জানাযা সম্পর্কে মাযহাববিরোধীদের বিভ্রান্তি ও তার নিরসন

জানাযা সম্পর্কে মাযহাববিরোধীদের বিভ্রান্তি ও তার নিরসন

উপমহাদেশীয় অঞ্চলের সিংহভাগ মুসলমান হল হানাফী মাযহাবের অনুসারী। খায়রুল কুরুন হতে এতদ অঞ্চলের হানাফীগণ জীবন চলার পথের সকল মাসয়ালায় কুরআন হাদীসের যুক্তিনির্ভর দলীলের ভিত্তিতে গড়ে উঠা মতামতের উপর ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে অভ্যস্ত। এ অঞ্চলের মুসলমানদের ঐক্য ভাল লাগেনি গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট ।

তাই এ সমাজের সকল স্তরের মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শরীয়তের বহু মাসয়ালায় তারা নিতান্তই ঠুনকো ও দুর্বল দলীলকে পুজি করে মতানৈক্য করে চলছেন অহরহ ।

চৌদ্দশত বছর ধরে পড়ে আসা জানাযার নামাজের চির পরিচিত তরীকার উপরেও আজ তারা প্রশ্ন তুলেছেন। তাই প্রবন্ধের কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে জানাযার নামাজের আহকাম গায়রে মুকাল্লিদদের আপত্তি ও তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ ।

জানাযা নামাজের রুকন : 

জানাযা নামাজের রুকন দুটি যথা- 

(১) চার তাকবীর বলা। 

(২) দাঁড়িয়ে জানাযা পড়া। 

বসে বা আরোহন রত অবস্থায় নামাজ পড়াজায়েয নাই । হ্যাঁ, বৃষ্টি বা অন্য কোন উজরের কারণে জমিনে দাঁড়িয়ে জানাযা পড়া যদি অসম্ভব হয় তাহলে আরোহণরত অবস্থায় জানাযা পড়া জায়েয আছে। 

জানাযা নামাজের সুন্নাত তিনটি

১. আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করা ।

২. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ করা।

৩. মাইয়্যেতের জন্য দোয়া করা ।

জানাযা নামাজ পড়ার তরীকা 

হযরত আবু সাঈদ মাকবুরী রহ. হযরত আবু হুরায়রা রা. কে জানাযা নামাজ পড়ার তরীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামানায় কোন জানাযা আসলে তার পেছনে চলতে থাকতাম। অতঃপর যখন মাইয়্যেতকে জমিনে রাখা হত, তখন  প্রথমে তাকবীর বলতাম। এরপর আল্লাহর প্রশংসা করতাম। এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পড়তাম । অতঃপর মাইয়্যেতের জন্য দোয়া করতাম । 

এই হাদীসের দ্বারা বুঝা গেল, প্রথমে তাকবীর বলে নাভীর নিচে হাত বাঁধতে হবে এবং ছানা পড়বে । অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দুরূদ পাঠ করতে হবে । অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সালামের মাধ্যমে জানাযা শেষ করতে হবে ।

জানাযায় সূরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে হানাফীদের মাযহাবের দলিলসমূহ

হানাফীদের মাযহাব হল- জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ, সুন্নাত, মুস্তাহাব কোনটিই নয়। হ্যাঁ, কেউ যদি ছানা হিসাবে পড়ে তাহলে তার জন্য পড়ার অবকাশ আছে । আর যদি কেরাত হিসাবে পড়ে তাহলে মাকরূহে তাহরিমী হবে। আর যেহেতু সাধারণ লোকের জন্য উভয়ের মাঝে এই সূক্ষ্ম পার্থক্য বুঝা কঠিন, আর অপর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ রয়েছে-

তোমরা সন্দেহ যুক্ত বস্তুকে ছেড়ে দিয়ে সন্দেহমুক্ত বস্তুকে অবলম্বন কর, আর ফাতিহার পড়ার মাঝে মাকরূহে তাহরিমীর কারণে গুনাহ এর আশঙ্কা রয়েছে। 

তাই সূরা ফাতিহা ছানা হিসাবে না পড়াই উত্তম ও অধিক সতর্কতা । যেহেতু জানাযার নামাযের জন্য নির্দিষ্ট ছানা রয়েছে এবং জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা না পড়ার ব্যাপারে হাদীস ও অনেক সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল বর্ণিত রয়েছে তাই তা বর্জন করাই উত্তম হবে ।

Leave a Comment