবা বমি হলে মেটোক্লোপ্রামাইড ১০ মি.গ্রা. মুখে কিংবা শিরাপথে ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। মানসিক কারণে বমি হলে ঘুমের ওষুধ দেয়া যেতে পারে।
জটিলতা
বমি হলে সাথে সাথে তার প্রতিকার নেয়া উচিত। অনেক সময় বমি থেকে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন- ১. পানিশূন্যতা, ২. শরীরে লবণের ঘাটতি, ৩. পুষ্টিহীনতা, ৪. ফুসফুসের ক্ষতি, ৫. শ্বাসনালী আটকে যাওয়া ইত্যাদি।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন