শিশুর হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয় কি? - What can be done to prevent child asthma?
05:52:39 12/10/2023
শিশুর হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয় কি? চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় হাঁপানিকে 'অ্যাজমা' বলে। মানবদেহের ফুসফুসের মধ্যে ছোট এবং মাঝারি আকারের অসংখ্য শ্বাসনালী রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে দেহে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড আদান প্রদান হয়। দেহ ফুসফুসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাই ত্যাগ করে। হাঁপানি বা অ্যাজমা হলে ফুসফুসের ছোট ও মাঝারি আকারের শ্বাসনালীগুলো সরু হয়ে যায় এবং সেখানে আঠালো পদার্থ জমে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এর ফলে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হতে থাকে। হাঁপানি শিশুর জন্যে এক কষ্টদায়ক অবস্থা।
কী কারণে শিশুর হাঁপানি হয়?
হাঁপানির মূল কারণ হলো শ্বাসতন্ত্রের এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া। যেসব শিশুর এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের সময় বাতাসের সঙ্গে ধুলোবালি, ফুলের রেণু, পশুর লোম, পাখির পালক, ধোঁয়া, উল জাতীয় পদার্থ, পায়খানার ক্ষুদ্র অণু প্রভৃতি শ্বাসযন্ত্রে ঢুকলে হাঁপানির উৎপত্তি হয়। এছাড়া কিছু কিছু খাবার যেমন গরুর দুধ, মাংস, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি প্রভৃতি থেকে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য যেমন- রং বার্নিশ, পারফিউম, সিগারেটের ধোয়া প্রভৃতি শ্বাসযন্ত্রে ঢুকলে হাঁপানি হতে পারে। এছাড়া আরো কিছু কারণে শিশুদের মধ্যে হাঁপানির লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-
- অত্যধিক ব্যায়াম ও খেলাধুলা
- মানসিক চাপ
- হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন
- শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ
হাঁপানি কি বংশগত হতে পারে?
- হ্যাঁ, হাঁপানি বংশগত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের প্রায় হাঁপানির পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে।
- হাঁপানির ক্ষেত্রে কী উপসর্গ দেখা দেয়?
- শ্বাসকষ্ট হয়। শ্বাসকষ্ট কখনো ভালো হয়, আবার কিছু দিন পর ফিরে আসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট সারাবছর লেগে থাকে ।
- রাতে শোবার সময় এবং ভোরবেলা শিশুর খুব কাশি হয়। খেলাধুলার পর কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
- ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস হয়, হুইজি আওয়াজ পাওয়া যেতে পারে।
- কথা বলতে কষ্ট হয় এবং ঘাম হয়।
- রাতের বেলায় শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বাড়লে শিশু শুতে পারে না, উঠে বসে থাকতে চায় । শিশুর চোখে মুখে উৎকণ্ঠা প্রকাশ পায় ।
- বুক চেপে ধরে।
- শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে বুক ওঠা নামা প্রকট হয়ে ওঠে।
- শিশু পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে।
হাঁপানি হলে কী করতে হবে?
হাঁপানি সন্দেহ হলেই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শিশুর শ্বাসকষ্ট বেশি হলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। হাঁপানির চিকিৎসা মূলত ৪ ধরনের-
- তীব্র আক্রমণে ওষুধ দিয়ে উপসম
- ওষুধ দিয়ে হাঁপানি প্রতিরোধ
- উদ্দীপক পরিহার করে হাঁপানি প্রতিরোধ
- বাবা-মাকে হাঁপানির চিকিৎসা জ্ঞানদান
তীব্র আক্রমণে ওষুধ দিয়ে উপসম
- হাঁপানির তীব্র আক্রমণে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে :
- শিশুকে নেবুলাইজড সালবিউটামল দিন। অথবা সালবিউটামল নেহেলার স্পেসারের মাধ্যমে ২ পাফ দিন। অবস্থার উন্নতি না হলে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২ পাফ করে আরো ৩ বার দিন।
- শিশুর অবস্থার উন্নতি হলে নেবুলাইজড সালবিউটামল বা সালবিউটামল ইনহেলার প্রতি ২-৪ ঘণ্টা অন্তর দিন। অবস্থার আরো উন্নতি হলে এই চিকিৎসা ৪ ঘন্টা অন্তর দিতে থাকুন এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- শিশুর অবস্থার আংশিক উন্নতি হলে শিশুকে লেবুলাইজড সালবিউটামল ২ ঘণ্টা অন্তর মোট ৩ বার দিন। মুখে প্রেডনিসোলন দিন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিন । শিশুর অবস্থার উন্নতি না হলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিন।
- প্রথম থেকেই রোগীকে অক্সিজেন দিতে পারলে ভালো হয়। এজন্য বাসায় অক্সিজেন জোগাড় করে রাখুন।
ওষুধ দিয়ে হাঁপানি প্রতিরোধ
এটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। এক্ষেত্রে হাঁপানি তীব্রতার উপর তার চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। হাঁপানির তীব্রতা কমার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের মাত্রাও পরিবর্তন করা হয়। বাংলাদেশ অ্যাজমা এসোসিয়েশন এক্ষেত্রে একটি সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলে। হাঁপানিতে আক্রান্ত হলে অ্যাজমা এসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই ব্যবস্থা অনুসরণ করলে ভালো হয়।
উদ্দীপক পরিহার করে হাঁপানি প্রতিরোধ
শিশুকে সব সময় খোলামেলা আলো-বাতাস পূর্ণ ঘরে রাখতে হবে। যেসব খাদ্য বা বস্তু থেকে শিশুর এলার্জি হয় তা পরিহার করতে হবে। শিশুকে ধূলাবালিমুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে।
বাবা-মাকে হাঁপানির চিকিৎসার জ্ঞানদান
- বাবা মাঝে ইনহেলার, স্পেসার ও পিকট্রোমিটারের ব্যবহার পদ্ধতি জানতে হবে।
- ঘরের মধ্যে কাউকে ধূমপান করতে দেবেন না ।
- শোবার ঘরে এবং শিশুর পড়ার ঘরে কার্পেট ব্যবহার করবেন না।
- শিশুকে সব সময় স্বাস্থ্যকর খোলামেলা পরিবেশে রাখবেন।
- শিশুর শোবার ঘরে কখনো পোষা কুকুর বা বেড়ালকে ঢুকতে দেবেন না ।
- শিশুর ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখবেন।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন