চোখ লাল হলে করণীয় - What to do if the eyes are red
00:38:53 12/14/2023
চোখ লাল হলে করণীয় : আমাদের অক্ষিগোলকের সামনের দিকের সাদা অংশ (স্কেলা) একটি স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। এই পর্দা চোখের পাতার ভেতরের দিকটাও ঢেকে রাখে, একে বলে কনজাংকটিভ। এতে সূক্ষ্ম শিরা উপশিরার জালিকা থাকে। এই পর্দার প্রদাহকে বলে কনজাকটিভাইটিস। ঠিক যেমন টনসিলের প্রদাহকে বলে টনসিলাইটিস। আইটিস কথাটির অর্থ প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন। চোখ ওঠা কথাটি অনেকে বলে থাকেন। যেমন, কনজাংকটিভাইটিসকেই অনেকে বলেন চোখ উঠেছে। বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতেই পারে। যেমন কেউ প্রচণ্ড রেগে গেলে দেখবেন রক্তচক্ষু আবার কান্নাকাটি করলেও চোখ লাল হয়।
রাত জাগলে, চোখ বেশি রগড়ালে, ধোঁয়া ধুলো লাগলে, পেঁয়াজ কাটলে, সর্দিজ্বর হলে, এমনকী গোসল করার পরও চোখ লাল হতে পারে। এইসব কারণে চোখ লাল হলে খুব একটা চিন্তা নেই। কিন্তু লাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখব্যথা, পানি পড়া, পিচটি পড়া বা চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া ইত্যাদির কোনো একটি হলে চিন্তার কারণ আছে। আবার দু চোখ লাল না হয়ে একটি চোখ লাল হলে কিন্তু মনে রাখতে হবে ব্যাপার গুরুতর। বেশিরভাগ কনজাংকটিভাইটিস হয় সংক্রমণজনিত কারণে। ব্যাকটিরিয়া (স্টাফাইলোকক্কাস, নিউমোকক্কাস, মোরাক্স অ্যাক্সেনফিল্ড ডিপলো ব্যাসিলাস বা ভাইরাস (হারপিস সিমপ্লেক্স, অ্যাডিনোভাইরাস, ট্রাকোমা ইনক্লুশন) এই অসুখের জন্য দায়ী।
এসব রোগজীবাণুর হাত থেকে চোখ নিজেই নিজেকে কীভাবে রক্ষা করে, জানা যেতে পারে। চোখের পানি চোখকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখে। চোখের পানিতে 'লাইসোজাইম' নামে একটি এনজাইম থাকে, যা রোগজীবাণুকে অকেজো করে দেয়। আবার কনজাংকাটিভার পর্দাও কিন্তু রোগজীবাণুকে ঢুকতে বাধা দেয়। কিছু কিছু এপিথিয়াল কোষ জীবাণুগুলোকে গিলেও ফেলে। কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে জীবাণুর আক্রমণে এরা চোখকে রক্ষা করতে পারে না।
এই অসুখের লক্ষণ কী কী?
চোখ প্রচণ্ড লাল হয় । প্রথমে এক চোখ, পরে অন্য চোখও। আলোর দিকে তাকালে অসুবিধা হয়। চোখ দিয়ে পানি ঝরে, চোখ করকর করে, যেন মনে হয় অনেক বালি ঢুকে আছে। চোখের দু কোণে পিচুটি জমে থাকে। চোখের পাতা দুটি জুড়ে যায়—বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর।
চোখ লাল হওয়ার সঙ্গে কনজাংকটিভাতে পানি জমে যায় এমনকী চোখের পাতা ফুলেও যেতে পারে। অল্পস্বল্প রক্তও জমে যেতে পারে। এই অসুখটিকে কিন্তু সাধারণ অসুখ অর্থাৎ কিছুই হয়নি ভাবা ঠিক হবে না। কারণ চিকিৎসা না করালে নানা জটিলতার সৃষ্টি হবে। চোখের পাতার প্রদাহ, চোখের মণির ঘা ইত্যাদি হতে পারে। ভাইরাসের আক্রমণে পিচুটি কম হয়। কিন্তু ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণে প্রচুর পরিমাণে পিচুটি জমবে। এই অসুখ সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ কোনো একজন এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিবারের সকলেরই প্রায় এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চিকিৎসার ব্যপারে পরামর্শ
পিঁচুটিতে চোখ জুড়ে গেলে, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পানিতে তুলো দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করে সেই তুলো দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। চোখ আই প্যাড দিয়ে ঢেকে রাখা চলবে না। বরং কালো চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চোখের আরাম হবে। চোখের ড্রপ বা মলম অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যবহার করতে হবে। মোটামুটি পাঁচ সাতদিনের মধ্যে এই অসুখ সেরে যায়।
অনেকের ধারণা আছে, রোগীর চোখের দিকে তাকালেই বোধ হয় অসুখ ধরে যাবে। আসলে তা কিন্তু নয়। রোগীর চোখের ডিসচার্জ আঙুল, তোয়ালে বালিশ ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার চোখে না ঢুকলে কিন্তু আপনি আক্রান্ত হবেন না।
আরও অনেক কারণেও কিন্তু চোখ লাল হতে পারে। যেমন কনজাংকটিভাতে রক্তক্ষরণ ছোটদের হুপিং কাশি, আঘাত লাগা, উচ্চ রক্তচাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি অসুখে। নানা ধরনের অ্যালার্জিতে চোখ লাল হয়। বিশেষ কর ছেলেদের এক ধরনের অ্যালার্জিক কনজাংকটিভাইটিস হয়, যার নাম ভারনাল বা স্প্রিং ক্যাটার। চোখ লাল হয়ে প্রচণ্ড চুলকোতে থাকে। পরপর বছর তিনেক গরমের সময়টাতে এই রোগটি হয়।
আবার ছোটরা যারা সর্দিকাশিতে ভোগে, তাদের একটি বা দুটি চোখেই ঘামাচির মতো এক বা একাধিক ফুসকুড়ি হয়ে তার চারপাশ লাল হয়ে যায়। একে বলে ফ্লেকটিনিউলার কনজাংকটিভাইটিস। এ ছাড়াও অনেক গুরুতর মণিতে ঘা, চোখের তারায় প্রদাহ (আইরাইটিস), ফ্লেরার প্রদাহ (ফেরাটাইটিস) চোখের এক বিশেষ ধরনের গ্লকোমা ইত্যাদি । ঠিক সময়ে এই অসুখগুলোর চিকিৎসা না করালে বিপত্তি বাড়তে পারে। পরিণামে ঘনিয়ে আসতে পারে অন্ধত্ব।
● হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন