জন্ডিস রোগীর খাদ্য কি? - What is the diet of jaundice patient?
01:38:13 12/14/2023
জন্ডিস রোগীর খাদ্য কি?
আমাদের শরীরে বিলিরুবিন নামক রঞ্জক পদার্থের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীর হলুদ হয়ে যায়, যাকে আমরা জন্ডিস বলি। রক্তের লোহিত কণিকা প্রতি ১২০ দিন পর ভেঙে যায়, আর তা থেকে বিলিরুবিন তৈরি হয়। যকৃত বা লিভারের কাজ হলো বিলিরুবিনকে বাইল বা পিত্তের সাথে শরীর থেকে বের করে দেয়া। কিন্তু যখন কোনো কারণে লিভার বিলিরুবিনকে শরীর থেকে বের করতে পারে না কিংবা অতিরিক্ত বিলিরুবিন তৈরি হয় তখন জন্ডিস দেখা হয়। জন্ডিস হলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
জন্ডিস সম্পর্কে আমাদের সমাজে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তার মাঝে একটি হচ্ছে জন্ডিস রোগীর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে। জন্ডিস হলে হলুদ দেয়া তরকারী খাওয়া যাবে না কিংবা হলুদ রঙের কিছু খাওয়া যাবে না, তারপর আখ চিবিয়ে খেলে ছোবরার সাথে হলুদ রং শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে এ ভ্রান্ত ধারণাগুলো অন্যতম ।
প্রথমেই আসা যাক জন্ডিস হলে কী কী খাবেন সে ব্যাপারে। জন্ডিস হওয়া মানে লিভার ঠিকমতো কাজ করছে না। আমরা যেসব খাবার খাই তার মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন হয় লিভারে আর বাইল বা পিত্ত তৈরি হয় লিভারে যা ফ্যাট মেটাবলিজমে সহায়ক। তাই জন্ডিস হলে প্রথম কথা হচ্ছে ফ্যাটফ্রি ডায়েট। তেলে রাজা জিনিস খাওয়া যাবে না।
তবে শরীরে ফ্যাটের কিছু প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তাই রান্নায় অল্প তেল ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসকেরা বলেন যে নরমাল ডায়েট খেতে। কিন্তু মনে করুন রোগী প্রত্যেক দিন পরোটা মাংস খেয়ে অভ্যাস। এক্ষেত্রে অবশ্যই পরোটা-মাংস খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। নরমাল ডায়েট বা লাইটডায়েট মানে রোগীকে ভাত-মাছের ঝোল, শাক-সবজি, ফল এগুলো খেতে হবে। প্রতিদিন ৪০-৫০ গ্রাম প্রোটিন এবং ২০ গ্রামের মতো ফ্যাট খাওয়া দরকার।
জন্ডিসের রোগীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া, ফ্যাট এ সময় কম খেতে হয়, আর তাই সকল এনার্জি এসময় পূরণ করতে হয় কার্বোহাইড্রেট থেকে যাকে বলা হয়ে থাকে কার্বোহাইড্রেট লোডিং। তাই প্রচুর পরিমাণে চিনির শরবত, গ্লুকোজ খেতে বলা হয় রোগীকে। অনেকে আখের রস খাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু রাস্তার আখের রস কোনোভাবেই খাওয়া ঠিক না। আরেকটা কথা, ফলের রস খাওয়াটা খুব জরুরি। তবে অবশ্যই টিনের ফলের রস নয়। তাজা ফলের রস খাবেন, আর কিছু ভ্রান্ত ধারণার মাঝে রয়েছে বাদামী লেবু খাওয়া। অনেকে মনে করেন বাদামী লেবু খেলে জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এরকম কোনো বিশেষ ক্ষমতা আসলেই বাতাবি লেবুর আছে কি?
ভিটামিন সি যে কোনো ইনফেকশনের সময় খুবই কাজ দেয়। তাই জন্ডিসের সময় প্রচুর ফল যেমন কমলা লেবু বা বাদামী লেবু খেতে হবে। তবে এমন কোনো কথা নেই যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি বাতাবি লেবু থেকেই পেতে হবে। বাদামীলেবু বা যে কোনো ফল থেকেই ভিটামিন সি পেতে পারেন একজন জন্ডিস রোগী। এবার আসা যাক, শাক-সবজির কথায়। যে কোনো শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে। শাক- সবজি খাওয়া সবচেয়ে ভালো। আর দুধ খেতে চাইলে তা স্কিমড মিল্ক হলে ভালো হয়।
একজন জন্ডিস রোগীর অনেক খাবারই খাওয়া যাবে না। অর্থাৎ যেসব খাবার সহজ প্রাচ্য নয় কিংবা লাইট ডায়েটের মাঝে পড়ে না সেগুলো খাওয়া যাবে না। আগেই জানা গেছে যে ফ্যাট কম খেতে হবে। আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে মশলাদার ঝাল খাবার খাওয়া যাবে না। তেলে ভাজা খাবার এবং চর্বিযুক্ত আবার অর্থাৎ গরু-খাসির মাংস, কলিজা এগুলো খাওয়া যাবে না।
ডিমের কুসুম না খাওয়াই ভালো তবে সাদা অংশ খেতে পারেন। চকোলেট, কেক এগুলোও খাওয়া বাদ দিতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তিবিশেষে হজমে গণ্ডগোল হয়, এমন খাবার বাদ দিতে হবে। চা, কফি পানে যারা অভ্যস্ত তাদেরকে এ সময়টার জন্য চা, কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি কথা, মদ্যপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করা একদম যাবে না। জন্ডিসের সময় মদ্যপানে লিভারের অন্যান্য অসুখ যেমন সিরোসিস হতে পারে। আর এতে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। মদ্যপান পরিহার করতেই হবে।
নিয়মিত প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজের পানি, ফলের রস খেতে হবে। সেই সাথে ভাত সাথে হালকা মশলার রান্না মুরগি, মাছ, ইলিশ, চিতল এসব বড় তেলওয়ালা মাছ ছাড়া) সবজি ইতাদি সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে জন্ডিস রোগীকে। সঠিক খাবার গ্রহণ জন্ডিস রোগীর চিকিৎসার একটি প্রধান অংশ। তাই জন্ডিস হলে ঝাড়ফুঁক কিংবা মালা পরানো ইত্যাদি নানা কুসংস্কারের মাঝে রোগীকে না ফেলে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিয়মিত সঠিক খাবার রোগীকে খেতে দিন। এতে করে রোগী অবশ্যই সুস্থ হবেন বলে আশা করা যায়।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন