চাশতের নামাযের ফযীলত

চাশতের নামাযের ফযীলত : হযরত মু’আযাহ [রহঃ] হযরত আয়েশা [রাঃ]-র সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] চাশতের নামায চার রাকাত পড়তেন এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু বৃদ্ধিও করতেন।” [মুসলিম শরীফ],

হযরত আয়েশা [রাঃ] চাশতের নামায আট রাকাত পড়তেন এবং বলতেন যে, আমার পিতা-মাতাও যদি কবর থেকে উঠে আসেন এবং তাঁদের খেদমতের প্রয়োজন হয়] তবুও আমি এ আট রাকাত ছাড়ব না। [যে কোন উপায়ে সময় বের করে নিব।] [ইমাম মালেক)

বিশেষ বিশেষ নফল নামাযের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে, যেমন ইশরাক, আউয়াবীন, চাশত ইত্যাদি। তবে সাধারণ নফলের জন্য কোন সময় বা রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত নেই। নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত যখন যত ইচ্ছা নফল নামায পড়া যায়। আমাদের পূর্বসূরীদের অনেকেই দৈনিক কয়েক শত রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। অবসর সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য নামায একটি উত্তম আমল। ফরয, সুন্নতে মুআক্কাদাহ ছাড়াও যথা সম্ভব, দৈনিক কিছু কিছু নফল নামাযের অভ্যাস করবে। তবে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা পিতা-মাতার হক নষ্ট করে নয় । কেননা, শরীয়ত অর্থই হল যখন যে নির্দেশ সে নির্দেশ মানা । মনগড়া ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না ।

নির্ধারিত সময়ের নফল নামাযগুলোর মাঝে চাশতের নামায হলো অন্যতম। আলোচ্য হাদীসে হযরত আয়েশা [রাঃ]-এর উল্লেখিত মন্তব্য থেকেই বুঝা যায়, চাশত নামাযের কত ফযীলত এবং হযরত আয়েশার অন্তরে চাশত নামাযের কি অপরিসীম মুহব্বত ছিল, তা উপলব্ধি করা যায়।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি চাশতের সময় নিয়মিত দু’রাকাত নফল নামায আদায় করবে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে। [তিরমিযী]

হযরত আবু যর [রাঃ] হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়ার পক্ষ হতে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ছদকা করা আবশ্যক। [ কেননা, জোড়াগুলো মহান আল্লাহর বড় নেয়ামত। এগুলো না  

হলে মানুষ নড়াচড়া করতে পারত না। অতঃপর তিনি বলেন, ছদকা ছাড়াও] সুবহানাল্লাহ বলা, আলহামদুলিল্লাহ বলা, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আল্লাহু আকবার বলা, সৎ কাজের আদেশ করা, অসৎ কাজের নিষেধ করা এ সবই ছদকার অন্তর্ভুক্ত। আর যদি কোন ব্যক্তি চাতের সময় দু’ রাকাত নামায পড়ে নেয় তবে এ দু’রাকাত শরীরের সকল জোড়াগুলোর পক্ষ থেকে শোকর হিসাবে যথেষ্ট হবে।” [মুসলিম শরীফ]

প্রতিদিন শরীরের ৩৬০টি জোড়ার পক্ষ থেকে সদকা করা কঠিনই বটে। কিন্তু মেহেরবান মহান আল্লাহ কত সহজ করে দিয়েছেন। সুতরাং কেউ যদি কোন দিন ৩৬০ বার “সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার” পড়ে নেয় তবে সেদিনের জন্য সমস্ত জোড়ার পক্ষ থেকে শোকর আদায় হয়ে যাবে। এমনকি দু’রাকাত চাশত আদায় করলেও ৩৬০টি জোড়ার শোকর আদায় হয়ে যায়। দেখুন! মহান আল্লাহর অনুগ্রহ কত অপরিসীম ।

হযরত আনাস [রাঃ] থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি চাশতের সময় বার রাকাত নামায পড়বে মহান আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের একটি প্রাসাদ তৈরি করে দিবেন। [মিরমিযী]

উপরোক্ত হাদীসগুলোর আলোকে চাশতের সময় দুই, চার, আট বার রাকাত নামায পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। কাজেই যতটুকু সম্ভব পড়ে নিবে । চাশতের সময় আনুমানিক সকাল ৯টা থেকে সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত।

ইশরাকের নামাযের আলোচনা

সূর্য উঠার ১৫/২০ মিনিট পর থেকে ইশরাকের সময় শুরু হয়। ইশরাকের নামাযেও অনেক ফযীলত রয়েছে। কাজেই এ সময় দুই, চার রাকাত যতটুকু সম্ভব পড়ে নিবে। উত্তম হল, ফজরের ফরয পড়ার স্থানেই বসে যিকির-আযকার ও তেলাওয়াতে মশগুল থাকবে অতঃপর সময় হলে পরে ইশরাক পড়বে।

আউয়াবীনের নামাযের আলোচনা

মাগরিবের ফরয ও সুন্নতের পরে ছয় রাকাত নফলকে আউয়াবীন বলা হয়। এর বহু ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে মাঝখানে কোন খারাপ কথা না বলে ছয় রাকাত নামায

পড়বে সে বার বছরের ইবাদত তূল্য ছাওয়াব পাবে। সময় কম থাকলে সুন্নত সহই ছয় রাকাআত পড়ে নিবে।”

হযরত আয়েশা [রাঃ] থেকে বর্ণিত এক হাদীসে অবশ্য মাগরিবের পর বিশ রাকাতের কথা বর্ণিত হয়েছে এবং এর ফযীলত হিসাবে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে। [তিরমিযি শরীফ]।

Leave a Comment