চুল ওঠা বন্ধ করার উপায় - Ways to stop hair growth
06:14:25 12/10/2023
চুল ওঠা বন্ধ করার উপায় : মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারী ভাষায় এনথ্রোজেনেটিক অ্যানোপিসিয়া বলা হয়। মেয়েদের মাথার উপরিভাগের চুল এবং দুপাশের চুল পাতলা হয়ে যায়, এক তৃতীয়াংশ নারীদের এ সমস্যা হয়। প্রতিদিন সাধারণত ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়ে। কিন্তু এই চুল আবার গজিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া তখনই সমস্যা যখন দিনে ১২৫টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না। পরিবারে চুল পড়ার সমস্যা থাকলে চুল পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
চুল পড়ে যাওয়াকে দুভাগে ভাগ করা যায়। এনাজেন ইফফ্লুভিয়াম এবং টেলোজেন ইফতিয়াম। কেমোথেরপির জন্য যখন চুল পড়ে তাকে এনাজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায় তাকে টেলোজেন ইফফ্লুডিয়াম বলে।
চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে যাওয়া মানে চুল আর বড় না হওয়া। টেলেজেন ইফফ্লুডিয়ামের অনেক কারণ রয়েছে :
- শারীরিক অসুস্থতা : যে কোনো অপারেশনের পর রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া। মানসিক চাপ : অতি কর্মব্যস্ততা, পরিবারের কারো মৃত্যু ।
- থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা।
- গর্ভাবস্থা, পরিবার পরিকল্পনার জন্য পিল খাওয়া, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ।
- অতিমাত্রায় ভিটামিন এ, উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খাওয়া ।
ডায়েটিং এবং চুল পড়া
আপনারা ডায়েটিং এবং চুল পড়ার সম্পর্ক লক্ষ্য করেছেন। ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েটিং অনেক সময়ই চুল পড়ার কারণ। অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েটিং করা উচিত। নির্দিষ্ট ডায়েটের সাথে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়া প্রয়োজন। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণে চুল পড়ে। সুতরাং ওজন কমানোর লক্ষ্যে ডায়েট করলে তা অবশ্যই চিকিৎসক, ত্বকবিশেষজ্ঞ, নিউট্রিশনিস্ট অথবা ডায়েটিশিয়ানের নির্দেশমতো হতে হবে।
শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ এবং চুল পড়া
শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া এবং মানসিক চাপ চুল পড়ার কারণ। এ সময় নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সকল শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস এবং পুনরায় চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপ খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে ছয়মাসেরও বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা এবং থাইরয়েডের সমস্যায় চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা করা এবং রোগ নির্ণয় করাও প্রয়োজন।
হরমোনের পরিবর্তন এবং চুল পড়া
হরমোনের পরিবর্তনের সাথে নারীদের চুল পড়ার সম্পর্ক রয়েছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে অনেক সময় চুল পড়তে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের তিন মাসের মধ্যে এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা সম্ভব। আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসতেও তিন মাস সময় প্রয়োজন ।
রজঃনিবৃত্তি বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরেও মহিলাদের চুল পড়ে।
চুল পড়া নিয়ে নানা ধারণা
- বেশি শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে।
- টুপি পরে থাকলে বা মাথায় কাপড় দিলে চুল পড়ে। প্রতিদিন ১০০ বার চুলে চিরুনি চালানো প্রয়োজন। চুলে কলপ ব্যবহার করলে চুল পড়ে।
- মাথা ন্যাড়া করলে পরের বার ঘন হয়ে চুল উঠবে। খুশকির জন্য স্থায়ীভাবে চুল পড়তে পারে। মানসিক দুশ্চিন্তা চুলের স্থায়ী ক্ষতি করে।
- অল্প বয়সে চুল পড়ে না।
- জ্ঞানীদের চুল বেশি পড়ে।
চুল পড়া নিয়ে এসব ধারণা রোগীদের কাছে থেকে হরহামেশাই শুনে থাকেন ত্বকবিশেষজ্ঞগণ। অথচ এসব কথা প্রায় অসত্য এবং ভ্রান্ত ধারণা কিংবা আংশিক সত্য। আপনার চুল আসলেই পড়ছে কিনা তা অবশ্যই চিকিৎসকের মাধ্যমে নির্ণয় করা প্রয়োজন। আর চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করাও জরুরি।
চুল পড়ার চিকিৎসা
- চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো হয়, ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ
- যদি নেয়া হয় ।
- চুলের সঠিক যত্ন নিন ও চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করুন ।
- . মিনফ্রিডিল ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী । মানসিক চাপ পরিহার করুন।
- প্রয়োজনে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে পারেন।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, খাদ্যতালিকা তৈরি করতে প্রয়োজনে তিউট্রিশনিস্টেরও পরামর্শ নিন।
ছেলেদের চুল পড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বেশি বয়সে টাক ব্যাপারটা তবু যেন পুরুষের আতঙ্কের কারণ। জুলিয়াস সিজার কিংবা নেপোলিয়ন সবারই এ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তারা চুল লম্বা রেখে তারপর সামনে টেনে আঁচড়াতেন টাক আড়াল করার জন্য।
অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়া
অ্যানড্রোজেন এক ধরনের হরমোন। এ হরমোন পুরুষালি স্বভাবের জন্য দায়ী। আর জেনেটিক অর্থ হচ্ছে বাবা কিংবা মায়ের কাছে থেকে পাওয়া, চুলের ফলিকলে 5 আলফা রিডাকটেজ নামের এনজাইম থাকে। আর চুলের ফলিকলে থাকা অ্যানড্রোজেন যখন 5 আলফা রিডাকটেজের সাথে বিক্রিয়া করে তখন ডাই হাইড্রোটেসটেসটেরন তৈরি করে। হেয়ার ফলিকল ডাই হাইড্রোটেসটেসটেরনের প্রতি সংবেদনশীল। আর তাই তখন চুল পড়ে। অ্যালোপিসিয়া অর্থ চুল পড়ে যাওয়া। পুরুষের চুল পড়ে যাওয়া নারীদের থেকেও বড় সমস্যা। নারীদের পুনরায় চুল গজানোর সম্ভাবনা বেশি।
পুরুষের বয়স, হরমোন এবং জেনেটিক কারণে চুল পড়ে। চুল পড়ার কারণ ও রোধের উপায় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। হেয়ার রিপ্লেসমেন্ট ও নানাধরনের সার্জারিও এখন টাক আড়াল করার জন্য করা হচ্ছে।
চুল পড়ছে এমন সন্দেহ হলে অবশ্যই ত্বকবিশেষজ্ঞ বা ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। চুল পড়ার কারণ ও ধরন নির্ণয়ের পরে তার সুচিকিৎসা হওয়া সম্ভব।
চুল পড়ার অন্যান্য কারণ
অ্যালোপিসিয়া এরিরেটা : সাধারণত অটোইমিউন রোগে এমনটা হয়ে থাকে। মাথার জায়গায় জায়গায় চুল সম্পূর্ণ পড়ে যায়।
অ্যালোপিসিয়া টোটালিস : সম্পূর্ণ মাথার চুল পড়ে যায়। অ্যালোপিসিয়া এরিয়েটার পরবর্তী ধরন এটি ।
অ্যালোপিসিয়া ইউনিভার্সালিস : সমস্ত শরীরের চুল পড়ে যাওয়া।
ট্রাকশন অ্যালোপিসিয়া : অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা চুল খুব বেশি টানাটানির কারণে পড়ে যেতে পারে।
টেলোজেন ইফফুভিয়াম : এটি সাময়িক। শারীরিক ও মানসিক চাপ, ওষুধ, হরমোনজনিত সমস্যা এসব কারণে হয়।
এনাজেন ইফফুডিয়াম : কেমোথেরাপির কারণে হয়।
উপরে উল্লেখিত কারণসমূহে মাত্র ৫ ভাগ পুরুষের চুল পড়ে। বাকি ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়া।
অ্যানড্রোজেনি অ্যালোপিসিয়ার চিকিৎসা
- চুল পড়াকে বড় সমস্যা না মনে করা, টাক মাথাকে মেনে নিতে চেষ্টা করা।
- টাক আড়াল করার জন্য নানারকম পদ্ধতি আছে তার প্রয়োগ করা। চুলের ছাট কাটের ধরন পাল্টে নেয়া।
- মিনক্রিডিল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মাত্রায়।
- হেয়ার রিপ্লেসমেন্ট ।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন