শিশুর নিউমোনিয়া হলে করণীয় - What to do if a child has pneumonia
05:54:14 12/10/2023
শিশুর নিউমোনিয়া হলে করণীয় - What to do if a child has pneumonia
আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়া মূলত শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ। উন্নত দেশগুলোতে এ রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস। কিন্তু আমাদের দেশে প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। নিউমোনিয়া হলে বেশ কিছু কারণে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন-
- শিশুর বয়স যদি খুব কম হয়
- শিশু যদি পুষ্টিহীনতায় ভোগে
- শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ না খাওয়ালে
- শিশুকে প্রতিষেধক টিকা না দিলে
- শিশু অপরিণত ও কম ওজনের থাকলে
ব্যকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া কারণ :
- শিশুর বয়স ৩ মাসের বেশি হলে শিশু সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় স্ট্যাফাইলোকক্কাস এবং গ্রুপ-এ ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা। ১ মাসের কম বয়সের শিশুদের সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়া ঘটায় গ্রুপ বি স্ট্রেপটোকক্কাস । অন্যান্য যেসব ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া ঘটায় তার মধ্যে রয়েছে-
- স্ট্রেপটোকক্কাস অরিয়াস
- ক্লামাইডিয়াট্রাকোম্যাটিস
- হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা
- মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্যুলোসিস।
রোগের উপসর্গ
শিশুদের নিউমোনিয়ার উপসর্গ বড়দের মতো নয়। এমনকি ৬ বছরের বড় শিশু ও ১ বছরের ছোট শিশুর উপসর্গও বেশ ভিন্ন।
৬ বছরের বড় শিশুদের ক্ষেত্রে
- কাশি
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- জ্বর
- বুকে ব্যথা
- কাঁপুনি
- শ্বাসকষ্ট
৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে
- জ্বর
- গা ম্যাজম্যাজে ভাব
- পাক আন্ত্রিক অসুবিধা
- অস্তিরতা
- শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা
- কাঁপুনি ।
এছাড়া রোগী কোন ধরনের নিউমোনিয়ায় ভুগছে তা বোঝা যাবে বিভিন্ন উপসর্গ
দেখে। যেমন-
অতি মারাত্মক নিউমোনিয়া (২ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে)
- পানি খেতে না পারা
- খিচুনি হওয়া
- অস্বাভাবিক ঘুম ঘুম ভাব
- অতিরিক্ত পুষ্টিহীনতা
- শ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হবার শব্দ পাওয়া।
- এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
(২ মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে)
- শিশু খাওয়া বন্ধ করে দেবে
- শ্বাস কষ্ট হবার শব্দ পাওয়া যাবে
- খিচুনি হবে
- শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে
- অস্বাভাবিক ঘুম ভাব দেখা দেবে।
মারাত্মক নিউমোনিয়া (২ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে) জ্বর হবে
শ্বাস নেবার সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাবে। (২ মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে)
- দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস হবে
- শ্বাস নেবার সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাবে।
সাধারণ নিউমোনিয়া
- জ্বর হবে
- কাশি থাকবে
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হবে, তবে শ্বাস নেবার সময় বুক দেবে যাবে না।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের হার দেখে অনেক সময় রোগের তীব্রতা বোঝা যায়। নিউমোনিয়ায়
- শ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হয়।
মারাত্মক নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে
- ২ মাসের কম বয়সী শিশু (মিনিটে ৬০ বার বা তার বেশি)।
- ২ মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশু (মিনিটে ৫০ বার বা তার বেশি)।
- ১ বছর থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু (মিনিটে ৪০ বার বা তার বেশি)।
কী চিকিৎসা দিতে হবে
মূলত রোগের তীব্রতা এবং বয়সভেদে চিকিৎসা ব্যবস্থা দিতে হবে। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাই শ্রেয়। এন্টিবায়োটিক দিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসক তা নির্ধারণ করে দেবেন।
মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর ক্ষেত্রে-
- শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
- শিরাপথে এমপিসিলিন এবং জেন্টামাইসিন কিংবা সেফোট্যাক্সিম অথবা সেফাটাজিডিম দিতে হবে।
- নাক বন্ধ থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে
- শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে
- অক্সিজেন দিতে হবে
- প্রয়োজনে ফিজিক্যাল থেরাপি দিতে হবে।
৬ বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে-
সামান্য থেকে মাঝারি অসুস্থতায় বাড়িতে খুব গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে। এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো মুখে এমোক্সিসিলিন এন্টিবায়োটিক দিতে হবে।
অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং শিরাপথে সেফুরক্সিম, সেফট্রায়োক্সন কিংবা অক্সাসিলিন ও সেফটাজিডিম দিতে হবে।
৬ বছরের বেশি বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে-
সামান্য থেকে মাঝারি অসুস্থতায় মুখে পেনিসিলিন কিংবা ইরাথ্রোমাইসিন দিতে হবে। অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং সেখানে শিরাপথে সেফুরক্সিম, সেফট্রায়োক্সন, সেফটাজিডিম কিংবা অন্য এন্টিবায়োটিক দিতে হবে।
ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া কারণ
- শিশুদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব ভাইরাস নিউমোনিয়া ঘটায় তাহলো-
- প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাস
- এন্টারোভাইরাস।
এছাড়া অন্যান্য কিছু ভাইরাস নিউমোনিয়া ঘটিয়ে তাকে। যেমন-
- রাইনো ভাইরাস
- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
- হারপিস ভাইরাস।
রোগের উপসর্গ : ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার উপসর্গের মতো ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ার উপসর্গও প্রায় একই ধরনের। কয়েকদিন নাক দিয়ে পানি পড়া এবং কাশি থাকবে, সেই সঙ্গে জ্বর ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুবিধা থাকবে।
কী চিকিৎসা দিতে হবে
এন্টিভাইরাল থেরাপি-
মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ভাইরাসবিরোধী ওষুধ বেশ কার্যকর।
রিভাইরিন-স্প্রে আকারে অর্থাৎ শ্বাস পথে এই ওষুধটি ৫/৭ দিন ব্যবহার করলে চমৎকার ফল পাওয়া যায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা এ সংক্রমণের ক্ষেত্রে মুখে এমানটাডিন দেয়া যেতে পারে।
হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস কিংবা ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাসের ক্ষেত্রে এসাইক্লোভির দেয়া যেতে পারে। শিরাপথে ওষুধটি ৭-১০ দিন নিতে হবে।
রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন এবং পুষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।
অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্বর ও কাশির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে কি কো-ট্রাইমক্সাজল দেয়া যাবে?
অবশ্যই দেয়া যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম পছন্দের এন্টিবায়োটিক হচ্ছে কো-ট্রাইমক্সাজল । তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো এন্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না।
নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা কি সম্ভব?
হ্যাঁ সম্ভব। বাবা-মার সচেতনতাই শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। নিউমোনিয়ার যেহেতু কোনো প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হয়নি তাই বাবা-মা বিশেষ করে মায়ের ভূমিকাটাই মুখ্য। এক্ষেত্রে মায়ের যা করণীয়-
- শিশু জন্ম নেবার পর থেকে ৫ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
- সময় মতো শিশুকে ৬টি সংক্রামক রোগের টিকা দিতে হবে।
- শিশুকে ভিটামিন-এ খাওয়াতে হবে।
- শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আলো-বাতাস পূর্ণ ঘরে রাখতে হবে।
- শিশু বড় হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
- শিশুর নিউমোনিয়ার কোন লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই শিশুকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন