Narrow selection

শিশুর ডায়রিয়া হলে করণীয় - What to do if a child has diarrhea


05:51:13 12/10/2023

শিশুর ডায়রিয়া হলে করণীয় : শিশুদের দিনে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনবারের বেশি পাতলা কিংবা পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। তিনবারের কম হলেও দেখতে অস্বাভাবিক হলে এবং পরিমাণে বেশি হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। শিশু হঠাৎ বা তীব্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সাধারণত সাত দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। ডায়রিয়া হলে শিশুর পুষ্টিহীনতা হয় এবং মারাত্মক পানি শূন্যতার জন্য শিশুর মৃত্যু ঘটে। শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ২ বছর বয়সের নিচের শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে প্রতি বছর আড়াই লাখেরও বেশি শিশু ডায়রিয়ার কারণে মারা যায়।

রোগের লক্ষণসমূহ

ডায়রিয়া হলে রোগীর পাতলা পায়খানা ও বমি হয়, যার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি ও লবণ বের হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এই পানিশূন্যতার পরিমাণ নির্ণয় করে এই রোগের উপসর্গসমূহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তিনটি পর্যায়ে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

১. পানিশূন্যতার চিহ্ন অনুপস্থিত থাকলে : রোগী তৃষ্ণার্ত ও সজাগ থাকবে, নাড়ির গতি স্বাভাবিক থাকবে, • শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে, • সিস্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে, • শরীরের চামড়া ধরে টেনে ছেড়ে দিলে দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, • চোখ স্বাভাবিক থাকবে কাঁদলে চোখে পানি আসবে, মুখ গহ্বর ও জিহ্বা ভেজা থাকবে, প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে।

২. স্বল্প পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে রোগী তৃষ্ণার্ত ও অস্থির থাকবে অথবা নিস্তেজ থাকবে, তবে তাকে ছোঁয়ামাত্র বিরক্ত হবে। আগ্রহ সহকারে পানি পান করবে। নাড়ির গতি দ্রুত এবং দুর্বল হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস গভীর হবে ও বেড়ে যাবে। সিস্টোলিক

  • রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে অথবা কমে যাবে।
  • দিলে ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
  • শরীরের চামড়া ধরে টেনে ছেড়ে
  • চোখ কোটরে ঢুকে যাবে। কাঁদলে
  • চোখে পানি আসবে না। মুখ গহ্বর ও জিহ্বা শুকনো থাকবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাবে এবং হলুদ হবে।

৩. মারাত্মক পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে রোগী নিস্তেজ কিংবা সংজ্ঞাহীন এবং নিষ্ক্রিয়ভাবে পড়ে থাকবে, পানি অল্প পান করবে কিংবা একেবারেই পান করবে না।

  • নাড়ির গতি দ্রুত ও দুর্বল হবে, এমনকি নাও পাওয়া যেতে পারে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস গভীর এবং দ্রুত হবে।
  • সিস্টোলিক রক্তচাপ নাও পাওয়া যেতে পারে।
  • শরীরের চামড়া ধরে টেনে ছেড়ে দিলে খুব ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
  • চোখ বেশি কোটরে ঢুকে যাবে ।
  • কাঁদলে চোখে পানি আসবে না।
  • মুখ গহ্বর ও জিহ্বা খুব শুকনো থাকবে।
  • কয়েক ঘণ্টা প্রস্রাব হবে না।

চিকিৎসা

১. পানিশূন্যতা প্রতিরোধ

  • রোগীর পানিশূন্যতার চিহ্ন বা লক্ষণ না থাকলে এর প্রতিরোধ ঘরে বসেই করা যায়। মাকে এর চিকিৎসা পদ্ধতি জানতে হবে। এ জন্য তাদেরকে কয়েকটি নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে।
  • পানিশূন্যতা প্রতিরোধের জন্য শিশুকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ তরল খাবার দিতে হবে। যেমন—ভাতের মার, চালের গুঁড়োর স্যালাইন, ভুট্টা বা যবের গুঁড়োর স্যালাইন, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, ডালের পানি, টমোটো স্যুপ, লবণ-গুড়ের শরবত অথবা লবণ- চিনির শরবত। এসব সম্ভব না হলে শুধু পানি দিতে হবে। প্রতি লিটার তরলে প্রায় তিন গ্রাম লবণ মিশিয়ে দিতে হবে।
  • বয়স অনুযায়ী খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ২ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১০-২০ চা চামচ বা বড় কাপের এক- চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক কাপ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
  • ২-১০ বছরের শিশুর জন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২০-৪০ চা চামচ বা বড় কাপের অর্ধেক থেকে পূর্ণ কাপ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
  • ১০ বছর বা তার বেশি ব্যাসের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সে যতটুকু খেতে পারে ততটুকু স্যালাইন তাকে খাওয়াতে হবে।
  • ডায়রিয়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ সকল তরল খাবার ও খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
  • অপুষ্টিজনিত সমস্যা প্রতিরোধের জন্য শিশুকে প্রচুর খাবার দিতে হবে। শিশুর পানিশূন্যতা কিংবা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন

২. পানিশূন্যতার চিকিৎসা

রোগীর পানিশূন্যতার ধরন নির্ণয়ের পর তার চিকিৎসা করতে হবে।

i) স্বল্প পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে স্বল্প পানিশূন্যতা নির্ণয় করার পর শিশুর বয়স ও ওজন জেনে শিশুকে প্রথম ৪ ঘন্টার মধ্যে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশু বমি করল ৫-১০ মিনিট স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হবে, তারপর ধীরে ধীরে খাওয়ানো শুরু করতে হবে। এমনিভাবে পানিশূন্যতা পূরণ হওয়ার আগে দুদিন পর্যন্ত তাকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

ii) মারাত্মক পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে: এক্ষেত্রে রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

ক. রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিরাপথে স্যালাইন দিয়ে পানির ঘাটতি দূর করতে হবে। কলেরা স্যালাইন কিংবা রিংগারস ল্যাকটেট সল্যুশন অথবা তা যদি না পাওয়া যায় তাহলে নরমাল স্যালাইন দিতে হবে।

খ. রোগী মুখে খেতে পারলে তাকে শিরাপথে স্যালাইনের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে।

গ. রোগীর বয়স ১ বছরের কম হলে প্রথম ঘণ্টায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৩০ মিলি এবং পরবর্তী ৫ ঘণ্টায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৭০ মিলি স্যালাইন শিরাপথে দিতে হবে। ঘ. রোগীর বয়স ১ বছরের বেশি হলে শিরাপথে স্যালাইনের পরিমাণ প্রথম আধঘণ্টায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৩০ মিলি এবং পরবর্তী আড়াই ঘণ্টায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৭০ মিলি দিতে হবে।

৫. যদি নাড়ির গতি দুর্বল থাকে কিংবা নির্ণয় করা না যায়, তাহলে শিরাপথের স্যালাইন দ্রুত করে দিতে হবে।

চ. প্রতি ১-২ ঘণ্টা পরপর রোগীকে পরীক্ষা করতে হবে। যদি পানিস্বল্পতার উন্নতি না ঘটে তাহলে দ্রুত শিরাপথে স্যালাইন চালিয়ে যেতে হবে।

ছ. শিশুকে শিরাপথে স্যালাইন দেয়া না গেলে শিশুর নাকে টিউব ঢুকিয়ে সেই টিউবের মাধ্যমে খাবার স্যালাইন প্রয়োগ করে পানিশূন্যতা দূর করতে হবে। প্রতি ঘণ্টায় শিশুর দেহের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ২০ মিলি করে খাবার স্যালাইন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত দিতে হবে। এ সময়ে শিশুর বমি হলে কিংবা পেট ফেঁপে গেলে টিউবের মধ্য দিয়ে আরো ধীরে ধীরে খাবার স্যালাইন দিতে হবে।

জ. মারাত্মক পানিশূন্যতা দূর হলে কিংবা আর কোনো চিহ্ন দেখা না গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঝ. ডায়রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য জটিলতা যেমন রক্ত আমাশয়, চরম অপুষ্টি প্রভৃতি দেখা দিলে তাকে ওষুধ দিতে হবে।

৩. পর্যাপ্ত পুষ্টির সরবরাহ

ডায়রিয়া এবং অপুষ্টির সঙ্গে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা কমে যায়। এ সময় শিশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। পুষ্টিহীনতা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই এ সময়ে শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। ডায়রিয়া সেরে যাবার পরেও পুষ্টির পরিমাণ অব্যাহত রাখতে হবে এবং কমপক্ষে দু সপ্তাহ পর্যন্ত শিশুকে দিনে একবার অতিরিক্ত খাবার দিতে হবে।

 

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color