Narrow selection

মুসাফিরের নামাযের নিয়ম


05:39:21 12/03/2023

মুসাফিরের নামাযের নিয়ম

হযরত ইবনে ওমর [রাঃ] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঘরে এবং সফরে নামায পড়েছি। ঘরে তাঁর সাথে প্রথমে জোহরের চার রাকাত ফরয ও পরে দু'রাকাত সুন্নত নামায পড়েছি আর সফরে তার সাথে জোহরের দু' রাকাত ফরয এবং তার পরে দু' রাকাত সুন্নত পড়েছি এবং সফরে আসরের দু' রাকাত ফরয পড়েছি, তার পরে তিনি কোন সুন্নত, নফল পড়েননি । মুকীম ও মুসাফের উভয় অবস্থায় মাগরিব তিন রাকাতই পড়েতেন। মাগরিব হল দিনের বিতির। অতঃপর তিনি আরও দু' রাকাআত সুন্নত পড়তেন।” [তিরমিযি ১ম খণ্ড, ১০৫ পৃষ্ঠা]

সফরের নামাযকে কছরের নামায বলা হয়। মহান আল্লাহ পাক দয়া করে সফরকালীন সময়ের ফরজ নামাযে চার রাকাআতের স্থলে দু' রাকাআত করে দিয়েছেন। কাজেই জোহর, আসর, এশা সফরের মধ্যে দুই রাকাতই পড়তে হয়। আর ফজর ও মাগরিবে কোন কছর নেই । আলোচ্য হাদীসে না থাকলেও অন্য রেওয়ায়েতে এশার কথা উল্লেখ রয়েছে

৭৮ কি.মি. তথা ৪৮ মাইল বা তার অধিক দূরত্বের উদ্দেশ্যে নিজ শহরের আবাদি এলাকা ত্যাগ করলে তখন থেকে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে মুসাফির বলা হয় এবং মুসাফিরের যাবতীয় আকাম তার উপর বর্তায়। যেমন, নামায কছর পড়া, রমযানে রোযা কাযা করার অনুমতি ইত্যাদি । শহরে আবাদির ভিতরে থাকা পর্যন্ত মুসাফির হবে না। সুতারাং বাস ষ্টেশনে বা বিমান বন্দরে যাওয়ার পর সেগুলো শহরের আবাদির ভিতরে হলে মুকীম আর আবাদির বাইরে হলে মুসাফির ধরা হবে। যদিও নিজ বস্তির খুবই কাছে হয়।

৭৮ কি.মি. তথা ৪৮ মাইলের কম দূরত্বের উদ্দেশ্যে বের হলে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে মুসাফির বলা হবে না। এবং সফরের কোন হুকুম তার উপর বর্তাবে না ৭৮ কি.মি. অর্থ সাধারণ গতিতে পায়ে হেঁটে তিন দিনে যন্ত্রটা দূরত্ব অতিক্রম করা যায় । আমাদের হিসাবে আনুমানিক ৪৮ মাইল হয়।

মাসআলা : মুসাফির ব্যক্তি জোহর, আসর ও এশার নামাযের ফরয নামায চার রাকাতের স্থলে দু' রাকাত পড়বে। সফরের তাড়াহুড়া কিংবা সংগীহারা হওয়ার আশংকা থাকলে ফরযের আগে ও পরের সুন্নত ছেড়ে দিতে পারে এতে গুনাহ হবে না। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ছাড়া যাবে না। ফজরের পূর্বের দু' রাকাত সুন্নত সফরেও ছাড়বে না। সুন্নত নামাযে কোন কসর নেই। কাজেই সুন্নত চার রাকাতের স্থলে চার রাকাতই পড়তে হবে।

মাসআলা : ফজর, মাগরিব ও বিতরের নামাযে কোন 'কসর' নেই। কাজেই অন্যান্য সময়ের মত সফরেও দু' রাকাত বা তিন রাকাতই পড়বে। 

মাসআলা : মুসাফিরির জন্য জোহর, আসর ও ইশার নামায দু' রাকাতের স্থলে চার রাকাত পড়লে গুনাহ হবে।

মাসআলা : যদি ভুলবশতঃ চার রাকাত পড়ে ফেলে এবং প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে থাকে তাহলে অতিরিক্ত দুই রাকাত নফল রূপে গণ্য হবে। আর প্রথমে বৈঠক না করে থাকলে চার রাকাতই নফল হয়ে যাবে। ফরয পুনরায় পড়তে হবে।

মাসআলা : সফর কালে কোন স্থানে ১৫ দিন অথবা তার বেশি সময়ের জন্য অবস্থানের নিয়ত করলে সে আর মুসাফির থাকবে না। এমনকি ১৫ দিনের পূর্বে নিয়ত বদল করে অন্যত্র গমনের ইচ্ছা করলেও মুসাফির হবে না। বরং পূর্ণ চার রাকাত ফরযই পড়তে হবে। অবশ্য ‘অন্যত্র যদি তিন মঞ্জিল বা অধিক দুরত্বে হয় তবে নতুন করে মুসাফির হবে।

মাসআলা : ৭৮ কি.মি. দুরবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় যদি মধ্যবর্তী কোন বস্তিতে যে, ১৫ দিন বা অধিক অবস্থানের নিয়ত করে যার দূরত্ব ঘর থেকে ৭৮ কি.মি. কম, তাহলে মুসাফির হবে না। পরবর্তীতে উক্ত গ্রামে অবস্থান করুক বা না করুক।

মাসআলা : সফরকালে ফরয নামাযের ভিতরেই যদি ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করে নেয় তবে আর মুসাফির থাকবে না। এমনকি উক্ত নামাযও পূর্ণ করতে হবে।

মাসআলা : সফর কালে কোন স্থানে ১৫ দিনের কম সময়ের নিয়তে অবস্থান করল কিন্তু আজ-কাল করে ১৫/২০ দিন বা আরো বেশি পার হয়ে গেল কিন্তু ১৫ দিন থাকার নিয়ত কখনো করেনি তবে সে মুসাফিরই থাকবে।

মাসআলা : তিন মঞ্জিলের ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হয়ে পথিমধ্যে কোন কারণবশতঃ নিয়ত পরিবর্তন করে ঘরে ফিরে আসে তাহলে নিয়ত পরিবর্তন করার সময় থেকে সে মুসাফির থাকবে না ।

মাসআলা : এক সাথে থাকার উদ্দেশ্যে স্বামীর সাথে সফরে বের হলে স্বামীর নিয়তই গণ্য হবে। অর্থাৎ স্বামী ১৫ দিনের কম সময় অবস্থানের নিয়ত করলে উভয়ে মুসাফির হবে। পক্ষান্তরে বেশি নিয়ত করলে উভয়েই মুসাফির থাকবে না । স্ত্রীর নিয়ত করা না করা গণ্য হবে না।

মাসআলা : তিন মঞ্জিল অতিক্রম করে নিজের বাড়ীতে পেঁছে গেলে সে মুসফির থাকবে না। চাই দু' এক দিন থাকুক বা অনেক দিন থাকুক। তদ্রূপ যদি অন্য কোথাও পৌঁছে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করে নেয় তবুও

মুসাফির থাকবে না। আর যদি ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তবে সেখানে পৌছার পরও মুসাফিরই থাকবে এবং কছর পড়তে থাকবে। 

মাসআলা : যদি সফরে ১৫ দিনের কম করে বিভিন্ন স্থানে বহুদিন থাকার নিয়ত করে তবে সে মুসাফিরই থাকবে।

মাসআলা : কোন ব্যক্তি নিজ শহর একেবারেই ত্যাগ করে অন্যত্র স্থায়ীভাবে এবং সেখানেই বসবাস আরম্ভ করলে প্রথম শহর তার নিজস্ব শহর বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ ১৫ দিনের কম সময়ের জন্য উক্ত শহরের সফর করলে অন্যান্য শহরের ন্যায় সেখানেও মুসাফির হিসাবে কিছর’ পড়বে।

মাসআলা : সফরের ক্বাযা নামায বাড়ীতে এসে আদায় করলে কছর রূপেই আদায় করতে হবে। তদ্রূপ মুকীম অবস্থার কাযা নামায সফরে আদায় করলে চার রাকাতের স্থলে চার রাকাতই পড়বে।

মাসআলা : বিয়ের পর স্থায়ীভাবে শ্বশুরালয়ে বসবাস করলে শ্বশুর বাড়ীই তার নিজস্ব বাড়ী বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ পিত্রালয় সফরের দুরত্বে হলে এবং ১৫ দিনের কম নিয়ত করে সেখানে গেলে মুসাফির হবে। অবশ্য শ্বশুরালয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস না করলে পিত্রালয়ই তার আসল বাড়ী বলে গণ্য হবে।

মাসআলা : চলন্ত নৌযানে নামাযের সময় হয়ে গেলে চলন্ত অবস্থাই কিবলামুখী হয়ে নামায পড়বে, দাড়িয়ে নামায পড়তে মাথা ঘুরালে বা পড়ে যাওয়ার আশংকা হলে বসেই নামায পড়বে। গাড়ী বা রেলগাড়ীরও একই হুকুম । অনেকে এরূপ অবস্থায় কেবলার খেয়াল করে না এবং বিনা কারণেই বসে নামায পড়ে। এভাবে নামায শুদ্ধ হয় না।

মাসআলা : নামায পড়া অবস্থায় রেলগাড়ী বা নৌকার দিক পরিবর্তনের কারণে মুখ ক্বিবলার দিক থেকে সরে গেলে নামাযের মধ্যেই ঘুরে ক্বিবলামুখী হয়ে যাবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : পথ যতই নিরাপদ হোক না কেন স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কোন মহিলার তিন মঞ্জিল তথা ৪৮ মাইল সফর করা কোনক্রমেই জায়েয নেই । এমনকি বিমানযোগেও নয় । কোন কোন বিওয়ায়েত হিসাবে ৭৮ কি.মি. কম দূরত্বের সফরও স্বামী বা মাহরাম ছাড়া না করাই উত্তম । তা ছাড়া মাহরাম দ্বীনদার ও বিশ্বস্ত না হলে তার সাথেও সফর করা জায়ে নেই।

মাহরাম বলা হয় ঐ নিকটাত্মীয়কে যার সাথে জীবনে কখনো বিবাহ জায়েয় নেই । এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত আলোচনা হজ্জের বর্ণনায় করা হবে- ইনশামহান আল্লাহ ।


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color