মুহাম্মাদ সা. পবিত্র নারীগণ
06:36:08 01/04/2025
মুহাম্মাদ স. পবিত্র নারীগণ
১। নবীজি স. এর প্রথম স্ত্রী ছিলেন খাদিজা রা.। খাদিজা রা. সম্পর্কে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। খাদিজা রা. থেকে সাতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। চার জন কন্যা সন্তান ও তিনজন পুত্র সন্তান।
মহানবী সা. হযরত খাদীজার জীবদ্দশায় অন্য কোন নারীকে বিবাহ করেননি। হিজরতের তিন বছর পূর্বে যখন তার মৃত্যু হয় এবং মহানবী সা. এর বয়স ৪৯ বছরে উপনীত হল তখন অন্যান্য মহিলাগণ মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসলেন। যাঁদের সম্মানিত নাম এই, ২. হযরত সাওদা বিনতে যামআ, ৩. হযরত আয়িশা, ৪. হযরত হাফসা, ৫. যয়নাব বিনতে খুযাইমা, ৬. উম্মে সালামা, ৭. যয়নাব বিনতে জাহাশ, ৮. জুওয়াইরিয়া, ৯. উম্মে হাবীবা, ১০. ছুফিয়্যা, ১১. মায়মুনা। রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না ।
এই হল এগারজন নারী, যাদের দুইজন মহানবী সা. এর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করেন। আর নয়জন মহানবী সা. এর মৃত্যুর সময় জীবিত ছিলেন। সকল উম্মতের ঐক্যমত যে, এটা মহানবী সা. এর বৈশিষ্ট্য ছিল। উম্মতের জন্য চার থেকে অধিক এক সাথে বিবাহ করলে একত্রে রাখা জায়েয নেই। এই বৈশিষ্ট্যের কিছু কারণ সামনে আসছে।
২। হযরত সাওদা রা. তিনি প্রথমে সাকরান ইবনে আমরের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। এরপর মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসেন।
৩। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা: তিনি হযরত আবু বকর রা. এর কন্যা ছিলেন। ছয় বছর বয়সে মহানবী সা. এর সাথে বিবাহ হয়। হিজরতের বছর নয় বছর বয়সে রুখসত হয়। যখন মহানবী সা. এর মৃত্যু হয় তখন হযরত আয়েশা রা. এর বয়স আঠার বছর ছিল। মহানবী সা. এর সাথে এই নয় বছরের সান্নিধ্যের কারণে হযরত আয়েশা রা. এর উপর কি প্রভাব পড়েছিল এবং তিনি কি অর্জন করেছিলেন? তার অবস্থা এর দ্বারা জানা যায় যে, বড় বড় সাহাবী বলতেন যে, যখন আমাদের কোন মাসআলাতে সন্দেহ হত তখন আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর নিকট তার সমাধান পেতাম। এই কারণে বড় বড় সম্মানিত সাহাবী তাঁর ছাত্র ছিলেন।
৪। হযরত হাফসা: হযরত উমর রা. এর কন্যা ছিলেন। প্রথমে উনাইস ইবনে হুযাফা এর বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তারপর হিজরতের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছরে মহানবী সা. এর সাথে বিবাহ হয়।-মুগলতাঈ পৃ:৪৮
৫। হযতর যয়নাব বিনতে খুযাইমা হিলালি: তিনি উম্মুল মাসাকীনের নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। প্রথমে তুফাইল ইবনে হারেসের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। সে তালাক দিলে তার ভাই উবাইদার বিবাহ বন্ধনে আসেন। বদর যুদ্ধে তিনি শহীদ হলেন । উহুদ যুদ্ধের এক মাস পূর্বে মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসলেন। -সীরাতে মুগলতাঈ পৃঃ৪৯
মাত্র দুই মাস বিবাহ বন্ধনে থেকে মৃত্যুবরণ করেন। -নশরুত তীব
৬। হযরত উম্মে হাবীবা: তিনি আবু সুফিয়ানের কন্যা। প্রথমে উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তার থেকে সন্তানও হয়েছিল। তারা উভয়ে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। সেখানে গিয়ে উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশ এ খৃষ্টান হয়ে গিয়েছিল। হাবীবা ঈমানের উপর অটল ছিলেন। সে সময় মহানবী
সা. হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট পত্র লিখলেন যে, উম্মে হাবীবাকে মহানবী সা. এর পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব দিন। সুতরাং নাজ্জাশী প্রস্তাব দিলেন এবং নিজেই বিবাহের উকিল হলেন এবং চার শত স্বর্ণ মুদ্রা মোহর নিজেই আদায় করেন।
৭। হযরত উম্মে সালামা: তার নাম ছিল হিন্দা। প্রথমে আবু সালামার বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তার থেকে সন্তানও হয়েছিল। ৪র্থ হিজরীর জুমাদাস সানীতে এবং কতক বর্ণনা অনুযায়ী তৃতীয় হিজরীতে মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসেন। সীরাতে যুগলতাঈ পৃ ৫৫
বলা হয় হযরত উম্মে সালামা সকল পুণ্যবান স্ত্রীদের পর মৃত্যু বরণ
করেছেন।
৮। হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ: তিনি মহানবী সা. এর ফুফাত বোন ছিলেন মহানবী সা. তাঁকে সর্বপ্রথম যাইদ ইবনে হারেসার সাথে বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন। যাকে মহানবী সা. মুক্ত করে নিজের পালক পুত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু হযরত যাইদের উপর দাসত্বের ছাপ ছিল। এজন্য যয়নাব সেই আক্দকে পছন্দ করতেছিলেন না। অবশেষে মহানবী সা. এর আদেশ মানার জন্য সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন।
এক বছরের কম সময় পর্যন্ত যাইদের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। কিন্তু যেহেতু মনের মিল হচ্ছিল না। সর্বদা মনোমালিন্য বিরাজ করত। এমনকি হযরত যাইদ মহানবী সা. এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা করলেন। মহানবী সা. তাকে বুঝিয়ে তালাকের ইচ্ছা থেকে বিরত রাখলেন। কিন্তু যখন পুনরায় মিল হল না তখন যাইদ বাধ্য হয়ে তালাক দিলেন। যখন তিনি স্বাধীন হয়ে গেলেন তখন মহানবী সা. তার সান্ত্বনা ও মনোরঞ্জনের জন্য তাকে বিবাহ করতে মনস্থ করলেন। কিন্তু সে সময় পর্যন্ত আরবদের ধারণায় পালক পুত্রকে নিজের পুত্র সমতুল্য মনে করা হত। এজন্য
সাধারণ লোকদের ধারণা মতে মহানবী সা. ঐ বিবাহ থেকে বিরত থাকেন। এ কারণে যে, মানুষ বলবে, পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করে নিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু এটা শুধু মূর্খযুগের প্রথা ছিল, যা নিশ্চিহ্ন করা ইসলামে ফরয ছিল। এজন্য আয়াত অবতীর্ণ হল যে, আপনি লোকদেরকে ভয় করছেন? অথচ আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা উচিত। (সূরা আহযাব)
মোটকথা, ৪র্থ হিজরী এবং কতক রেওয়ায়েত অনুযায়ী ৩য় বা ৫ম হিজরীতে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মহানবী সা. নিজেই তাকে বিবাহ করেন। যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে, পালক পুত্র আপন পুত্রের মত নয়। সম্পর্কোচ্ছেদ করার পর (পিতার জন্য) তার স্ত্রী হারাম হয় না। যে সব লোক আল্লাহ তায়ালার এই হালালকে বিশ্বাসগত বা কার্যত হারাম মনে করে রেখেছে তারা যেন ভবিষ্যতে এই ভুল থেকে বের হয়ে যায় এবং বর্বরযুগের এই প্রথা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু এই বদ্ধ প্রথা নিশ্চিহ্ন করা তখনই সম্ভব যখন মহানবী সা. নিজেই আমলের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করবেন।
হযরত যয়নাব রা. সম্পর্কে আমরা যা কিছু লিখলাম অত্যন্ত বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হাদীস থেকে লিখলাম। যেগুলো সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে হাফেযে হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার বর্ণনা করেছেন।
-দেখুন (ফতহুল বারী, তাফসীরে সূরা আহযাব) এছাড়া যেসব বেহুদা এবং অনর্থক বর্ণনা প্রসিদ্ধ আছে, সেগুলো সব মুনাফিক এবং কাফেরদের রচিত। সেগুলো কিছু ঐতিহাসিক যাচাই-বাছাই করা ছাড়াই তা বর্ণনা করে দিয়েছেন। তা নিছক মিথ্যা ও বানোয়াট।
৯। হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই: তিনি হযরত হারুন আ. এর সন্তানদের থেকে ছিলেন। এটা শুধু তার বৈশিষ্ট্য ছিল যে, এক নবীর কন্যা আরেক নবীর স্ত্রী ছিলেন। প্রথমে কিনানা বিন আবুল হাকীক এর বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তার হত্যার পর মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসেন।
১০। হযরত জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস: তিনি বনী মুস্তালিকের সরদার হারেসের কন্যা ছিলেন। তিনি যুদ্ধে গ্রেফতার হয়ে এসেছিলেন। অতঃপর মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসেন। তাঁর বদৌলতে তার গোত্রের সকলকে মুক্ত করা হয় এবং তার পিতা মুসলমান হয়ে যান।
১১। হযরত মায়মুনা বিনতে হারেস হিলালিয়া তিনি প্রথমে মাসউদ ইবনে উমরের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। সে তালাক দিলে আবু রাহমের বিবাহ বন্ধনে আসেন। তার মৃত্যু হলে মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসেন।-মুগলতাঈ
তিনি মহানবী সা. এর সর্বশেষ স্ত্রী। তারপর মহানবী সা. আর কোন বিবাহ করেননি। এঁরা ছাড়া আরো কিছু সম্ভ্রান্ত নারীদের সাথে মহানবী সা. এর বিবাহ
হয়; কিন্তু তাদের মহানবী সা. এর সান্নিধ্যের মর্যাদা লাভ হয়নি। বরং রুখসতের পূর্বেই বিশেষ কারণে পৃথক হয়ে গেছেন। যার বিস্তারিত বিবরণ সীরাতের বড় বড় কিতাবে রয়েছে।
বিবাহ সম্পর্কে জরুরী জ্ঞাতব্য