Narrow selection

বাতজ্বর হলে কী করবেন? - What to do if rheumatic fever?


14:36:07 12/13/2023

বাতজ্বর হলে কী করবেন? : রিউম্যাটিক ফিভারকে বাংলায় বলে বাতজ্বর। ফ্যারিংস (অন্ননালীর উপরে অবস্থিত গহ্বর) এ স্ট্রেপটো কক্কাস বিটা হিমোলাইটিকাস নামক একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এ রোগ দেখা দেয়। সাধারণত ৫-১৫ বছর বয়সী ছেলে মেয়েরা রিউম্যাটিক ফিভার বা বাতজ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ৪ বছর বয়সের আগে এবং ৪০ বছর বয়সের পরে রোগটি সাধারণত হয় না। জীবাণুটি ফ্যারিংসকে সংক্রমিত করলে গলাব্যথা হয়। এ গলাব্যাথার ২-৩ সপ্তাহ পরে বাতজ্বর দেখা দেয়। অনেক সময় গলা ব্যথার ১ সপ্তাহ পরেও রোগটি দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো ৫ সপ্তাহ পরেও হতে পারে। আমেরিকায় রোগটি বিরল হলেও বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ রোগের প্রকোপ বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে যেখানে প্রতি লাখে ৫ জনেরও কম শিশু রোগটিতে আক্রান্ত হয় সেখানে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে প্রতি লাখে আক্রান্ত হয় ১০০-১০০০ জন। রোগটি এত মারাত্মক যে শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের ভালব আক্রান্ত হয়। এওরটিক ভালভ আক্রান্ত হয় ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে।

কাদের হয় বাতজ্বর?

তুলনামূলকভাবে এশিয়া ও আফ্রিকার ছেলে মেয়েদের এ রোগ বেশি হয়। ঘনবসতিপূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসরত ছেলেমেয়েরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। টনসিলাইটিস কিংবা ফ্যারেনজাইটিসের কারণে গলাব্যথা হলে তার সুচিকিৎসা না নিলে এ রোগ দেখা দেয়।

রোগের উপসর্গ কী?

বাতজ্বরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্নতন্ত্র যেমন হৃৎপিণ্ড, অস্থিসন্ধি, ত্বক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রকাশ পায় বিভিন্ন উপসর্গ। এসব উপসর্গকে মুখ্য এবং গৌণ দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যদি কারো মধ্যে দুটি মুখ্য উপসর্গ থাকে অথবা ১টি মুখ্য ও ২টি গৌণ উপসর্গ থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার বাতজ্বর হয়েছে। অবশ্য সবক্ষেত্রে ট্রেপটো কক্কাস বিটা হিমোলাইটিকাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে।

মুখ্য উপসর্গসমূহ

১. হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ : বাতজ্বরে হৃৎপিন্ডের প্রদাহ এক গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। এক্ষেত্রে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুক ধরফড় করে কিংবা বুকে ব্যথা করে। হৃৎপিণ্ড আকরে বড় হয়ে যায়। হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়।

২. অস্থিসন্ধির প্রদাহ : বড় বড় গিরা হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা করে একগিরা থেকে ব্যথা অন্য গিরাতে যাবে। গিরা ফুলে যাবে এবং সেখানে গরম অনুভূত হবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে একটি মাত্র গিরা আক্রান্ত হতে পারে। প্রদাহ ১-৫ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। কখনো কখনো এক সপ্তাহের আগে প্রদাহ চলে যায়, পুরোপুরি যেতে ২ সপ্তাহ লাগে। ব্যথার জন্য চলাচল করতে কষ্ট হয়।

৩. বুকে পিঠে লাল দাগ : বাতজ্বরে আক্রান্ত শতকরা ১০-২০ ভাগ বাচ্চাদের বুকে ও পিঠের ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়।

৪. ব্যথাহীন ছোট গোটা বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে ছোট ছোট ব্যথাহীন গোটা (২ সে. মি. এর কম) পরিলক্ষিত হয়। এই গোটা সেই সব ত্বকের নিচে থাকে যেখানে ত্বকের ঠিক নিচেই হাড় রয়েছে। গোটগুলো কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে এবং আবার দেখা দিতে পারে।

৫. নিয়ন্ত্রনহীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন : কখনো করুনো রোগীর মুখমণ্ডলের পেশী, জিহবা এবং হাত পা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সঞ্চালিত হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। বড়দের ক্ষেত্রে বিরল। শতকরা ৩ জনের এ উপসর্গ দেখা দিলেও বাতজ্বর নির্ণয়ে উপসর্গটি গুরুত্বপূর্ণ।

গৌণ উপসর্গসমূহ

এ ধরনের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, গিরায় ব্যথা, পূর্বে বাতজ্বরে আক্রান্ত হবার ইতিহাস, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় ইএসআর বৃদ্ধি, রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি, লালায় বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণুর উপস্থিতি প্রভৃতি ।

চিকিৎসা ব্যবস্থা কী?

বাতজ্বরে চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রদাহ সারানো, বিষাক্ততা ও জ্বর কমানো, হার্ট ফেইলিউর দমন করা এবং ট্রেপটোকক্কাস জীবাণুকে নির্মূল করা।

সাধারণ ব্যবস্থা : যে পর্যন্ত না শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবে, ইএসআর নাড়ির গতি স্বাভাবিক হবে সে পর্যন্ত রোগীকে বিছানায় পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।

বিশেষ ব্যবস্থা

১. এসপিরিন : এই ওষুধ জ্বর, অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং ফোলা কমিয়ে দেয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতি ৪ ঘণ্টা অন্তর ০.৬-০.৯ গ্রাম এসপিরিন প্রয়োজন হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্বল্পমাত্রা সহযোগে চিকিৎসা দেয়া হয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি এবং পাকস্থলী ও অস্ত্রে রক্তপাত হতে পারে।

২. পেনিসিলিন : স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু থাকলে তা নির্মূল করার জন্য মাংসপেশী পথে বেনজাবিন (পেনিসিলিন ১.২ মিলিয়ন ইউনিট) ১ বার অথবা প্রোকেইন পেনিসিলিন (৬০০০০ ইউনিট) দৈনিক মোট ১০ দিন দিতে হবে। বিকল্প হিসেবে ইরাইথ্রোমাইসিন দেয়া যেতে পারে।

৩. করটিকো স্টেরয়েড এমন কোনো প্রমাণ নেই যে করটিকো স্টেরয়েড হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি রোধ করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি বিশেষ নির্দিষ্ট মাত্রায় করটিকো স্টেরয়েড সতর্কতাসহ গ্রহণ করা যেতে পারে।

বাতজ্বর প্রতিরোধে কী করণীয়?

  • ফ্যারিংস-এ সংক্রমণ ঘটলে তা সময় মতো চিকিৎসা করাতে হবে।
  • একবার বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেলে পুনরায় বাতজ্বরের আক্রমণ ঠেকাপতে প্রতিরক্ষামূলক বেনজাথিন পেনিসিলিন জি ইনজেকশন (১.২ মিলিয়ন ইউনিট) প্রতি ৪ সপ্তাহ পরপর মাংসপেশি পথে নিতে হবে। মুখে পেনিসিলিন ট্যাবলেট (২০০০০- ২৫০০০০ ইউনিট) দিনে ২ বার খাওয়ানো যেতে পারে কিন্তু তা ততটা নির্ভরযোগ্য নয়। রোগীর যদি পেনিসিলিনে এলার্জি থাকে তাহলে তাকে দৈনিক ১ গ্রাম সালফাডায়াজিন অথবা ইরাইথ্রোসাইসিন ২৫০ গ্রাম দৈনিক ২ বার বিকল্প হিসেবে খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ঘনবসতি এবং স্যাতস্যাতে পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে মাঝে গলায় কোনো সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।
  • সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে হবে।

 

● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color